Advertisement
E-Paper

অটিজমের যুদ্ধ জয়ে শক্তিদাতা প্রসেনজিৎ, হাতিয়ার সিনেমাই

রোগ বেড়েছে, বাড়েনি সচেতনতা। সেই কাজটা করতে এগিয়ে আসছে সিনেমা। আজ, শুক্রবার মুক্তি পাচ্ছে ‘ফোর্স’। অটিজমের শিকার একটি শিশু এবং তাকে কেন্দ্র করে তার বাবার লড়াইয়ের গল্প। সমীক্ষা বলছে, বিশ্বে প্রতি ৫০০ শিশুর মধ্যে আর ভারতে প্রতি ২৫০ শিশুর মধ্যে এক জন অটিজমে আক্রান্ত। এ রাজ্যে সেই অনুপাতটা আরও বেশি। চিকিৎসকদের একাংশ বলছেন, ইদানীং এ রাজ্যে ১০০ জনের মধ্যে একটি শিশু অটিস্টিক।

জাগরী বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ০৭ নভেম্বর ২০১৪ ০২:০৩
ফোর্স ছবির একটি দৃশ্য।

ফোর্স ছবির একটি দৃশ্য।

রোগ বেড়েছে, বাড়েনি সচেতনতা। সেই কাজটা করতে এগিয়ে আসছে সিনেমা। আজ, শুক্রবার মুক্তি পাচ্ছে ‘ফোর্স’। অটিজমের শিকার একটি শিশু এবং তাকে কেন্দ্র করে তার বাবার লড়াইয়ের গল্প।

সমীক্ষা বলছে, বিশ্বে প্রতি ৫০০ শিশুর মধ্যে আর ভারতে প্রতি ২৫০ শিশুর মধ্যে এক জন অটিজমে আক্রান্ত। এ রাজ্যে সেই অনুপাতটা আরও বেশি। চিকিৎসকদের একাংশ বলছেন, ইদানীং এ রাজ্যে ১০০ জনের মধ্যে একটি শিশু অটিস্টিক। অথচ অসুখটি সম্পর্কে অনেকেই নানা রকম ভুল ধারণা পোষণ করেন। অটিজমকে পাগলামি বলে ধরে নেন। আজকাল সিনেমাকে কেন্দ্র করে নানা বিষয় আলাপ-আলোচনার কেন্দ্রে উঠে আসে। রোগব্যাধিও তার বাইরে নয়। প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায় অভিনীত ‘ফোর্স’ অটিজম নিয়ে সেটাই করে দেখাতে চাইছে।

গত কয়েক বছরে বলিউডে নানা অসুখবিসুখের গল্প নিয়ে একাধিক ছবি সাফল্য পেয়েছে। এমনকী বেশ কিছু রোগের কথা সাধারণ্যে ছড়িয়ে দিতেও বলিউডই একটা বড় ভূমিকা নিয়েছে। যেমন ‘তারে জমিন পর’-এর সূত্রে ডিসলেক্সিয়া বা ‘পা’-এর সূত্রে প্রোজেরিয়ার মতো অসুখের কথা মানুষের মুখে মুখে ছড়িয়ে পড়েছে। ‘মাই নেম ইজ খান’-এর শাহরুখ খান যেমন অ্যাসপারগার্স সিনড্রোম নিয়ে আলোচনা অনেক বাড়িয়ে দিয়েছিলেন। ‘ফোর্স’-এর মধ্য দিয়ে বাংলা ছবিও এ বার এই গোত্রে নাম লেখাতে চাইছে।

অটিজম নিয়ে পূর্ণাঙ্গ কাহিনিচিত্র বাংলা বা হিন্দিতে এর আগে খুব বেশি হয়নি। ‘বরফি’-তে অটিস্টিক মেয়ে ঝিলমিল-এর ভূমিকায় অভিনয় করে প্রিয়ঙ্কা চোপড়া সাড়া ফেলেছিলেন। ছোট পর্দায় চলতি ধারাবাহিক ‘জলনূপুর’-এ অপরাজিতা আঢ্য অভিনীত পারি-র চরিত্রটিকে নির্মাতারা অটিস্টিক বলে পরিচয় দিয়েছেন। যদিও চিকিৎসক-মনোবিদদের অনেকেরই বক্তব্য, পারিকে অটিজম-এর সঠিক রূপায়ণ বলা চলে না। কারণ, অটিজম-এর প্রধান লক্ষণ হলো, ভাব প্রকাশে সমস্যা। ধারাবাহিকের চরিত্রটি কিন্তু গড়গড় করে কথা বলে।

অনেকটা একই ধাঁচে কিছু দিন আগে পশ্চিমের এক নামী চলচ্চিত্র সমালোচকও ব্রিটিশ সংবাদপত্রে একটি লেখা লিখেছিলেন। তিনি লিখেছেন, ‘রেনম্যান’ অনেক দিন অবধি তাঁর খুব প্রিয় ছবি ছিল। অটিস্টিক চরিত্রে ডাস্টিন হফম্যানের অভিনয় তাঁকে মুগ্ধ করত। কিন্তু নিজের অটিস্টিক সন্তান জন্মানোর পরে তাঁর মনে হয়, ছবিতে অনেক ত্রুটি রয়েছে।

চিকিৎসাশাস্ত্রের বাস্তবতা আর কাহিনিচিত্রের বাস্তবতার এই ফারাক অবশ্য সবটা অতিক্রম করা যায় না বলে মানছেন চিকিৎসকরাই। ‘ফোর্স’ ছবির শিশু-অভিনেতাকে নিয়ে বিশেষজ্ঞদের দ্বারস্থ হয়েছিল ‘টিম ফোর্স’। স্পিচ থেরাপিস্ট সোমনাথ মুখোপাধ্যায় নিজে চিত্রনাট্য পড়েছেন। অটিস্টিক বাচ্চার হাবভাব কী রকম হওয়া উচিত, সে সম্পর্কে পরামর্শও দিয়েছেন। তাঁর মতে, ছবিতে যা দেখানো আছে, বাস্তবের সঙ্গে তার মিল ৬০-৭০ শতাংশ। তবে তাঁর মতে, ছবিতে বাচ্চাটির চেয়েও তার বাবা অর্থাৎ প্রসেনজিতের ভূমিকাটা অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, অটিস্টিক বাচ্চার লড়াইয়ের চেয়ে তার বাবামায়ের লড়াই কোনও অংশে কম তো নয়ই, বরং বেশি। প্রসেনজিৎ নিজেও ঠিক এই কথাই বলছেন। তাঁর কথায়, “ছবিটা করতে গিয়ে অটিস্টিক বাচ্চাদের বাবা-মায়েদের দেখলাম। আমি ওঁদের গল্পটাই বলতে চাই। পৃথিবীকে জানাতে চাই, স্পেশাল চাইল্ড-এর বাবা-মায়েরাও কতটা স্পেশাল হন।”

শুধু তাই নয়, প্রসেনজিতের উৎসাহেই এ শহরে অটিস্টিক সন্তানের বাবা-মায়েরা একজোট হওয়ার সুযোগ পাচ্ছেন। তাঁদের জন্য তৈরি হয়েছে একটি বিশেষ ওয়েবসাইট। সেখানে তাঁরা সবাই সবার অভিজ্ঞতা ভাগ করে নিতে পারবেন, একে অন্যের পাশে দাঁড়াতে পারবেন।

কিন্তু ছবিতে যে ভাবে অটিস্টিক ছেলেটি নামী অ্যাথলিট হয়ে ওঠে, সেটা কি বাস্তবে সম্ভব?

চিকিৎসকদের মতে, বর্ডারলাইন বা একেবারে প্রাথমিক স্তরের অটিজম থাকলে সম্ভব। সাধারণ ভাবে ১০০ জনের মধ্যে ২০ জনের বর্ডারলাইন কেস পাওয়া যায়। উপযুক্ত চিকিৎসায় তাদের অনেকটাই স্বাভাবিক জীবনে নিয়ে আসা যায়। সাধারণ স্কুলে পড়ানো যায়, কথা বলানো সম্ভব হয়। এদের অনেকেরই নানা রকম প্রতিভা থাকে, উপযুক্ত প্রশিক্ষণে তারও বিকাশ ঘটানো সম্ভব। কিন্তু আরও উপরের স্তরের অটিজম (মাইল্ড, মডারেট, সিভিয়র) থাকলে সেটা সম্ভব নয়। ছবিতে যে বাচ্চাটিকে দেখানো হয়েছে, তার হাবভাব অনেকটা মাইল্ডের মতো হলেও সে যতখানি বাধা অতিক্রম করে, সেটা প্রধানত বর্ডারলাইনেই পারা যায়।

কিন্তু ঘটনা হলো, এখনও অনেকেই সহজে মানতে চান না, তাঁর বাচ্চা অটিজমের শিকার। ফলে উপযুক্ত চিকিৎসার অভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় বাচ্চাটিই। ডাক্তাররা বলছেন, দু’বছরের মধ্যে বাচ্চার কথা না ফুটলে চিকিৎসকের কাছে যাওয়া প্রয়োজন। অনেক বাবামা তিন বছর অবধি অপেক্ষা করতে গিয়ে বিপদ বাড়িয়ে ফেলেন। অনেকে আবার দীর্ঘমেয়াদি থেরাপি (স্পিচ থেরাপি, স্পেশাল এডুকেটর, অকুপেশনাল থেরাপি, বিহেভিয়রাল মডিফিকেশন থেরাপি) করান না। সুতরাং সচেতনতা বাড়ানো আশু প্রয়োজন। আর সেই কাজটা সহজে করতে পারে সিনেমা।

ডাক্তার-থেরাপিস্টদের অভিজ্ঞতা বলছে, আগে বাবা-মায়েদের ডিসলেক্সিয়া কী, সেটা বোঝাতেই অনেক কাঠখড় পোড়াতে হতো। এখন কিন্তু ‘তারে জমিন পর’ বললেই সবাই বুঝতে পারেন। অটিজমের ক্ষেত্রে এ বার ‘ফোর্স’-এর কাছেও সেই ম্যাজিকটাই আশা করছেন তাঁরা।

autism force jagari bandyopadhyay prosenjit cinema awareness campaign
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy