Advertisement
E-Paper

দীপকের প্রত্যাবর্তন

এই শুক্রবার মুক্তি সৃজিতের ‘চতুষ্কোণ’। যেখানে বেশ কয়েক বছর পর আবির্ভাবে তিনি নাকি ম্লান করে দিয়েছেন অন্যদের। ইন্ডাস্ট্রিতে সি চক্রবর্তী। চিরঞ্জিত। আর প্যাক আপের পর দীপক চক্রবর্তী। মুখোমুখি ইন্দ্রনীল রায়।লিফ্টের জন্য দাঁড়িয়ে আছি। সামনে সারি সারি লেটার বক্স। সাদার্ন অ্যাভিনিউয়ের ফ্ল্যাট (এই ফ্ল্যাটের নয় তলাতেই পথের পাঁচালীর দুর্গা, উমা সেন থাকেন) এক তলার সেই লেটার বক্সের সারিতে তাঁর নাম খুঁজে পেলাম। ডি চক্রবর্তী। ততক্ষণে এসে গিয়েছে লিফ্ট । পাঁচ তলা...লিফ্ট থেকে বেরিয়ে ডান দিকে ফ্ল্যাট। কলিং বেল টিপলাম। নেমপ্লেটে লেখা সি চক্রবর্তী।

শেষ আপডেট: ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০০:০০

লিফ্টের জন্য দাঁড়িয়ে আছি।

সামনে সারি সারি লেটার বক্স। সাদার্ন অ্যাভিনিউয়ের ফ্ল্যাট (এই ফ্ল্যাটের নয় তলাতেই পথের পাঁচালীর দুর্গা, উমা সেন থাকেন) এক তলার সেই লেটার বক্সের সারিতে তাঁর নাম খুঁজে পেলাম।

ডি চক্রবর্তী।

ততক্ষণে এসে গিয়েছে লিফ্ট । পাঁচ তলা...লিফ্ট থেকে বেরিয়ে ডান দিকে ফ্ল্যাট। কলিং বেল টিপলাম। নেমপ্লেটে লেখা সি চক্রবর্তী।

দরজা খুললেন নিজেই। লাল সিল্কের হাতকাটা ফতুয়া আর পায়জামা। হাতে স্যামসাং নোট থ্রি। ড্রইং রুমে নিজের আঁকা তিনটে পেন্টিং। তাঁর বিখ্যাত বাবার পোর্ট্রেট দরজার পাশেই। টিভিতে চলছে এবিপি আনন্দ। টিভি বন্ধ করে বসতে বললেন তিনি।

“আমি একটু কনফিউজড। নীচে লেটার বক্সে দেখলাম ডি চক্রবর্তী, ওপরে দরজায় সি চক্রবর্তী। আমার সামনে যিনি এখন বসে আছেন তিনি কে?” জিজ্ঞেস করলাম তাঁকে।

প্রশ্ন শুনে হেসে ফেললেন। ইন্ডিয়া কিংসের প্যাকেট থেকে একটা সিগারেট বের করে ভারী গলায় বললেন, “দুটোই আমি। ডুয়াল পার্সোনালিটি। ডিপেন্ড করছে আপনি কেমন প্রশ্ন করছেন। বাংলা সিনেমা নিয়ে কথা বললে আমি সি চক্রবর্তী। শ্যুটিংয়েও তাই। সি চক্রবর্তী জ্যাজি ড্রেস পরে। গোটা গোটা ডায়লগ বলে। আবার প্যাক আপের পর আমি ডি চক্রবর্তী যে ছবি আঁকে,” বলে অ্যাশট্রেতে ছাই ঝাড়লেন তিনি।

শুরু হল আড্ডা।

কখনও দেখলাম চিরঞ্জিতকে। বেশ অনেক বার বেরিয়ে এলেন দীপক।

কখনও দেখলাম এক সময়ের এক সুপারস্টারকে। কখনও দেখলাম এক পেন্টারকে, কখনও দেখলাম বাংলা সিনেমার এক সমালোচককে। কখনও দেখলাম এক দ্বিধাগ্রস্ত রাজনীতিককে।

কথা বলতে গিয়ে মনে হল, বাংলা সিনেমার সেই ‘লস্ট জেনারেশন’য়ের নায়কের হয়তো সঠিক মূল্যায়নই করতে পারেনি টলিউড।

আমি থাকলে বুম্বার প্রবলেম ছিল

এর মধ্যে ইউএসএ থেকে ফোন আসে। কথা শেষ করে শুরু হয় আড্ডা। শুক্রবার তাঁর ছবি ‘চতুষ্কোণ’ মুক্তি পাবে। ছবির পরিচালক সৃজিত বলছেন আপনি নাকি সারপ্রাইজ প্যাকেজ, সবাইকে ম্লান করে দিয়েছেন?

“দাঁড়ান, লোকে ছবিটা দেখুক। আমার ভাল লেগেছে কাজটা করে। সৃজিত পরিচালক হিসেবে বুদ্ধিদীপ্ত, হার্ডওয়ার্কিং ছেলে।”

‘অটোগ্রাফ’য়ের পরে প্রসেনজিত্‌ চট্টোপাধ্যায়কে নতুন ‘লিজ অব লাইফ’ দিয়েছিলেন সৃজিত? এ বার তিনি সৃজিতের ছবিতে। তাহলে কি সৃজিতের জীবনের নতুন ‘জিত্‌’ তিনি?

“না, না, ও সব নিয়ে ভাবছি না। আমি আমার জায়গায় ভাল আছি। কাজ করছি, আঁকছি, বই পড়ছি, মোটামুটি যত টাকা কামিয়েছি তাতে আমার জীবন কেটে যাবে। এক সময় টালিগঞ্জের এক নম্বর হিরো ছিলাম। আনন্দবাজারই বলেছিল এক থেকে দশ আমি। তার পর তাপস, আর প্রসেনজিত্‌ তখন একটা ড্যাশ। ২০০০ সালে স্বেচ্ছা নির্বাসন নিয়ে নিই। দীপককে এক্সপ্লোর করতে ইচ্ছে করছিল,” বলেন চিরঞ্জিত।

‘চতুষ্কোণ’য়ে চিরঞ্জিত।

কিন্তু হঠাত্‌ করে খেলাটা ছেড়ে দিলেন কেন?

“দেখুন পুরোটাই ডেস্টিনি। হ্যাঁ, আমি থাকলে বুম্বার প্রবলেম ছিল। কিন্তু ওই যে আগে বললাম, আমার ৪০ পারসেন্ট সিনেমা আর বুম্বার ১০০ পারসেন্ট। এবং ও অসম্ভব প্যাশনেট অ্যাবাউট ফিল্মস। খুব পরিশ্রমী। সেটার জন্যই ও এই জায়গায়। আমার ছেড়ে দেওয়াটা হয়তো অত বড় ফ্যাক্টর নয়,” হাসতে হাসতে বলেন তিনি।

কথা বলতে বলতে বিশ্বাস হচ্ছিল না যাদবপুরের ইঞ্জিনিয়ার এই লোকটিই ‘বেদের মেয়ে জোছনা’ করেছিলেন? এই লোকটিই ‘কেঁচো খুঁড়তে কেউটে’ বলে একটা ছবির পরিচালনা করেছিলেন? আবার ইনি কি সেই লোক যিনি সত্যজিত্‌ রায় ছাড়া একমাত্র শিল্পী যিনি ‘সন্দেশ’য়ের প্রচ্ছদ আঁকার সুযোগ পেয়েছিলেন?

“হা হা হা, একটাই মানুষ। হ্যাঁ মানিকদা সুযোগ দিয়েছিলেন সন্দেশের প্রচ্ছদটা আঁকতে। ‘সীমাবদ্ধ’তে অবজার্ভার ছিলাম। ‘অশনি সঙ্কেত’য়ের ইন্ডোর শ্যুটিংয়েও ছিলাম।” কিন্তু সত্যজিত্‌ রায় তো তাঁকে কোনও দিন ছবিতে কাস্ট করেননি? “সত্যজিত্‌ রায় কেন? আমি কোনও দিন কোনও পরিচালককে বলিনি আমাকে কাস্ট করতে,” সাফ বলেন চিরঞ্জিত।

জয়শ্রী... বলো না... ওই সিনটা

কিন্তু যিনি গোদার থেকে কুরোসাওয়া গুলে খেয়েছেন, সেই মানুষটা কী করে ফেট্টি পরে ভিলেনকে মেরে বাড়ি এসে ‘রশোমন’ দেখতেন?

প্রশ্ন শোনার পর বেশ কিছুক্ষণ ভাবলেন তিনি। বুঝতে পারলাম চিরঞ্জিত নয়, এর উত্তর দেবেন দীপক।

ধীরে ধীরে বললেন, “আমার একটা থিয়োরি আছে। আমি যখন রোজ শ্যুটিং করতাম, অনেকের বাড়িতে নেমন্তন্ন থাকত। খেতে বসলেই ওঁরা বলতেন, আপনার ছবি আমরা দেখি না, উত্তমকুমারের ছবি দেখি। তখন তাঁদের জিজ্ঞেস করতাম, উত্তমকুমারের কোন ছবিটা দেখেছেন? এই প্রশ্ন করলেই দেখতাম বাড়ির কর্তা রান্নাঘরে বৌকে ডেকে বলছেন, ‘জয়শ্রী বলো না... আরে ওই ছবিটা... ওই সিনটা উত্তমকুমারের....’। বুঝতে পারতাম তাঁর মনে নেই কোন ছবি।”

কিন্তু এটা তো অবজারভেশন, থিয়োরিটা কী?

“আসছি থিয়োরির কথায়। এক সময় বাঙালি ভদ্রলোকেরা বৌ আর শালিদের চাপে রোববার সিনেমা হলে যেত। কিন্তু সারা সপ্তাহ কাজ করে এত টায়ার্ড থাকত যে হলে গিয়ে ঘুমোত। কিস্যু দেখত না। এর মধ্যেই টিভি এলো। টিভিতে ‘হারানো সুর’ আর ‘সপ্তপদী’ দেখানো শুরু হল। ভদ্রলোককে তার বৌ-শ্যালিকাকে আর হলে নিয়ে যেতে হত না। কয়েক বছর পর বৌ আর শালিও বন্ধ করে দিল হলে যাওয়া। এমন সময় বস্তিতে থাকা একটি মানুষ হলে ঢুকতে শুরু করল। হলে ঢুকে সে দেখল তার চেয়ারে অন্য কেউ বসে থাকলে তাকে উঠিয়ে দিচ্ছে হলের কর্মী। যার নিজের বাড়ির ঠিকানা নেই, সে এক টাকা ষাট পয়সার ওই সিটটাকে সিংহাসন ভাবতে শুরু করল। আর ওখানেই ঢুকলাম আমরা। ওদের টেস্টের ছবি করতে শুরু করলাম। বাংলা সিনেমাটাই বদলে গেল। আমাদের হাতেও কিছু ছিল না। মিডিয়াও পাত্তা দিত না। ‘লস্ট জেনারেশন’ হয়েই থেকে গেলাম আমরা”।

‘মা চাইলে....’ ডায়লগটা চাইনিজ হুইসপার হয়ে গেছে

আড্ডা মারার একঘণ্টার মধ্যেই বুঝতে পারি অ্যানালিসিসটা তাঁর মজ্জাগত। কিন্তু এত অ্যানালিসিস যিনি করেন তাঁর খারাপ লাগে না, যখন তিনি দেখেন আজকে তিনি বেঁচে আছেন মিমিক্রি আর্টিস্টদের মধ্যে দিয়েই? টিভি হোক বা গ্রামগঞ্জের ফাংশন, চিরঞ্জিত মানেই তো ‘বৌ চাইলে বৌ পাওয়া যায় রে... মা চাইলে...’।

“হ্যাঁ, ঠিকই বলেছেন । আর ওই ডায়লগটা আজকে চাইনিজ হুইসপারের মতো হয়ে গিয়েছে। পাগলা, গুরু, বোকা কত শব্দ জুড়ে গিয়েছে ওই ডায়লগটার সঙ্গে,” হাসতে হাসতে বলেন তিনি।

কেমন লাগে যখন শোনেন ওই ডায়লগটা? “বুঝতে পারি, ডায়লগটা আমার চলে যাওয়ার পরও থেকে যাবে। মিঠুনদাও দেখলে আমাকে ওই ডায়লগটা বলে। মীর তো ওর প্রোগ্রামে প্রায়ই বলে। খারাপ লাগে না। একটা আইকনিক ডায়লগের সঙ্গে তো যুক্ত থাকল আমার নাম। সেটাই বা কম কীসের?” ধীরে ধীরে বলেন তিনি।

কিন্তু যে লোকটা নর্মালি এত সাবলীল কথা বলেন, তাঁর কষ্ট হত না ওই টেনে টেনে ডায়লগ বলতে?

সঙ্গে সঙ্গেই উত্তর এল, “ওটা চিরঞ্জিত বলত। আর ভাল করলেন এই প্রশ্নটা করে। আমিও একটা প্রশ্ন করতে চাই। কখনও খেয়াল করেছেন আপনারা নিজের বাড়ির কাজের লোক, কী প্লাম্বার, কী ইস্ত্রিওয়ালার সঙ্গে কী ভাবে কথা বলেন? আস্তে আস্তে, ধীরে ধীরে বলেন, না কি গোটা গোটা করে কথা বলেন? গোটা গোটা করে বলেন তো। বাচ্চাকেও দেখবেন বাঘের গল্প বলার সময় ‘হালুম’ বলতে হয়। ওই যে টেনে টেনে গোটা গোটা ডায়লগ বলতাম সেটার কারণ ওই মানুষগুলো ওই ভাষাটাই বোঝে। কিন্তু কেউ জিজ্ঞেস করলে তো উত্তর দেব। কেউ জিজ্ঞেসও করেনি এত দিন,” বলেন চিরঞ্জিত।

কাজের লোকের পিগি ব্যাঙ্কের টাকাতেই আমাদের চলবে

এর মধ্যেই চা আর রোল আসে। জিজ্ঞেস করি কেমন দেখছেন এখনকার ইন্ডাস্ট্রি? বাংলা ছবি তো সেই রকম চলছে না?

“হ্যাঁ, চলবে কী করে? ইন্ডাস্ট্রিতে তো কমার্শিয়াল সিনেমাই চলছে না। আর এই আর্ট ফিল্মমেকাররা লোকেদের বোঝাতে পেরেছে যে ওদের সিনেমাই শ্রেষ্ঠ। এরা বুঝছে না, কমার্শিয়াল সিনেমা না থাকলে এই আর্ট ফিল্মমেকাররা মরে যাবে। কাজের লোকের পিগি ব্যাঙ্কের টাকাতেই আমাদের চলবে। শহুরে বাবুদের টাকায় নয়। এটাই সত্য,” বলেন চিরঞ্জিত।

বুঝতে পারি এই টপিকটা বলার সময় বেশ উত্তেজিত তিনি।

এর মধ্যেই বলেন এক শ্রেণির অভিনেতাদের কথাও যাদের উপরও তাঁর ক্ষোভ লুকিয়ে আছে।

“যখন আমরা, মানে আমি, বুম্বা আর তাপস, ইন্ডাস্ট্রিকে বাঁচাতে কমার্শিয়াল সিনেমা করছি তখন দেখলাম কিছু নাকউঁচু থিয়েটার অভিনেতা কাগজে-সেমিনারে বলতে শুরু করল বাংলা ছবি দেখা যায় না। আমরা ওদের দেখে হাসতাম। ওরা হিংসেয় বলত। জানতাম সিনেমায় চান্স পায়নি বলে থিয়েটার করছে। আমরা স্কচ খাই বলে বুক ফেটে যেত ওদের। তারপর যেই সিরিয়ালের রমরমা শুরু হল, সব ক’টা সিরিয়াল করতে ঢুকে গেল। তবে এটা ঠিক, এই আর্ট ফিল্ম মেকার আর থিয়েটার-অভিনেতারা আমাদের বিরুদ্ধে যে খারাপ ক্যাম্পেন শুরু করেছিল, দেখতে গেলে তাতে তারা বেশ সফলও হয়েছিল,” বেশ গম্ভীর ভাবেই বলেন শৈল চক্রবর্তীর ছেলে।

একটা আগল তো থাকবে রে ভাই

সিনেমা নিয়ে তো অনেক কথা হল। কিন্তু চিরঞ্জিত তো রাজনীতির সঙ্গেও জড়িত। মাঝখানে শোনা গিয়েছিল যে, তিনি ছেড়ে দিতে চাইছেন রাজনীতি। কথাটা কি ঠিক?

“কথাটা পার্শিয়ালি ঠিক। আসলে রাজনীতি খুব পিওরিটির জায়গা। সেখানে মানুষের কাজ করতে হবে। কিন্তু আমি দেখলাম যে মিটিংয়ে আমি যাই সেখানে লোকে আমার ডায়লগ শুনতে বা আমাকে দেখতেই আসে। আমার রাজনৈতিক ভাষণ শুনতে চায় না তারা। এটাও বুঝলাম পুরোপুরি রাজনীতিক নেতা হতে আমার আরও ১৫ বছর লাগবে। তত দিনে আমি ৭৮। অত দিন তো ভাই আমি বাঁচবই না। তা হলে এই রাজনীতি ছেড়ে দেওয়া উচিত নয় কি?” প্রশ্ন করেন তিনি।

কিন্তু তাঁর পার্টিতে তো সিনেমা স্টারের খুব ডিম্যান্ড। আপনি নিজে কী ভাবে দেখেন ব্যাপারটা?

“একটার পর একটা সিট জিতছে তো সিনেমার স্টাররা। তা হলে আপত্তি কোথায়?” তত্‌ক্ষণাত্‌ উত্তর দেন তিনি।

কিন্তু ইন্ডাস্ট্রির অন্য দীপক, দীপক অধিকারীকে যদি রোজ মানুষ দেখে ফেলে তা হলে তাঁর স্টার পাওয়ার কমবে না?

“কমবে তো বটেই। স্টারডমটাই চলে যাবে। আমি দুষ্টু লোককে ঘুসি মারি কিন্তু সেই ঘুসিটা সত্যি সত্যি হয় না। ওখানে দর্শককে চিট করা হয়। ওটাই সিনেমার ম্যাজিক। এই ম্যাজিকটাই মানুষ ভালবাসে। কিন্তু রোজ দেবকে দেখলে ওর স্টারডম চুরি হবেই। বুম্বাকে কিন্তু আপনি দেখবেন না সব জায়গায়। আমাকে আজও দেখবেন না। যে কারণে আমি ফেসবুক, টুইটারে নেই। একটা আগল তো থাকবে রে ভাই। আর দেব সম্বন্ধে একটা কথা বলি। ও খুব ভাল ছেলে। কিন্তু ওর এই উত্থানের পিছনে মিডিয়ার বিরাট হাত আছে। ও মিডিয়ার ডার্লিং। ওকে নিয়ে হাইপ বেশি,” বলেন চিরঞ্জিত।

কথায় কথায় জানতে পারি বাংলা ছবির বক্স অফিস নিয়েও প্রায় সব খবরই রাখেন তিনি।

“এই যে ‘বুনো হাঁস’য়ে দেবকে নিল। এটা কী? এটা হচ্ছে আর্ট ফিল্মমেকারদের দেবের কাঁধে চড়ে ছবি হিট করার প্ল্যান। কিন্তু সে রকম চলল কই? ‘বিন্দাস’ও তেমন চলল না। খুব খারাপ সময় যাচ্ছে। চিটফান্ডের প্রোডিউসররাও নেই, সেই টাকাটাও হাওয়া। বক্স অফিসে ছবি না চললে ইন্ডাস্ট্রির বিরাট ক্ষতি হবে কিন্তু,” সাফ বলেন তিনি।

প্রায় দু’ঘণ্টার আড্ডায় তাপস পালের প্রসঙ্গটাও তুলি। প্রশ্ন শুনেই মাথা নাড়েন তিনি। “খুব ভুল করেছিল তাপস। ও এমনিতে দুমদাম কথা বলে কিন্তু কে জানে এটা কেন বলল? আমার কিন্তু খালি মনে হয় ও খুব প্রেশারে ছিল,” বলেন তিনি।

আড্ডা তখন শেষের মুখে। নিজের তৈরি ‘হুইল’ কী ভাবে তাঁকে শান্তি দেয় বলেন সে কথা। ঋতুপর্ণ ঘোষ তাঁর গলা ‘বাড়িওয়ালি’তে ডাব করিয়ে নেওয়াতে যে তিনি খুশি হননি সেটাও জানান। সব্যসাচী চক্রবর্তী, যিনি ডাব করেছিলেন, তাঁর প্রতিও যে একটা হাল্কা অভিমান রয়েছে তা বুঝতে পারলাম। বুঝতে পারি আজকালকার ডিরেক্টরদের তাঁর সময়ে পাননি বলে একটা দুঃখ থেকে গিয়েছে তাঁর মনে।

জানলাম, ‘চতুষ্কোণ’য়ের রিলিজ আর এই পুজোয় নিজের সিডি প্রকাশ নিয়ে এই মুহূর্তে খুব ব্যস্ত তিনি। ফ্ল্যাটের দরজা খুলেও প্রায় দশ মিনিট দাঁড়িয়ে কথা হল সেই নিয়ে।

লিফ্টের কাছে পৌঁছে দিতে দিতে বললেন, “আসলে জানেন, সিনেমাটা সেই রকম কোনও মহত্‌ ব্যাপার নয়। যদি হত, তা হলে তো নোবেল প্রাইজ ফর সিনেমা দিত, দেয় না তো। তাই সিনেমার পাশাপাশি ওই আপনার লেটার বক্সের ‘ডি চক্রবর্তী’কে বাঁচিয়ে রেখেছি। ওই আমাকে অক্সিজেন জোগায়,” চুলে হাত দিয়ে বলেন তিনি।

উঠে পড়ি লিফ্টে, আস্তে আস্তে বন্ধ হয় দরজা। দেখতে পাই দরজার ও পাশে দাঁড়িয়ে আছেন তিনি। নিজেকেই জিজ্ঞেস করি, লিফ্টের ও পাশে দাঁড়ানো লোকটা কে? ‘ডি চক্রবর্তী’ নাকি ‘সি চক্রবর্তী’?

নেমে যায় লিফ্ট। ডায়লগটা থেকে যায়...

‘চিরঞ্জিত চাইলে চিরঞ্জিত পাওয়া যায় রে... কিন্তু দীপক চাইলে ......’

ছবি: সুব্রত কুমার মণ্ডল।

chiranjeet dipak chakraborty indraneil roy chatuskan
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy