Advertisement
E-Paper

নিজেকে আয়নার সামনে দাঁড় করিয়ে দেয়

কেউ না হয়ে যাওয়া মানুষ হিসেবে চমত্‌কার ঋত্বিক চক্রবর্তীর অভিনয়। লিখছেন সংযুক্তা বসু।রাস্তায় পড়ে আছে এক অসুস্থ মানুষ। তাঁকে দেখে পথচারীরা হেঁটে চলে যাচ্ছে। কারও কোনও ভ্রুক্ষেপ নেই। খবরের কাগজে উঠে আসছে ইদানীং এই শহরের এমনই সব ঘটনার কথা। এই সব নিত্যদিনের অমানবিক ঘটনা মনে রেখেই পরিচালক অতনু ঘোষ এ ছবিতে সমাজের জীর্ণ অন্ধকার ঘরে এক ফালি রোদ ঢোকাবার চেষ্টা করেছেন। তবে ‘এক ফালি রোদ’ অতনুর নিজস্ব আঙ্গিকেই তৈরি।

শেষ আপডেট: ১০ ডিসেম্বর ২০১৪ ০১:০০

রাস্তায় পড়ে আছে এক অসুস্থ মানুষ।

তাঁকে দেখে পথচারীরা হেঁটে চলে যাচ্ছে। কারও কোনও ভ্রুক্ষেপ নেই। খবরের কাগজে উঠে আসছে ইদানীং এই শহরের এমনই সব ঘটনার কথা। এই সব নিত্যদিনের অমানবিক ঘটনা মনে রেখেই পরিচালক অতনু ঘোষ এ ছবিতে সমাজের জীর্ণ অন্ধকার ঘরে এক ফালি রোদ ঢোকাবার চেষ্টা করেছেন। তবে ‘এক ফালি রোদ’ অতনুর নিজস্ব আঙ্গিকেই তৈরি।

খুব ছোট ছোট চরিত্র, যাদের উপস্থিতি কখনও সেকেন্ড ছাপিয়ে মিনিটে গড়ায় না তারাও চিত্রনাট্যের ঠাসবুনোটে একেকটা জোরালো সুতো হয়ে ওঠে। ছবির জোরের জায়গা চিত্রনাট্য যেখানে এক বিষাদময়তার সুর ছড়িয়ে আছে সারাক্ষণ যা উচ্চকিত নয় মোটেই। মৃদু সেই সুর যেন একটা আবেশের মতো আমাদের জড়িয়ে ধরে। বুঝিয়ে দেয় মানুষ মানুষের জন্য। হাত বাড়াতে হবে, পৌঁছতে হবে, বলতে হবে মানুষ বড় একলা, তুমি তার পাশে এসে দাঁড়াও।

এ ছবিতে সমাজবিজ্ঞানী ধৃতিমান চট্টোপাধ্যায় হারিয়ে যাওয়া মানবতার মুখকেই ক্যামেরাবন্দি করতে চেয়েছেন তাঁর মানবতাবোধের গবেষণাকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য। সেই বোধের পরীক্ষা করতেই ধৃতিমান প্রাক পরিকল্পিত সংকট মুহূর্ত তৈরি করে পথ চলতি মানুষের প্রতিক্রিয়া জানার জন্য ঋত্বিক চক্রবর্তী ও অপরাজিতা ঘোষ দাসকে নিয়োগ করেন।

এই দুই তরুণ-তরুণী কখনও রাস্তায় মেতে ওঠে ঝগড়ায়। কখনও বা ঋত্বিক খোলা রাস্তায় চড় কষিয়ে দেন অপরাজিতার মুখে। উদ্দেশ্য একটাই, এই ধরনের পরিস্থিতি তৈরি হলে আশপাশের মানুষের কী প্রতিক্রিয়া হয় তা দেখা। সঙ্গী থাকে ক্যামেরা। সেই ক্যামেরায় ধরা পড়ে কখনও অমানবিকতার মুখ, কখনও বা পাওয়া যায় সামান্য সংবেদনশীল কাউকে।

যা ছিল কেবল প্রাক পরিকল্পিত সংকট মুহূর্ত তা ক্রমে ক্রমে হয়ে ওঠে গল্পের চরিত্রদেরই জীবনের আসল সংকট।

ছবিতে অপরাজিতার প্রেমিক পেশায় বড় গায়ক যিশু সেনগুপ্ত। যিশু একদিন অপরাজিতাকে রাতে তার বাড়িতে থাকতে বলেন। রাত্রে বোতল বের করে গ্লাসে মদ ঢালেন যিশু। সময়মতো এসে যায় খাবারদাবারও। অপরাজিতার মনে হয় এটি একটি পরিকল্পিত সহবাসের আয়োজন। তত্‌ক্ষণাত্‌ অপরাজিতা বেরিয়ে যান যিশুর বাড়ি থেকে। আর তখনই যিশু শুরু করেন আত্মবিশ্লেষণ। বোঝার চেষ্টা করেন কোথায় ভুল ছিল তাঁর দর্শনে। ছবির অনেকটা জায়গা জুড়ে যিশু-অপরাজিতার সম্পর্কের টানাপড়েন, মূল কাহিনির সমান্তরালে মসৃণ ভাবে এগিয়ে যায়।

ধৃতিমান, ঋত্বিক, অপরাজিতা, মহুয়া সরকার (ঋত্বিকের প্রেমিকা) অন্ধ লেখক টোটা রায় চৌধুরী সমুদ্র সৈকতে দু’দিনের জন্য যখন বেড়াতে যান তখন ঘটে যায় এক অদ্ভুত ঘটনা। শুরু হয় মানবিকতার আর এক খোঁজ। বেরিয়ে আসে প্রত্যেকটা মানুষের ভেতরকার আর এক মানুষ। আর দর্শক দাঁড়িয়ে পড়েন নিজস্ব আয়নার সামনে। তবে গল্প বলার ধরনটি আর একটু সহজ হলে ভাল হত।

পথচারী আমজনের চরিত্রে ঋত্বিক তার কেউ না হয়ে যাওয়া ইমেজকে দারুণ ভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন। স্বতঃস্ফুর্ত অভিনয়ে সুন্দর দেখিয়েছে অপরাজিতাকে। যিশু, টোটা, ধৃতিমানদের সংযত, সংহত অভিনয় এই ছবির সম্পদ। টোটা তাঁর মাচো ইমেজ থেকে বেরিয়ে পেলব অভিনয়ে দক্ষতা দেখিয়েছেন। মানুষের মানবিক মুখ খোঁজার বিষয় নিয়ে সিনেমা ভাবনায় অবশ্যই নতুনত্ব আছে।

কিন্তু আমদর্শক সেটা বুঝবেন কি সেটাই ভেবে দেখার।

ek phali rod sanjukta basu Movie Reviews
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy