Advertisement
E-Paper

বাবা-ছেলের মধ্যে বিস্তর দূরত্ব, অভিমান ছিল, এখন বুম্বার দায়িত্বে আমি সুখে আছি: বিশ্বজিৎ

বুম্বার মধ্যে উত্তমদার ছায়া দেখতে পাই। দাদার মতো বুম্বাও ইন্ডাস্ট্রিকে আগলে রেখেছে। সকলের ভাল-মন্দে সবসময় পাশে থাকার চেষ্টা করে।

বিশ্বজিৎ চট্টোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ১৫:৪০
প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়কে নিয়ে কী বললেন বিশ্বজিৎ চট্টোপাধ্যায়?

প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়কে নিয়ে কী বললেন বিশ্বজিৎ চট্টোপাধ্যায়? ছবি: সংগৃহীত।

সে দিন শুটিং ছিল মুভিটোন স্টুডিয়োয়। নায়িকা সন্ধ্যা রায়। সঙ্গে তরুণ কুমার, আরও অনেকে। আরজি কর হাসপাতাল থেকে ফোন এল, আমার ছেলে হয়েছে। পর্দার নায়ক বাস্তবে বাবা!

তখন মুঠোফোন নেই। টেলিফোন ধরতে সেট থেকে স্টুডিয়োর গেট পর্যন্ত যেতে হয়। আমি তো পড়িমরি দৌড়েছি। খবর শুনে বুকের মধ্যে হাজার ঢাকের বোল। মা-ছেলে ভাল আছে জানার পর তবে শান্তি! আবার শুট শুরু। তখন কি আর অভিনয়ে মন আছে? আনন্দের চোটে সংলাপ ভুলছি। বার বার টেক নিতে হচ্ছে। শেষে বুড়ো মানে তরুণ কুমার ব্যাপারটা সামলাল। বাকিদের আবদার, মিষ্টি খাওয়াতে হবে! সবাই খুব খুশি। স্থানীয় দোকান থেকে রাজভোগ আনা হল।

রাতে শুট শেষ হতেই গেলাম হাসপাতালে। ছেলের মাথায় হাত রেখে ঈশ্বরকে বলেছিলাম, ও যেন ‘নম্বর ১’ হয়। ভগবান আমার প্রার্থনা শুনেছেন।

বাড়ির প্রথম সন্তান। সকলের খুব আদরের। আমি আবার শুটে ব্যস্ত। ওর বোধহয় কপালে লেখাই ছিল, অভিনেতা হবে। ওই জন্য আমার ছবি ‘ছোট্ট জিজ্ঞাসা’র খুদে নায়ক বুম্বা। প্রথম অভিনয়েই বাজিমাত। ছবিতে অভিনয় করে পুরস্কারও পেয়েছিল। ওর ‘বুম্বা’ নামটাও আমার দেওয়া।

তখন কলকাতার পাশাপাশি মুম্বই, দক্ষিণ ভারতেও অভিনয় করছি। বুম্বার ঝুলিতে যোগ হয়েছে ‘রক্ততিলক’, ‘রাহগীর’। দুটোতেই আমার ছোটবেলা করেছিল বুম্বা। একটু একটু করে বড় হচ্ছে ও। আমার ব্যস্ততা বাড়ছে। কাজের চাপে ছেলেকে সময় দিতে পারি না। ও এত লক্ষ্মী যে, কোনও অনুযোগ নেই! নিজের মনে থাকতে ভালবাসত। আমি যখন ফিরতাম তখন আমার গায়ে লেপ্টে থাকত দুই ভাই-বোন। ওদের বেড়াতে নিয়ে যাওয়া, ভাল-মন্দ খাওয়ানো— সব আমার দায়িত্ব। ওদের একটুও কাছছাড়া করতাম না। খাওয়া প্রসঙ্গে মনে পড়ল, আপনাদের বুম্বা সত্যিই খায় না! অদ্ভুত সংযম। খালি শসা আর টকদই খায়। খেতেই দেখি না ওকে!

একটা সময়ের পর মুম্বইয়ে পাকাপাকি চলে গেলাম। বুম্বা আর মাকু, মানে পল্লবী চট্টোপাধ্যায় রয়ে গেল ওদের মা রত্না চট্টোপাধ্যায়ের কাছে। শুরু করলাম নতুন জীবন। কিন্তু সন্তানের টান এড়াই কী করে? কাজের সূত্রে যখন যেখানে থেকেছি, বুম্বাকে জন্মদিনে ফোন করেছি। ওর জন্য উপহার পাঠিয়েছি। তাতে কি আর বাবা-ছেলের দূরত্ব কমে? ক্রমেই ব্যবধান বাড়ল আমাদের। একবার ছেলের জন্য বড্ড মনখারাপ। নিয়ে এসেছিলাম আমার কাছে। ছেলেকে নিয়ে সব জায়গায় শুটিং করেছি। কখনও মুম্বই, তো কখনও দক্ষিণ ভারত।

এ ভাবে একটা সময়ের পর আমাদের মধ্যে অভিমান-অনুযোগ বাসা বাঁধল। দূরত্ব বাড়াল বুম্বাও। থাক সে সব কথা।

আজ কিন্তু সেই দূরত্ব নেই। আমার সমস্ত দায়িত্ব কলকাতায় বসে পালন করে ও। এই তো, সম্প্রতি চোখে সমস্যা হচ্ছিল। বুম্বা এসে চিকিৎকের কাছে নিয়ে গেল। কী যে যত্ন করে আমায়! ছেলের মতো ছেলে হয়েছে। ইদানীং যেন ওর মধ্যে উত্তমকুমারের ছায়া দেখতে পাচ্ছি। দাদার মতোই ইন্ডাস্ট্রির প্রতি দায়িত্ববোধ। সবাইকে আগলে নিয়ে একসঙ্গে চলার চেষ্টা করে। একটা সময় তো একা ঘা়ড়ে ইন্ডাস্ট্রিকে বয়েছে। সুখে-দুঃখে সবার পাশে থাকতে চায়।

কেবল আফসোস একটাই, আমার ছেলে কিছুতেই আমার মতো বলিউডে এল না। ১৮ বছর আগে ওকে বলেছিলাম, হিন্দি ছবির হিরো হওয়ার সব গুণ তোমার মধ্যে। তুমি চলে এসো। ও পাল্টা বলল, “কলকাতায় আমার জায়গা তৈরি করেছি। ওরা আমায় খুব ভালবাসে। ওই জায়গা ছেড়ে বলিউডে আসতে রাজি নই।” কত ডাক ফিরিয়ে দিয়েছে! সেই সময় বুম্বা কথা শুনলে আজ বলিউডের প্রথম সারির নায়ক হত।

Prosenjit Chatterjee Birthday
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy