প্রয়াত সঙ্গীতশিল্পী প্রতুল মুখোপাধ্যায়। দীর্ঘ রোগভোগের পর শনিবার ভোরে তাঁর গানের পঙ্ক্তি মেনেই যেন অচেনা সাগরে ডিঙ্গা ভাসালেন। বয়স ৮৩ বছর। বছরের শুরু থেকেই অসুস্থতা কাবু করেছিল তাঁকে। তখন থেকে তিনি এসএসকেএম হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। প্রতুল মুখোপাধ্যায়ের প্রয়াণে শোকস্তব্ধ বাংলা সঙ্গীত দুনিয়া। শিল্পীর প্রয়াণের খবর পেয়েই হাসপাতালে ছুটে যান মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস, মন্ত্রী ইন্দ্রনীল সেন। দুপুর ২টো থেকে বিকেল পৌনে ৫টা পর্যন্ত জনসাধারণের জন্য শিল্পীর দেহ রাখা ছিল রবীন্দ্রসদনে। আন্দাজ বিকেল সোয়া ৪টেয় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় উপস্থিত হন। তিনি শিল্পীকে মাল্যদান করেন। সমবেদনা জানান প্রয়াত শিল্পীর স্ত্রী সর্বাণী মুখোপাধ্যায়কে। তাঁকে সব রকম সাহায্যদানের প্রতিশ্রুতিও দেন। রবীন্দ্রসদনে গান স্যালুটের পর তাঁর দেহ ফের তুলে দেওয়া হয় এসএসকেএম হাসাপাতাল কর্তৃপক্ষের হাতে। কারণ, প্রয়াত শিল্পী দেহদানের অঙ্গীকার করে গিয়েছিলেন।

রবীন্দ্রসদনে শায়িত শিল্পী প্রতুল মুখোপাধ্যায়কে দেহ। নিজস্ব চিত্র।
প্রতুল মুখোপাধ্যায়ের প্রয়াণে শোকস্তব্ধ মুখ্যমন্ত্রী। সমাজমাধ্যমে শোক জানিয়ে তিনি লেখেন, “আধুনিক বাংলা গানের খ্যাতনামী শিল্পী, গীতিকার প্রতুল মুখোপাধ্যায়ের মৃত্যুতে আমি শোকাহত।” মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আরও জানান, দিন কয়েক আগেই হাসপাতালে গিয়ে শিল্পীর সঙ্গে দেখা করেছিলেন তিনি। শিল্পীর মৃত্যুতে বাংলা গানের জগতে অপূরণীয় ক্ষতি হল। যত দিন বাংলা গান থাকবে তত দিন ‘আমি বাংলায় গান গাই’ বাঙালির মুখে মুখে ফিরবে। মুখ্যমন্ত্রীর দাবি, “আমি গর্বিত, এমন গুণী মানুষকে আমাদের সরকার তাঁর যোগ্য সম্মান জানাতে পেরেছিল। রাজ্যের সর্বোচ্চ সম্মান ‘বঙ্গবিভূষণ’ থেকে শুরু করে ‘সঙ্গীত সম্মান’, ‘সঙ্গীত মহাসম্মান’, ‘নজরুল স্মৃতি পুরস্কার’ সবই তিনি পেয়েছেন।” তিনি শিল্পীর পরিবার, পরিজন এবং অগণিত গুণগ্রাহীকে আন্তরিক সমবেদনা জানিয়েছেন।

রবীন্দ্রসদনে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় শ্রদ্ধা জানান প্রয়াত শিল্পীকে। নিজস্ব চিত্র।
প্রসঙ্গত, মুখ্যমন্ত্রীর তত্ত্বাবধানেই সরকারি হাসপাতালে ভর্তি করানো হয় তাঁকে। এসএসকেএমের মেন ব্লকে চিকিৎসাধীন ছিলেন তিনি। তাঁর জন্য গঠিত হয়েছিল মেডিক্যাল বোর্ড। মুখ্যমন্ত্রী নিয়মিত চিকিৎসকদের সঙ্গে যোগাযোগ রেখেছিলেন। খবরাখবর নিতেন শিল্পীর।
অধুনা বাংলাদেশের বরিশাল জেলায় ১৯৪২ সালের ২৫ জুন জন্মগ্রহণ করেছিলেন প্রতুল মুখোপাধ্যায়। বাবা ছিলেন সরকারি স্কুলের শিক্ষক। ছোট থেকেই গান লিখে তাতে সুর দিয়ে গাওয়ার ঝোঁক ছিল তাঁর। প্রতুল মুখোপাধ্যায়কে পাদপ্রদীপের আলোয় আনে তাঁর গাওয়া ‘আমি বাংলায় গান গাই’। এ ছাড়া, সাহিত্যিক শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের উপন্যাস অবলম্বনে তৈরি ‘গোঁসাইবাগানের ভূত’ ছবির নেপথ্য কণ্ঠশিল্পী ছিলেন তিনি।