Advertisement
E-Paper

পরমপ্রাপ্তি

গোবেচারা সাধারণ মানুষই এখন সিনেমার হিরো। লিখছেন সংযুক্তা বসু।ডাকনাম হারু। ভাল নাম হরকৈলাস ভট্টাচার্য। রোগা প্যাংলা চেহারা। ব্যক্তিত্বের লেশ বলতে কিছু নেই। কোল-কুঁজো হয়ে হাঁটে। সব সময়ই কেমন একটা ভিতু-ভিতু, থতমত ভাব। ঠিকানা কলকাতারই কোনও পুরনো পাড়ার লড়ঝড়ে এক বাড়ি। আপিসের চাকরিতে মাইনে চার হাজার সাতশো কুড়ি টাকা।

শেষ আপডেট: ০৩ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০০:০০

ডাকনাম হারু। ভাল নাম হরকৈলাস ভট্টাচার্য।

রোগা প্যাংলা চেহারা। ব্যক্তিত্বের লেশ বলতে কিছু নেই। কোল-কুঁজো হয়ে হাঁটে। সব সময়ই কেমন একটা ভিতু-ভিতু, থতমত ভাব। ঠিকানা কলকাতারই কোনও পুরনো পাড়ার লড়ঝড়ে এক বাড়ি। আপিসের চাকরিতে মাইনে চার হাজার সাতশো কুড়ি টাকা।

এ হেন হারুর কোনও যোগ্যতাই থাকে না কোনও সিনেমার নায়ক হয়ে ওঠার। তবু সে নায়ক, মাল্টিপ্লেক্সের বড় পর্দায় তার জীবনদর্শন যখন ভেসে ওঠে ‘তুমি এসেছ একা, যাবে একা। কিছুই সঙ্গে নিয়ে আসোনি, কিছুই সঙ্গে নিয়ে যাবে না’ তখন যেন হারুর মতো নড়বড়ে একটা চরিত্রের মধ্যে প্রতিফলিত হয় বাঙালির স্থবির, পলায়নপর মধ্যবিত্ত মানসিকতা।

এই নিরীহ গোবেচারা হারু কী ভাবে ‘বীর’ হয়ে উঠল তাই নিয়েই ‘হারকিউলিস’ ছবির গল্প। হারু থেকে হারকিউলিস হওয়ার যাত্রাপথ কিন্তু কখনও মসৃণ হয় না। আর মসৃণ হয় না বলেই অনেক চ্যালেঞ্জ এসে পড়ে। আর তারই ফলে হারুরা নায়ক হয়ে ওঠে। পাড়ায় পাড়ায় এমন অজস্র হারুর বাস। যাদের সহায়সম্বল বলতে হয়তো এক ফালি নোনাধরা বাড়ি। হারু চায় সেই পিতৃপুরুষের ভিটেটুকুই আগলে রেখে আমৃত্যু কাটিয়ে দিতে। কিন্তু প্রোমোটারি চক্রের থাবা এসে পড়ে হারুর বাড়ি আনন্দধামের ওপর। হারুর বাড়ি নাকি শপিং মল হবে। আর রাতারাতি সে গিয়ে দাঁড়াবে ফুটপাথে। একা। ঠিকানাবিহীন।

রোজই শাসানি দিয়ে যায় পাড়ার মস্তানরা। মস্তানদের হোতা মোষদা (শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়) তার বাড়ির সামনে মস্তানির ঠেক বসায়, হারুকে শারীরিক নির্যাতন করে, অপমান করে। তবু হারু প্রোমোটার বাজোরিয়ার (বিশ্বজিত্‌ চক্রবর্তী) পাঠানো সাদা দলিলে সই করতে নারাজ। এইটুকুই হারুর ঋজুতা।

হারুর চরিত্রের ভিতুপনা, পৌরুষের অভাব, দ্বিধাদ্বন্দ্বের দোলাচল অসাধারণ শরীরী অভিনয়ে জীবন্ত করেছেন পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়। বাড়ি বাঁচাতে গিয়ে হারু মার খেতে খেতে মরেই যেত, যদি না তারই ‘লুক অ্যালাইক’ আর এক পরমব্রত এসে না উদয় হত তার জীবনে। পদ্মনাভ দাশগুপ্তর টানটান কাহিনি ও চিত্রনাট্যে দ্বৈত চরিত্রে পরমব্রতর অভিনয় দেখে দর্শক মুগ্ধ হয়েছেন।

চিত্রনাট্যকার গল্পে চমকদার পটপরিবর্তন করেছেন বলেই দীনহীন হারুর মধ্যে জেগে উঠতে পারে হারকিউলিস। সুদেষ্ণা রায় ও অভিজিত্‌ গুহর পরিচালনায় ছবিতে পড়ে পড়ে মার খেয়ে বেঁচে থাকা হারুর লড়াইয়ের মাঠে নেমে ঘুরে দাঁড়ানোর দৃশ্য এককথায় চমত্‌কার।

ভাল লাগে হারুর সঙ্গে প্রতিবেশিনী মিনু (পাওলি)র ভালবাসার নীরব মুহূর্তগুলো। এমনই তো হয় সাধারণ মানুষ। কত কথা থাকে, কত ভালবাসা থাকে। কিন্তু সে কেবল মুখ বুজে থাকে। তবে আরও খানিকটা জায়গা দেওয়া যেতে পারত পাওলিকে।

নীল দত্তের সঙ্গীত আরও ভাল হতে পারত। দরকার ছিল সম্পাদনায় আর একটু আঁটোসাঁটো ভাব। খলনায়ক চরিত্রে শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়ের অভিনয় দেখে দর্শক মুগ্ধ হয়েছেন। ঘন ঘন হাততালি পড়েছে যেমন হারুর অভিনয়ে, তেমনই দোর্দণ্ডপ্রতাপ মোষদার অভিনয়ও মাত করেছে দর্শককে। তবে এ কথা বলতেই হবে শাশ্বত অভিনয়ের ক্ষেত্রে অতটা ‘লাউড’ না হলেও পারতেন। বাহুল্যবর্জিত অভিনয়েও ভিলেন চরিত্র আঁকা যায়। বব বিশ্বাস তা করে দেখিয়ে দিয়েছে এর আগে।

আনাচে কানাচে

‘তোফা...তোফা...তোফা’: নিজের বাড়ির গণেশ আরাধনায় জিতেন্দ্র।

parambrata chattopadhay hercules sanjukta basu Movie Reviews Bengali Movie Film Actor
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy