Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
ব্রাজিলের বিচ্ছু

ব্রাজিলের সেই ফুটবল ফ্যাক্টরিগুলো

অনিলাভ চট্টোপাধ্যায়কলকাতায় প্রথম বার পা রাখা হোসে র্যামিরেজ ব্যারেটোকে ব্রাজিলের মাটিতে এসে বারবার মনে পড়ছে। মাথায় গোলমরিচের দানার মতো ছোট ছোট চুল। হাতে একটা পর্তুগিজ-ইংলিশ ডিকশনারি। আর সবেতেই একটা বিস্ময় মেশানো হাসি।

শেষ আপডেট: ০২ জুলাই ২০১৪ ০০:০০
Share: Save:

কলকাতায় প্রথম বার পা রাখা হোসে র্যামিরেজ ব্যারেটোকে ব্রাজিলের মাটিতে এসে বারবার মনে পড়ছে। মাথায় গোলমরিচের দানার মতো ছোট ছোট চুল। হাতে একটা পর্তুগিজ-ইংলিশ ডিকশনারি। আর সবেতেই একটা বিস্ময় মেশানো হাসি। অথচ এই ছেলেটাই খেলতে নামলে বদলে যাচ্ছে। ওই সাধারণ মধ্যবিত্ত চেহারাটার মধ্যে কী ভয়ঙ্কর পাওয়ার, স্ট্যামিনা। স্কিলের কথা ছেড়েই দিলাম। পোর্তো অ্যালেগ্রেরও অনেক ভিতরের দিকে একটা গ্রামে নাকি থাকতেন ব্যারেটোরা। এখন পোর্তো শহরের বুকে দু’টো ফ্ল্যাট কিনেছেন। সব ভারতে খেলা ফুটবল থেকে রোজগার। বিশ্বকাপে ব্যারেটো আসতে পারেননি নিজের দেশে। ভারতে তাঁর অ্যাকাডেমি নিয়ে খুব ব্যস্ত। স্ত্রী ভেরোনিকা, মেয়েরা আর ছেলে এখানেই আছেন। হয়তো আস্তে আস্তে এখানে থিতু হবেন। আরেকটা বড় কারণ বোধহয় ছেলে জন। বছর চারেক বয়স বোধহয়। অসাধারণ প্রতিভা। কতদিন ব্যারেটোর ফ্ল্যাটে গিয়ে দেখেছি জন জার্সি, প্যান্ট, বুট পরে বল পিটছে। হ্যাঁ, এই চার বছরেই। ব্যারেটো ওকে কোনও ব্রাজিলিয়ান অ্যাকাডেমিতেই বড় করতে চান। তাই ভেরোনিকা ছেলে-মেয়ে নিয়ে আবার শিকড়ে। ব্যারেটো পড়ে আছেন কলকাতায়। প্রথমত, ফুটবল স্কুল থেকে কিছু উপার্জনের আশায়। দ্বিতীয়ত, ভারতীয় ফুটবলকে যদি কিছু ফিরিয়ে দিতে পারেন।

ব্যারেটোর বেড়ে ওঠার পিছনে প্রেমিও ফুটবল অ্যাকাডেমি। রোনাল্ডিনহো-ও অ্যাকাডেমির প্রোডাক্ট। ব্যারেটোদের ব্যাচমেট লুসিও। তার পর এক একদিকে ছিটকে যাওয়া। প্রতিভা, যোগ্যতা সব মিলিয়ে এক একজন পৌঁছে যান এক এক গন্তব্যে। লুসিও ব্রাজিল অধিনায়ক হন। ব্যারেটো ভারতের কিংবদন্তি ফুটবলার। মিল একটা জায়গাতেই। গোটা বিশ্বের ফুটবলার ফ্যাক্টরি এখন ওই দেশটাই। জাপানে ওঁদের পাবেন। ভারতে পাবেন। ইন্দোনেশিয়ায় পাবেন। কাতারে পাবেন। পাবেন ইউরোপ বা আমেরিকাতেও।

ব্রাজিলের এ বারের দলটার দিকে চোখ বোলান, রিজার্ভ বেঞ্চে দু’জন ফুটবলার, ব্রাজিলের ক্লাব অ্যাটলেটিকো মিনেইরোর। আর প্রথম একাদশের ফ্রেড খেলেন রিওর ক্লাব ফ্লুমিনেনসে। বাকি কুড়ি জনের সবাই ইউরোপ কিংবা আমেরিকার নানা ক্লাবে। কেউ বার্সিলোনা, কেউ চেলসি, কেউ টটেনহ্যাম হটস্পার, কেউ রিয়াল মাদ্রিদ, কেউ নাপোলি। কেউ আবার ইউক্রেনের ক্লাব শাখতারে। প্রতি বছর হাজার হাজার ফুটবলার ছড়িয়ে পড়ছে গোটা বিশ্বে। ব্রাজিল ফুটবল নিয়ে সবথেকে সবচেয়ে আলোচিত এবং বিক্রিত বই বই ‘ফুটবল দ্য ব্রাজিলিয়ান ওয়ে অব লাইফ’-এর লেখক অ্যালেক্স বেলোস ওঁর বইয়ের শুরুতেই লিখেছিলেন, ফ্যারো আইল্যান্ডে চার ব্রাজিলিয়ান ফুটবলারকে খুঁজে পাওয়ার কথা। ফ্যারো আইল্যান্ড দেশ হিসেবে এত ছোট যে খুঁজে পাওয়া দায়। সেখানকার ফুটবল লিগের সাইজটা নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন। সাংবাদিক বেলোস এই লিগে খুঁজে পান চার ব্রাজিলিয়ান ফুটবলারকে। তাঁরা ফুটবল খেলেন আর মাছের ফ্যাক্টরিতে চাকরি করেন। ব্রাজিলে ফুটবল খেলে যে অর্থ উপাজর্ন করতে পারত, তার থেকে অনেক বেশি আয় করে ফ্যারো আইল্যান্ডে। কারণ ব্রাজিলে কোনও একটা রাজ্য লিগে দ্বিতীয় ডিভিশনের ফুটবলারও এখানে স্টার। বেশি টাকা, বেশি গুরুত্ব, উন্নত জীবনযাপন সবটাই ভাল। হাজার হাজার ব্রাজিলিয়ান ফুটবলার তাই এ ভাবেই বেরিয়ে পড়েছে ইউরোপ, এশিয়া কিংবা আমেরিকার দিকে। একজন ব্যারেটোর সাফল্য ভারতের মাটিতে এনেছে আরও ব্রাজিলিয়ান ফুটবলারদের। এখন ভারতের সবক’টা ক্লাবে পাবেন একজন নয়তো দু’জন ব্রাজিলিয়ান ফুটবলার। ‘ব্রাজিলিয়ান ফুটবলার’ শব্দ দু’টোর মধ্যেই এমন নির্ভরতা বা বিশ্বস্ততা আছে যেটা প্রায় দশ হাজার ব্রাজিলিয়ান ফুটবলারকে পৌঁছে দিয়েছে পৃথিবীর নানা প্রান্তে। আর এই দশ হাজার ব্রাজিলিয়ান ফুটবলার যে পরিমাণ বিদেশী মুদ্রা দেশে আনছেন, তেমনটা ব্রাজিল মনে হয় না কফি রপ্তানি করেও আয় করে।

এ দেশে এসে নিজে চোখে দেখে গেলাম কেন এটা ফুটবলের দেশ। বেলো হরাইজন্তে পৌঁছে বাসস্ট্যান্ড থেকে হোটেলে যাচ্ছি। রেডিওতে তারস্বরে বাজছে ফুটবল ম্যাচের কমেন্ট্রি। লাতিন আমেরিকার দেশগুলোর ফুটবল কমেন্ট্রি মানে জানেন তো! আমার তো মনে হয় ধারাভাষ্যকারদের ব্লাডপ্রেশার কাউন্ট ২০০ বাই ১০০-র নিচে নামার সুযোগ দেন না প্রোডিউসররা। এত সকালে কীসের খেলা? ট্যাক্সি ড্রাইভার জানালেন, রোনাল্ডিনহোর ক্লাব অ্যাটলেটিকো মিনেইরা খেলছে তাইওয়ানে। সেই খেলার কমেন্ট্রি শুনছেন তিনি। দুপুরে একটা ছোট কফিশপে খেতে ঢুকেছিলাম। টিভিতে একটা ফুটবল গেম শো-তে অতিথি, রবিনহো। শো-এর মাঝে ড্রাম বাজিয়ে গান গাইতে দেখা গেল নেইমার-থিয়াগো সিলভাকে।

এ দেশের মানুষ সত্যিই ফুটবলে বাঁচে। যে শিশুটি এ দেশের মাটিতে জন্ম নিচ্ছে, তার বাবা-মাও স্বপ্ন দেখে ছেলে বড় হয়ে ওই সোনালি জার্সিটা গায়ে দেবে। আর সঙ্গে রয়েছে ফুটবল খেলার জন্য দুর্দান্ত এক পরিকাঠামো। এখানে সরকার জানে ফুটবল ঘিরে এই আবেগটাকে জায়গা দিতে হবে। কয়েকদিন আগে আলজাজিরা টিভিতে প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট লুলাকে সাক্ষাত্‌কার দিতে দেখে দেখেছিলাম। লুলা পরেছিলেন কোরিয়ান্থাসের জার্সি। এখানে ফুটবলারদের সংসদে এলে মন্ত্রীত্ব দেওয়া হয়। এখানে ব্রাজিল বিশ্বকাপ জিতলে সরকার টেকে, নয় পড়ে যায়। তাই ফুটবলকে লালনপালনের দায়িত্ব সরকারের। একই সঙ্গে ক্লাবগুলোও বিরাট একটা দায়িত্ব পালন করে।

ব্রাজিলে রাজ্য লিগগুলোও ভীষণ জনপ্রিয়। দেশের এই বিশালতার কারণেই জাতীয় লিগ (ক্যাম্পিওনাতো ব্রাসিলেইরো) চালু হয়েছিল অনেক পরে। ১৯৫৯-এ। তার আগে রাজ্য লিগগুলো ছিল জমজমাট। রিওতেই চারটে বড় বড় ক্লাব। এরাই আবার জাতীয় লিগে অংশ নেয়। অনেকটা আমাদের মতোই। কিন্তু বিষয়টা হল ওদের প্রথম ডিভিশন সিরি ‘এ’তে ২০টা দল। ‘বি’তে ২০টা। ‘সি’তেও ২০টা। আর সিরি ‘ডি’তে ৪০টা। আর সিরি ‘ডি’তে খেলার সুযোগ পায় তারাই, যারা স্টেট লিগে ভাল ফলাল করেছে। অর্থাত্‌ রাজ্যে ভাল করলে জাতীয় পর্যায়ে সরাসরি পৌঁছনোর একটা সুযোগ থাকছে। এই লিগগুলো চালাতে হাজার হাজার ছেলে তৈরি করে ক্লাবগুলোই। এই কয়েক দিনে ব্রাজিলের সেরা তিনটে ক্লাবের পরিকাঠামো ঘুরে দেখার সুযোগ হল। ক্লাবগুলো একটা বিরাট দায়িত্ব পালন করে ব্রাজিল ফুটবলে।

স্যান্টোসের প্র্যাকটিশ এরিনাটার নাম পেলের নামে। সিটি রেই পেলে। ‘রেই’ শব্দের অর্থ সম্রাট। নিজেদের ক্লাবের অলিখিত সম্রাটের নামেই যে বিরাট প্র্যাকটিশ এরিনাটার নাম হবে, তাতে অবাক হওয়ার কিছু থাকতে পারে না। পাহাড়ের কোলে একটা বিরাট জায়গা ঘিরে চারটে আলাদা মাঠ। মাঠে ঢোকার মুখে বিরাট একটা টাওয়ারে পেলের ছবি। গোল করার পর পেলের সেই চেনা ভঙ্গিমায়। মাঠে ঢোকার মুখেই একটা ছোট স্যান্ড ট্র্যাক। ওখানে ভলিবল কিংবা ফুটবল খেলতে পারেন ফুটবলাররা। ভিতরে চারটে মাঠ অসাধারণ রক্ষণাবেক্ষণ করা। অন্তত দু’টো রোয়িং মেশিন মাঠের ঘাস ছেঁটে চলেছে। মাঠের পাশেই প্যাভিলিয়ন। ওখানেই জিম, সুইমিং পুল। স্যান্টোসের সবক’টা টিম এখানেই অনুশীলন করে। ওদের নিজস্ব একটা স্কাউটিং ইউনিট আছে, যারা ঘুরে ঘুরে ফুটবলার খুঁজে আনে। গোটা পৃথিবীর সব ক্লাবই অবশ্য এই বিষয়টাকে সবচেয়ে গুরুত্ব দেয়। স্যান্টোসরা নেইমারদের খুঁজেও পায় এই ভাবেই। পঞ্চাশ বছর ধরে ব্রাজিলে এটাই চলে আসছে। ভ্লাদিমার ডি’বেটো নামের যে ভদ্রলোক পেলেকে খুঁজে বাউরু থেকে স্যান্টোসে নিয়ে যান, তাঁর কাজটা সহজ ছিল না। ব্রেটো নিজে ১৯৩৪-এ ব্রাজিলের হয়ে বিশ্বকাপ খেলেন। আর বাউরুতে গিয়েছিলেন পেলেদের কোচিং করতে। পেলেকে পছন্দ হওয়ার এক বছর পর নিয়ে যান স্যান্টোসের জুনিয়র টিমের হয়ে খেলাতে। পেলের মা নতুন শহরে ছেলে ছাড়তে রাজি হননি। স্যান্টোসের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে কথা বলে রাজি করিয়েছিলেন ব্রেটো। প্রতিভা হয়তো চাপা থাকে না। কিন্তু প্রতিভার অণ্বেষণটাও একটা বড় দায়িত্ব, যেটা ব্রাজিলের ক্লাবগুলো করেই চলেছে।

পেলে, নেইমারের ক্লাবের পর জিকোর ক্লাব। ফ্ল্যামেঙ্গোকে ব্রাজিলের সবচেয়ে বড় ও ধনী ক্লাব ধরা হয়। ওদের সমর্থকদের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। আয়ও সবচেয়ে বেশি। রিওর গাভিয়া বলে যে জায়গাটায় ওদের ক্লাবটা, সেখানে অন্তত ৪ থেকে ৫ একর জায়গা নিয়ে হবে ক্লাবটা। ভিতরে ফুটবল মাঠই গোটা সাতেক। একটা ছোট স্টেডিয়াম। এখন এই মাঠটাই বেস ক্যাম্প হিসেবে ব্যবহার করছে হল্যান্ড। তার পরও গোটা ছ’য়েক মাঠ আছে। ফ্ল্যামেঙ্গো অবশ্য শুধুমাত্র ফুটবল ক্লাব নয়। সাঁতার, ওয়াটারপোলো, জিমন্যাস্টিক, টেনিস সব ধরনের খেলা হয় এখানে। বিশাল একটা জায়গা নিয়ে গোটা কমপ্লেক্সটা। ফ্ল্যামেঙ্গো ক্লাব যখন আমি খুঁজে বেড়াচ্ছি রিও-র রাস্তায়, অন্তত তিন জনকে দেখলাম যাঁরা ফ্ল্যামেঙ্গোর সমর্থক এবং ট্যুর গাইড হওয়ার জন্য সাগ্রহে রাজি। এম এ সুয়ারেজ নামের এক বয়স্ক ভদ্রলোক বাসস্টপ থেকে ক্লাব অবধি পৌঁছে দিয়ে গেলেন। ক্লাবে ঢোকার মুখে আলাপ হল ক্রিশ্চিয়ানার সঙ্গে। ক্রিশ্চিয়ানা কলেজে পড়ায়। ফ্ল্যামেঙ্গোয় টেনিস খেলে। ক্লাবের বাকিটা ঘোরানোর দায়িত্ব নিল ও-ই। ফেরার সময় গাইড জুলিয়া নামের আর এক ফ্ল্যামেঙ্গো। নিজের ক্লাব সম্পর্কে এতটাই গবির্ত ওঁরা, এবং এতটাই আন্তরিক যে বিন্দুমাত্র সমস্যায় পড়তে হল না। এবং এই কৃতজ্ঞতা থেকেই এর পর থেকে ব্রাজিলের ক্লাব ফুটবলে আমি অন্তত ফ্ল্যামেঙ্গোর সমর্থক!

এর পর রোনাল্ডিনহোর ক্লাব। অ্যাটলেটিকো মিনেইরো। আপাতত আর্জেন্টিনার দখলে। মেসিদের বেস ক্যাম্প ওটাই। বেলো হরাইজন্তে শহরের বাইরে পাহাড়ের গায়ে ক্লাবটা। ক্লাবের প্রধান দরজা দিয়ে ঢুকেই ক্লাবহাউস, অফিস, ট্রফিরুম, কনফারেন্স রুম। তার পর চড়াই-উতরাইয়ের রাস্তা ঢুকে গিয়েছে প্র্যাকটিশ এরিনায়। এক একটা উচ্চতায় একটা করে মাঠ। মোট চারটে মাঠ আছে সবুজে ঢাকা এই ক্লাবে। পাহাড়ের গায়েই রয়েছে ফুটবলারদের থাকার জায়গা। রোনাল্ডিনহোরা শুধুমাত্র পাহাড় থেকে নেমে অনুশীলন করে আবার পাহাড়ে উঠে যান। মেসিরাও তাই করছেন। দু’বছর আগে এই ক্লাব খুঁজে বের করে বেস ক্যাম্প হিসেবে এটাই বেছে গিয়েছিলেন আর্জেন্টিনার টেকনিক্যাল ম্যানেজার কার্লোস বিলার্দো। তিনি আছেন এই টিমের সঙ্গে। মেসিদের সঙ্গে রয়েছে ওঁদের অনুর্ধ্ব-২০ জাতীয় দলও। কী ভাবে একটা জাতীয় দলকে তৈরি করা হয়, এ সব না দেখলে বোধহয় বোঝা সম্ভব নয়।

নেইমারদের প্রস্তুতি দেখেও তাই মনে হল। শুধুমাত্র জাতীয় দলের ট্রেনিং সেন্টার হিসেবে একটা স্থায়ী জায়গা বেছে নিয়েছে ব্রাজিলিয়ান ফুটবল ফেডারেশন। রিও থেকে তেরোসেপলিস যেতে ঘণ্টা দেড়েক সময় লেগেছিল। ছবির মতো রাস্তা। দু’পাশে পাহাড়ের কোলে ঘন জঙ্গল। অরগায়োস ন্যাশনাল পার্ক। এই রেঞ্জটার নাম রিজাও সেরেনা। অর্থাত্‌ হাইল্যান্ডস। ব্রাজিলের বেশ কিছু বিখ্যাত পর্বতশৃঙ্গও এখানে। সবচেয়ে বিখ্যাতটা হল ডোডো দ্য ডিউস। অর্থাত্‌ ঈশ্বরের আঙুল। শৃঙ্গটা দেখলেই মনে হবে আকাশের দিকে যেন আঙুল তুলে আছে কেউ। এই ডোডো দ্য ডিউসের কোলেই ব্রাজিলিয়ান ফুটবল ফেডারেশনের নতুন সাম্রাজ্য। বিশাল একটা জায়গা ঘিরে ওঁরা বানিয়ে নিয়েছেন জাতীয় টিমের স্থায়ী বেস ক্যাম্প। গত ২৬ মে থেকে নেইমাররা এখানেই আছেন। এখানেই অনুশীলনের ব্যবস্থা। ভবিষ্যতেও ব্রাজিলের জাতীয় দল তৈরি হবে এখান থেকেই। সব বয়সের জাতীয় দলের ক্যাম্প হবে এখানে। ভিতরে চার-চারটে মাঠ। শহর থেকে অনেক দূরে, একটুকরো নির্জনতায়, পাহাড়ের কোলে এখানেই প্রস্তুতি নেবে ব্রাজিল। এই মুহূর্তে অবশ্য তেরেসোপলিসের পাহাড়ি রাস্তা হলুদ জার্সিতে ভরে গিয়েছে। যতদূরেই থাকুন নেইমাররা, ব্রাজিলিয়ানরা পাশে থাকবেই।

অনুমান করতে পারেন, জাতীয় দলকে আরও একনিষ্ঠ করতে, আরও মগ্ন করতে একটা দেশের ফুটবল ফেডারেশন কিনে ফেলল আস্ত একটা পাহাড়। গড়ে ফেলল ছোট্ট এক ফুটবল ভিলেজ। ওরা কেন ব্রাজিল, এ বার বুঝতে পারেন!

বব হাউটনের কথা মনে পড়ছিল। হায়দরাবাদে এশিয়া কাপের কোয়ালিফাইং রাউন্ডের ম্যাচ খেলছে ভারত। অনুশীলন করার জন্য যে মাঠ দেওয়া হয়েছিল, তাতে অনুশীলন শেষ করতে পারেননি ভারতীয় কোচ। প্রস্তুতির জন্য প্রতি বার দলকে নিয়ে যেতে হত বিদেশের মাটিতে। তবু জাতীয় দলের জন্য একটা ভাল মাঠ পাওয়া যায়নি। আর ব্রাজিলে? অ্যালেক্স বেলোস লিখেছিলেন, “আজ ব্রাজিলকে ভালবাসি ওরা ব্রাজিল বলে।” কিন্তু ব্রাজিল হওয়ার সমীকরণটা? শুধু শিল্প আর আবেগ মেশালে কিন্তু রসায়নটা ঠিক হবে না। এই ভাবনা, পরিকল্পনাগুলো কিন্তু বাদ যাবে না।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE