Advertisement
E-Paper

আমিরের হাত ধরে হিরো অসমের ভিখারি

রাস্তায় লাঠি হাতে দাঁড়িয়ে অন্ধ ভিখারি। নাচতে নাচতে এসে তাঁর ভিক্ষার বাটি থেকে পয়সা তুলে পালালেন বলিউডের আমির খান! বাস্তব নয়। আমিরের ‘পিকে’ ছবির সেকেন্ড পাঁচেকের দৃশ্য। এটুকুতেই জীবন বদলেছে অসমের মনোজ রায়ের। দিল্লির যন্তরমন্তরের সামনে ভিক্ষা করে দিন কাটানো ওই তরুণের ভাগ্যে জুটেছে যশ। তাঁর নামে খোলা হয়েছে ‘ফেসবুক’ অ্যাকাউন্ট। এসেছে প্রেমও! কারণ, ছবির পর্দার ওই ভিখারি তো মনোজই।

রাজীবাক্ষ রক্ষিত

শেষ আপডেট: ১৮ ডিসেম্বর ২০১৪ ০১:৫৭
পিকে ছবির একটি দৃশ্যে আমিরের সামনে মনোজ।

পিকে ছবির একটি দৃশ্যে আমিরের সামনে মনোজ।

রাস্তায় লাঠি হাতে দাঁড়িয়ে অন্ধ ভিখারি। নাচতে নাচতে এসে তাঁর ভিক্ষার বাটি থেকে পয়সা তুলে পালালেন বলিউডের আমির খান!

বাস্তব নয়। আমিরের ‘পিকে’ ছবির সেকেন্ড পাঁচেকের দৃশ্য। এটুকুতেই জীবন বদলেছে অসমের মনোজ রায়ের। দিল্লির যন্তরমন্তরের সামনে ভিক্ষা করে দিন কাটানো ওই তরুণের ভাগ্যে জুটেছে যশ। তাঁর নামে খোলা হয়েছে ‘ফেসবুক’ অ্যাকাউন্ট। এসেছে প্রেমও!

কারণ, ছবির পর্দার ওই ভিখারি তো মনোজই।

তেজপুর জাহাজঘাটে জন্ম মনোজের। বয়স যখন চার দিন, তখন মারা যান তাঁর মা। বাবা মুটের কাজ করতেন। আচমকা তিনিও অসুস্থ হন। পঞ্চম শ্রেণিতেই স্কুল ছেড়ে চাকরির খোঁজ শুরু করেন মনোজ। কিছু না পেয়ে দিল্লি পাড়ি দেন। মূক-বধির-অন্ধ সেজে যন্তরমন্তরের সামনে ভিক্ষার বাটি নিয়ে বসেন। দিনে জমত শ’চারেক টাকা। এক দিন সব কিছু বদলে যায়। মনোজ জানান, সে দিন বিকেলে দু’জন তাঁর কাছে যান। অভিনয় করতে পারে কি না, তা জিজ্ঞাসা করেন তাঁরা। মনোজ বলেন, “অভিনয় করেই ভাত জোগাড় করছি। তাই এক কথায় বলে দিলাম, ভালই পারি। ওঁরা একটা মোবাইল নম্বর আর কুড়ি টাকা দিল।” পর দিন ওই নম্বরে ফোন করেন মনোজ।

তার পরই ঢাউস গাড়ি নিয়ে যন্তরমন্তরের সামনে হাজির হয় সিনেমা ইউনিটের লোকজন। তা দেখে চোখ কপালে মনোজের আশপাশের ভিখারিদের। নেহরু স্টেডিয়ামে ‘অডিশন’ দিতে নিয়ে যাওয়া হয় তাঁকে। সেখানে তখন হাজির আরও ৭-৮ জন ‘অন্ধ’ ভিখারি। পর পর কয়েক দিন ওই স্টেডিয়ামেই যেতেন তিনি। মনোজের কথায়, “কী সিনেমা, কে অভিনয় করছেন, পরিচালক রাজকুমার হিরানিই বা কে, কিছুই জানতাম না। বিনা পয়সায় ভাল খাবারের লোভেই ওখানে যেতাম।”

তেমনই এক দিনের কথা বলতে গিয়ে হেসে ফেলেন মনোজ। তিনি বলেন, “খাওয়াদাওয়ার পর এক দিন খুব সিগারেট খেতে ইচ্ছে করছিল। একটা অল্পবয়সী ছেলের কাছে গিয়ে সে কথা বললাম। ও পকেট থেকে সিগারেট বের করে দিল।” সেটা হাতে নিয়ে ফেরার সময় কয়েক জন ‘বডিগার্ড’ তাঁকে ঘিরে ধরে। মনোজ বলেন, “ওঁরা আমাকে বলল, তোর এত সাহস আমির খানের ছেলের কাছে সিগারেট চাস!”

সে দিনই মনোজ জানতে পারেন আমিরই ছবির নায়ক। বাকিদের বাদ দিয়ে শেষে মনোজকেই বেছে নেন পরিচালক। তার পরের গল্প একেবারেই যেন রূপকথা।

ওই তরুণের কথায়, “আমাকে একটা পাঁচতারা হোটেলে নিয়ে যাওয়া হল। তেজপুরে ব্রহ্মপুত্রে সাঁতার শিখেছি। দিল্লিতে স্নানের জায়গাই জুটত না। হোটেলের ঘরে বাথটাব, সুইমিং পুলে আরামে ডুব দিতাম!” সেই ঘোর এখনও কাটেনি মনোজের। তিনি বলে চললেন, “আমির খান, সুশান্ত সিংহ রাজপুত, অনুষ্কা শর্মার সঙ্গে সামনাসামনি আলাপ হল। সুশান্ত নিজে এসে কথা বললেন। অনুষ্কাও। আমিরকে বললাম, আমি তাঁর খুব বড় ফ্যান। সব যেন স্বপ্নের মতো লাগছিল।”

শু্যটিং এ ভাবেই শেষ হয়। শেষ হয় মনোজের রূপকথার দিনগুলোও। পারিশ্রমিক হাতে পেয়েই মুম্বইয়ের ট্রেনে চেপে বসেন মনোজ। ‘মায়ানগরী’ ঘুরতে গিয়ে নিমেষে পকেট ফাঁক। তিনি ফেরেন গুয়াহাটিতে। আমিরের সঙ্গে এক ছবিতে কাজ করার পর কি আর ভিক্ষার বাটি নিয়ে রাস্তায় বসা যায়? সে কথা ভেবে শোণিতপুরের বেদেতিতে একটি দোকানে কাজ নেন মনোজ।

‘পিকে’র বিজ্ঞাপন টিভিতে দেখানোর পর রাতারাতি ‘হিরো’ হয়ে যান তিনি। বেদেতির দোকানের কর্মী, খদ্দেররা তাঁকে ‘হানি সিংহ’ বলে ডাকতেন। তা বদলে যায় ‘পিকে হানি সিংহে’। এখন এক ডাকে তাঁকে চেনেন বেদেতির বাসিন্দারা। সোস্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটে তাঁর নামে অ্যাকাউন্ট খোলা হয়েছে। সেখানে প্রেমের প্রস্তাবও মিলেছে। সলজ্জ মনোজ জানান, বড়দিনে প্রথম বার প্রেমিকার মুখোমুখি হবেন তিনি। সবই আমিরের দয়ায়। তাঁর আশা, ‘পিকে’ মুক্তি পাওয়ার পর অসমীয়, বাংলা ছবির পরিচালকরাও তাঁকে কাজ করতে ডাকবেন। ফের তিনি ফিরবেন রূপকথার জীবনেই।

rajibaksha rakshit guwahati amir khan pk assam beggar manoj movie
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy