Advertisement
E-Paper

দোহাই আমায় অমিতাভো ডাকবেন না

এই শহর জানত তাঁর প্রথম সব কিছু। সেই সময়ের এক দোসর কিশোর ভিমানি লিখছেন ইংরেজি নাটকের জগতে তাঁর অখ্যাত সতীর্থর কথা। পরে যিনি বলিউড পাড়ি দিয়ে নিজেই ইতিহাস হয়ে যান। এই শহর জানত তাঁর প্রথম সব কিছু। সেই সময়ের এক দোসর কিশোর ভিমানি লিখছেন ইংরেজি নাটকের জগতে তাঁর অখ্যাত সতীর্থর কথা। পরে যিনি বলিউড পাড়ি দিয়ে নিজেই ইতিহাস হয়ে যান।

শেষ আপডেট: ০৮ অক্টোবর ২০১৪ ০০:০০

ষাটের দশকের কলকাতার স্মৃতি রোমন্থন করার এত রসদ রয়েছে যে এই লেখার সঙ্গে সেই পরিবেশটাকে একাত্ম না করতে পারলে অমিতাভ বচ্চনের মতো সুপারস্টারের উত্থান বুঝতে বেশ খানিকটা সময় লাগবে।

সেই সময়ের পার্ক স্ট্রিট মানেই গান আর সুরের মূর্ছনার এক অনবদ্য ভুবন। পার্ক স্ট্রিটে তখন দেখা মিলত অসংখ্য গায়কের যাঁরা রাতের বেলা ট্রিঙ্কাস, মোকাম্বো, প্রিন্স আর ব্লু ফক্স-য়ে তাঁদের গানের সময়টা ভাগ করে নিতেন। আবার দিনের বেলা অস্ট্রেলিয়া বা ইংল্যান্ডে পাড়ি দেওয়ার জন্য ভিসা ফর্ম ভর্তি করতেন। দেখা মিলত অনেক শেফের যাঁরা দুর্ধর্ষ সব কাবাব, বিরিয়ানি, কাটি রোল পরিবেশন করতেন অতিথিদের। আর শেভিস, ক্যাডিলাকের মতো প্রকাণ্ড সব আমেরিকান গাড়িতে আসা তরুণেরা সুন্দরীদের মন জুগিয়ে সঙ্গিনী হিসেবে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করতেন ডান্স বার-এ।

জ্যাজ ওয়ান্ডার পাম ক্রেনকে তখন গাইতে দেখা যেত ফক্স-এ, ডেলিলা আসর জমাতেন মুলা রুঁজ-য়ে। ইভকে গাইতে দেখা যেত এল মরক্কোতে। উষা উত্থুপ তখন উষা আয়ার। শাড়ি পরা, কপালে টিপ উষা গাইতেন কানায় কানায় ভর্তি ট্রিঙ্কাস-এ। আগে থাকতে বুক করে না রাখলে ওখানে জায়গা পাওয়া যেত না। জোশুয়া বা পুরীর সঙ্গে পরিচয়ের খাতিরেও সিট মিলত কখনও কখনও। ‘দ্য ট্রোজানস’ ছিল সেই সময়ের এক দুর্ধর্ষ ব্যান্ড। আচমকা কোনও রাতে পারফর্ম করতে দেখা যেত তাঁদেরও। পার্ক স্ট্রিটের দক্ষিণ পশ্চিম কোনার সুইঙ্গিং রেস্তোরাঁয় দু’জনের টেবিলে বহু রাতেই দেখা মিলত অমিতাভ বচ্চনের। তখন দিল্লির কিরোরি মাল কলেজের সদ্য পাস-আউট। তখনকার পার্ক স্ট্রিটের বেশ আলোচিত এক সুন্দরীর সঙ্গে বসে থাকতে দেখা যেত বচ্চনকে। আর ওদের কনট্রাস্টটাও ছিল দেখার মতো। এক দিকে অত লম্বা অমিতাভ, অন্য দিকে ছোটখাটো পেলব চেহারার তার বান্ধবী। কোনও পার্টিতেই আলাদা করা যেত না ওদের। তবে এর পর অমিতাভ যখন বলিউডে পাড়ি দিল, সেখানেই ইতি হল ওদের সেই সম্পর্কের। সেই মহিলা পরে বিয়ে করেন বিখ্যাত এক অভিনেতাকে।

অমিতাভ তখন লাজুক। খুব কম কথা বলে। ছেলেছোকরাদের হই-হট্টগোল, নাইট আউট থেকে নিজেকে দূরে রাখত। ওর প্যাশন ছিল একটাই থিয়েটার। ষাটের দশকের কলকাতায় ইংরিজি ভাষার দু’টো থিয়েটার গ্রুপ খুব জনপ্রিয় ছিল।

একটা ‘দ্য ড্রামাটিক ক্লাব অব ক্যালকাটা’। অন্যটা ‘দ্য অ্যামেচার্স’। প্রথম ক্লাবটা পঞ্চাশের দশকে তৈরি করেছিলেন ডেভিড স্ট্রাইড। সেই ক্লাবের মান্যগণ্য সদস্যরা ছিলেন দেশ ছেড়ে আসা, বক্সওয়ালা ইংরেজরা। স্ট্রাইড হ্যামলেটের নামভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন। পরিচালনা করেছিলেন শ’র ‘আর্মস অ্যান্ড দ্য ম্যান’। তখন তিনি ভাবছিলেন হ্যারল্ড পিন্টার আর স্যামুয়েল বেকেটের এক্সপেরিমেন্টাল থিয়েটার নিয়ে কী করা যায় তা নিয়ে। ভারতীয় দল ‘দ্য অ্যামেচার্স’য়ের আমিও এক সদস্য ছিলাম। বিমল ভগত, কমল ভগত, জুনি বসু (জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত পরিচালিকা সোনালি বসুর মা) এমনকী দ্য গ্রেট জাহিদ বেগ এঁরা সকলেই ছিলেন ‘দ্য অ্যামেচার্স’-এর সদস্য। জুনির ছোট বোন বৃন্দা আমাদের সঙ্গে যোগ দেন কিছু পরে। ওঁর মতো স্টেজ-ব্যক্তিত্ব আমি খুব কমই দেখেছি। সেই বৃন্দাই এই সময়ের রাজনীতিক আর আন্দোলনকর্মী বৃন্দা কারাত।

অমিতাভ তখন সবে দিল্লি থেকে এসেছে। খুব উত্‌সাহের সঙ্গে ঝাঁপিয়েও পড়েছিল ‘দ্য অ্যামেচার্স’য়ের নানা প্রোডাকশনে। দেখে মনে হত ওটাই বুঝি ওর একমাত্র শখ। আমি তখন অ্যামেচার্স-এর হয়ে জেপি ডনলিভির ‘জিঞ্জার ম্যান’য়ের প্রোডাকশন এবং পরিচালনা দুটোই করছিলাম। পর্দার পিছনে বচ্চন আমাকে প্রোডাকশন আর সেট এই দুই কাজেই সাহায্য করত। রিহার্সালে কেউ গরহাজির থাকলে, অমিতাভ প্রবল উত্‌সাহে বুঝতেই দিত না যে কেউ একজন নেই। আর বলাই বাহুল্য, ওর ওই ব্যারিটোন কণ্ঠস্বর চরিত্রে যেন প্রাণ দিত। অমিত ‘জিঞ্জার ম্যান’ নাটকে সেবাস্টিয়ান ডেঞ্জারফিল্ড চরিত্রের জন্য অডিশন দিয়েছিল। দুর্ভাগ্য, এক বোহেমিয়ান আইরিশ ম্যানের চরিত্রের তুলনায় বেশি শহুরে আর পোলিশড ছিল অমিতাভ। সেই চরিত্রের জন্য বেছে নেওয়া হয়েছিল এক আমেরিকানকে।

এত উত্‌সাহ ছিল বচ্চনের, আর ও রকম লম্বা একজন মানুষ! ওর উপস্থিতিতে আমাদের রিহার্সালের পরিবেশটাই কেমন পাল্টে যেত। শিপিং এজেন্ট কোম্পানি ‘ব্ল্যাকার অ্যান্ড কোম্পানি’তে অমিতাভর সহকর্মী বিজয় কৃষ্ণ ‘জিঞ্জার ম্যান’য়ে ও’কিফির চরিত্রটি করছিলেন। কৃষ্ণ মুম্বইয়ের এক প্রথিতযশা নাট্যাভিনেতা। সঞ্জয় লীলা বনশালির ‘দেবদাস’য়ে দেবদাসের বাবার চরিত্রে দেখা গিয়েছিল তাঁকে।

আমাদের ‘দ্য অ্যামেচার্স’য়ের আরেক সদস্য ছিলেন রীতু কুমার। ভারতের অন্যতম নামকরা ডিজাইনার। ষাটের দশকের শেষের দিকে ওয়েলেসলি স্ট্রিটে রীতু যখন তাঁর প্রথম বিপণিটি খুলছিলেন, আমরা টুকটাক সাহায্য করে দিয়েছিলাম ওঁকে। যদিও দোকানের উঁচু তাকগুলোয় রীতুর পোশাকআশাক তুলে রাখতে সাহায্য করেছিল অমিতাভ স্বয়ং। মনে আছে রীতু বলেছিলেন লম্বা হওয়াটা কত কাজে দেয় সময় সময়।

অমিতাভ, মানে আমাদের অমিত তখন খুব অস্থির। বলিউড তখন ওর শয়নে-স্বপনে-নিদ্রায়। ইন্ডাস্ট্রিতে ও তখন ওর ঘনিষ্ঠ চেনা-পরিচিতদের মধ্যে খোঁজ নিচ্ছে বলিউডের খুঁটিনাটি সম্পর্কে। বিদায়ী এক নাটকে অমিতাভ অভিনয় করল তখন। এডওয়ার্ড অ্যালবির মাস্টারপিস ‘হু’জ অ্যাফ্রেড অব ভার্জিনিয়া উলফ?’ নাটকটা তখন করবে বলে মনস্থ করে নিয়েছিল ভগত্‌ ভাইয়েরা। হলিউডে এই প্রোডাকশনে অভিনয় করেছিলেন রিচার্ড বার্টন, জর্জ সিগাল, এলিজাবেথ টেলরের মতো নামীদামি অভিনেতারা। গ্রুপ মিটিংয়ে যখন এই নাটকটা নিয়ে আলোচনা হচ্ছিল, আমি ওটার বিরুদ্ধে ভোট দিয়েছিলাম। কারণ একটাই। এক তো নাটকটা করা খুব কঠিন ছিল। আর হলিউডের একটা তুলনা এই নাটকটা করতে গিয়ে চলে আসতই। কিন্তু ভগত ভাইরা, ওদের বোন মীরা প্রত্যেকেই গোঁ ধরে বসল। কি না নাটকটা ওরা করেই ছাড়বে। অমিত নিজেও নাছোড়বান্দা। ও চাইছিল রিচার্ড বার্টনের চরিত্রটা করতে। যদিও পরে তরুণ অধ্যাপকের চরিত্রটাই ও করে।

নাটকটা মঞ্চস্থ হয়েছিল বিদ্যা মন্দিরে। আর যাকে বলে রাতারাতি হিট। আমি নিজে নাটকটার রিহার্সাল এত বার দেখলেও মনে আছে দু’রাত থিয়েটারে বসে দেখেছিলাম। এই নাটকটা মঞ্চস্থ হওয়ার পর একটা খুব ইন্টারেস্টিং পোস্ট স্ক্রিপ্ট মনে করতে পারি। কলকাতার একটা ইংরেজি খবরের কাগজই তখন ইংরেজি থিয়েটারের সমালোচনা করত। নাটকটা দেখে সমালোচক তাঁর জ্ঞান যথাসম্ভব উজাড় করে তাঁর বক্তব্যে লিখেছিলেন, ‘বিমল ভগত এবং মার্সিয়া গ্রাহামের পারফর্ম্যান্স, ওঁদের উচ্চারণ স্বকীয়তা, স্থান-কাল-পরিবেশের সঙ্গে যথাযথ সামঞ্জস্য রেখে অভিনয়, ওঁদের সাবলীল কথাবার্তা সত্যিই অনবদ্য। মীরা ভগতের অভিনয়ও প্রমাণ করে অভিনেত্রী হিসেবে তিনি কতটা সাবলীল। স্বতঃস্ফূর্ত। তবে মিস্টার বচ্চনের চলাফেরার অদ্ভুত ভঙ্গি আর পার্ক স্ট্রিট মার্কা অদ্ভুত উচ্চারণ শুনে সমালোচক এর পর মিস্টার বচ্চনকে পরামর্শ দেন তাঁর মতো ঢ্যাঙা, উচ্চাকাঙ্ক্ষী থেসপিয়ানের উচিত পেশা হিসেবে অন্য কিছু বেছে নেওয়া। কারণ তিনি না কি কোনও দিনই অভিনয় করে পয়সা উপার্জন করতে পারবেন না!’

এখনও সেই সময়ের কেউ কেউ আছেন যাঁদের কাছে হলদেটে হয়ে যাওয়া স্মরণীয় সমালোচনার সেই পাতাটা রয়ে গিয়েছে। অস্ট্রেলিয়াতে এক মহিলার সঙ্গে দেখা হয়েছিল। কলকাতায় থাকতে তিনি আমাদের এই থিয়েটার দলের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তাঁর কাছে আমার নাটক ‘দ্য জিঞ্জার ম্যান’য়ের এক কপি ব্রোশিওর রয়েছে। সেই নাটকে অমিত অভিনয় করেছিল এক স্টেজ ম্যানেজারের চরিত্রে!

বাংলার সঙ্গে অমিতের এক অদ্ভুত আধ্যাত্মিক যোগসূত্র আছে। নইলে এলাহাবাদের ছেলে হয়ে, এক সংবেদনশীল কবিপুত্র হয়ে, দিল্লিতে পড়াশোনা করা সম্ভাবনাময় এক্সিকিউটিভ হওয়া সত্ত্বেও কলকাতায় এসে এখানকার থিয়েটারের সঙ্গে ও জড়িয়ে পড়ত না। ওর জীবনের শুরুর দিকের কিছু মূল্যবান সময়, কিছু বেড়ে ওঠার মুহূর্ত এখানকার এক শিপিং কোম্পানিতে কাটায়। অবশেষে বাংলারই জামাই হয়ে ওঠে!

কলকাতার সঙ্গে ওর বাঁধনটা মজবুত হলেও এই শহরের কিছু কিছু বিষয়ে অমিতাভ বেশ খুঁতখুঁতে ছিল। বাঙালি উচ্চারণে অমিতাভ-টা অনেক সময় ‘অমিতাভো’ শোনায়। আর বচ্চনের সবচেয়ে ভয় ছিল সেটাই। ও বেশ জেদের সঙ্গেই বলত আমরা যদি ওকে ছোট কোনও নামে ডাকতে চাই, তা হলে যেন অমিত বলে ডাকি।

ওই দিনগুলোর কথা ভাবলে মনটা এক অদ্ভুত ভাল লাগায় ভরে যায়। অমিত ক্রিকেটপাগল ছিল। এখনও খুব উত্‌সাহ নিয়ে ক্রিকেট ফলো করে ও। এ শহরে আসার এক্কেবারে শুরুর দিকে অমিত ইডেন গার্ডেন্সে একটা চ্যারিটি ক্রিকেট ম্যাচ খেলতে এসেছিল। অত্যন্ত উত্‌সাহের সঙ্গে সাদরে এ শহর তখন বরণ করে নিয়েছিল ওকে।

নাটক করতে গিয়ে সেই দেখা সাক্ষাতের পর বহু বছর হল আমি অমিতাভকে শুধু পর্দাতেই দেখেছি। অথবা দেখেছি কোনও বিশেষ ‘পাবলিক’ অনুষ্ঠানে এই শহরে। সত্যি বলতে আমি কোনও দিনই হিন্দি সিনেমার ভক্ত নই। সে কারণেই হয়তো বচ্চনের ‘অ্যাংগ্রি ইয়ংম্যান’ ইমেজ কোনও দিনই আমাকে টানেনি। ও রকম ভদ্র, সুপুরুষ চেহারার এক মানুষকে বালি-রক্ত মাখামাখি অবস্থায় দেখতে কেমন যেন উদ্ভট লাগত আমার। মনে আছে মাঝে মাঝেই আমি এই নিয়ে অভিযোগ করতাম ওর কাছে যে ২৩ জন লোক আর তিনটে কুকুরের সঙ্গে যুযুধান লড়াইয়ের পরেও কেন ওর মাথার সব চুল অক্ষত থাকত।

তবে মনে রাখার মতো আরও কিছু ছিল। আশির দশকে মাঝে মধ্যেই আমি সিডনি যেতাম। ওখানে আমার লম্বা, সুপুরুষ ডাক্তার বন্ধুর সঙ্গে সময় কাটাতাম। এলিজাবেথ বে, ভ্যাক্লুজের মতো সিডনির অভিজাত সব অঞ্চলে প্লে-বয় হিসেবে বিশেষ সুখ্যাতি ছিল আমার সেই বন্ধুর। একদিন সন্ধেবেলা আমার বন্ধুর প্রাসাদোপম বাড়ির বাগানে বসে ওর অস্ট্রেলীয় লিভ-ইন বান্ধবীর সামনে আমি বচ্চনকে খারিজ করেছিলাম। আর তার পরেই ঘটল সেই আশ্চর্য ঘটনা। ওর সেই গার্লফ্রেন্ড সুজান অমিতের ‘শরাবি’ সিনেমার ‘লোগ কহতে ম্যঁয় শরাবি’ গানটা ওর টিপিক্যাল কুইন্সল্যান্ড উচ্চারণে শুধু গাইল তা-ই নয়, আমাকে এ-ও বলল ওর অস্ট্রেলীয় বন্ধুদের সঙ্গে সিনেমাটা বার তিনেকেরও বেশি দেখে ফেলেছে। শুধু অস্ট্রেলিয়াই কেন? একই অভিজ্ঞতা হয়েছিল দক্ষিণ আফ্রিকার কেপ টাউনেও।

কাজেই অমিতের সমালোচনা? নৈব নৈব চ। দেশের বাইরে বিদেশেও এমন অমিতমহিমা বিস্তার করা বোধহয় একমাত্র অমিতাভ বচ্চনের পক্ষেই সম্ভব। একবার পাকিস্তানে প্রয়াত মেহদি হাসান আমাকে বলেছিলেন অমিত ‘পয়গম্বর’।

এর থেকে বড় স্বীকৃতি জীবনে আর কী-ই বা হতে পারে!

ছবি: কৌশিক সরকার।

kishor bhimani amitabh bachchan special amitabh bachchan issue ananda-plus
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy