Advertisement
E-Paper

কামব্যাক করছেন স্বস্তিকা সঙ্গে ঋতু

পাঁচতারা হোটেলে তাঁকে এবং সুমন মুখোপাধ্যায়কে নিয়ে গুঞ্জনের এখনও এক মাসও হয়নি। ঠিক ২৯ দিন পরে ফিল্মে আবার কামব্যাক করছেন স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায়। সঙ্গে রয়েছেন ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত। লিখছেন ইন্দ্রনীল রায়পাঁচতারা হোটেলে তাঁকে এবং সুমন মুখোপাধ্যায়কে নিয়ে গুঞ্জনের এখনও এক মাসও হয়নি। ঠিক ২৯ দিন পরে ফিল্মে আবার কামব্যাক করছেন স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায়। সঙ্গে রয়েছেন ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত।

শেষ আপডেট: ২৩ জুন ২০১৪ ০০:০২

তোলপাড় পড়ে গিয়েছিল সে দিন শহরে।

এসএমএস, ফোন, টুইটার, হোয়াটসঅ্যাপ, ফেসবুক— সব আলোচনাতে তিনিই ছিলেন ‘ট্রেন্ডিং’।

তারিখটা ছিল শনিবার, ২৪ মে।

সে দিন সকালে কলকাতা শহরে হঠাৎ করে গুজব ছড়িয়ে পড়ে যে স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায় এক পাঁচতারা হোটেলে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছেন। সেই হোটেলে তাঁর সঙ্গে ছিলেন পরিচালক সুমন মুখোপাধ্যায়। এই নিয়ে তুমুল চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়। যা আজও খবরের কাগজের শিরোনামে প্রায়ই উঠে আসছে। এ হেন অবস্থায় প্রায় এক মাসের মাথায় আবার ফিল্মে কামব্যাক করছেন স্বস্তিকা। এবং যাঁর হাত ধরে তিনি এই কামব্যাক করছেন, তিনি পরিচালক মৈনাক ভৌমিক। সঙ্গে রয়েছেন ঋতুপর্ণা সেনগুপ্তও।

খবরটা শোনার পর দুঁদে পেশাদার সাংবাদিকেরও প্রথম প্রতিক্রিয়া ছিল, ‘হোয়াট’!!!

“অনেক দিন ধরেই মৈনাকের সঙ্গে কাজ করার
কথা চলছিল আমার। ওর বেশ কিছু ছবি আমি
দেখেছি।আমার জন্য যে রোলটা ও লিখেছে, সেটা
অসাধারণ।আর স্বস্তিকার সঙ্গেও এই প্রথম
কাজ করব। মনে হচ্ছে খুব মজা হবে”

—ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত

“আমি সব সময় বলেছি ঋতুদি অসম্ভব দক্ষ একজন
অভিনেত্রী। এবং শিবপ্রসাদের ছবিগুলো, মানে ‘মুক্তধারা’,
‘অলীক সুখ’য়ে ঋতুদির অভিনয় আমার বেশ ভাল লেগেছে।
এই ছবিতেও মৈনাক আমাদের দু’জনকে দিয়েই
সেরা কাজটা বের করে আনতে পারবে”
—স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায়

তার পর ধীরে ধীরে যখন ছবি সংক্রান্ত ডিটেলগুলো বলতে শুরু করলেন পরিচালক মৈনাক ভৌমিক, তখন বোঝা গেল এই বছরের অন্যতম চমকে দেওয়া কাস্টিংটা করে ফেলেছেন তিনি।

হ্যাঁ, তাঁর পরের ছবিতে এই প্রথম একসঙ্গে দেখা যাবে ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত ও স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায়কে।

ছবির নাম ‘গল্প ওদের’। সেপ্টেম্বর মাসের মাঝামাঝি শুরু হবে ছবির শ্যুটিং। কলকাতা ছাড়াও একটি অংশের শ্যুটিং হবে দার্জিলিংয়ে।

ছবিটি প্রযোজনা করছেন ‘আয়ান প্রিয়াংশি ফিল্মস’। এর আগে আবির চট্টোপাধ্যায়-রাইমা সেন অভিনীত ‘হৃদমাঝারে’ ছবিটিরও প্রযোজনা করেছেন তাঁরা।

তা স্বস্তিকা কী বলছেন তাঁর কামব্যাক নিয়ে? “ক্যামব্যাক আবার কী? আমি তো এখানেই ছিলাম। আর ব্যক্তিগত জীবনে আমি কী করছি তার সঙ্গে প্রোফেশনাল জগতের কোনও সম্পর্ক নেই,” সাফ জানাচ্ছেন স্বস্তিকা। আর সেই ঘটনার

পরে তিনি কি আজকে শারীরিক ভাবে সুস্থ? “আমি সেই দিনও সুস্থ ছিলাম। আজও সুস্থ আছি। এটুকু বলতে পারি পুরো ঘটনাটাকে তিলকে তাল করা হয়েছে,” নিজস্ব ভঙ্গিতে বলেন তিনি।

ঋতুপর্ণা-স্বস্তিকার কথায় যদি ফেরা যায়, তা হলে এর আগে ক্যামেরার সামনে এই দুই নায়িকা একটিমাত্রই কাজ করেছিলেন।

সেটা অবশ্য কোনও ছবির জন্য নয়। ২০০৮-এর শনিবারের ‘পত্রিকা’র জন্য করা পুজোর বিশেষ ফোটোশ্যুট।

তবে ‘গল্প ওদের’-এর আগেও টলিউডের অনেক পরিচালক ও প্রযোজক এই দুই নায়িকাকে একসঙ্গে আনার ক্রমাগত চেষ্টা করে গিয়েছেন, কিন্তু সফল হননি।

কী করে এত দিন পর এই অসাধ্যসাধন করলেন মৈনাক?

“আমি অনেক দিন ধরেই ঋতুদির সঙ্গে কাজ করতে ইচ্ছুক। ঋতুদি অসম্ভব ভাল অভিনেত্রী। অনেক বার একসঙ্গে কাজ করা নিয়ে কথা হয়েছে ওর সঙ্গে। অবশেষে আমি একটা স্ক্রিপ্ট লিখলাম, যেটা লেখার পর আমার মনে হল এই স্ক্রিপ্টটা আমার ঋতুদিকে শোনানো উচিত। সেই মতোই ওকে অ্যাপ্রোচ করি এবং ঋতুদির পছন্দ হয়ে যায় স্ক্রিপ্টটা। স্বস্তিকাকে তার পর গল্পটা শোনাই, সঙ্গে সঙ্গে স্বস্তিকা রাজি হয়ে যায়। তবে দু’জনেই যে এই প্রথম একসঙ্গে কাজ করছে এবং সেটা আমার ছবিতে— এর জন্য আমি ওদের দুজনের কাছেই কৃতজ্ঞ,” শনিবার বিকেলে ডোভার লেন-এর কফিশপে ব্ল্যাক কফিতে দু’কিউব চিনি দিতে দিতে বলছিলেন মৈনাক।

প্রথম বার একসঙ্গে। ২০০৮-এ শনিবারের পত্রিকার পুজো ফোটোশ্যুটে

কিন্তু সুমন মুখোপাধ্যায়ের ঘটনার পরে আপনার কি মনে হয়, এই ছবিটি স্বস্তিকার জীবনের সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ ছবি হতে চলেছে? এই ছবিতে কি আরও দৃঢ়তার সঙ্গে অনেককে ভুল প্রমাণ করতে ফ্লোরে ঢুকবেন স্বস্তিকা? “দেখুন, স্বস্তিকার ব্যক্তিগত জীবনে যাই হয়ে থাকুক, ওর কাজের জায়গায় কোনও দিন কোনও ক্ষতি হয়নি। এবং এই ছবিতে নিশ্চয়ই একটা দৃঢ়তা তো কাজ করবেই কিছু লোককে ভুল প্রমাণ করার,” বলেন মৈনাক। যে মানুষগুলোকে ভুল প্রমাণ করতে চাইবেন স্বস্তিকা, তার মধ্যে কি সুমন মুখোপাধ্যায়ও রয়েছেন? “না, আমার তা মনে হয় না। সুমন মুখোপাধ্যায়কে প্রমাণ করার কিছু নেই। লালদা ওর চ্যালেঞ্জও নয়। এই ছবিতে স্বস্তিকার সব চেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ ‘টেক ওয়ান’য়ে নিজের অভিনয়কে ছাপিয়ে যাওয়া,” বলেন পরিচালক।

কিন্তু এই ছবির বিষয়বস্তু কী?

“দেখুন, এই ছবিতে ঋতুদি আর স্বস্তিকা দুই বোন। ঋতুদির চরিত্রটা এমন একজন মহিলার, যে পুরো পরিবারের দায়িত্ব একা সামলায়। যদি এক লাইনে ঋতুদির চরিত্রটা আমাকে বলতে বলা হয়, তা হলে বলব এটা ‘মেঘে ঢাকা তারা’র নীতার চরিত্রের আধুনিক ভার্সান। আর স্বস্তিকা এখানে ঋতুদির বোন যে সেল্ফ-ডেস্ট্রাকটিভ, দায়িত্বজ্ঞানহীন এবং সেল্ফ অ্যাবিউসিভ। এ রকম একটা ফ্যামিলির গল্প।

এটুকু বলতে পারি এ রকম চরিত্রে দর্শক ঋতুদি ও স্বস্তিকাকে আগে দেখেননি,” বেশ আত্মবিশ্বাসের সুরে বলেন মৈনাক।

কিন্তু স্বস্তিকাকে আজকাল আপনি শুধু সেল্ফ-ডেস্ট্রাকটিভ, সেল্ফ অ্যাবিউসিভ চরিত্রই দিচ্ছেন কেন?

প্রশ্ন শুনে হেসেই ফেলেন মৈনাক।

“ওটা ওর আর আমার এক-একটা ফেজ চলে। এখন এই ফেজটা চলছে। খুব তাড়াতাড়ি দেখবেন আমি ওর জন্য অন্য চরিত্র লিখছি,” সিগারেট ধরাতে ধরাতে বলেন মৈনাক।

এবং দুই নায়িকা? তাঁরা কী বলছেন এই ছবিটা নিয়ে? কতটা উত্তেজিত তাঁরা ‘গল্প ওদের’ নিয়ে?

‘টেক ওয়ান’-এর পর আবার স্বস্তিকা আর মৈনাক একসঙ্গে। সঙ্গে ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত। প্রথম দিন থেকেই তো সেটে রোজ মিডিয়া আসবে।

“হ্যাঁ, এ রকম কাস্টিং, মিডিয়া তো রোজ আসবেই,” হাসতে হাসতে বলেন স্বস্তিকা।

আর ঋতুপর্ণার সঙ্গে এই প্রথম কাজ করা নিয়ে আপনার প্রতিক্রিয়া? “এর আগে ‘পত্রিকা’র জন্যই আমরা সেই সুপার গ্ল্যামারাস ফোটোশ্যুটটা করেছিলাম। ওটাই আজ অবধি আমাদের একসঙ্গে একমাত্র কাজ। তার পর এই ছবিটা। আমি সব সময় বলেছি ঋতুদি অসম্ভব দক্ষ একজন অভিনেত্রী। এবং শিবপ্রসাদের ছবিগুলো, মানে ‘মুক্তধারা’, ‘অলীক সুখ’য়ে ঋতুদির অভিনয় আমার বেশ ভাল লেগেছে। এই ছবিতেও মৈনাক আমাদের দু’জনকে দিয়েই সেরা কাজটা বের করে আনতে পারবে। আর মৈনাক আমার কাছে পরিবারের মতো। আমি বোধহয় একমাত্র ওর সঙ্গেই ছবি করি কোনও কনট্র্যাক্ট না পড়ে, কোনও স্ক্রিপ্ট না শুনে। এই ছবিটাও ও দারুণ করবে,” বলেন স্বস্তিকা।

আর ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত আপনাকে অভিনেত্রী হিসেবে কতটা চ্যালেঞ্জ করবে?

“দেখুন, ঋতুদি ভাল অভিনেত্রী। কিন্তু ঋতুদি চ্যালেঞ্জ করার থেকেও বেশি ইম্পর্ট্যান্ট আমি নিজেকে কতটা চ্যালেঞ্জ করতে পারছি। ফাঁকা মাঠে রোজ রোজ গোল দিতে কার আর ভাল লাগবে! সে দিক থেকে একটা হেলদি কম্পিটিশন তো ভালই। তাতে ছবির মান বাড়ে। আর এই ছবিতে আমার চরিত্রটাও খুব পছন্দের। আমি ঋতুদির ছোট বোন,” বলেন স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায়।

আর ঋতুপর্ণা? তিনি কী বলছেন?

“আমি খুব এক্সাইটেড। অনেক দিন ধরেই মৈনাকের সঙ্গে কাজ করার কথা চলছিল আমার। ওর বেশ কিছু ছবি আমি দেখেছি। একটা অদ্ভুত শহুরে স্মার্টনেস আছে ওর ছবিতে যা দর্শকরা পছন্দ করেন। এবং টালিগঞ্জের নতুন ডিরেক্টরদের মধ্যেও ও অন্যতম। আমার জন্য যে রোলটা ও লিখেছে, সেটা অসাধারণ। আর স্বস্তিকার সঙ্গেও এই প্রথম কাজ করব। মনে হচ্ছে খুব মজা হবে,” বলেন ঋতুপর্ণা।

কিন্তু মৈনাক আর স্বস্তিকা ছ’-ছ’টা ছবি একসঙ্গে করেছেন। টলিউডে কান পাতলেই অভিনেত্রী-পরিচালক হিসেবে ওঁদের দুর্দান্ত বোঝাপড়ার কথা শোনা যায়। তাই সেটে যখন আপনি ঢুকবেন, তখন অন্য হিরোইনের সঙ্গে পরিচালকের এ রকম আন্ডারস্ট্যান্ডিং কি ঋতুপর্ণা সেনগুপ্তকে ইনসিকিওর্ড করতে পারে?

“ধুর, আমি কোনও দিন কাউকে নিয়ে ইনসিকিওর্ড নই। হ্যাঁ, ওরা হয়তো অনেকগুলো ছবি করেছে একসঙ্গে। কিন্তু আমার মৈনাকের উপর সম্পূর্ণ আস্থা আছে। ওকে আমার খুব বুদ্ধিমান মনে হয়। আর এই ছবিতে আমার মেন রোল। সে নিয়ে মৈনাকের সঙ্গে আমার অনেকগুলো মিটিংও করার কথা আছে। সেই মিটিংগুলোর পর আমি নিশ্চিত মৈনাকের সঙ্গে আমার কেমিস্ট্রিটাও দারুণ হয়ে যাবে,” চুল ঠিক করতে করতে বলেন ঋতুপর্ণা।

অন্য দিকে মৈনাক ভৌমিকের কাছে ‘গল্প ওদের’ টাইটেলটি আরও একটি কারণে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ।

“আমার প্রথম ছবি ‘আমরা’র পর আবার আমার ছবিতে একটা বাংলা টাইটেল হল। না হলে শুধুই ইংরেজি টাইটেল হচ্ছিল। ‘বেডরুম’, ‘মাছ মিষ্টি অ্যান্ড মোর’, ‘আমি আর আমার গার্লফ্রেন্ডস’, ‘টেক ওয়ান’ থেকে ‘কলকাতা কলিং’ অনেক দিন পর বাংলা টাইটেল রাখতে পেরে আমিও খুশি,” বলেন মৈনাক।

এই মুহূর্তে তিনি বাকি ছবির কাস্টিং ঠিক করছেন।

তবে একটা কথা এখনই বলে দেওয়া যায়। ১২ জুলাই বিশ্বকাপ কে জিতবে সেই ভবিষ্যদ্বাণী এখনও কেউ করতে না পারলেও পুজোর আগে ‘গল্প ওদের’য়ের শ্যুটিংয়ের প্রথম দিন থেকেই যে মিডিয়া এবং ইন্ডাস্ট্রির নজর এই ছবির দিকেই থাকবে, তা জুন মাসের এই সোমবারেই বলে দেওয়া যায়।

rituparna swastika together film indranil roy
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy