Advertisement
E-Paper

‘মেঘে ঢাকা তারা’ দেখতে দেব

আনন্দplus-এর প্রথম সংখ্যার জন্য উত্তমকুমারের ময়রা স্ট্রিট সংলগ্ন ফ্ল্যাটে এসেছিলেন দেব। সুপ্রিয়া দেবী-র আশীর্বাদ শুধু নয়, উত্তম পাঠশালা থেকে নানান টিপস্ নিয়েও ফিরেছিলেন সে দিন। বুধবার আনন্দplus-এর বিশেষ দ্বিতীয় বার্ষিকী সংখ্যাতে দেব-সুপ্রিয়া আবার একসঙ্গে! আবার সুপ্রিয়া দেবীর নতুন ঠিকানায় দেব সশরীরে দেখতে এসেছেন সেই অনন্য স্পিরিট — ‘দাদা আমি বাঁচতে চাই’! সফরসঙ্গী গৌতম ভট্টাচার্যআনন্দplus-এর প্রথম সংখ্যার জন্য উত্তমকুমারের ময়রা স্ট্রিট সংলগ্ন ফ্ল্যাটে এসেছিলেন দেব। সুপ্রিয়া দেবী-র আশীর্বাদ শুধু নয়, উত্তম পাঠশালা থেকে নানান টিপস্ নিয়েও ফিরেছিলেন সে দিন। বুধবার আনন্দplus-এর বিশেষ দ্বিতীয় বার্ষিকী সংখ্যাতে দেব-সুপ্রিয়া আবার একসঙ্গে! আবার সুপ্রিয়া দেবীর নতুন ঠিকানায় দেব সশরীরে দেখতে এসেছেন সেই অনন্য স্পিরিট — ‘দাদা আমি বাঁচতে চাই’! সফরসঙ্গী গৌতম ভট্টাচার্য

শেষ আপডেট: ২৬ নভেম্বর ২০১৪ ০০:০১

ঘটনাচক্রে, দু’টো সফরই নভেম্বরে। দু’টোতেই ‘বেণুদির রান্নাঘর’ পরিবেশিত লুচি-আলুর দম-রসগোল্লা হাত ডুবিয়ে খেয়েছেন বাংলা ছবির জনপ্রিয়তম সুপারস্টার। কিন্তু এ ছাড়া মিল কোথায়!

বরং চারটে বড় অমিল!

দেব যখন প্রথম বার এসেছিলেন, উত্তমকুমারের ফ্ল্যাটে ঢুকে রোমাঞ্চিত হতে। সেই ফ্ল্যাটটাই তো আজ আর নেই! অনেকেই জানেন না সুপ্রিয়া দেবী যে ও পাড়া ছেড়ে প্রয়াত মহানায়িকার পড়শি হয়ে গিয়েছেন শেষ জীবনে। তিনি সুচিত্রা সেন শেষবারের মতো নিজের যে বাড়ি ছেড়ে বেল ভিউ রওনা হন, তার নম্বর ৫২। আর ইনি ঋত্বিক ঘটকের ‘মেঘে ঢাকা তারা’ থাকেন একটু এগিয়ে। উল্টো দিকের ফুটপাথের গায়ে। ৩২ নম্বর বালিগঞ্জ সার্কুলার রোডে। ভাগ্যই যেন আপন লীলাখেলায় বাংলা ছবির বিখ্যাত দুই রঙ্গমঞ্চকে এমন পাশাপাশি এনে দিয়েছে!

শেষ দেব-সুপ্রিয়া সাক্ষাতের সময় বাংলা ছবির মহানায়িকা জীবিত ছিলেন। তাঁকে নিয়ে অনেক কথাও বলেছিলেন সুপ্রিয়া দেবী। যার কিছু গোলাপ, কিছু কাঁটা। এ বারে মৃতের প্রতি সৌজন্যবশতই হয়তো কাঁটার উদয় দেখলাম না।

এই সুপ্রিয়া দেবী অনেক বেশি শারীরিক সমস্যা-পীড়িত। এখনকার কথা ক্রমাগত ভুলে যাচ্ছেন। যদিও মস্তিষ্কে অতীত ভীষণ ভাবে জীবিত। বরাবরের মতো জীবনযুদ্ধের দুর্মর লড়াই চালিয়ে গেলেও এই একাশি প্লাস তিনি বারবারই বলে ফেলছেন, “রমাদি পথ দেখিয়েছেন। এ বার আমাদের পালা।”

শেষ সাক্ষাতে কিন্তু বিষণ্ণতার এস্রাজটা একবারও বাজেনি।

চার, দু’বছর আগে উত্তমকুমারের ড্রয়িং রুমে যে দেবের আবির্ভাব ঘটেছিল, তিনি সুপারস্টার হয়েও একা এসেছিলেন। ইনি ঘাটালের সাংসদ। এলেন পিছনে লালবাতি আর রক্ষী নিয়ে। জনসভায় নিয়মিত বলেটলে বোধহয় বক্তা হিসেবে এতটা স্বচ্ছন্দ। আগের বার যেখানে মোহাবিষ্টের মতো উত্তমভূমিতে বসেছিলেন, এ বার সেখানেই কথাবার্তায় অনেক সাবলীল!

সুপ্রিয়া মরাটরার কথা তুলতেই দেব অভয় দিচ্ছেন, “বলছেন কী! তার আগে আমার সঙ্গে একটা ছবি করতে হবে তো!” সুপ্রিয়া তখনই রাজি, “ঠিক, চলে যাওয়ার আগে একটা ছবি তোমার মায়ের রোলে করব। মনে রাখবে সৎমা নয়, মা।” এর পর সুপ্রিয়া স্বগতোক্তির মতো বলেন, “আমি শুধু ভাবছি উত্তম বেঁচে থাকলে তোমার আজকের এই পজিশন আর জনপ্রিয়তা দেখে কত খুশি হত। ও সব সময় ইয়ং ট্যালেন্ট ভালবাসত। ‘ইন্টারভিউ’তে নতুন নায়ককে দেখে ওর এত ভাল লেগেছিল যে বিভিন্ন ডিরেক্টরকে বলেছিল এই ছেলেটাকে নিন। রঞ্জিত মল্লিক নামটা তখন মনে করতে পারছিল না। খালি বলছিল, ‘আরে, মৃণালদার নতুন হিরো। খুব ভাল’। দেব, আমি সিওর, তোমার কথাও উত্তম লোককে গর্ব করে বলত।”

উত্তম আর সুচিত্রা— দু’জনেই যে এক নার্সিং হোমে মারা গেলেন, এটা কি অপূর্ব কাকতালীয় নয়? যে প্রবাদপ্রতিম জুড়ির শেষ নিশ্বাসত্যাগ ঘটল একই চত্বরে?

সুপ্রিয়া বিষণ্ণ হয়ে মাথা নিচু করছেন, “ভাবতে চাই না। মনটা বড্ড খারাপ হয়ে যায়। মানুষটা চলে গেছে চৌত্রিশ বছর। আজও প্রতিদিন মিস করি। ভীষণ কষ্ট হয়।” স্বগতোক্তির মতো বলে চলেন, “জানো দেব, কথা নেই বার্তা নেই, একদিন ওর ছেলে গৌতম এসে আমার ফ্ল্যাটে হাজির। রাগত ভাবে বলল, ‘আমার বাবাকে ডেকে দিন। আপনি বাবার এখানে কী করছেন?’ আমি বলি, ‘আমি ওকে ভালবাসি’। তখন গৌতম রেগে বলেছিল, ‘আমার বাবাকে সারা পৃথিবীর লোক ভালবাসে।’ আমি আর কথা না বাড়িয়ে ওকে ভেতরে গিয়ে বলি, ‘যাও। তোমার ছেলে এসেছে।’ ও বলল, ‘কেন এসেছে এখানে?”’

কোন দুঃখে উত্তম বাড়ি ছেড়ে চলে এসেছিলেন, আজও জানেন না সুপ্রিয়া। “আমি জানতেও চাইনি। মানুষটার অনেক যন্ত্রণা ছিল। তবে আমি নিজে গিয়ে ভবানীপুরে বড়গিন্নিকে প্রণাম করে এসেছিলাম।”

এগুলো কি সত্যিই ঘটেছিল? নাকি কিঞ্চিৎ জরায় আক্রান্ত সুপ্রিয়ার স্মৃতিগুলো একটার পর একটা সুপারইম্পোজ হয়ে তাল কাটছে? অতীতের কথা এক একবার পরিষ্কার বলে দিচ্ছেন, আবার দ্রুতই একটা কথা থেকে চলে যাচ্ছেন প্রসঙ্গান্তরে।

ময়রা স্ট্রিট চত্বরের সেই বিলাসবহুল ফ্ল্যাটের তুলনায় বালিগঞ্জ সার্কুলার রোডের হাউজিং এস্টেটটা নেহাতই ছোট। যা নায়িকার অসহায় অর্থনৈতিক অবস্থা দেখে মঞ্জুর করেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

একতলায় থাকেন সুপ্রিয়া। গভর্মেন্ট হাউজিং এস্টেট বলতে সরকারি রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে জরাজীর্ণ যে ছবি ফুটে ওঠে, এটা মোটেও তেমনটা নয়। হাঁটাচলার অসুবিধা বিবেচনাতেই একেবারে নীচের তলায় তাঁকে ফ্ল্যাট দেওয়া হয়েছে। উল্টো দিকে দু’পা হাঁটলে হাউজিংয়ের ভিতরে পার্ক।

ড্রয়িং রুমে সুপ্রিয়ার একটা ব্ল্যাক অ্যান্ড হোয়াইট ছবি ল্যামিনেশন করা— সেই ‘আম্রপালী’ সময়কার। যা দেখলে আজকে লাল চাদর পরা জীবনযুদ্ধে সামান্য ধস্ত বৃদ্ধাকে মেলানোই যায় না।

ছবিটা কোথায় রাখা ছিল আগের বাড়িতে? দেব ভাবতে থাকেন। সে দিন একটা ছবি অবশ্য দেখেছিলেন আর তা মনে রাখা নিয়ে কোনও সংশয় নেই।

উত্তম-সুপ্রিয়া একসঙ্গে! বহুবিখ্যাত সেই বিয়ের ছবি। “ওই দিনটায় আমাদের বিয়ে হয়। ৩ ডিসেম্বর ১৯৬৩। বড়গিন্নিকে জানিয়েই বিয়েটা হয়েছিল,” বলতে থাকেন সুপ্রিয়া। অতিথি নায়কের মুখের জিওমেট্রি দেখে মনে হল তিনি কিছুটা অবিশ্বাসী হয়ে পড়েছেন, “উনি পারমিশন দিলেন বিয়েতে। কী বলছেন?” সুপ্রিয়া ঘাড় নাড়েন। বলেন, “আজও একটা কথা শুনলে আমার খারাপ লাগে যে, আমি নাকি ওর ঘর ভেঙেছি। একদম বাজে কথা। মানুষটার ঘর ভাঙাই ছিল। আমি শুধু তাকে নিজের বাড়িতে আশ্রয় দিয়েছিলাম।”

আর কী কী শুনলে আজকের দিনেও খারাপ লাগে তাঁর? “যখন শুনি বেশি মদ খাওয়ার জন্য মানুষটা তাড়াতাড়ি চলে গিয়েছে। উত্তম মদ খেত, কিন্তু খুব পরিমিত। দু’-তিন পেগের বেশি কক্ষনও না। খাওয়া সম্ভবও নয়। যে লোকটা রোজ ভোর চারটেয় উঠে মর্নিং ওয়াক করতে বেরোত, সে কি কখনও বেশি রাত করে মদ খেতে পারে? এ তো কমন সেন্স! কিন্তু কে কাকে বোঝাবে?”

দেব যে রাজনীতিতে গেলেন, এটা ঠিক হয়েছে? “ওটা ওর ব্যক্তিগত ব্যাপার। আমি কী বলব? ” উত্তম হলে যেতেন? “ও বরাবর রাজনীতিবিদদের থেকে দূরেই থাকত। মানুদা (সিদ্ধার্থশঙ্কর রায়) যদিও ওকে খুব স্নেহ করতেন। মানুদা বাড়িতেও এসেছেন।”

বামফ্রন্টের তাঁর প্রতি গভীর ঔদাসীন্য কি উত্তমকে কষ্ট দিত সে সময়? দেব শুনে ঝাঁপিয়ে পড়লেন, “ওরা খারাপ ব্যবহার করত বুঝি? উনি আপসেট হতেন?”

সুপ্রিয়া বললেন, “সে তো হতই। কিছু বলত না, চুপ করে যেত।”

এ বার দেবের সামান্য বকুনি খাওয়ার পালা। হলুদ-কালো স্ট্রাইপড্ শার্টে বুকখোলা দেবকে যত মাচোই লাগুক না কেন, মুখে রোম্যান্টিকতা কোথায়? যেটা সুপ্রিয়া চেয়ে এসেছেন বারবার। “দাড়িটা কাটো। কী রকম একটা পঞ্জাবি-পঞ্জাবি দেখতে লাগছে।” দেব বলেন, “নিশ্চয়ই। এটা ফিল্মের লুকের জন্য। এ বার কেটে ফেলব।”

সুপ্রিয়া মনে হল না শুনলেন বলে। “মানুষটার হাসিটাও ছিল আলাদা। আমি আঠারো বছর এক ছাদের তলায় কাটিয়েছি। ওকে দেখেছি প্রায় ত্রিশ বছর। তাও রোজ সকালে ঘুম থেকে উঠে ওকে হা করে দেখতাম। উত্তমের ক্যারিশমা এ রকমই ছিল।”

মেগাতারকাকে লোকে দেখবে না সে যত সাধারণের ধরা ছোঁয়ার বাইরে থাকবে তত ভাল— এই প্রসঙ্গটা উঠল। সুপ্রিয়া সেই অসিতবরণের কাহিনি তুললেন। “উত্তম আজ বাজারে কী দারুণ ভেটকি কিনলাম, তুই ভাবতে পারবি না,” বলেছিলেন নাকি অসিতবরণ। উত্তম নিরুৎসাহী জবাব দেন, “ভেটকি যার কাছ থেকে কিনলে সে আর যারা তোমায় দেখল তারা কি এর পর তোমার জন্য টিকিট কিনবে?” সুপ্রিয়া একই পরামর্শ দিতে চান দেবকে। “যত পারবে আড়ালে থাকবে। রমাদি কালেভদ্রে রাস্তায় বেরোতেন কি না সন্দেহ। উত্তমও তাই। ও কারও সঙ্গে দেখাই করতে চাইত না,” সুপ্রিয়া নিশ্চিত, এখনকার দিনে হলে উত্তম-সুচিত্রা প্রচারের কাজে বাইরে বেরোতেন না।

দেব যা মানছেন না, “দিদি, কোনও উপায় নেই। তখনকার দিনে টিভি ছিল না। আমরা বসে থাকতাম, কখন আমিন সায়ানির প্রোগ্রাম রেডিয়োতে শুরু হবে তার জন্য। এখন সময়টাই আলাদা। টপ মুম্বই স্টাররা অবধি চাপে পড়ে প্রচারে নামছে। কী কম্পিটিশন এখন। লোকের হাতের কাছে দু’শোটা চ্যানেল। রিমোট টিপে যে কোনও কিছু আপনি দেখতে পারেন। মোবাইল খুলে সিনেমা দেখতে পারেন।”

সুপ্রিয়া যেন শুনেও শুনলেন না। বরং আগের বার যেমন দেবকে কিছু পরামর্শ দিয়েছিলেন উত্তমের জীবন থেকে, এ বারও দিলেন।

খুব মন দিয়ে কাজ করো: অভিনয়টা যতটা পারো নিখুঁত করতে হবে।

মনে রেখো, উত্তম একটা স্ক্রিপ্ট নিয়ে দশ দিন কাটাত। মর্নিং ওয়াকে গিয়ে অবধি দেখেছি বিড়বিড় করে ডায়লগ বলছে।

চামচে সঙ্গে রেখো না: এটা তোমায় আগেও বলেছিলাম, দেব। উত্তমের এত ভাল সব গুণের মধ্যে এই একটা খারাপ দিক ছিল। ও ভুলভাল লোকেদের কাছে রাখত। চামচেরা ওর অনেক ক্ষতি করেছে।

মিডিয়াকে বিশ্বাস কোরো না: উত্তম মিডিয়ার খুব একটা কাছে যেত না। অনেকে পরিচিত নিশ্চয়ই ছিল, কিন্তু তাদের কখনও কোলে করে রাখেনি। বিশেষ করে একজন সাংবাদিকের নাম দর্শনপ্রার্থীদের মধ্যে দেখলেই ও কেটে দিত। এই ভদ্রলোক সম্পর্কে আমি তোমাকেও সতর্ক করতে চাই দেব। তোমার ক্ষতি করে দেবে। (নামটা শুনে দেব অবশ্য বললেন এই সাংবাদিকের সঙ্গে তাঁর আলাপই নেই)

বান্ধবীদের কিছুতেই পুরো বিশ্বাস করবে না: এরা মুখে এক রকম বলবে, ভেতরে ভাববে অন্য কিছু। উত্তমের বেলা আমি দেখেছি তো নামীদামি নায়িকাদের কাণ্ড। সবাই নাকি ধপাধপ প্রেমে পড়েছে। কিন্তু কিছু দূর গিয়েই তো ফুস।

দেব এই সময় লাফিয়ে পড়লেন। দাদাকে ধরেছিলে কোনও দিন হাতে নাতে? সুপ্রিয়া স্মিত হাসিতে অপূর্ব আত্মরক্ষা করলেন। জিজ্ঞেস করি, আচ্ছা, এটা কি সত্যি যে ‘আনন্দ আশ্রম’ করার সময় শর্মিলার সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার কালো মেঘ দেখতে পেয়ে আপনি ফাটাফাটি করেছিলেন? সুপ্রিয়া বললেন, “কে, শর্মিলা! তোমাদের দাদার দৌড় আমি জানতাম। সে ঠিক এখানেই ফিরবে। অথচ আমি কারও সঙ্গে দেখা করতে গেলে তার মুখ ভারী হয়ে যাবে। এত পজেসিভ ছিল।”

দেব বিশেষ উৎসাহিত। বলো বলো, কে কে তোমার প্রেমে পড়েছিল? আনন্দplus দু’টো নাম এগিয়ে দিল: হেমন্ত আর ধর্মেন্দ্র। দেব বলছেন, “আরে দারুণ ব্যাপার তো!” সুপ্রিয়া কথাটা এগোতেই দিলেন না। সাক্ষাৎকারের ঠিক এই পর্যায়ে এসে মনে হল, তাঁকে যতটা মানসিক ভাবে পীড়িত ভেবেছিলাম, মোটেও তা নন।

চারটে পরামর্শের মধ্যে শেষেরটাই মনে হল দেব ইনবক্সে রাখবেন না। বললেন, “বিয়ে করার আগে এসে আপনাকে ইনভাইট করে যাব।” শুনে সুপ্রিয়া যে দারুণ প্রসন্ন এমন নন। “খুব সাবধানে বিয়ে করবে। তুমি এত বড় স্টার। ভুল হলে কেলেঙ্কারি হবে। তার আগে একদিন মেয়েটিকে আমার কাছে নিয়ে এসো। আমি দেখি।”

ইতিমধ্যে লুচিটুচি সাঁটিয়ে বেরিয়ে যাওয়ার সময় হয়ে গিয়েছে। উত্তম-সুপ্রিয়ার সেই বিয়ের ছবির সামনে সুপ্রিয়াকে জড়িয়ে ধরে দেব যেন খানিকটা আবেগপ্রবণই হয়ে পড়লেন। “আমি পুনর্জন্মে বিশ্বাস করি না। আমি মনে করি যা কিছু সব এ জন্মেই। চলে যাওয়ার আগে নগদ কেটে ঈশ্বর স্লিপ ধরিয়ে দেন। আমার আজ কলকাতা শহরের প্রথম দশটা লোকের নম্বর মোবাইলে সেভ করা আছে। সুপ্রিয়া দেবীর মতো লেজেন্ডের সঙ্গে যে এ ভাবে বসতে পারছি। সবই এ জন্মে কোনও প্রিয়জনের স্বীকৃতি। যার সুকৃতির ফল আমি পাচ্ছি। নইলে আমি নিজে এই ক’বছরে এত ভালবাসা পাওয়ার মতো কিছু করিনি। আমার তো মনে হয়, আমার বাবার উদ্যম আর শুভ কীর্তির ফলটাই আমার উপর পড়েছে। সব এ জন্মে প্রাপ্তি আর এ জন্মেই শেষ।”

সুপ্রিয়া এ বার শুনেছেন পরিষ্কার। উদাসভাবে বললেন, “পরজন্মে আমিও বিশ্বাস করি না। পরজন্ম থাকলে উত্তমের তো কোথাও না কোথাও এত দিনে ফিরে আসার কথা। আমি কত শিশুর মুখ ঘেঁটেছি। আমেরিকাতে যখন গেছি, তখন ওখানকার বাচ্চাদের খুঁটিয়ে দেখেছি কারও সঙ্গে কি ওর মুখ মিলছে? কই না তো! তা হলে পরজন্ম কোথায়?”

বাড়ির আবহটাই নিমেষে বিষণ্ণ হয়ে গেল এতক্ষণের হাসিঠাট্টা থেকে। বেরোনর সময় মনে হচ্ছিল, টেকনিক্যালি ঠিকানাই শুধু বদলেছেন সুপ্রিয়া দেবী।

৩২ বালিগঞ্জ সার্কুলার রোডটাও তো সেই উত্তম-ধাম!

first issue 2nd year dev supriya devi gautam bhattacharya meghe dhaka tara
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy