Advertisement
E-Paper

শিক্ষার সাত রং

কোনটা ভাল? কোনটা খারাপ... পেরিয়ে কোনটা ‘বেস্ট’? উচ্চাকাঙ্ক্ষী বাবা-মা। নাজেহাল পড়ুয়া। ‘রামধনু’র বিষয় তো তাই। লিখছেন স্রবন্তী বন্দ্যোপাধ্যায়।‘বেস্ট স্কুল নয়... বেস্ট স্কুল নয়, চাই বেস্ট এডুকেশন’। কোথায় পাওয়া যায় বেস্ট এডুকেশন? গরমের ছুটিতে সে রকমই এক নতুন স্কুলের হদিশ দিচ্ছেন শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় আর নন্দিতা রায়। অতনু রায়চৌধুরী নিবেদিত, উইনডোজ ও জালান ইন্টারন্যাশনাল ফিল্মস্ প্রযোজিত ‘রামধনু’ ছবির সাত চরিত্রের মধ্যে লুকিয়ে আছে ‘বেস্ট এডুকেশন’-এর সাত রং।

শেষ আপডেট: ১৯ মে ২০১৪ ০০:০০

‘বেস্ট স্কুল নয়... বেস্ট স্কুল নয়, চাই বেস্ট এডুকেশন’।

কোথায় পাওয়া যায় বেস্ট এডুকেশন? গরমের ছুটিতে সে রকমই এক নতুন স্কুলের হদিশ দিচ্ছেন শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় আর নন্দিতা রায়। অতনু রায়চৌধুরী নিবেদিত, উইনডোজ ও জালান ইন্টারন্যাশনাল ফিল্মস্ প্রযোজিত ‘রামধনু’ ছবির সাত চরিত্রের মধ্যে লুকিয়ে আছে ‘বেস্ট এডুকেশন’-এর সাত রং।

গোগোল

‘রামধনু’-র ছোট্ট গোগোল, ‘ভাল’ স্কুলে ভর্তির পরীক্ষায় তাকে পাশ করতেই হবে। অনর্গল মায়ের বকুনি, বাবার গম্ভীর মুখ কেবলই গোগোলকে ইংরেজি বুলি আওড়াতে বাধ্য করে। কিন্তু গোগোলের চোখে তো তখন ঘুড়ি ওড়ানোর স্বপ্ন। তার মন ঘিরে দিদিমার কাছে শোনা হিড়িম্বার গল্পকথা। প্রকৃতির মধ্যে থেকে নিজেকে প্রকাশ করার শিক্ষা? নাকি ‘বেস্ট স্কুল’-এর গুরুভার? কোন রঙের ঘুড়ি ওড়াবে গোগোল? শিশুশিক্ষার প্রথম ধাপের দায়িত্ব কার ওপর ছেড়ে দেবে আজকের বাবা-মা? তাঁদের ভূমিকাই বা কতটা? আজকের জীবনের সবচেয়ে প্রাসঙ্গিক বিষয় নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে ‘রামধনু’। সন্তানের মন চিনতে ভুল করছেন আজকের বাবা-মায়েরা। সামাজিক চাপের মধ্যে সন্তানের ওপর তাঁরা আরোপ করছেন বিধিনিষেধ। কিন্তু একজন শিশু কী চায়? তার মন কী কী বলে? গোগোলের মধ্যে দিয়েই শিশুমনের রামধনু রং খুঁজে পাবেন এই প্রজন্মের বাবা-মায়েরা।

মিতালি

সমাজের সকল স্তরের মায়ের মনের রং ধরা আছে ‘রামধনু’-র মিতালি দত্ত চরিত্রটির মধ্যে। মিতালি গোগোলের মা। একজন তিরিশে পা-দেওয়া মা যেমন মিতালির মধ্যে নিজের সমস্যাগুলো খঁুজে পাবেন, ঠিক তেমনি পঞ্চাশ পার করা মা-ও সন্তানের ‘ভাল স্কুল’-এ অ্যাডমিশনের জন্য নিজের আশঙ্কার ছবিটা চিনতে পারবেন। এই ছবি সংসার ও সন্তান ঘিরে প্রত্যেক মায়ের আশা, আকাঙ্ক্ষার ছবি। মধ্যবিত্ত গৃহবধূ, মিতালি দত্তর চরিত্রে দেখা যাবে গার্গী রায় চৌধুরীকে। সাদামাঠা চরিত্রে ডি-গ্ল্যামারাস্ লুক আনতে ছবিতে নিজের বাড়িতে পরা পোশাকই পরেছেন গার্গী। স্ক্রিপ্ট শুনেই রাজি হয়ে গিয়েছিলেন তিনি। “অভিনেতা অভিনেত্রীদের একটা সামাজিক দায়বদ্ধতা থাকে। সমাজের কাছে অভিনয়ের মধ্যে দিয়ে কিছু বলার দায়বদ্ধতা। ‘রামধনু’-র মিতালি দত্তর চরিত্র সেই সুযোগ আমায় দিয়েছে,” উচ্ছ্বসিত গার্গী।

লাল্টুবাবু

গোগোলের বাবা লাল্টুবাবু। ছবিতে ছেলের জন্য বেস্ট স্কুল খুঁজছেন তিনি। কিন্তু ইংরেজি না-জানা ওষুধের দোকানের মালিক কি ‘বেস্ট স্কুল’-এর উপযুক্ত বাবা হতে পারবেন? আজকের দিনে নামকরা ‘ভাল’ স্কুলে ভর্তির জন্য একটা কাঠামো তৈরি হয়েছে। মোটা মাইনের কর্পোরেট বাবা-মা। কেতাবি এসি প্লে স্কুলের টগবগে ইংরেজির ম্যানার্স মেনে চলা, ব্রাইট সন্তান। হন্ডা সিভিক আর ব্যাংকক যাওয়া পরিবারের শিশুই যেন আজকের আদর্শ শিক্ষার উপযুক্ত প্রোডাক্ট। এই মিথটাকে কি ভাঙতে পারবেন লাল্টুবাবু? সুচিত্রা ভট্টাচার্যের কাহিনি ‘রামধনু রং’-এর অবলম্বনে তৈরি এই ছবি তুলে ধরতে চেয়েছে সেই কঠোর সত্যকে যেখানে সন্তানজন্মের আনন্দ পর্যবসিত হচ্ছে সন্তানের বেস্ট স্কুলে চান্স না পাওয়ার আশঙ্কায়।

কিন্তু হঠাত্‌ এমন বিষয় নিয়ে ছবি কেন? “আমি জীবনের অভিজ্ঞতা থেকেই ছবি তৈরি করার কথা ভাবি। সেই জায়গা থেকেই দেখেছি বাঁকুড়ার বাবা-মা হোক, বা দক্ষিণ কলকাতার বাবা-মা, সকলের এখন একটাই চিন্তা বেস্ট স্কুলেই কি মিলবে বেস্ট এডুকেশন? সেই বেস্ট স্কুলে কেমন করেই বা ভর্তি হবে তাঁদের সন্তান?

ম্যাডাম মালবিকা বন্দ্যোপাধ্যায়

ম্যাডাম মালবিকা বন্দ্যোপাধ্যায় ‘রামধনু’র উজ্জ্বলতম রং। রচনা বন্দ্যোপাধ্যায় মালবিকার চরিত্রে অভিনয় করেছেন। তাঁর মধ্যে দিয়েই জানা যাবে স্কুল নয়, কোনও নির্দিষ্ট জায়গা নয়। শিশুর বেড়ে ওঠার ক্ষেত্রে শিক্ষাই সবচেয়ে বড়। সেই শিক্ষা আসবে মাটির গন্ধ থেকে। পাড়ার দামাল ছেলেদের সঙ্গে ঘুড়ি ওড়ানোর আনন্দে। ছবির দ্বিতীয় অংশে প্রবেশ জেনেও চরিত্রটির গুরুত্ব বুঝে ছবিটিতে কাজ করতে চেয়েছিলেন রচনা। “একঘেয়ে হাসিকান্না, নাচগানের বাইরে অভিনয় করে দারুণ লেগেছে,” বলছেন তিনি।

গোগোলের বন্ধু আর তার বাবা-মা

দুশো ষাটজন বাচ্চা আর তাদের বাবা-মা ‘রামধনু’র অপর এক রং। অভিনেতা,অভিনেত্রীদের দিয়ে সংলাপ না বলিয়ে বাস্তবের বাবা-মা আর তাঁদের বাচ্চাদের সেলুলয়েডে হাজির করে ‘রামধনু’কে জীবন্ত করে তুলেছেন শিবপ্রসাদ আর নন্দিতা। ছবির সংলাপ এতটাই বাস্তব যে, ছবির জন্য বাবা-মা, আর বাচ্চাদের ওয়ার্কশপ করতে গিয়ে কোথাও আলাদা করে অভিনয় শেখাতে হয়নি পরিচালকদের।

ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানির কর্মী সুমন্ত সাহা প্রবল ইচ্ছে সত্ত্বেও বিপুল পরিমাণ ডোনেশনের চাপে মেয়েকে কলকাতার নামকরা স্কুলে ভর্তি করাতে পারেননি। শিশুর মেরিট নয়, অভিভাবকদের আর্থিক মেরিটের দৌড়ে তিনি পরাজিত। ‘রামধনু’ ছবিতে তাঁর মেয়ে সৃষ্টি সাহা অভিনয় করেছে। ‘রামধনু’-র শ্যুট দেখতে দেখতে সুমন্ত সাহার ধারণাই বদলে গেছে। তিনি বুঝতে পেরেছেন শিক্ষা কেবল ‘বেস্ট’ স্কুল থেকেই আসে না। পরিবেশ, পরিবার সকলে মিলে শিশুকে গড়ে তোলে।

দেশ, কাল পেরিয়ে ‘রামধনু’ সৃষ্টির আনন্দের কথা বলে।

রামধনু কেন দেখবেন

• যে বাবা-মায়েরা বাচ্চাকে স্কুলে ভর্তির সময় প্রচণ্ড অসুবিধের মধ্যে পড়েছেন, তাঁরা আইডেন্টিফাই করতে পারবেন। যে স্বামী-স্ত্রী ভবিষ্যতে তাঁদের বাচ্চাকে স্কুলে ভর্তি করাবেন, তাঁরাও সিস্টেমটা বুঝতে পারবেন

• অনেক দিন পর বাংলা ছবিতে খুব ফ্রেশ একটা কাস্টিং দেখবেন দর্শক

• এই ছবিটা দিয়েই টলিউডে কামব্যাক করতে চলেছেন গার্গী রায় চৌধুরী ও রচনা বন্দ্যোপাধ্যায়। দু’জনেই ছবিতে অনবদ্য

• গোটা পরিবারকে সঙ্গে নিয়ে দেখতে পারবেন এই ছবি

•‘ইচ্ছে’, ‘মুক্তধারা’, ‘অলীক সুখ’য়ের পর দর্শকেরা নন্দিতা রায় এবং শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের ঘরানার আরও একটা ছবির ভরপুর স্বাদ পাবেন ‘রামধনু’তে

শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়।

নতুন স্কুল

সেন্ট জন ডায়োসেশন, বালিগঞ্জ শিক্ষা সদনের মতো স্কুলে ‘রামধনু’-র শু্যট হযেছে। সেন্ট জন ডায়োসেশনের শিক্ষিকা শুভলক্ষ্মী ভট্টাচার্য নন্দী মনে করেন ‘রামধনু’ আসলে যে কোনও স্কুলের অ্যাডমিশনের ক্ষেত্রে ‘রেডি রেকনার’ হিসেবে কাজ করবে। স্কুলে ভর্তি করা নিয়ে যে কোনও শ্রেণির বাবা-মা, আর তাদের সন্তানরা যে সমস্যার মুখোমুখি হন, ‘রামধনু’ সোজাসুজি সেটাই দেখিয়েছে। প্রকৃত শিক্ষা কী? সেটা জানতে হলে সকল মানুষকে ‘রামধনু’ ছবিটি দেখতেই হবে বলে দাবি করছেন বালিগঞ্জ শিক্ষা সদন স্কুলের প্রিন্সিপ্যাল সুনীতা সেন।

আগে বাবা-মায়েরা ঠিক করতেন তাদের সন্তানকে কোন স্কুলে ভর্তি করবেন। এখন স্কুল ঠিক করছে কোন ধরনের ছেলেমেয়েকে তারা নেবেন। এখান থেকেই সমস্যার সূত্রপাত। ২০০৯-এর রাইট টু এডুকেশন অ্যাক্ট যদিও বলছে কোনও স্কুল, শিশু বা তার বাবা-মায়ের ইন্টারভিউ নিতে পারে না। শিক্ষা সকলের। সেই কারণেই স্কুলেও ইন্টারভিউয়ের নামে শুরু হয়েছে গ্রুপ ডিসকাশন, ইন্টার্যাক্টিভ সেশন। গ্রুপ ডিসকাশনের প্রশ্নগুলোও অদ্ভুত, কোথায় বেড়াতে যাবেন? এই প্রশ্নের উত্তরে এক নম্বর বাবা যদি বলেন গরমের ছুটিতে পুরী যাব, আর দ্বিতীয় বাবা যদি বলেন আমরা পাটায়ার প্ল্যান করেছি। ব্যাস্! গ্রুপ ডিসকাশনে পাটায়া ছক্কা মেরে বেরিয়ে যাচ্ছে। এই রূঢ় বাস্তব থেকে বেরিয়ে এসে ‘রামধনু’ এক নতুন শিক্ষার রং ছড়ায়। ছবিতে শিক্ষা পদ্ধতি একটা চরিত্র হিসেবে কাজ করেছে।

রূপকথারা, চুপকথারা

বোলপুরের দাদুর বাড়িতে বঁড়শিতে মাছ গাঁথার জন্য পুকুর পাড়ে গোগোলের চুপ করে বসে থাকা।

দিদার মুখের সোনার কাঠি, রুপোর কাঠির রূপকথার গল্প শোনা।

ছবির এই মুহূর্তের মধ্যেই আছে ‘রামধনু’-র সোনা ঝলমল হলদে রঙের ইশারা।

আর এই মুহূর্তগুলোই ছবির নতুন দিগন্তের কথা বলেছে। যেখানে এক দিকে পাওয়া আর এক দিকে

শেখা। পাওয়াটা মুখের থেকে মুখে, প্রাণের থেকে প্রাণে, আর শেখাটা নিয়মে, কাজে। অভিভাবকদের মেঘঘন দুশ্চিন্তার আকাশে এ বারের গরমের ছুটিতে ‘রামধনু’ সেই পাওয়া আর শেখাকে কেমন করে মেলাবে? এখন সেটাই দেখার।

ramdhanu sibaprasad mukhopadhay nandita roy rachna bandopadhay srobanti bandopadhay
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy