‘হিরোইন মেটিরিয়াল’ না হলে নায়িকা নয়! এই বিশেষ গুণটাই বা কী? ওজন, উচ্চতা, গায়ের রং, সৌন্দর্য, জৌলুস— সবকিছুর ‘প্যাকেজ’ চাইছে টলিউড! মাপকাঠিতে না মিললে কাজ নেই!
এমনই অভিযোগ এই প্রজন্মের একগুচ্ছ অভিনেত্রীর। অনন্যা সেন, তানিকা বসু, সৃজলা গুহ, বিবৃতি চট্টোপাধ্যায়, অলিভিয়া সরকার— তালিকাটা খুব ছোট নয়। এঁদের প্রত্যেকের অভিযোগ, “টলিউড কী চায় নিজেই জানে না! যে রোগা, যে ফর্সা, তারও রকমারি খুঁত। স্বর্গ থেকে অপ্সরা নেমে এসে ক্যামেরার সামনে দাঁড়াবে, এমনই বোধহয় আশা সবার।”
অনন্যাকে সম্প্রতি দেখা গিয়েছে ‘স্বার্থপর’ ছবিতে। কোয়েল মল্লিকের বান্ধবী চরিত্রে। অনন্যার অভিনয়ও প্রশংসিত। তার পর? শনিবার প্রথম সারির এক প্রযোজনা সংস্থার নতুন টক শোয়ের প্রচারানুষ্ঠানে এসেছিলেন তিনি। আগামী কাজ প্রসঙ্গে বলতে গিয়েই অনন্যা আনন্দবাজার ডট কম-কে বললেন, “বলিউডে প্রচুর অডিশন দিচ্ছি। নাটকের প্রশিক্ষণে যোগ দিচ্ছি। এ ভাবেই চলছে।” অর্থাৎ, মুঠোভর্তি কাজ বা তুমুল ব্যস্ততায় নেই অনন্যা। সে কথা অস্বীকারও করেননি। অথচ, তাঁর অভিনয় দর্শকপ্রশংসিত।
বিবৃতি চট্টোপাধ্যায়। পুজোয় মুক্তি পেয়েছে তাঁর ‘দেবী চৌধুরাণী’। শুভ্রজিৎ মিত্রের পরিচালনায় তিনি ‘নিশি’ চরিত্রে নজর কেড়েছেন দর্শকদের। “ওই পর্যন্তই। তার পর অভিরূপ ঘোষের একটি ছবিতে অভিনয় করেছি। আপাতত হাতে আর কিছু নেই”, একই অনুষ্ঠানে এসেছিলেন তিনিও।
অনন্যা, বিবৃতির কথাতেই সায় দিয়েছেন এই প্রজন্মের আরও দুই অভিনেত্রী। সৃজলা গুহ, তানিকা বসু।
ছোটপর্দায়, সিরিজ়ে সৃজলা পরিচিত নাম। ভাল বেলি ড্যান্সার। হাসতে হাসতে বললেন, “নিজের মতো থাকি। কত দিন পরে এই ধরনের অনুষ্ঠানে যোগ দিলাম!” ‘চালচিত্র’ ছবির পর দর্শক-সমালোচক একযোগে তনিকার মধ্যে প্রতিভার স্ফুলিঙ্গ দেখেছিলেন। “সেই স্ফুলিঙ্গ আপাতত সিরিজ় ‘রঙ্কিনী ভবন’-এর ছোট্ট একটি চরিত্রে সীমাবদ্ধ। মায়ের ক্যানসার। কতজনের কাছে কাজ চেয়েছি। সকলেই ‘চালচিত্র’ ছবিতে দেখানো ‘সেরিব্রাল পলসি’তে আক্রান্ত মেয়ের চরিত্রেই ডাকেন। আমি তো গায়ে ট্যাগ সাঁটতে রাজি নই!”, আফসোস অভিনেত্রীর কণ্ঠে।
ভারী চেহারা মাত্রেই ‘পেটুক’, ‘ভাঁড়’ বা কালো মানেই ‘গৃহপরিচারিকা’— কবে, কে এগুলো ঠিক করে দিল? এই তকমার বাহানাতেই তো যোগ্যদের ছাপিয়ে অযোগ্যের রমরমা! ক্ষোভ এঁদের। অনন্যা যেমন ঠিক করেই নিয়েছেন, “শরীরে সমস্যা না হলে কিছুতেই রোগা হব না। যেমন আছি তেমনই থাকব।” তাঁর মতে, মোটারাও নায়িকা হতে পারেন। ‘দম লাগাকে হেইসা’র জন্য ভূমি পেডনেকরকে ওজন বাড়াতে হয়েছিল। উদাহরণ দিয়েছেন অনন্যা। বিবৃতি, তানিকা, সৃজলা বলেছেন, “এ সব ছুতো। অনন্যার মতো অভিনয়প্রতিভা থাকলে আমরা বর্তে যেতাম।”
বিবৃতি চট্টোপাধ্যায়, অলিভিয়া সরকার। ছবি: ফেসবুক।
এই প্রসঙ্গে তানিকার সংযোজন, “টলিউডের অন্দরে অনেক ‘খেলা’। যাঁরা সেটা রপ্ত করতে পারেন, তাঁরা কাজ পান। যাঁরা পারেন না, তাঁরা আমাদের মতো।” তিনি এও শুনেছেন, অর্থের বিনিময়ে নায়িকা বা গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র কেনা যায়। অনেকে নাকি টিকে থাকতে ‘কম্প্রোমাইজ়’ও করেন! তনিকা অবশ্য দুই দলের একদলেও শামিল নন বলে জানিয়েছেন। অনন্যারও একই দাবি। তাই অডিশন দিতে দিতে হয়তো জুতোর শুকতলা ক্ষইয়ে ফেলেন। স্বপ্নপূরণ হয় না! “সমাজমাধ্যমে যাঁদের লক্ষাধিক অনুসরণকারী, তাঁরাই বা ক’টা হিট ছবি দিতে পারছেন?” পাল্টা প্রশ্ন তনিকার।
ব্যতিক্রমও আছেন। যেমন অলিভিয়া সরকার। আনন্দবাজার ডট কম-কে অভিনেত্রী জানিয়েছেন, বরাবরই বেছে কাজ করেন তিনি। একসঙ্গে অনেক কাজ করতে ভালবাসেন না। তাই ছোটপর্দা থেকে সাময়িক দূরে থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। সম্প্রতি, ‘মিলন হবে কতদিনে’ ধারাবাহিক দিয়ে ছোটপর্দায় ফিরেছেন তিনি।