Advertisement
E-Paper

নবজন্ম

অরহান পামুকের ‘ইস্তানবুল’ থেকে ক্রিকেট উন্মাদনা। ‘লাঞ্চবক্স’ দেখে ইরফানকে ফোন। এই বয়সেও সব কিছুতে অদম্য কৌতুহল! সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়-এর। লিখছেন সুমন ঘোষঅরহান পামুকের ‘ইস্তানবুল’ থেকে ক্রিকেট উন্মাদনা। ‘লাঞ্চবক্স’ দেখে ইরফানকে ফোন। এই বয়সেও সব কিছুতে অদম্য কৌতুহল! সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়-এর। লিখছেন সুমন ঘোষ

শেষ আপডেট: ২৪ অগস্ট ২০১৪ ২১:২২

এফ স্কট ফিটজেরাল্ডের ক্ল্যাসিক ‘দ্য কিউরিয়াস কেস অব বেঞ্জামিন বাটন’ ফ্যান্টাসির মেজাজে লেখা এক বৃদ্ধের গল্প। শারীরিক ভাবে সেই বৃদ্ধের যত বয়স বাড়ে, মানসিক ভাবে সে যেন ততই শৈশবের দিকে এগিয়ে যায়।

প্রায় এক দশক ধরে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে অন্তরঙ্গ ভাবে মেলামেশা করার সুবাদে আমি ঘনঘন বিস্মিত হয়েছি দেখে কী ভাবে ফিটজেরাল্ডের ওই কাহিনির প্রতিফলন ঘটেছে তাঁর চরিত্রে। এখন এই আশি বছর বয়সেও ওঁর শিশুসুলভ অস্থির উদ্দীপনা প্রকাশিত হতে চায় কখনও অভিনয়ে, কখনও লেখায় আবার কখনও বা চিত্রকলায়।

আমার ‘পিস হাভ্ন’ ছবির শ্যুটিংয়ের সুবাদে গত কয়েক মাস ওঁর সঙ্গে কাটিয়েছি। কাজ করতে গিয়ে এক সঙ্গে সময় কাটানোর অজুহাতে সব বিষয়ে ওঁর যে অপরিসীম

জ্ঞান, তার কিছুটা আত্মস্থ করার একটা সুযোগ পাওয়া যায়। শুধু যে সিনেমা এবং অভিনয় নিয়ে জ্ঞান তাই নয়, সাধারণ জীবনেরও নানা খুঁটিনাটি বিষয়ে অজস্র

কিছু জেনেছি ওঁর কাছে। কলকাতার ট্রাফিক আইন থেকে সিন্ধু সভ্যতা, অরহান পামুকের ইস্তানবুল থেকে ওঁর মোহময় ক্রিকেট উন্মাদনা সবেতেই অদম্য কৌতুহল। এ

বার দেখা হতে যখন তিনি বললেন, “সুমন, আজকাল একটু বেশি নিঃসঙ্গতায় ভুগছি। আমাকে আরও বই পড়তে দেবে যেগুলো সম্প্রতি পড়ছ?” কথাটা যেন মন ছুঁয়ে গেল।

আর একটা বিষয়ও এ বার বেশ বিস্মিত করল আমাকে। তা হল এই বয়সে এসেও ওঁর সেরার থেকে সেরা কাজ করার আর্তি। কী ভাবে কোনও সংলাপ ‘ডেলিভার’ করবেন... কোথায় কখন ‘পজ’ দেবেন, কেমন হবে তাঁর চরিত্রের পোশাক সে সব নিয়ে আজও ভাবেন তিনি। শ্যুটিংয়ের আগের দিন রাতে ফোন করে পরের দিনের শু্যট নিয়ে কত কিছু খুঁটিনাটি ব্যাপার জিজ্ঞেস করতেন। কী অসম্ভব নিষ্ঠা এই বয়সেও। ওঁর মতো একজন স্টলওয়ার্টের কাছ থেকে আমার মতো একজন পরিচালক এর থেকে বেশি আর কীই বা আশা করতে পারে? ওঁর গভীরতা আর নিষ্ঠা দেখে মাঝেমাঝে রীতিমতো অস্বস্তিতে পড়ে যাই।

আর একটা ব্যাপার যেটা খুব নজরে পড়ে, তা হল সহ-অভিনেতার প্রতি ওঁর উদার মনোভাব। সৌজন্যবোধ। আজকাল সিনেমাজগতে যা প্রায় দেখাই যায় না। শুধু সমকক্ষ অভিনেতারাই নন, জুনিয়র আর্টিস্টদের প্রতিও ওঁর মনোভাব একই রকম। এ বার উনি অসম্ভব অনুরাগ মেশানো গলায় বললেন, ইরফান খান বা নওয়াজউদ্দিন সিদ্দিকির মতো অভিনেতাদের পর্দায় দেখে কেমন ঈর্ষা হয় তাঁর। এমনকী ‘লাঞ্চবক্স’ দেখে ইরফানকে ফোনও করেছিলেন।

এমন অনুগত ছাত্রের মতো উনি ইরফানের অভিনয়ের প্রশংসা করছিলেন যে মনেই হচ্ছিল না তিনি দাদাসাহেব ফালকে পুরস্কারে ভূষিত একজন অভিনেতা।

গত বছর সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের আঁকা ছবির প্রদর্শনীর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত ছিলাম। নবনীতা দেবসেন ছিলেন সেই অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি। আমার মনে হয় নবনীতাদির রসিকতার মেজাজে রাখা বক্তব্যের মাধ্যমে তুলে ধরেছিলেন প্রকৃত সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়কে।

উনি বলেছিলেন, “আমরা এখন সেই বয়সে যখন খবর পাই আমাদের বন্ধুরা চলে যাচ্ছে। যেটা আমার সবথেকে ভাল লাগছে আজ যে সৌমিত্র যে এত ভাল পেন্টিং করে, তা আমার জানা ছিল না। মনে হচ্ছে যেন আমার এক বন্ধুর নবজন্ম হল।” কী সত্যিই না বলেছিলেন নবনীতাদি! গত দু’মাসে ওঁর সঙ্গে কাজ করার অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের পুনর্জন্ম হয়েছে। সেরার থেকেও সেরা কাজ করার ইচ্ছা। আশিতেও যেন নতুন ইনিংস শুরুর অপেক্ষায়। এটাই সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়।

soumitra chatterjee suman ghosh
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy