ছবি নিয়ে এত বিতর্ক, কিন্তু আপনারা তো সামাজিক সমস্যার কথা বলেছেন। কখনও মনে হয়নি, সেন্সর বোর্ডের বাড়াবাড়িটা অহেতুক?
এ রকম অবস্থা যেন কারও না হয়। হয়তো এই বিতর্কের জন্যই আমরা এত প্রচার পেয়েছি। মানুষ আরও বেশি করে হলমুখো হয়েছেন। কিন্তু একজন অভিনেত্রী হিসেবে আমি কোনও দিন চাইব না কোনও পরিচালক বা অভিনেত্রী এরকম দুঃসময়ের মধ্যে দিয়ে যান। আমি মনে করি ওটা বাড়াবাড়িই। গত কয়েক দিনে প্রচুর শিক্ষা পেয়েছি। আমরা তখনও ক্লিয়ারেন্স পাইনি। চিঠির কোনও উত্তর পাইনি। খালি মনে হত আদৌ ফিল্মটা রিলিজ করবে তো! বম্বে হাইকোর্টে যাওয়ার পরেও আমরা জানতাম না জিতব কি না! প্রতি মুহূর্তে সেন্সর বোর্ডের দাবি এটা হঠাও, সেটা হঠাও। এভাবে কোনও পরিচালক সিনেমা বানাতে পারেন নাকি! আমাদের মতো দেশে বোধহয় তা হওয়া উচিত নয়।
কিন্তু পুরো বিতর্কে আপনি বা শাহিদ কপূর তো চুপচাপই ছিলেন। এটা কি কোনও স্ট্র্যাটেজি...
এ ছাড়া আর কোনও উপায় ছিল না। এই বিতর্কের বাজারে আমরা আর কোনও বিতর্ক বাড়াতে চাইনি। কারণ অভিনেতারা মুখ খুললে অদ্ভুত একটা রিঅ্যাকশন হয়। পুরো ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি দু’ভাগে ভাগ হয়ে যায়। আমরা চাইনি সেটা। আমরা চেয়েছিলাম প্রযোজকরা তাঁদের কাজ করুন। ওঁরা যেভাবে লড়ে গেছেন সেটা সত্যিই অনবদ্য। আমি বা শাহিদ নিয়মিত যোগাযোগ রাখতাম ইউনিটের সঙ্গে। আমাদের একটাই দাবি ছিল—সার্টিফিকেশন বোর্ডের কাজ যেখানে ছবিকে সার্টিফিকেট দেওয়া তারা কোন যুক্তিতে ছবি সেন্সর করে? আমার বাবা (মহেশ ভট্ট) অনেক আগে থেকেই এই দাবি নিয়ে সোচ্চার হয়েছিলেন। আমি জানতাম লড়াইটা কঠিন, তবে অসম্ভব নয়।
আপনাদের এই জয় কি সেন্সর বোর্ডের যৌক্তিকতাকে প্রশ্নের মুখে ফেলে দিল?
আমি চাই ডিরেক্ট সার্টিফিকেশন পদ্ধতি খুব তাড়াতাড়ি চালু হোক। এই দাবি বহু দিনের। এই যুদ্ধটা বোধহয় হওয়ারই ছিল। মনে আছে অনুষ্কা শর্মা কী কষ্ট করে ‘এন এইচ টেন’ ক্লিয়ার করিয়েছিল। এখন প্রশ্ন হচ্ছে একজন পরিচালক কেন বারবার এই ধরনের অবস্থার মুখে প়ড়বেন? আমরা তো প্রথম থেকেই ‘এ’ সার্টিফিকেট দিয়ে ছবিটা রিলিজ করাতে চেয়েছিলাম। তা হলে এত সমস্যা কেন? তার মানে তো সেন্সর বোর্ড ভারতীয়দের মানসিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে দিল। আসলে বেশির ভাগ আইন পুরনো। সে সুযোগে এ সব এখনও হয়ে চলেছে। ‘উড়তা পঞ্জাব’ বিতর্ক এই দাবিকে আরও জোরালো করল।
ছবি শুরুর আগে যেগুলোকে মাইনাস বলে ধরা হচ্ছিল সেগুলো প্লাস হয়ে গেছে। আপনি এই কঠিন পরিস্থিতি সামলালেন কী ভাবে?
জানেন, ওই ক’দিন বাড়ি থেকে বোরেতেই পারিনি। এত স্ট্রেস জীবনে কখনও নিতে হয়নি। সব লড়াইয়ের পর যখন শুনলাম ছবি মুক্তির আগে ইন্টারনেটে লিক হয়ে গেছে, আমি শুধু কেঁদেছিলাম। এত অসহায় লাগছিল...মনে হচ্ছিল সব স্বপ্ন শেষ। তবে আমি খুশি, কোনও বাধা আমাদের আটকাতে পারেনি। আমরা হারিনি।
তখন কাদের পাশে পেলেন?
আমার কয়েকজন ঘনিষ্ঠ বন্ধু সমানে উৎসাহ দিয়ে গিয়েছিল। বলেছিল, ‘ভেঙে পড়িস না’। আমি তখনও ভাবিনি ছবিটা এই উচ্চতায় পৌঁছবে। কিন্তু তার পর স্পেশাল স্ক্রিনিংয়ে সবাই ছবিটার উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করল। বুঝলাম এত দিনের পরিশ্রম, লড়াই কিছুটা হলেও সফল।
যেটা তোমার অধিকার সেটা না পেলে লড়াই করতে হবে। ইউ হ্যাভ টু ফাইট...
গ্ল্যামার গার্ল থেকে এত ‘ডিগ্ল্যাম’ একটা চরিত্র। নিজেকে তৈরি করলেন কী ভাবে?
‘ডিগ্ল্যাম’ টা কোনও ফ্যাক্টর ছিল না। যেদিন স্ক্রিপ্ট-টা শুনেছিলাম সে দিনই চরিত্রটা ভীষণ পছন্দ হয়েছিল।
বোধহয় এই প্রথম কোনও চরিত্রে অভিনয় করলেন যার কোনও নাম নেই…
নামে কী আসে যায়? আমার কাছে চরিত্রটার নাম ‘মেরি জেন’। এখানে ওই মানুষটি খুব গুরুত্বপূর্ণ, নামটা নয়। তার বেঁচে থাকা, স্বপ্ন দেখাগুলো ইম্পর্ট্যান্ট। এই জন্যই আমার কাছে ‘মেরি জেন’ এত স্পেশাল।
শাহিদ কপূর তো ইতিমধ্যেই আপনার জাতীয় পুরস্কার পাওয়া নিয়ে নিশ্চিত।
আমিও চাই জাতীয় পুরস্কার পেতে। কিন্তু বছর শেষ হতে এখনও বহু দেরি। আরও ভাল ছবি আসবে। প্রতিযোগিতাটা বাড়বে। জাতীয় পুরস্কার পাওয়াটা আমার স্বপ্ন।
একটা কথা বলুন। ছবি জুড়ে অসংখ্য ‘বিপ’ শব্দ। কোনও অসুবিধে হয়নি?
আমাকে খুব বেশি কথা বলতে হয়নি। একটা দৃশ্য ছাড়া গালিগালাজ ছিল না। আমার মনে হয় চরিত্রগুলো ফুটিয়ে তোলার জন্য গালিগালাজটা জরুরি ছিল। তাঁদের স্ট্রাগল, তাঁদের অসহায় অবস্থাটা এ ভাবেই দেখাতে হত।
ছবি করতে গিয়ে পঞ্জাবের বেশ কিছু গ্রামে ঘুরেছেন। রিল আর রিয়েলের সামঞ্জস্য কতটা চোখে পড়ল।
ড্রাগ সমস্যা শুধু পঞ্জাব নয়, গোটা দেশের একটা মেজর প্রবলেম। শ্যুটিংয়ের সময় সেটা আমরা দেখেছি।
এই ছবিতে আপনি আর শাহিদ যে চরিত্রে অভিনয় করেছেন তা আগে করেননি। এই চরিত্র করতে গিয়ে নিজেদের কী ভাবে তৈরি করলেন?
শ্যুটিংয়ের সময় আমরা বেশি কথা বলিনি। প্রতি সেশনে চেষ্টা করেছি চরিত্রের ভেতরে ঢুকে যেতে। আমরা সফল কিনা সেটা দর্শকই বলবেন।
পর পর হিট দেওয়ার পর সোশ্যাল মিডিয়ায় আপনাকে নিয়ে এত ট্রোলিং। সামলান কী ভাবে?
আমি নিজেকে নিয়ে এত ভাবি না। আমার কাজ ভাল অভিনয় করা। কে কী বলল সে সবে পাত্তা দিই না।
এবার কি সিরিয়াসলি গান শেখার কথা ভাবছেন? আপনার গাওয়া ‘ইক কুড়ি’ তো ইতিমধ্যেই সুপারহিট...
(হেসে) তাই নাকি! এত ভাল লেগেছে দর্শকের! তা হলে তো গান শিখতেই হবে।
এই পুরো বিতর্ক থেকে আল্টিমেটলি কী শিখলেন?
যেটা তোমার অধিকার সেটা না পেলে লড়াই করতে হবে। ইউ হ্যাভ টু ফাইট...
ঝুলিতে একের পর এক হিট, আপনি তো বাকি অভিনেত্রীদের টেনশনে ফেলে দিয়েছেন...
(হেসে) সেটা আমার উদ্দেশ্য নয়। আমার চ্যালেঞ্জ নিজের সঙ্গে।
‘উড়তা’র পর তো আপনি সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের ‘বেগমজান’-এর সেটে। সৃজিতের ট্যুইট-এ আপনার উল্লেখ। কেমন লাগছে নতুন বন্ধুকে?
আমি ওই ছবিতে কাজ করছি না। তবু সৃজিতের সঙ্গে বেশ ভাল আলাপ হয়েছে। আমার বাবা ওনার কাজে মুগ্ধ। ওঁর একটা ব্যক্তিত্ব আছে। ভবিষ্যতে সৃজিতদা-র সঙ্গে কাজ করার ইচ্ছে রইল। কলকাতা থেকে ওনার মতো পরিচালক মুম্বইয়ে কাজ করছেন, এটা সত্যি বড় ব্যাপার।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy