Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪

রূপঙ্কর ক্ষমা চাইতে রাজি নন

আনন্দplus-য়ে গায়কের বক্তব্যে যাঁর সম্পর্কে তীব্র অভিযোগ ছিল সেই ইমপ্রেশারিও বাদল ধর চৌধুরী উত্তেজিত চিঠি পাঠালেন। জবাবে অনমনীয় রূপঙ্কর।রূপঙ্করের জাতীয় পুরস্কার পাওয়ার আনন্দের মধ্যেই হাজির প্রতিবাদের চিঠি। পুরস্কৃত হওয়ার পর কলকাতায় ফিরেই রূপঙ্কর আনন্দplus-কে একটি ইন্টারভিউ দেন। সেখানে বলেন পুরস্কার পাওয়ার আগে তার মনে পড়ছিল সেই সব মানুষের কথা যাঁরা তাঁকে নানা ভাবে বঞ্চিত করেছেন সাফল্যের পথে এগোতে।

রূপঙ্কর। ছবি: সুব্রত কুমার মণ্ডল।

রূপঙ্কর। ছবি: সুব্রত কুমার মণ্ডল।

শেষ আপডেট: ২৮ মে ২০১৪ ০০:০৮
Share: Save:

রূপঙ্করের জাতীয় পুরস্কার পাওয়ার আনন্দের মধ্যেই হাজির প্রতিবাদের চিঠি।

পুরস্কৃত হওয়ার পর কলকাতায় ফিরেই রূপঙ্কর আনন্দplus-কে একটি ইন্টারভিউ দেন। সেখানে বলেন পুরস্কার পাওয়ার আগে তার মনে পড়ছিল সেই সব মানুষের কথা যাঁরা তাঁকে নানা ভাবে বঞ্চিত করেছেন সাফল্যের পথে এগোতে।

তিনি বলেছিলেন, “মনে পড়েছিল বাদল ধর চৌধুরী নামে এক ইমপ্রেশারিওর কথা। যিনি আমাকে পারিশ্রমিক না দিয়ে লন্ডনে নিয়ে গিয়ে গান গাইয়েছিলেন দিনের পর দিন।” লন্ডন তখন রূপঙ্করের কাছে নরকযন্ত্রণা। মনে পড়েছিল তাঁর অনেক কম্পোজারের কথা যাঁরা এক সময় তাঁকে নানা ভাবে হয়রানি করেছেন গান গাওয়ানোর প্রতিশ্রুতি দিয়ে।

এই বক্তব্যের প্রতিবাদ করে আনন্দplus দফতরে যে চিঠি দিয়েছেন বাদল ধর চৌধুরী, তার বক্তব্য একের পর এক তুলে ধরে রূপঙ্কেরর প্রত্যুত্তর জানানো হল।

বাদল ধর চৌধুরী

বাদল: ১৯৯৮ সালে রূপঙ্কর এতটা বিখ্যাত কোনও শিল্পী ছিলেন না, যাঁকে টাকাপয়সা খরচ করে লন্ডনের মতো শহরে নিয়ে গিয়ে গান গাওয়ানো যায়।

রূপঙ্কর: আন্তর্জাতিক সারেগামাপা ইভেন্টের প্রতিযোগীদের যাওয়া আসার টিকিট যেখানে জি টিভি-র করার কথা সেখানে বাদলবাবু আমার মতো সাধারণ ঘরের ছেলের কাছ থেকে আশি নব্বই হাজার টাকা নিয়েছিলেন ভিসা পাসপোর্ট ইত্যাদি বাবদ। আমি ধার করেছিলাম সেই টাকা। সারেগামাপা অনুষ্ঠানে যে গায়কেরা গিয়েছিল তারা নামকরা শিল্পী ছিল না ঠিকই কিন্তু তাদের নিয়ে অনুষ্ঠানের পর লন্ডনপ্রবাসী ভারতীয়দের বাড়িতে আসর বসাতেন বাদলবাবু। শ্রোতাদের গান ভাল লাগলে যে ‘ছুট’ বা সম্মানিক নজরানা দিতেন তা সবই বাদলবাবুরই পকেটস্থ হত। আমি তার কানাকড়িও পাইনি।

এই সব সান্ধ্য আসরের জন্য বাদলবাবু যে রেমুনারেশন নিতেন তারও কোনও অংশ শিল্পীদের হাতে আসত না। এটা কি বিখ্যাত গায়ক না হওয়ার বঞ্চনা?

বাদল: লন্ডনের সেই ‘সারেগামাপা’ ইন্টারন্যাশনাল ইভেন্টে তিন রাউন্ড পরেই অত্যন্ত নিকৃষ্ট মানের পরিবেশনার কারণে রূপঙ্কর প্রতিযোগিতা থেকে বাদ পড়েন। এবং কলকাতায় ফিরে আসতে বাধ্য হন। ওই প্রতিযোগিতার বিচারকমণ্ডলীতে ছিলেন গুলাম আলি, জগজিত্‌ সিংহ, মেহেদি হাসান, রুণা লায়লা, গুলাম মুস্তাফা খান এবং আরও অনেকে। প্রত্যেকের সঙ্গে আমার ব্যক্তিগত সুসম্পর্ক থাকার সুবাদে রূপঙ্কর আমাকে উপর্যুপরি অনুরোধ করতে থাকে যাতে তাকে আর একটি বার সুযোগ দেওয়া হয়।

রূপঙ্কর: আমি যখন গান গাইতে যাই বাদলবাবু বার বার করে বলেছিলেন গানে কিছু ইনোভেটিভ কালোয়াতি করতে। বিচারকেরা আমাকে মহম্মদ রফির গাওয়া ‘দিন ঢল জায়ে’ গানটি গাইতে বলেন। আমি তাতে মার্গীয় সঙ্গীতের কিছু কাজ বুনেছিলাম। তাতে গানটি সম্ভবত শ্রুতিমাধুর্য হারায়। বাদলবাবু সেই সময় আমার সর্বময় কর্তা। তিনিই আমার অভিভাবক। তাই তাঁর কথা মেনেই গাই। কিন্তু বিচারকেরা বললেন এই ভাবে ক্ল্যাসিক্যালের কাজ যদি লাগানোর প্রয়োজন হত, তা হলে রফিসাব নিজেই সেটা করতেন। প্রয়োজন ছিল না বলেই তিনি করেননি। স্বাভাবিক ভাবেই আমি প্রতিযোগিতা থেকে বাদ পড়ি। বাদ পড়ার কারণটা বাদলবাবুই। এখন উনি বলতেই পারেন আমার পরিবেশনা ছিল নিকৃষ্ট মানের!

সবিস্তারে দেখতে ক্লিক করুন...

বাদল: ‘অনেক কম্পোজার’ যাঁরা তাঁকে দিনের পর দিন কাজ দেবার নাম করে ঘুরিয়েছেন বলে রূপঙ্কর অভিযোগ করেছেন সেই সব কম্পোজারের নাম উল্লেখ করার সত্‌ সাহসটুকু তিনি দেখাতে পারেননি।

রূপঙ্কর: বাদলবাবু যদি মনে করেন যে আমি কাজের সুযোগ পাব না ভেবে কম্পোজারদের নাম করলাম না, তা হলে ভুল করছেন। ওই সব কম্পোজার যথেষ্ট গুণী মানুষ, গানবাজনায় দক্ষ এবং তাঁরা অনেকেই এখন আর সঙ্গীত জগতে নেই। তাই সম্মানার্থেই তাঁদের নাম উল্লেখ করিনি।

বাদল: রূপঙ্কর, আপনাকে বিনা পারিশ্রমিকে দিনের পর দিন লন্ডনে নিয়ে গিয়ে গান গাইয়েছি এ তথ্য প্রমাণ করুন। সংবাদ মাধ্যমে ক্ষমা চান। অন্যথায় আমি আপনার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিতে বাধ্য হব। কারণ জি টিভির ওই প্রতিযোগিতায় আপনার স্বাক্ষরিত চুক্তিপত্র সহ প্রয়োজনীয় তথ্য আমি সংবাদমাধ্যমে পেশ করতে পিছপা নই।

রূপঙ্কর: আমি কোনও মতেই ক্ষমা চাইব না বাদলবাবু। লন্ডনের প্রতিযোগিতার কাগজপত্র থাকতেই পারে। কিন্তু আপনি এমন অনেক ভাবে আমাকে দিয়ে গান গাইয়ে টাকা রোজগার করেছেন যার কোনও প্রমাণ নেই। কারণ লন্ডনপ্রবাসীদের বাড়িতে গানের অনুষ্ঠানের কোনও সই সাবুদ করা কাগজ আমার কাছে নেই। আপনি আইনি বন্দোবস্ত নিলে নিতেই পারেন। কারণ আপনার কাছে প্রামাণ্য নথি আছে।

আমি লড়ব আমার সততা দিয়ে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

rupankar badal dhar choudhury
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE