Advertisement
E-Paper

বলিউডে সত্যিকারের প্রেম বলে কিছু নেই... সবই প্রয়োজনের

সুভাষ ঘাই মনে করেন বিপদে হিরোরা তাঁর পাশে দাঁড়ালেও, হিরোইনরা না-ও থাকতে পারেন। খোলাখুলি কথা বললেন প্রিয়াঙ্কা দাশগুপ্ত-র সঙ্গে।এত কিছু বলা হয়, আপনার আর আপনার হিরোইনদের নিয়ে। কোনও দিন কোনও হিরোইনের প্রেমে পড়েননি? এটা আপনাকে বলব না। কারণ বললে, কাছের মানুষদের দুঃখ দেওয়া হতে পারে। তবে একটা কথা বলা দরকার। এটুকু জানবেন যে, হয়তো ইন্ডাস্ট্রির সব অ্যাফেয়ারগুলোই নিড বেসড হয়। প্রয়োজন ভিত্তিক সম্পর্ক। দুই ফ্লপ অভিনেতাকে কখনও প্রেম করতে দেখেছেন? বা একজন সফল অভিনেতা আর এক ফ্লপ অভিনেত্রীর সঙ্গে সম্পর্ক টিকিয়ে রাখছে, দেখেছেন কি?

শেষ আপডেট: ২৩ এপ্রিল ২০১৪ ০০:০০
সুভাষ ঘাই-এর সঙ্গে মিষ্টি ও কার্তিক। ছবি: কৌশিক সরকার।

সুভাষ ঘাই-এর সঙ্গে মিষ্টি ও কার্তিক। ছবি: কৌশিক সরকার।

এত কিছু বলা হয়, আপনার আর আপনার হিরোইনদের নিয়ে। কোনও দিন কোনও হিরোইনের প্রেমে পড়েননি?

এটা আপনাকে বলব না। কারণ বললে, কাছের মানুষদের দুঃখ দেওয়া হতে পারে। তবে একটা কথা বলা দরকার। এটুকু জানবেন যে, হয়তো ইন্ডাস্ট্রির সব অ্যাফেয়ারগুলোই নিড বেসড হয়। প্রয়োজন ভিত্তিক সম্পর্ক। দুই ফ্লপ অভিনেতাকে কখনও প্রেম করতে দেখেছেন? বা একজন সফল অভিনেতা আর এক ফ্লপ অভিনেত্রীর সঙ্গে সম্পর্ক টিকিয়ে রাখছে, দেখেছেন কি?

অনেকেই এটা বলেন যে আপনি নাকি নায়িকাদের নিয়ে অবসেস্‌ড!

শুধু নায়িকারাই বা কেন? ছোটবেলার থেকেই মেয়েদের ভাল লাগত। মায়ের কোলে বসে মায়ের সঙ্গে মাসিদের গল্প শুনতাম। দিদার সঙ্গে রাতে ঘুমাতে যেতাম। আমি নারীকে মাতৃরূপে কল্পনা করি। এমনকী আমার দশ বছর বয়সের মেয়েকে আমি মাতৃরূপে দেখি। ও আমার সঙ্গে অনেকটা আমার মায়ের মতো ব্যবহার করে। বাবা জামার বোতামটা আটকে নাও। কেন মোজাগুলো ঠিক করে পরোনি কত রকমের প্রশ্ন। আমাকে ম্যানার্স শেখায় ও! এ সব আমার ছেলে ভুলেও কোনও দিন করবে না।

মায়ের সঙ্গে সম্পর্ক কেমন ছিল?

মা আমার সব থেকে ভাল বন্ধু ছিলেন। পেশায় ছিলেন শিক্ষিকা। আমার বাবা ছিলেন ডাক্তার। মাকে দেখে শিখেছি, যখনই কোনও মহিলার সঙ্গে আমার আলাপ হয়, তখনই আমি তাঁর মধ্যে এমন একটা কোয়ালিটি খুঁজি যা অন্য কারও মধ্যে নেই। পুরুষেরা সাধারণত একরকমই হয়। বৈষয়িক, ডমিনেটিং, অনেক সময় বেশ চতুর। বেশির ভাগ পুরুষই খুব প্রেডিক্টেবল। কিন্তু মেয়েরা কখন কী করে বসবে কেউ বলতে পারে না।

চিত্রনাট্যে এই চিন্তাধারা প্রতিফলিত হয়েছে কি?

যখন চিত্রনাট্য লিখতে শুরু করলাম তখন সাফল্য পাওয়ার আকাঙ্ক্ষাটা প্রবল ছিল। বক্স অফিসে সে সময় পুরুষ চরিত্রদের প্রাধান্য দিয়ে ছবি বানালে ছবির কাটতি বেশি হত। বন্ধুত্ব আর বিশ্বাসঘাতকতা এই দু’টো থিম। আর পুরুষদের তিনটে জিনিস প্রয়োজন। জার, জরু আর জমিন। দ্যট ইজ পাওয়ার, উওম্যান অ্যান্ড ল্যান্ড। একজন পুরুষমানুষ এগুলো পেলেই তার সব স্বাদ মিটে যায়। ‘কালীচরণ’ লিখতে গিয়ে এটা মনে রেখেছিলাম।

কিন্তু পরের দিকের ছবিতে তো মহিলাদের বেশ প্রাধান্য দিয়েছেন...

হ্যাঁ, দিয়েছি তো। ‘রাম লক্ষ্মণ’য়ে যখন রাখির চরিত্রটা লিখি তা তো আমার মায়ের আদলেই গড়া। এ প্রসঙ্গে আরও একটা কথা বলা দরকার। তা হল, আমার বাবা-মায়ের সম্পর্ক। আমার বাবা ছিলেন শিক্ষিত। ডাক্তার। কিন্তু ব্যক্তি হিসেবে পুরোদস্তুর শভিনিস্ট। আর তা নিয়েই মায়ের সঙ্গে বাবা-র কথা কাটাকাটি চলত। একবার মা চুল কাটালেন। আর তা দেখে বাবার কী রাগ। এক মাস কথা বলেননি। মাই মাদার ফট ফর ইক্যুয়াল রাইটস্‌ অব উইমেন। কিন্তু বাবা খুব ডমিনেটিং ছিলেন। শেষ পর্যন্ত দু’জনের ডিভোর্স হয়ে গিয়েছিল।

তখন আপনার কত বয়স?

দশ কি বারো হবে। আই কাম ফ্রম আ ফ্র্যাকচার্ড ফ্যামিলি। আমি অ্যাকচুয়ালি মায়ের নেওটা ছিলাম। যাকে বলে ‘মামাস বয়’। ১২ থেকে ১৯ বছর বয়স অবধি হোস্টেলে পড়াশোনা করেছি। বাবা আমার পড়ার সব খরচা দিতেন। মনে আছে মা আমাকে চিঠি লিখতেন। সে সব একদম বন্ধুর মতো লেখা। তবে মাকে ঘিরে যে ঘটনাটা আমার মনে সব থেকে দাগ কেটেছিল তখন উনি মৃত্যুমুখে। বাবা-মা তখন আলাদা থাকতেন। আমি বাবাকে সঙ্গে করে মাকে দেখতে গিয়েছিলাম হাসপাতালে। মনে আছে, বাবা সে দিন বলেছিলেন ‘আই অ্যাম সরি’। তা শুনে মা একবার বাবার দিকে তাকিয়ে বলেছিলেন, ‘ইট’স ওকে’। তবে নিজেদের মধ্যে ঝামেলা থাকলেও মা কোনও দিন বাবাকে অসম্মান করার শিক্ষা দেননি।

কোনও দিন মনে হয়েছিল যে, মাকে বাবা ঠিক পড়তে পারেননি?

আমি পুণেতে পড়াশোনা করার সময় প্রেমে পড়ি। বয়স তখন ১৯। প্রেমিকার বয়স ১৫। যেটা আমার কাছে ভয়ের ছিল তা হল, আমার প্রেমিকা ছিলেন মুসলিম। পার্টিশনের সময় আমাদের পরিবার এতটাই অ্যাফেক্টেড হয়েছিল যে, মুসলিম পরিবারের মেয়েকে আমাদের বাড়ির বৌ হিসেবে গ্রহণ করা হবে তা আমি ভাবিনি। চার বছর প্রেম করেছিলাম রেহানার সঙ্গে।

তখন কি পুণে ফিল্ম অ্যান্ড টেলিভিশন ইনস্টিটিউট-এ পড়তেন?

হ্যাঁ। ঋত্বিক ঘটক আমার শিক্ষক ছিলেন সেখানে। ওঁর সঙ্গে আমি রেহানার আলাপ করিয়ে দিয়েছিলাম। কিন্তু বাড়ির কাউকে সে কথা জানাইনি। এমনকী মাকেও বলিনি। তবে একদিন মনে হল, আর লুকিয়ে রেখে লাভ নেই। মাকে বললাম ওর কথা। বললাম ওর পরিবারের সবাই ব্যাপারটা জানেন। মা সব শুনে আমাকে বললেন, ‘কাল যদি তোমার বোন একজন মুসলিম ছেলেকে পছন্দ করে, আর সে যদি শেষে ধর্মের কারণে ওকে ছেড়ে চলে যায়, তা হলে তোমার কেমন লাগবে? ওকে তোমাকে বিয়ে করতেই হবে।’ বুঝলাম মায়ের মত আছে। আর এটাও বুঝলাম যে, মাকে আমি সত্যি রিড করতে পারিনি।

বিয়ের পরে ধর্ম পাল্টেছেন?

না, না। কেউ পাল্টাইনি। আমাদের দু’জনের সম্পর্কের মধ্যে ধর্ম কখনও কোনও বাঁধা হয়ে দাঁড়ায়নি। আমি তো ওকে প্রায় নিজে হাতে গ্রুম করেছি। তরকারি রান্না করা শেখানো থেকে চা বানানো সব হাতে ধরে শিখিয়েছি।

এত হিরোইনদের লঞ্চ করেছেন। প্রত্যেকের মধ্যে ইউনিক কী পেয়েছেন?

এই যে মিষ্টিকে দেখছেন। আমি এ রকম কোনও মেয়েকে দেখিনি যিনি সহজেই তিনটে বয়সের মহিলার মতো ব্যবহার করতে পারেন। কখনও মনে হবে যে, বোধহয় বড়জোর ১৪ বছর বয়স। এত সিম্পল। কখনও মনে হয়, একদম ২৪। আবার কখনও একদম ৩৪ বছর বয়সের নারীর মতো প্রাজ্ঞ। প্রথম যখন ‘কাঞ্চী’র জন্য অডিশন নিই ওকে আমি ওর সম্পর্ক জিজ্ঞেস করেছিলাম। আমি জানতাম ও একটা ফ্র্যাকচার্ড ফ্যামিলিতে বড় হয়েছে। জিজ্ঞেস করেছিলাম কোনও দিন কষ্ট পেয়েছ? বলেছিল, ‘নেভার’। বুঝেছিলাম ও ইন্ট্রোভার্ট। ওটাই ওর শক্তি। এবং এই শক্তি কাঞ্চী চরিত্রের মধ্যেও আছে।

এ তো গেল মিষ্টির কথা। মীনাক্ষী শেষাদ্রি-র মধ্যে কী দেখেছিলেন?

দারুণ ট্যালেন্টেড। ডেডিকেটেড। কিন্তু পার্সোনাল লাইফে ওর রোম্যান্স বলে কিছু ছিল না। কত লোকে ওর পিছনে পড়ে থাকত এই ভেবে, যদি ও প্রেম করে। কিন্তু মীনাক্ষী ব্যাপারটাই বুঝত না। বলা হত, ওর জন্য যেন একটা ছেলে খুঁজে দেওয়া হয় যাতে প্রেম ব্যাপারটা ব্যক্তিগত ভাবে বুঝতে পারে। প্রেম না করলে ওকে তো প্রেম ব্যাপারটাকে ইমিটেট করতে হবে পর্দায় রোম্যান্টিক দৃশ্য করতে গেলে! কিন্তু সে সব উদ্যোগে কোনও লাভ হত না। এ ব্যাপারে ও একেবারে নির্লিপ্ত ছিল। এই সেন্স অব ডিটাচমেন্টটা ইউনিক লাগত। গ্ল্যামার ওয়ার্ল্ডে থেকেও ডিট্যাচড্ হয়ে থাকতে পারার ক্ষমতাটা মীনাক্ষীর ছিল।

আর মাধুরী দীক্ষিত?

প্রথম যে দিন ওর সঙ্গে দেখা হয়েছিল আর ২০ বছর পরে যখন দেখা হল সব ক্ষেত্রেই ওকে ওর মাকে সঙ্গে নিয়ে আসতে দেখেছি। প্রোটেক্টেড চাইল্ড ছিল। ইয়ার্কি করে বলতাম মাধুরীর জীবনে ‘আই, বাঈ, তাই বাকি বাচা সুভাষ ঘাই।’ আমি ওর মেন্টর ছিলাম। ওর দু’টো প্যাশন ছিল। নাচ আর অভিনয়। সঞ্জয় দত্তের সঙ্গে ওর সম্পর্ক হয়েছিল। সঞ্জয় পরে আমাকে দুঃখ করে বলেছিল যে, জেলে যাওয়ার পরে মাধুরী ডিডন্ট স্ট্যান্ড আপ ফর হিম।

মনীষা কৈরালা আর মহিমা চৌধুরী-র সঙ্গেও কাজ করেছেন আপনি...

হ্যাঁ। মনীষাকে যখন প্রথম দেখি, আই লাইক হার অ্যাঞ্জেলিক ফেস। দারুণ রোম্যান্টিক। ড্রিমি রোম্যান্সে বিশ্বাসী। প্রেমে পড়তে ভয় পেত না। আর স্বপ্ন দেখত। অ্যাম্বিশনও ছিল। কিন্তু তার সঙ্গে ওর মধ্যে দেখেছি সারল্য। মহিমা আবার খুব ক্যালকুলেটিভ। আর দারুণ এক্সট্রোভার্ট। ভীষণ পেশাদার। ও জানত, বিজনেসে কী ভাবে চললে ঠিক হবে। এ ছাড়াও ছিল ঐশ্বর্যা রাই (বচ্চন)। ওর সঙ্গে আলাপ হয়, যখন ও মিস ওয়ার্ল্ড হয়ে গিয়েছে। ওর মধ্যে নারীসুলভ মন আর পুরুষ মস্তিষ্কের অদ্ভুত মিশেল রয়েছে।

আনন্দplus-এর কাছে নিজের জীবনকে ঘিরে কোনও কনফেশন করবেন?

আমি তো শুধু হিরোদের নিয়ে ছবি করিনি। হিরোইনদের নিয়েও করেছি। সব হিরোরা আমার প্রতি লয়াল থেকেছে। সঞ্জয়, জ্যাকি, অনিল, শাহরুখ, সলমন সব্বাই। দেখা হলে কত ইয়ার্কি-ঠাট্টা হয়। শাহরুখকে আমি মজা করে বলি যে, হিন্দি ফিল্মে ও সব সময় এমন নায়িকাদের সঙ্গে প্রেম করেছে যার অন্য কারওর সঙ্গে বিয়ে হওয়ার কথা ছিল! একবার ডাকলেই আমার সব হিরোরা পাশে এসে দাঁড়াবে। কিন্তু সে একই দাবি আমি আমার হিরোইনদের নিয়ে করতে পারি না!

subhas ghai priyanka dasgupta kanchi kartik misti
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy