Advertisement
E-Paper

ধনতেরাসের টানে

আগে ছিল বাসনকোসন কেনা! এখন সোনারুপো। লিখছেন সংযুক্তা বসু।কীহল হঠাৎ বাঙালির? কাব্যচর্চা ছেড়ে মজেছে বিত্তচর্চায়। তা না হলে ধনতেরাসের রাতে তারাও বেরিয়ে পড়ে গয়নাগাটি কিনতে! বাঙালি এখন বিনিয়োগে বিশ্বাসী হল নাকি? আগে বাসনপত্র কেনা হত ধনতেরাসে। তার পর এল সোনা। এ বার বাঙালি রুপো কিনছে। আর তা ছাড়া এখন তো অনলাইনেও ধনতেরাসের কেনাকাটায় মাতবে বাঙালি। শুধু তাই নয় হাল্কা গয়না কেনাও এ বারের নতুন ট্রেন্ড।

শেষ আপডেট: ১৭ অক্টোবর ২০১৪ ০০:০০

কীহল হঠাৎ বাঙালির?

কাব্যচর্চা ছেড়ে মজেছে বিত্তচর্চায়।

তা না হলে ধনতেরাসের রাতে তারাও বেরিয়ে পড়ে গয়নাগাটি কিনতে! বাঙালি এখন বিনিয়োগে বিশ্বাসী হল নাকি? আগে বাসনপত্র কেনা হত ধনতেরাসে। তার পর এল সোনা। এ বার বাঙালি রুপো কিনছে। আর তা ছাড়া এখন তো অনলাইনেও ধনতেরাসের কেনাকাটায় মাতবে বাঙালি। শুধু তাই নয় হাল্কা গয়না কেনাও এ বারের নতুন ট্রেন্ড।

আসল কথা হল গণেশ চতুর্থী আপন করে নেওয়ার পর এ বার বাঙালির কাছে কালীপুজো মানে এখন ধনতেরাসও বটে। মেয়েদের সঙ্গে পুরুষেরাও শামিল হচ্ছেন বিত্ত কেনাকাটায়। ধনকুবের এ দিন মর্তে এসে ঐশ্বর্য বিতরণ করেন। আর সেই বৈভবের ছোঁয়া পেতে চাইছে বাঙালি। চায় লক্ষ্মীলাভ। আর তারই ফলে হুজুগপ্রিয় বাঙালির জীবনে জুড়ে গিয়েছে আর এক উৎসব। ধনতেরাস। আগে কেবল মাড়োয়ারি-গুজরাতিরাই এই উৎসব পালন করতেন। এখন বাঙালিরাও শামিল।

ডিজাইনার অগ্নিমিত্রা পল বললেন, “ধনতেরাসে এখনও জামাকাপড় কেনার চল হয়নি। অবাঙালি ক্লায়েন্টরা দিওয়ালিতে পরার জন্য পোশাক কেনেন। কিন্তু সেটা দিওয়ালির খরিদ্দারি। ধনতেরাসে লোকে ধাতব জিনিসই বেশি কেনে। আমি যেমন ততটা সোনা কিনি না। কিনি ঠাকুরের জন্য রুপোর বাসনপত্র। এইগুলো যেমন ধনবৃদ্ধি করে, তেমনি পুজোর কাজেও লেগে যায়।” অন্য দিকে কোয়েল মল্লিক নিজে কিছু না কিনলেও বিশ্বাস করেন ধনতেরাসে। বললেন, “আমি নিজে কিছু না কিনলেও মা এবং শাশুড়ি-মা দু’জনেই ধনতেরাসে কিছু না কিছু কেনেন। হয় রুপোর গণেশ, নয়তো বা সোনার মুদ্রা বা বাসন বা গয়না। আমি নিজে না কিনলেও এই কেনাকাটাটা উপভোগ করি।” নায়িকা পায়েল সরকার নিজে দোকানে গিয়ে কেনাকাটা করেন। কেন এই কেনাকাটা? “পুজোর আগে যেমন একটা শপিং থাকে তেমনি কালীপুজোর আগেও ধনতেরাস। ঐশ্বর্য সঞ্চয় করাটাই এই উৎসবের মূল লক্ষ্য আমার কাছে। এই বছর ঠিক করেছি একজোড়া বালা কিনব। ছোটবেলা থেকে মাকেও দেখে আসছি কিছু না কিছু কিনতে। সেই অভ্যেসটা আমিও রপ্ত করে ফেলেছি।” ফ্যাশন ডিজাইনার প্রণয় বৈদ্য ধনতেরাস এলে কেনেন রুপোর সামগ্রী। বললেন, “সোনার দাম কমেছে। তাই ধনতেরাসের রাতে বিনিয়োগ হিসেবে রুপোর জিনিসই কেনা ভাল। গত বছর আমি রাজস্থানী এথনিক রুপোর ঘড়া আর গ্লাস কিনেছিলাম। এগুলো সাজিয়েও রাখা যায়। আবার বিনিয়োগও হয়। এই বছর অ্যান্টিক মুঘল স্টাইলের রুপোর কোস্টার কিনব ঠিক করেছি। কিনব একটা ছবির রুপোর ফ্রেমও।”

তবে ধনতেরাস মানেই যে সব বাঙালি কেনাকাটা করতে বেরিয়ে পড়ছেন এখনও সেই চিত্রটা উঠে আসছে না। অ্যাপোলো হসপিটালের সিইও ডা. রূপালি বসু যেমন বললেন, “আমার বন্ধুবান্ধবেরা কেউ কেউ ধনতেরাসে কেনাকাটা করে শুনেছি। কিন্তু আমি করি না। কারণ বাড়িতে কোনও দিন এই ধরনের কেনাকাটার প্রচলন দেখিনি। এখনও মনে হয় এটা অবাঙালিদের উৎসব।” ধনতেরাসে কিছুই কেনাকাটা করেন না এমন লোকের সংখ্যাও কিন্তু কম নয়। এঁরা প্রত্যেকেই মনে করেন ধনতেরাস অবাঙালিদের উৎসব। ঠিক যেমন লেখিকা সুচিত্রা ভট্টাচার্য। বললেন, “আমার এই সব সংস্কার নেই। তাই কোনও কেনাকাটা করি না। আমার মেয়ের অবাঙালি ঘরে বিয়ে হয়েছে। সে নিয়ম করে কেনাকাটা করে। কিছু না হলেও একটা রুপোর বাটি কিনে আনে।”

সোনাদানা, ধাতব জিনিস যেমন বাসনপত্র ছাড়াও আজকাল বৈদ্যুতিন জিনিসপত্র থেকে আইফোন, থেকে জমি, বাড়ি, গাড়ি সবেরই খরিদ্দারি হচ্ছে ধনতেরাসে। মোটমাট ধনবৃদ্ধির জন্য যা যা কেনা যেতে পারে, সবই পড়ছে এই রাতের কেনাকাটার আওতায়। কিন্তু সমাজতত্ত্ববিদ প্রশান্ত রায় বলছেন, ‘‘ধনতেরাসে সোনা কেনাটাই তবু প্রধান রীতি। এই যে শোরুমে শোরুমে লাইন পড়ে, সেই সব ক্রেতারা শুধু সোনাই কিনতে চান না। তাঁরা ব্র্যান্ডেড গোল্ড কিনে চার পাশের লোকজনকে দেখাতেও চান। সোজা কথায় দেখনদারির একটা ব্যাপার আছে। আর সেই সঙ্গে আছে ধর্মীয় একটা বিশ্বাস। কালীপুজোর দিন বহু বাড়িতেই লক্ষ্মী-অলক্ষ্মীর পুজো হয়। তার আগে ধন কেনাটা তাই উৎসবের পরিপূরক হয়ে ওঠে। ধনকে আবাহন জানানোর জন্য তাই ধনতেরাসে মেতেছে বাঙালি। সোনা-ই এই উৎসবের সব চেয়ে বড় বিপণন।”

গয়না বা ধাতুর ক্রেতা সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় ধনতেরাসের মাস ছ’য়েক আগে থেকে গয়নার শো রুমে শো রুমে প্রস্ততি। সস্তায় হাল্কা গয়না বানানোর হিড়িক পড়ে গিয়েছে। বালিগঞ্জ ফাঁড়ির এক প্রসিদ্ধ গয়না শোরুমের জনসংযোগ আধিকারিক অভীক বন্দ্যোপাধ্যায় বললেন, “আজকাল ধনতেরাসের দিন এবং তার আগে পরে মোট তিন থেকে চার হাজার লোকের লাইন পড়ে। লোকজন সামলাতে ছুটে আসেন কোম্পানির ডিরেক্টররা। রেডি থাকে ফার্স্ট এইড বক্স। আচমকা কেউ অসুস্থ হয়ে পড়লে আমরাই করি শুশ্রূষা। দরকারে ডাক্তার ডেকে আনা হয়।”

এত লোককে গয়না সরবরাহ করা তো চাট্টিখানি কথা নয়! “আমরা সেই ভাবেই স্টক রেডি করি, যাতে সব ক্রেতাই খুশি মনে কেনাকাটা সেরে বাড়ি ফিরতে পারেন,” বলছেন অভীক। অন্য দিকে গোলপার্কের আর একটি গয়না শোরুমেও একই অবস্থা। কর্ণধার অনর্ঘ্য চৌধুরী বলছেন, “ভিড় সামলাতে এই বছর আমরা অনলাইন ধনতেরাসের কেনাকাটার ব্যবস্থা করেছি। ধনতেরাসের গয়না কেনার একটা নির্দিষ্ট শুভক্ষণ থাকে। এই শুভক্ষণ যাতে পালন করা সম্ভব হয়, সেই জন্যই তরুণবয়সী ক্রেতাদের জন্য অনলাইন ধনতেরাসের ব্যবস্থা করেছি আমরা। অর্ডার করলেই আমরা জিনিস বাড়িতে পৌঁছে দেব।”

সব মিলিয়ে এই বারও জমে উঠেছে ধনতেরাসের বাজার। মুরলীধর কলেজের কাছে আর এক শোরুমে পাওয়া যাচ্ছে শুধুই হাল্কা গয়না।

সাড়ে তিন হাজার টাকা থেকে পনেরো হাজার টাকার মধ্যে সব গয়না। মধ্যবিত্তের রেস্তো বুঝে তৈরি হয়েছে মাদার অব পার্লের লকেট, কানের দুল, গলার চেন, বেবি রিং সবই পনেরো হাজার টাকার মধ্যে।

চাকরিজীবী মধ্যবিত্ত বাঙালি তাঁর কবিসুলভ মেজাজ ছেড়ে যে লক্ষ্মীলাভের প্রতি ঝুঁকেছে সেটাই এখন বড় কথা। সারা বছরের সোনা-রুপোর যা কিছু কেনাকাটা করার থাকে অনেকেই সেটা ধনতেরাসে সারছেন। ঐশ্বর্যও এল, প্রয়োজনও মিটল। মানসিকতাটা ঠিক এই রকম। অনেকে বিয়েশাদিতে উপহার দেওয়ার মতো অলঙ্কারও এই সময় কিনছেন।

dhanteras sanjukta basu shopping
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy