Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪
Tollygunj

পাঁচ দিন কাজ, দু’দিন লকডাউন, ছুটির আমেজ না অশনি সঙ্কেত টেলি-তারকাদের কাছে?

পাঁচ দিনের কাজের মাঝে দু’দিনের ব্রেক, এ ভাবে কি দেখছেন টেলি-তারকারা? না কি প্রত্যেকের মনে পূর্ণ লকডাউনের পুনরাবৃত্তির ভয় কাঁটার মতো খচখচ করছে?

তিয়াসা রায় ও ইন্দ্রাণী হালদার। নিজস্ব চিত্র।

তিয়াসা রায় ও ইন্দ্রাণী হালদার। নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২২ জুলাই ২০২০ ২০:৫২
Share: Save:

৮৪ দিন পরে দেশ, রাজ্য আনলক হতেই হইহই করে কাজে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন টেলিপাড়ার অভিনেতা, পরিচালক, প্রযোজক এবং কলাকুশলীরা। কিন্তু, এক মাস কাটতে না কাটতেই আকাশে ফের সিঁদুরে মেঘ। পাঁচ দিন কাজ, দু’দিন আগের মতো সম্পূর্ণ লকডাউন।

পাঁচ দিনের কাজের মাঝে দু’দিনের ব্রেক, এ ভাবে কি দেখছেন টেলি-তারকারা? না কি প্রত্যেকের মনে পূর্ণ লকডাউনের পুনরাবৃত্তির ভয় কাঁটার মতো খচখচ করছে?

প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার আগে পাল্টা প্রশ্ন করলেন ‘শ্রীময়ী’ ইন্দ্রাণী হালদার, ‘‘এই লকডাউনের মানেটা কী হবে?’’ তার পরেই স্বগতোক্তি: ‘‘এক্ষুণি টোটা রায়চৌধুরীর সঙ্গে বিষয়টা নিয়েই কথা বলছিলাম। আমরা নিউ নর্মাল ফর্মাটে অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছিলাম। রোজ স্যানিটাইজড হয়ে কাজে আসা... নিয়ম মেনে কাজ করা। এ বার মাঝে দুটো দিন ব্রেক প্রতি দিনের সংক্রমণ কতটা কমাবে, বুঝতে পারছি না।’’

'কোড়া পাখি'-র শুটিংয়ে পার্ণো মিত্র। নিজস্ব চিত্র।

ইন্দ্রাণীর আরও আক্ষেপ, বেশ নিয়মানুবর্তিতার মধ্যে চলে এসেছিলেন সবাই। ভীষণ সুষ্ঠু ভাবে কাজ হচ্ছিল। এ বার মাঝে মাঝে লকডাউন আবার সব এলোমেলো করে দেবে। কাজের চাপ বাড়বে। এতে অভিনয়ের মানে ছাপ পড়বে। সেই সঙ্গে আশঙ্কাও তৈরি হয়েছে অভিনেত্রীর মনে, ‘‘এক দিকে লকডাউন হয়, অন্য দিকে কিছু মানুষ দেখি বিন্দাস ঘুরে বেড়ান রাস্তায়। তেমন কিছু হবে না তো? তা হলে লকডাউনের উপকারিতা মিলবে?’’

আরও পড়ুন: হাজার পর্বে ‘করুণাময়ী রাণী রাসমণি’, সব বয়সেই বাজিমাত দিতিপ্রিয়ার

অনেকেরই যুক্তি, কেজো দিনের মাঝে লকডাউন। ভাইরাসের শৃঙ্খলা এতে হয়তো ভাঙা যাবে। ‘কৃষ্ণকলি’র শ্যামাও কি তেমনটাই ভাবছেন? ‘‘এখনই এত কিছু ভাবছি না’’, জবাব তিয়াসা রায়ের। তিয়াসা খুশি এই সিদ্ধান্তে? ‘‘খুশি-অখুশির প্রশ্নই নেই, আপাতত বিষয়টি নিয়েই কিছু ভাবছি না। বলা ভাল, ভাবতে চাইছি না। যা হবে দেখা যাবে গোছের মনোভাব নিয়ে চলছি। নিজেকে সান্ত্বনা দিচ্ছি এই বলে, তবু তো পাঁচ দিন কাজ করতে পারছি। অনেকে তো সেটাও পারছেন না। কত জনের চাকরি চলে গিয়েছে। অনেকের নতুন চাকরিতে জয়েনের কথা ছিল। সেটাও আটকে গিয়েছে। সেই জায়গা থেকে আমি অনেক লাকি।’’

সব কিছু নতুন ভাবে শুরু হতেই কিছুটা স্বস্তিতে ফিরেছিলেন ‘ক্ষীরের পুতুল’-এর রাজামশাই সুমন দে। সামনে নতুন ধারাবাহিকের সম্প্রচারণ। সকাল সাতটা থেকে কলটাইম মেনে স্টুডিয়োয় পৌঁছে যাওয়া, সারা দিন ব্যস্ততা। সব কিছু যখন স্বাভাবিকের পথে তখনই ফের সপ্তাহে দু’দিন করে লকডাউনের ঘোষণা... প্রশ্ন করার আগেই উত্তর এল, ‘‘চাপে পড়ে গেলাম। ‘নকশি কাঁথা’ পাঁচ দিন টেলিকাস্ট হত। ফলে, শনি, রবিবার ছুটি থাকত এমনিই। ‘ক্ষীরের পুতুল’ সাত দিন দেখানো হবে। সেই কাজ নামাতে হবে পাঁচ দিনে। হেভি মেকআপ, গ্রাফিক্সের কাজ, সব মিলিয়ে ঘেঁটে ঘ।’’ আরও একটা জিনিস নিয়েও টেনশনে পড়েছেন সুমন, ‘‘ইএমআই-টাও নর্মাল হচ্ছিল। আবার সেটায় সমস্যা দেখা দেবে না তো?’’

লকডাউন নিয়ে চারিদিকে যখন ‘কী হবে কী হবে’ গোছের দমচাপা অবস্থা তখনও অদ্ভুত ভাবে ‘কুল’ ‘হিয়া’ অনামিকা চক্রবর্তী। তিনি নিজেও অনেক দিন কন্টেনমেন্ট জোনে আটকে শুটিং করতে পারেননি। সম্প্রতি পর্দায় ফিরতেই তাঁকে দেখে হাসি ফুটেছে দর্শকের মুখে। এমন জায়গায় দাঁড়িয়ে তাঁর বেশি টেনশন হওয়ার কথা।

কিন্তু ভাবনার লেশমাত্র ছায়া ফেলেনি অনামিকার গলায়। উল্টে ভীষণ শান্ত ভাবে জানালেন, ‘‘যা হচ্ছে নিশ্চয়ই ভালর জন্যই হচ্ছে। যে হারে করোনা বাড়ছে তাতে এই লকডাউন হয়তো ইতিবাচক দিক দেখাতেও পারে। আগের মতো পুরোপুরি লকডাউন তো হচ্ছে না। আমরা তো পাঁচ দিন কাজ করতে পারব!’’

দু’দিনের লকডাউন সংক্রমণ ঠেকাতে পারবে? ‘‘না হওয়ার তো কিছুই নেই’’ আশা ঝরল ‘হিয়া’র গলায়। আরও যোগ করলেন, দিনে যদি পাঁচ হাজার করে সংক্রমণ হয় দুটো দিনের লকডাউনে ১০ হাজার সংক্রমণ কমবে। সংখ্যাটা নেহাৎ কম নয় কিন্তু!

'কে আপন কে পর'-এর শুটিং ফ্লোর। নিজস্ব চিত্র।

পাঁচ দিনে সাত দিনের টেলিকাস্ট তুলতে গিয়ে দম ফেলার ফুরসত পাচ্ছেন না পরিচালক সীমন্ত বন্দ্যোপাধ্যায়। টানা শুট করতে করতে ফোন ধরা। ক্লান্ত গলা বুঝিয়ে দিল কতটা চাপে তিনি, ‘‘ভীষণ চাপে আছি। জানি না, সাত দিনের কাজ কী করে পাঁচ দিনে তুলব। কাজের মান খারাপ হবে। এত প্রেশার নেওয়া যায় নাকি!’’ চাপের সঙ্গে ভয়টাও কাজ করছে সীমন্তের মনে, ‘‘আবার লকডাউন পুরোপুরি ফিরবে না তো! আবার কাজ হারিয়ে বসে যেতে হবে?’’

আরও পড়ুন: নেই কোনও ‘গডফাদার’, প্রতিভাবান হয়েও তাই বলিউডে ব্রাত্যই থাকেন এই বহিরাগতরা

‘এখানে আকাশ নীল’-এর পরিচালকের এই ভয় কমবেশি সবার মনে। এ সপ্তাহে আগামিকাল, বৃহস্পতিবার আর শনিবার লকডাউন। সামনের সপ্তাহে বুধবার আর... বাকি অজানা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Coronavirus Television
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE