Advertisement
E-Paper

কুমার শানুর শ্যামাসঙ্গীত প্রচারের জন্য উদ্যোক্তাদের বেশি বাজাতে অনুরোধ জানানো হচ্ছে না তো?

কালীপুজো মানেই রক্তজবা আর পান্নালাল ভট্টাচার্যের শ্যামাসঙ্গীত। গত কয়েক বছর ধরে কুমার শানুর দাপট সেখানে। প্রয়াত গায়ক কি বিস্মৃতির অন্তরালে?

কঙ্কনা ভট্টাচার্য

কঙ্কনা ভট্টাচার্য

শেষ আপডেট: ১৭ অক্টোবর ২০২৫ ১৪:১৬
এখনও কালীপুজো মানেই পান্নালাল ভট্টাচার্য।

এখনও কালীপুজো মানেই পান্নালাল ভট্টাচার্য। ফাইল চিত্র।

গত কয়েক বছর ধরে বিষয়টি লক্ষ করেছি। খুড়শ্বশুর পান্নালাল ভট্টাচার্যের শ্যামাসঙ্গীত হাতেগোনা কয়েকটি প্যান্ডেলে বাজছে। অধিকাংশ মণ্ডপে বাজানো হচ্ছে কুমার শানুর গান! আমি বিস্মিত। একই সঙ্গে ব্যথিত। এ বছর শ্যামাপুজোর আগে সেই প্রসঙ্গ তুলল আনন্দবাজার ডট কম।

বাঙালির কালীপুজো মানে রক্তজবা আর পান্নালাল ভট্টাচার্যের গান। কয়েক যুগ ধরে এই ধারা চলে এসেছে। হঠাৎ সেই ধারার পরিবর্তন ঘটার কারণ আমিও জানি না। আমি কিন্তু কুমার শানুর বিরোধীপক্ষ নই। ওঁর বেশ কিছু গান খুব পছন্দের। বেশ কিছু অনুষ্ঠানও দেখেছি। ভাল লেগেছে। কিন্তু কালীপুজোর রাতে শুধু কাকার গান শুনতে ইচ্ছা করে।

আমায় প্রশ্ন করা হয়েছে, পান্নালাল ভট্টাচার্য কি তা হলে মুছে যেতে চলেছেন? এই বিষয়ে আমার দুটো উপলব্ধি। এক, সকলের তো রাবড়ি-রসগোল্লা সহ্য হয় না। আমার মনে হয় সেটাই হয়েছে। হয়তো এই প্রজন্মের জন্য পান্নালাল ভট্টাচার্যের গানের থেকেও কুমার শানুর গান বেশি উপযুক্ত। সেই কারণেই কুমার শানুর গান বেশি বাজছে। দুই, খারাপ লাগা থেকেই বেশ কিছু পুজো উদ্যোক্তার সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছিলাম। নিজের পরিচয় গোপন করে জানতে চেয়েছিলাম, কেন প্রয়াত গায়কের গান বাজান না তাঁরা? তেমন সদুত্তর দিতে পারেননি কেউই। সেই জায়গা থেকে আমার ব্যক্তিগত ভাবনা, কুমার শানুর গান প্রচারের উদ্দেশ্যে উদ্যোক্তাদের বেশি করে বাজাতে বলা হচ্ছে না তো? পরক্ষণে এও উপলব্ধি করেছি, যে মণ্ডপে দেবীর অধিষ্ঠান, সেই মণ্ডপে পান্নালাল ভট্টাচার্যের গান। ওঁর গান যেখানে নেই সেখানে দেবীও নেই।

আমরা মন থেকে বিশ্বাস করি, পান্নালাল ভট্টাচার্যের মধ্যে দেবী কালী বাস করতেন। কাকা সেটা বুঝতে পারতেন না। তাই কাকার প্রচ্ছন্ন অভিমান ছিল আমার শ্বশুরমশাই ধনঞ্জয় ভট্টাচার্যের উপরে। তাঁর অভিমান, তাঁর দাদা ধনঞ্জয় ভট্টাচার্য দেবীকে দেখতে পান। তিনি পান না কেন? সেই অভিমান তাঁর প্রত্যেক গানে ঝরে পড়েছে। যা আর কারও কণ্ঠে কেউ কোনও দিন শুনতে পাবে না।

ধনঞ্জয় এবং পান্নালাল ভট্টাচার্য তাঁদের মাকে খুব ভালবাসতেন। কাকা তো মাকে দেবী কালীর সঙ্গে তুলনা করতেন। ওঁর রুপোর একটা কৌটো ছিল। সেই কৌটোয় তিনি মায়ের পায়ের ধুলো জমিয়ে রাখতেন। অনুষ্ঠানে গান গাওয়ার আগে সেই কৌটো খুলে একটু ধুলো নিয়ে বুকে, কপালে ছুঁইয়ে তার পর হারমোনিয়ামে হাত দিতেন!

বালিতে বারেন্দ্রপাড়ায় ভট্টাচার্য পরিবারের বসত। কাকাদের নিজস্ব শ্মশানঘাট ছিল। সেখানে ওঁরা ওঁদের মা, অর্থাৎ আমাদের ঠাকুরমাকে দাহ করেছিলেন। ঠাকুরমার দাহকাজ হয়ে গিয়েছে। নিয়মভঙ্গেরআগের দিন হঠাৎ কাকা দক্ষিণেশ্বরের মন্দিরের দিকে একদৃষ্টে তাকিয়ে। ওর মামাত দাদা যখন ভাইকে জিজ্ঞাসা করলেন, “কী দেখছিস?” কাকা আনমনা হয়ে বলেছিলেন, “তোরা দেখলি না, খোলা চুলে লাল শাড়ি পড়ে, এক কন্যা চিতা থেকে উঠে ঈশান কোন দিয়ে ভবতারিণীর মন্দিরের মধ্যে প্রবেশ করলেন!”

এই যাঁর মাতৃভক্তি, যিনি মাকে পাওয়ার জন্য শেষ তিনটি বছর শ্মশানে কাটিয়েছেন— তিনি কখনও কালের গর্ভে হারিয়ে যেতে পারেন?

Pannalal Bhattacharya Kumar Sanu Shyamasangeet
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy