Advertisement
E-Paper

রেখাকে বলিউডে এনেছিলাম আমি, পর্দায় আমিই তাকে অশালীন চুম্বন করব? আপনারা বিশ্বাস করেন!

রেখার একটাই দোষ, বড্ড মেজাজি। যেটা ভাববে, সেটাই করবে! কত বার সেট থেকে পালিয়ে গিয়েছে! শুটিং করতে ইচ্ছা করছিল না বলে।

বিশ্বজিৎ চট্টোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ১০ অক্টোবর ২০২৫ ১৫:২১
রেখাকে নিয়ে অকপট বিশ্বজিৎ চট্টোপাধ্য়ায়।

রেখাকে নিয়ে অকপট বিশ্বজিৎ চট্টোপাধ্য়ায়। ছবি: সংগৃহীত।

আমি তখন মাদ্রাজে, এখনকার চেন্নাইয়ে। দুই শিফটে শুটিং করছি। হঠাৎ একদিন রেখার মা পুষ্পাবলী মেয়েকে নিয়ে এলেন। রেখা তখন ভানুরেখা গণেশন। ওর বাবা জেমিনি গণেশনের সঙ্গে ভালই পরিচয় ছিল। মাত্র ১৫-১৬ বছরের মেয়েটিকে দেখে আমি অবাক! এত ছোট মেয়ে কী অভিনয় করবে?

সেই মেয়েকে আমি নাকি পর্দায় অশ্লীল ভাবে, জোর করে চুম্বন করেছি! আপনারা বিশ্বাস করেন এ কথা? স্থিরচিত্র কোনও দিন খুঁটিয়ে দেখেছেন কেউ?

যাকে হাত ধরে বলিউডে আনলাম, সকলের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিলাম— তাকে নাকি আমিই বদনাম করেছি! আসল ঘটনা অন্য। সেটা অনেকেই জানেন না। দেবিকারানি প্রথম বড়পর্দায় চুম্বনদৃশ্য এনেছিলেন। তার পর দীর্ঘ চুম্বনদৃশ্য যদি কিছু হয়, সেটা আমার ছবি ‘দো শিকারি’। ওই দৃশ্য জীবন্ত করতে পরিচালক যা করতে বলেছিলেন, সেটাই করেছি। জোর করে নায়িকাকে চুমু খেলে সে আমার কণ্ঠ জড়িয়ে অভিনয় করতে পারত! ওর অস্বস্তিই বরং সেই দৃশ্যে বেশি করে ধরা দিত। আমাদের ওই চুম্বনদৃশ্য এতটাই জীবন্ত যে একটি বিদেশি পত্রিকার মলাটে সেই ছবি ছাপা হয়েছিল। ব্যস, চারিদিকে তা-ই নিয়ে শোরগোল পড়ে গেল।

কী ভাবে রেখার সঙ্গে পরিচয়, এবার সে কথা বলি। প্রথম আলাপেই রেখার মা পুষ্পাবলীর বারংবার অনুরোধ, “রেখা পারবে। একবার আপনি সুযোগ দিন। দরকারে পরখ করে নিন।”

বারবার অনুরোধ শুনে ভাবলাম, দেখাই যাক। শুটিংশেষে রেখাকে নিয়ে ওর মা এলেন। মেয়েটি হিন্দি জানে না। ইংরেজিতে কথা বলছে। ওকে ছোট একটা সংলাপ দিয়ে বললাম, পড়ে শোনাও। ও পড়ল। বেশ গোটা গোটা উচ্চারণ। ওই সংলাপই অভিনয় করে দেখাল। সেটাও নিখুঁত। বললাম, গ্লিসারিন ছাড়া কাঁদতে পারবে? বলল, “এক মিনিট দিন।” ঠিক এক মিনিট পরে আমার দিকে তাকাতেই দেখি চোখের কোলে জল টলমল করছে! বুঝলাম, খাঁটি রত্ন পেয়েছি। সেই রাতেই প্রযোজককে ফোন করলাম। জানালাম, দুর্দান্ত এক অভিনেত্রীকে পেয়েছি।

বয়স শুনে বাকিদের মতো প্রযোজকও দ্বিধান্বিত — এত ছোট মেয়ে অভিনয় পারবে? আদৌ মানাবে?

আশ্বস্ত করে জানিয়েছিলাম, বয়সের আন্দাজে ভারিক্কি চেহারা। কোনও সমস্যা হবে না। বাকি খুঁত ঢেকে দেবে রেখার অভিনয়। আগের দিন রাতে কথা হল। পরের দিন মাকে নিয়ে বলিউডে পা রাখল ভানুরেখা। শুরুতেই ওকে বললাম, ভানুরেখা নাম তো চলবে না। নাম ছোট করে ‘রেখা’ করতে হবে। ওর তাতে আপত্তি নেই। শুরু হল শুটিং। সেখানেই গোল! শুটিংয়ের মাঝে হঠাৎ করে মেয়ে পালিয়ে যায়! কাউকে না বলে নিরুদ্দেশ। সেটে ‘খোঁজ খোঁজ’ রব। সকলে এসে আমায় বলেন, “আপনার নায়িকা নিখোঁজ!”

আমি এই বিষয়ে ততটা গুরুত্ব দিইনি। কারণ, ওই সমস্যা সামলে নিলে বাকিটা রেখা অতুলনীয়। ওর কাজ নিয়ে কথা বলার রাস্তা রাখত না।

এ ভাবেই ওর সঙ্গে কাজ করলাম চারটি ছবিতে— ‘দো শিকারি’, ‘দো আঁখে’, ‘মেহমান’, ‘কহতে হ্যায় মুঝকো রাজা’। রেখা তখন ভীষণ ভারিক্কি, ঘোর শ্যামবর্ণ। প্রথম ছবির শুটিং চলছে। ফোন করলেন প্রযোজক মোহন সায়গল, “তুমি নাকি দক্ষিণ ভারত থেকে নতুন নায়িকা এনেছ?” সঙ্গে সঙ্গে ওঁকে বলেছিলাম, আপনার আগামী ছবির জন্য সই করিয়ে নিন। খুব ভাল অভিনেত্রী। তাঁরই ছবি ‘শাওন ভাদো’ ছবিতে রেখার আত্মপ্রকাশ। একই ভাবে আমার কথায় ভরসা করে পরিচালক হৃষীকেশ মুখোপাধ্যায় ‘খুবসুরত’ ছবিতে নায়িকা করেছিলেন রেখাকে। ওই ছবিই ওকে ‘অভিনেত্রী’র তকমা দিয়েছিল। বাকি ইতিহাস গড়েছে রেখা স্বয়ং। নিজেকে ঘষেমেজে এমন জায়গায় তুলে নিয়ে গিয়েছে যে, নিজেই বলিউডে জীবন্ত ‘উদাহরণ’।

Biswajit Chatterjee Rekha
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy