Advertisement
E-Paper

‘লিপস্টিক পরা নায়ক’! শুনেছেন শাকিব, তিনিই বাংলাদেশের ‘ইন্ডাস্ট্রি’, পালাবদল ঘটল কী ভাবে?

২০২৩-এর জানুয়ারিতে আফরান নিশোর প্রথম ছবি ‘সুড়ঙ্গ’ মুক্তি পেয়েছিল। মুক্তির আগে বাংলাদেশে হঠাৎ রব, অবশেষে শাকিব খানের প্রতিদ্বন্দ্বী পাওয়া গিয়েছে।

আনন্দবাজার ডট কম সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৮ ডিসেম্বর ২০২৫ ০৯:০১
নিজেকে কেবলই ভাঙেন শাকিব খান?

নিজেকে কেবলই ভাঙেন শাকিব খান? ছবি: সংগৃহীত।

অপূর্ব, আফরান নিশো, শরিফুল রাজ, সিয়াম আহমেদ— বাংলাদেশের বিনোদনদুনিয়ায় এই প্রজন্মের নায়কদের দাপট বাড়ছে। তাঁদের ছবি, তাঁদের অভিনয় ইতিবাচক সাড়া ফেলছে বাণিজ্যে, দর্শকমহলে।

বাংলাদেশের বিনোদনদুনিয়া সূত্রে খবর, তার পরেও ও পার বাংলার দর্শক ‘সুপারস্টার’ তকমা শাকিব খানকেই দেন! তিনিই নাকি ঢালিউডের ‘ইন্ডাস্ট্রি’। ঠিক যেমন পশ্চিমবঙ্গের বিনোদনদুনিয়া প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়কে এই উপাধি দিয়েছে। সেই ধারা মেনে, ২০২৬ শাকিবের দখলে। আনন্দবাজার ডট কম প্রথম জানিয়েছে, ও পার বাংলার তাসনিয়া ফারিন, কলকাতার জ্যোতির্ময়ী কুণ্ডুকে নিয়ে নায়ক আসছেন ‘প্রিন্স’ ছবিতে। এ-ও শোনা যাচ্ছে, শাকিবের আগামী বছরে তিনটি ছবি মুক্তি পেতে পারে।

ঢালিউড জানে, যাঁর এত রমরমা তাঁর শুরুটা এত সহজ ছিল না। ২৬ বছর আগে বিনোদনদুনিয়ায় পা রেখেছিলেন তিনি। সেই সময়ে তাঁর একাধিক প্রতিদ্বন্দ্বী। শাকিল খান, ফেরদৌস, রিয়াজ় পর্দা কাঁপাচ্ছেন। শাকিব নাকি তখন কিছুটা পিছনের সারিতে। ‘লিপস্টিক পরা গরিবের নায়ক’, তাঁর গায়ে তখন এমনই তকমা! এ তথ্য বাংলাদেশের সেই সময়ের সংবাদমাধ্যম ঘাঁটলেই উঠে আসে। ২৬ বছর পরে তিনিই বাংলাদেশের রুপোলি পর্দার একছত্র অধিপতি, কথাপ্রসঙ্গে আনন্দবাজার ডট কম-কে জানিয়েছেন সে দেশের এক শাকিব-অনুরাগী।

শাকিবের ছবি দুই দেশে প্রশংসিত। বিদেশে শাকিব খানের ছবির কদর আছে। টাইম স্ক্যোয়ারে নায়কের একাধিক নতুন ছবির প্রচার জায়গা করে নিয়েছে। বাংলাদেশের বিনোদনদুনিয়াকে শাকিব নিজের বশে আনলেন কী করে? কী বলছেন তাঁর নিজের দেশের পরিচালক –প্রযোজকেরা?

আনন্দবাজার ডট কম যোগাযোগ করেছিল অভিনেতার ‘তুফান’ আর ‘তাণ্ডব’ ছবির পরিচালক রায়হান রাফীর সঙ্গে। তাঁর কথায়, “শাকিবভাই পরিচালকদের সঙ্গে মিশে যেতে জানেন। নিজেকে সমসাময়িক রাখতে জানেন। অসম্ভব পরিশ্রম করতে জানেন। দরকারে অভিনয়ের জন্য প্রাণ দিতেও পারেন।” নিজের কথার সপক্ষে যুক্তি দিয়েছেন। রায়হান বলেছেন দুটো ঘটনার কথা। “টানা শুটিং চলছে। শাকিবভাইয়ের রক্তচাপ বেড়ে গিয়েছে। অভিনেতা কাউকে জানাননি। আমিও ওঁকে দিয়ে শুটিং করিয়েছি। শটশেষে জানতে পারলাম সব। শাকিবভাই হাসতে হাসতে জানিয়েছিলেন, তিনিই চেপে রেখেছিলেন বিষয়টি। না হলে শুটিং বাতিল হয়ে যেত।” একই ভাবে দু’সপ্তাহে ১২ কিলো ওজন কমাতে বলেছিলেন পরিচালক। ঠিক দু’সপ্তাহের মাথায় শাকিব ওজন কমিয়েছিলেন।

বাংলাদেশের পরিচালক রায়হান রাফি, প্রযোজক শাহরিন সুমি।

বাংলাদেশের পরিচালক রায়হান রাফি, প্রযোজক শাহরিন সুমি। ছবি: ফেসবুক।

এই যদি শাকিবের অভিনয়ের প্রতি ‘দরদ’ হয়, তা হলে তাঁকে অভিনয়মুখী করে তুলতে পরিচালকদেরও হাত রয়েছে অনেকটাই। এই বক্তব্য নায়কের ‘বরবাদ’ ছবির প্রযোজক শাহরিন সুমির। তাঁর কথায়, “অবশ্যই নিজেকে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ভেঙেছেন শাকিবভাই। তাঁকে সেই জায়গায় পৌঁছে দিয়েছেন এই প্রজন্মের পরিচালকেরা। নায়ক তাঁদের অক্ষরে অক্ষরে মেনেছেন বলেই ২৬ বছর পরে বাংলাদেশে তাঁর একছত্র রাজপাট।” পাশাপাশি, অভিনেতার সমসাময়িকদের বেশির ভাগ হয় ডাক পান না, নয়তো অভিনয় ছেড়ে দিয়েছেন। এই প্রজন্মের প্রতিনিধিত্ব যাঁরা করছেন, সেই অপূর্ব, নিশো, শরিফুল বা সিয়াম আগেভাগেই তাঁকে সসম্মানে জায়গা ছেড়ে দিয়েছেন।

এ প্রসঙ্গে ও পার বাংলার এক দর্শক নূর যেমন বলেছেন, “আমাদের এখানে ইদে অনেক ছবি মুক্তি পায়। সেই তালিকায় শাকিব ভাই যেমন থাকেন, তেমনই থাকেন বাকিরাও। তাঁর সঙ্গে ছবিমুক্তি মানে বাকি নায়কেরাও আলোচনায় চলে আসেন। শাকিবভাই নিজের ছবির পাশাপাশি অন্যদের ছবিরও বাণিজ্য বাড়িয়ে দেন।” এই কথা শোনা গিয়েছিল ২০২৩-এ। সে বছর জানুয়ারিতে নিশোর প্রথম ছবি ‘সুড়ঙ্গ’ মুক্তি পেয়েছিল। মুক্তির আগে বাংলাদেশে হঠাৎ রব, অবশেষে শাকিব খানের প্রতিদ্বন্দ্বী পাওয়া গিয়েছে। ছবিমুক্তির আগেই নিশোকে ঘিরে তুমুল কলরব। সেই সময় তিনি আচমকা ঢালিউডের ‘ইন্ডাস্ট্রি’র ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে বেফাঁস কিছু মন্তব্য করে বসেন। ব্যস, প্রায় জেতা বাজি হেরে গেলেন আগেই! “বাংলাদেশের দর্শক শাকিবভাইয়ের নামে গালমন্দ শুনতে নারাজ। ‘সুড়ঙ্গ’ সুপারহিট হল। নিশোর কিন্তু ‘সুপারস্টার’ হওয়া হল না! বছরে পাঁচটি করে ছবি হিট দিলেও তিনি হারানো জায়গা কিছুতেই ফিরে পাবেন না”, দাবি নূরের।

এ ছাড়াও, বাকি নায়কেরা তিন বছরে বা দু’বছরে একটি করে ছবি করেন। বাংলাদেশে ছবি তৈরিও হয় ধীরেসুস্থে, সময় নিয়ে। ফলে, শাকিবের সঙ্গে তাঁরা পাল্লা দিতে পারেন না।

শাকিবের জনপ্রিয়তার কারণ হিসাবে ইদানীং আরও একটি বিষয় আলোচনায় যুক্ত হয়েছে। নায়কের বিপরীতে একের পর এক কলকাতার নায়িকা। সাম্প্রতিক ছবিতে মিমি চক্রবর্তী, ইধিকা পাল, দর্শনা বণিককে যেমন দেখা গিয়েছে, আগামী ছবিতে দেখা যাবে জ্যোতির্ময়ী কুণ্ডুকে। শাকিবের কলকাতার নায়িকাদের পছন্দ না কি বাংলাদেশের দর্শক তাঁর বিপরীতে এঁদের দেখতে বেশি ভালবাসেন?

এই প্রশ্নের জবাবে রায়হান, সুমি দু’জনেই সহমত। পরিচালক এবং প্রযোজক বলেছেন, “নায়ক তাঁর নায়িকা বাছেন না। চিত্রনাট্য অনুযায়ী নায়িকা নির্বাচন করেন পরিচালক।” এ-ও দাবি তাঁদের, “শাকিবভাইয়ের একের পর এক হিট ছবির নায়িকা যদি কলকাতার হন, তা হলে প্রযোজকও তাঁদের দিকেই ঝোঁকেন। বাংলাদেশের দর্শকও শাকিবের বিপরীতে কলকাতার নায়িকাদের দেখতে ভালবাসেন।”

‘অন্তরাত্মা’ ছবিতে শাকিব খান, দর্শনা বণিক।

‘অন্তরাত্মা’ ছবিতে শাকিব খান, দর্শনা বণিক।

এই প্রসঙ্গে কথা বলেছেন নায়কের অন্যতম নায়িকা দর্শনা বণিক। তাঁর কথাতেও পরিচালক এবং প্রযোজকের কথার সুর। দর্শনাকে শাকিবের বিপরীতে ‘অন্তরাত্মা’ ছবিতে দেখা গিয়েছিল। নায়িকার উপলব্ধি, “সমসাময়িক থাকতে প্রতি মুহূর্তে শাকিব ভাই নিয়ে বদলাচ্ছেন। যুগের সঙ্গে চলছেন। সেই কারণেই আগে যে ধারার ছবি করতেন এখন সেই ধারার ছবিতে তাঁকে দেখা যায় না। পেশাজীবনে টিকে থাকতে গেলে এই বদলের খুবই প্রয়োজন।” একই সঙ্গে তাঁর এ-ও মত, পাশাপাশি পরিশ্রমেরও প্রয়োজন। দর্শনা কাজ করতে গিয়ে দেখেছেন, প্রত্যেক দৃশ্য নিখুঁত করার জন্য নায়ক একের পর এক শট দিয়ে যান। কোনও বিরক্তি নেই। “সেই জন্যই বাংলাদেশের বিনোদনদুনিয়াকে তিনি বহন করতে পারছেন।”

পরিবর্তিত সিনেদুনিয়ার মতে, নায়কের অস্তিত্ব ক্রমশ অস্তমিত। আগামী বহু বছর থেকে যাবেন অভিনেতা। হয়তো তথাকথিত প্রেম বা অ্যাকশনধর্মী ছবির চাহিদাও কমবে। কিন্তু শাকিবের গায়ে যে এখনও ‘নায়ক’-এর তকমা! “ওঁর ভিতরে অভিনেতাসত্তা জেগে। শাকিবভাই তাই অ্যাকশন দৃশ্যের থেকেও নাটকীয় দৃশ্যে অভিনয়ের জন্য মুখিয়ে থাকেন। ওই ধরনের দৃশ্যে নিজেকে প্রমাণ করতে পারেন বলে”, মৃদু হেসে জবাব দিয়েছেন রায়হান।

Raihan Rafi Tandob Toofan apurba Afran Nisho
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy