Advertisement
E-Paper

শাদি কেঁচে গেল বিরতির পরই

মধুচন্দ্রিমা শেষ। রইল শুধু ফারহান-বিদ্যার অভিনয়। লিখছেন জাগরী বন্দ্যোপাধ্যায়।ক্রিকেট ম্যাচ দেখতে বসে এমন কত বার যে হয়েছে! শুরুটা জমিয়ে চড়চড় করে রান আসতে লাগল। বেশ কিছু ভাল শট দেখা গেল। কিন্তু ঠিক যে মুহূর্তে নিশ্চিন্ত হয়ে ভাবলেন যে, ম্যাচটা আজ জিতেই গেছেন, ঠিক তখনই সেট হয়ে যাওয়া ব্যাটসম্যান কী রকম যেন চোক করে গেল!

শেষ আপডেট: ০৩ মার্চ ২০১৪ ০৩:৫৬

ক্রিকেট ম্যাচ দেখতে বসে এমন কত বার যে হয়েছে! শুরুটা জমিয়ে চড়চড় করে রান আসতে লাগল। বেশ কিছু ভাল শট দেখা গেল। কিন্তু ঠিক যে মুহূর্তে নিশ্চিন্ত হয়ে ভাবলেন যে, ম্যাচটা আজ জিতেই গেছেন, ঠিক তখনই সেট হয়ে যাওয়া ব্যাটসম্যান কী রকম যেন চোক করে গেল!

বিশ্বাস করুন, ‘শাদি কে সাইড এফেক্টস’ দেখতে দেখতে বিলকুল এই অনুভূতিটাই হল। বাঘা বাঘা ম্যাচ উইনার হাতে থাকতেও আস্কিং রানরেট হাতের বাইরে চলে গেল।

নইলে রোম্যান্টিক কমেডির পিচে সাকেত চৌধুরীকে উইনিং ক্যাপ্টেন বলেই জানে সবাই। ‘পেয়ার কে সাইড এফেক্টস’ মনে করুন। মল্লিকা শেরাওয়াত যদি এ জীবনে স্মরণীয় কিছু করে থাকেন, তা হলে সেটা ওই ছবিটাই। বিপরীতে রাহুল বসু। এমন অত্যাশ্চর্য জুড়িকে নিয়েই সাকেত ছক্কা হাঁকিয়েছিলেন। সেখানে এ বার ফারহান আখতার আর বিদ্যা বালনকে নিয়ে মাঠে নামা মানে তো আদ্দেক ম্যাচ আগেই পকেটে পুরে ফেলা!

কিন্তু ওই যে, ম্যাট্রিমোনিয়াল সাইটের প্রোফাইল দেখে কি আর পাত্রপাত্রীর আসল চেহারা জানা যায়? প্রেম-পিরিতি আর বিয়ে-শাদির মধ্যে কত্ত তফাত সবাই জানে। বিবাহ শব্দটা আসলে বিভ্রাটের প্রেফিক্স। একটা সংলাপ বড় ভাল লিখেছেন সাকেত। বিয়েকে ফুলপ্রুফ করার ভাবনা একমাত্র কোনও ‘ফুলে’র মাথাতেই আসতে পারে। কিন্তু লাইফ ইজ আ টেল টোল্ড বাই অ্যান.... সুতরাং চেষ্টার কোনও শেষ নেই।

সিড (ফারহান) আর তৃষাও (বিদ্যা) চেষ্টা চালাচ্ছিল। একঘেয়েমি কাটাতে বাড়ি থেকে বেরিয়ে আনজানা-আনজানি সেজে হোটেলে রাত কাটাচ্ছিল। এই রকমই আরও কত কাণ্ড! গৃহশান্তি বজায় রাখার ফর্মুলাটা কী? এই প্রশ্নের উত্তরে ফারহান সটান বলে দেন, “খুব সহজ। আপনি নিজে কোনও গুবলেট করলে, সরি বলবেন, আপনার স্ত্রী গুবলেট করলেও, সরি বলবেন।”

বেচারা! সিড জানতই না, কলির সবে দুপুর! সেটা জানল, যখন তৃষা ঘোষণা করল, উই আর প্রেগন্যান্ট। ব্যস, শাদি এখানেই শেষ। এ বার গোটা গল্পটাই সন্তানের সাইড এফেক্টস। নতুন মাতৃত্ব নিয়ে তৃষার হাইপার হয়ে যাওয়া আর সিড-এর হাঁফিয়ে ওঠা থেকেই ছবির যাবতীয় ঘটনা-দুর্ঘটনা। মোটা জামাইবাবু (রাম কপূর), পরোপকারী পড়শি (পুরব কোহলি), উৎকট ব্যাচেলর (বীর দাস), নীতিবাগীশ বাই-রা (ইলা অরুণ) জড়ো হয়। বিরতি পর্যন্ত ছবিটা তরতর করে এগোয়। তার পরই মধুচন্দ্রিমা শেষ।

কী হল বলুন তো, সাকেত? এক, ছবিটা বড্ড একপেশে। সবটাই পুরুষের চোখ দিয়ে দেখা। কিন্তু বিয়ে নিয়ে কমেডি সিনেমা করা তো আর ফেসবুকে জোক শেয়ার করা নয়! সেখানে গল্পের খাতিরেই একটা ভারসাম্য আনা প্রয়োজন। সেটা নারীবাদের দাবি নাও যদি হয়, বিনোদনের দাবি বটে। তৃষার বাড়াবাড়ি দেখাতে গিয়ে সেটা যদি বিশ্বাসযোগ্যতার সীমা ছাড়ায়, তাতে কিন্তু আখেরে কমেডিটাই খেলো হয়। এবং বিদ্যা বালনের মতো অভিনেত্রী অনেকটা অব্যবহৃত থেকে যান। বিদ্যা বলেই তিনি অনেকটা খামতি নিজ গুণে ঢেকে দেন, কিন্তু চিত্রনাট্য তাঁর দিকে নেই।

তাও না-হয় বাদ দিলাম! মেয়েদের শরীরে দয়ামায়া আছে, মহিলা দর্শকরা না-হয় ক্ষমাঘেন্না করে নিলেন! ফারহান তো চিত্রনাট্যকে পাশে পেয়েছেন, সুদে আসলে নিংড়ে নিয়ে অভিনয়ও করেছেন। কিন্তু গল্পে আর একটু ব্যালেন্স থাকলে তাঁর চরিত্রটাও আরও খোলতাই হতে পারত যে। শেষ লগ্নে দুটো মোচড় আছে ঠিকই। কিন্তু চল্লিশ রান বাকি থাকতে শেষ ওভারে চার-ছয় মেরেই বা কী হবে! আসল কথা হচ্ছে, চল্লিশ রান বাকি থাকল কেন? বিয়ে-শাদি লম্বা টেস্ট ম্যাচ। তাতে অনেক, ক্লান্তিকর ব্যাপারস্যাপার আছে। মানলুম তা বলে তাই নিয়ে ছবি করলে সেটাও ক্লান্তিকর হতে হবে? সিনেমাটা তো বিয়ে নয়! সাকেত মনে হল গল্পটা ছেড়ে সাইড এফেক্ট-এ মন দিলেন। বারো হাত কাঁকুড়ের তেরো হাত বিচি হলে যা হয়, তাই হল। বীর দাসের মতো কমেডিয়ান কোনও কাজে লাগলেন না, আরও ঘেঁটে দিয়ে চলে গেলেন। হওয়ার কথা ছিল জাক কালিস, হলেন....না, থাক, কারও নাম করে কষ্ট দিতে নেই!

তবে কি ছবিটা দেখবেন না? ফারহান আর বিদ্যার ভক্তেরা দেখতে পারেন। সক্রেটিস বলেছিলেন, বিয়ে অতি অবশ্যই করুন! ভাল হলে সুখী হবেন। না-হলে দার্শনিক হয়ে উঠতে পারবেন। ছবিও তো তাই! ভাল্লাগলে দিলখুশ, না লাগলে ফিল্ম ক্রিটিক!!!

cinema review shadi ka side effects jagori bandopadhay
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy