Advertisement
E-Paper

তোকে বাবার বিয়ে দেখিয়ে দেব

যা আগে ছিল গালাগালের সর্বোচ্চ ধাপ। এখন ভালবেসে আকছার এমন ঘটনা ঘটছে। এবার যেমন কবীর বেদী। লিখছেন সুজিষ্ণু মাহাতোআগে লোকে গালাগালি দিয়ে বলত, ‘‘বাবার বিয়ে দেখিয়ে দেব।’’ এখন বাবার বিয়ে দেখাটাই নতুন ট্রেন্ড। রিল থেকে রিয়েল লাইফ—এ দৃষ্টান্ত যত্রতত্র। সেদিন তাঁর সত্তরতম জন্মদিনে কবীর বেদী দশ বছরের পুরনো বান্ধবী পারভিন দুসাঞ্জকে বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নিলেন।

শেষ আপডেট: ২৫ জানুয়ারি ২০১৬ ০০:৫৬
কবীর বেদী-পারভিন দুসাঞ্জ

কবীর বেদী-পারভিন দুসাঞ্জ

আগে লোকে গালাগালি দিয়ে বলত, ‘‘বাবার বিয়ে দেখিয়ে দেব।’’ এখন বাবার বিয়ে দেখাটাই নতুন ট্রেন্ড। রিল থেকে রিয়েল লাইফ—এ দৃষ্টান্ত যত্রতত্র। সেদিন তাঁর সত্তরতম জন্মদিনে কবীর বেদী দশ বছরের পুরনো বান্ধবী পারভিন দুসাঞ্জকে বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নিলেন। বলিউডের বহু তারকাই উপস্থিত ছিলেন সেই পার্টিতে। দেখা যায়নি কবীর-কন্যা পূজাকে। বরং দেখা যায়, তাঁর ট্যুইটে সৎমা-কে তিনি ‘দুষ্টু ডাইনি’ বলতেও কসুর করেননি!

বাবাকে অভিনন্দন

পরে অবশ্য পূজা লেখেন, “আগের ট্যুইট মুছে দিয়েছি। ভালই হবে সব, এই আশা রইল। বাবাকে অভিনন্দন।”

বাবা-মায়ের একাধিক বিয়ে ও সন্তানের মেনে নেওয়া নিয়ে নানা মুনির নানা মত। অথচ খোদ বলিউডে এই ছবিটা ক্রমশ বদলাচ্ছে। শাবানা আজমির সঙ্গে যেমন ফারহান আখতার ও জোয়া আখতারের দারুণ ভাল সম্পর্ক। কর্ণ জোহরের শো-তেই ফারহান জানিয়েছিলেন, প্রথমে তাঁর মায়ের সঙ্গে সম্পর্কছেদের জন্য তিনি বাবা জাভেদ আখতারের উপরে বেশ রেগেই গিয়েছিলেন। পরে, ধীরে ধীরে শাবানার সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক খুবই ভাল হয়। এ জন্য তিনি কৃতিত্ব দিচ্ছেন তাঁর মা হানি ইরানি ও সৎ-মা শাবানা—দু’জনকেই।

সৎমা-ই বন্ধু

সুন্দর সম্পর্ক হেলেন-সলমন খান, করিনা কপূর-সারা খানের মধ্যে। মাঝেমধ্যেই তাঁরা একসঙ্গে ঘুরতে, খেতে যান। একেবারে তিন বন্ধুর মতো। ‘কফি উইথ কর্ণ’-এ করিনা জানিয়েছেন, সেফ আলি খান ও অমৃতা সিংহের দুই ছেলেমেয়ে সারা ও ইব্রাহিম—দু’জনের সঙ্গেই তাঁর সম্পর্ক বন্ধুর মতো। করিনা এ-ও জানান, দু’জনেরই একজন অসাধারণ মা রয়েছেন, তাই তিনি ওদের মা হতে চান না, বন্ধু হয়েই থাকতে চান।

ব্যতিক্রমের আরেকটি ছবি জনপ্রিয় হয়েছিল কয়েক বছর আগে। তা হল গয়না ব্র্যান্ড ‘তনিশকের’ বিজ্ঞাপনের। সেখানে পাত্রীর ছোট মেয়েকে কোলে নিয়ে সাত পাকে বাঁধা পড়ছিলেন পাত্র। ‘ইংলিশ-ভিংলিশ’-এর পরিচালক গৌরী শিন্দে পরিচালিত ওই বিজ্ঞাপন বিয়ের প্রচলিত ‘ট্যাবু’ ভেঙেছিল বলে ব্যাপক প্রশংসা কুড়োয়।

মায়ের বিয়ে

বাস্তবেও বাবার মৃত্যুর পর মায়ের ফাঁকা ফাঁকা লাগায় মায়ের সঙ্গীর জন্যই তাঁর মায়ের পুরনো স্কুলের বন্ধুর সঙ্গে ছোট করে একটা ম্যারেজ পার্টির মাধ্যমে বিয়ে দিয়েছিলেন যাদবপুরের রত্নাবলী। মনোরোগ বিশেষজ্ঞ রিমা মুখোপাধ্যায় জানাচ্ছেন, ‘‘বিয়ের আগে যেমন এখন প্রি-ম্যারিটাল সম্পর্ক নিয়ে মাথা ঘামানো কমেছে, তেমনই যদি বিয়ে সফল না হয় তাহলে সন্তানরাই বাবা-মাকে অন্য সম্পর্কের কথা বলছে।’’ ঠিক এমনটাই ভেবেছিলেন দুই বোন পায়েল ও কোয়েল (নাম পরিবর্তিত)। বাবার মৃত্যুর পর তাঁদের মায়ের সঙ্গে এক ব্যক্তির সম্পর্ক হয়। বিয়ে না করলেও তাঁদের বন্ধুত্বে যতি পড়েনি। সেই ভদ্রলোক কলকাতার বাইরে থাকলেও শহরে এলে তাঁর বান্ধবী ও বান্ধবীর মেয়েদের সঙ্গেই থাকেন। তা মেনে নিতে কোনও অসুবিধেও হয়নি দুই বোনের। বছর পঁচিশের বড় বোন বলছেন, ‘‘মা তাঁর নিজের সিদ্ধান্ত নিজেই নিয়েছেন। তিনি খুশি থাকলে আমরাই বা আপত্তি করব কেন?’’

এখন বাবা-মায়ের বিয়ে সন্তানেরা মেনে নিচ্ছেন। কিন্তু কোথাও অস্বস্তি আজও আছে। যেমন পূজা বেদী...

একই রকম ইতিবাচক ছবি রাহুলের (নাম পরিবর্তিত) ক্ষেত্রে। শহরেরই একটি বেসরকারি সংস্থায় কর্মরত রাহুলের যখন চার বছর বয়স তখন তাঁর বাবা-মার ডিভোর্স হয়। তিনি বাবার কাছেই বড় হয়েছেন। তাঁর বাবা দ্বিতীয় বার যাঁকে বিয়ে করেন, তাঁকেই তিনি মা বলে মনে করেন। রাহুল বলছেন, ‘‘মাতৃত্বের অনুভব আমি পেয়েছি ওঁর কাছেই। তাই আমাকে জন্ম না দিলেও তিনিই আমার মা।’’ রাহুল এখন বিবাহিত। তিনি জানাচ্ছেন, বাবার থেকেও তাঁর ‘সৎমা’-ই তাঁর কাছে বেশি প্রিয়।

বিচ্ছেদে অস্বস্তি

তবে এই ছবিটা সব জায়গায় এক রকম নয়। মেয়ের কথা ভেবে বছর ৪৫-এর স্কুলশিক্ষিকা অনমিত্রা সাহা আজও দ্বিতীয় বিয়ের কথা ভাবতে পারেননি।

অন্য দিকে আজও অস্বস্তি রয়েছে অর্জুন কপূরের। প্রযোজক বনি কপূরের ছেলে অর্জুন দীর্ঘদিন ধরেই তাঁর সৎ-মা শ্রীদেবীকে নিয়েই নীরব ছিলেন। কিন্তু প্রকাশ্যেই বলে দেন, শ্রীদেবীর সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক কখনওই ‘স্বাভাবিক’ ছিল না। শ্রীদেবী ছিলেন কেবল তাঁর বাবার স্ত্রী, তার বেশি কিছু না।

একই ছবি যেন দুই দেওল ভাই—সানি ও ববি ও হেমা মালিনীর সম্পর্কেও। ধর্মেন্দ্রর দুই পুত্র তাঁদের সৎ-মা হেমা সম্বন্ধে প্রকাশ্যে কিছু বলেন না। নীরব থাকেন হেমাও। তাঁদেরও একসঙ্গে ছবি বিশেষ পাওয়া যায় না। সৎবোন এষা ও অহনা কারও বিয়েতেই দেখা যায়নি সানি-ববি দুই ভাইকে।

তবে শুধু মিলনে নয়, সন্তানদের অস্বস্তি বিচ্ছেদেও। গত বছরের সব চেয়ে বড় হিট ছবি ‘বেলাশেষে’-তে সৌমিত্র-স্বাতীলেখার গল্প তো তাই দেখিয়েছিল! বুড়ো বয়সে বাবা-মায়ের এমন সাধ মেনে নিতে রাজি থাকেন না অনেক সন্তানই। মনোবিদ অনুত্তমা বন্দ্যোপাধ্যায় বলছেন, ‘‘কেবল এ দেশেই নয়, সব সভ্যতাতেই বাবা-মায়ের এমন একটা দেবতুল্য চরিত্র নির্মাণ করা হয়, যাতে তাঁদের জাগতিক ইচ্ছেপূরণ অনেক সময়েই সন্তানদের অস্বস্তির কারণ হয়ে দাঁড়ায়।’’

বাবা-মা’রও স্পেস চাই

তবে এই অস্বস্তি কাটানোর উপায় কী?

অনুত্তমা জানাচ্ছেন, বয়স্ক বাবা-মায়ের ইচ্ছে-অনিচ্ছেকে গুরুত্ব দেওয়াই এখানে সমাধানের রাস্তা। ‘‘ছোটবেলায় সন্তানদের নিয়েই বাবা-মায়ের সময় কাটে। কিন্তু সন্তানদের নিজের জগৎ তৈরি হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তাঁরাও একা হতে থাকেন। তাই তাঁদের মনের কথা বলারও একটা সঙ্গী দরকার হয়। তাঁরা যদি সেটা খুঁজে পান তাহলে সেটা গ্রহণ করাটাই সন্তানদের উচিত। যে যুক্তিতে কিশোর বয়সের সন্তান গার্লফ্রেন্ড বা বয়ফ্রেন্ডের জন্য বাবা-মায়ের কাছে স্পেস চায়, সেই একই দাবি ওঁরাও করতে পারেন।’’ তাই পূজা তাঁর দ্বিতীয় ট্যুইটে খুবই পরিণত মানসিকতার পরিচয় দিয়েছেন বলে মত অনুত্তমার।

সেই পরিণত মননই হয়তো চাইছেন দেশের অনেক বাবা-মা। তা হলেই পূজা যেমন তাঁর প্রথম ট্যুইট মুছেছেন, তেমনই মোছা যাবে ঘিরে থাকা অপ্রয়োজনীয় অস্বস্তিগুলো।

anandaplus kabir bedi puja bedi kabir bedi wedding
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy