Advertisement
E-Paper

সুচিত্রা-কণিকা সরণিতে

গান গাইবেন তাঁদেরই আদরের ভাইঝিরা। কবিপক্ষে সেই আসর শনিবার। লিখছেন সংযুক্তা বসুপিসিমণিরা আজ দাঁড়িয়ে আছেন গানের ওপারে। কিন্তু তাঁদের সুরের চরণ পেতে চান ভাইঝিরা। সুদেষ্ণা (চিকু) ও সোহিনী (পলা) দু’জনেই এখন প্রাপ্তবয়স্ক। তাঁদের রক্তধারায় যে গানের স্রোত বইছে তার সুরে সুর মেলাতে তাঁরা আগামী কাল কবিপক্ষ উপলক্ষে ক্যালকাটা ক্লাবের মঞ্চে হাজির হচ্ছেন কণিকা বন্দ্যোপাধ্যায় ও সুচিত্রা মিত্রের গাওয়া বিখ্যাত সব গানের ভাণ্ডার নিয়ে। বৈঠকি জলসার নাম ‘আমার মাঝে তোমার মায়া’। সুদেষ্ণা অবশ্য বললেন, “সকলের এই অনুষ্ঠান ভাল লাগলে সাধারণ শ্রোতাদের জন্যও আমরা দুই ভাইঝি মিলে একসঙ্গে অনুষ্ঠান করব।” গান গাইবেন সুচিত্রা-কণিকাদেরই আদরের ভাইঝিরা। কবিপক্ষে সেই আসর শনিবার। লিখছেন সংযুক্তা বসু

কণিকা বন্দ্যোপাধ্যায় সুচিত্রা মিত্র

শেষ আপডেট: ০৯ মে ২০১৪ ০৪:৪৩

ফুলে ফুলে ঢলে ঢলে বহে কীই বা মৃদু বায়...

এ গান তিনি শিখেছিলেন তাঁর আদরের পিসিমণির কোলে বসে। যখন তাঁর বয়স মাত্র তিন। ভাইঝি সেই গান তাঁর মনের মতো করে হুবহু গেয়ে দিচ্ছে দেখে আহ্লাদে আটখানা পিসিমণি বলেছিলেন, “কী ভালই না গায় আমাদের পলুরানি”....পলুরানির আসল নাম সোহিনী মুখোপাধ্যায়। আর পিসিমণি হলেন কণিকা বন্দ্যোপাধ্যায়।

‘আমার আঁধার ভালো, আলোর কাছে বিকিয়ে দেবে আপনাকে সে..’

বড় কঠিন গান। তবু তিন বছরের আর এক শিশুশিল্পী তুলেছিলেন তাঁর এক পিসিমণির গান শুনে শুনে। জন্মের একুশ দিন বাদে ওই কন্যের মা প্রয়াত হবার পর সে পিসিমণিকে মা বলেই ডাকত। কিন্তু পিসিমণির উচ্ছ্বাস কম। ভাইঝির গান শুনে বলেছিলেন “বা বেশ শিখেছ”। তার পর শুনলেন ‘আমি কান পেতে রই’। তা শুনেও বললেন ‘বেশ শিখেছ’। একদিন পিসিমণি বললেন ,‘‘কৃষ্ণকলি আমি তারেই বলি’ গাও তো। গানখানা কেমন তুলেছ দেখি একবার।” বালিকার নাম সুদেষ্ণা চট্টোপাধ্যায়। আর পিসিমণি বা তাঁর মা হলেন সুচিত্রা মিত্র।

পিসিমণিরা আজ দাঁড়িয়ে আছেন গানের ওপারে।

কিন্তু তাঁদের সুরের চরণ পেতে চান ভাইঝিরা। সুদেষ্ণা (চিকু) ও সোহিনী (পলা) দু’জনেই এখন প্রাপ্তবয়স্ক। তাঁদের রক্তধারায় যে গানের স্রোত বইছে তার সুরে সুর মেলাতে তাঁরা আগামী কাল কবিপক্ষ উপলক্ষে ক্যালকাটা ক্লাবের মঞ্চে হাজির হচ্ছেন কণিকা বন্দ্যোপাধ্যায় ও সুচিত্রা মিত্রের গাওয়া বিখ্যাত সব গানের ভাণ্ডার নিয়ে। বৈঠকি জলসার নাম ‘আমার মাঝে তোমার মায়া’। সুদেষ্ণা অবশ্য বললেন, “সকলের এই অনুষ্ঠান ভাল লাগলে সাধারণ শ্রোতাদের জন্যও আমরা দুই ভাইঝি মিলে একসঙ্গে অনুষ্ঠান করব।”

কেন হঠাৎ এই অনুষ্ঠান? সোহিনী বা সুদেষ্ণা এঁরা কেউই সে অর্থে বাংলার তথাকথিত রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পীদের বলয়ে তো বিচরণ করেন না। যদিও তাঁরা বিভিন্ন সময়ে বহু বছর ধরেই গান গেয়ে চলেছেন। দু’ জনেরই রবীন্দ্রসঙ্গীতের বেশ কিছু সিডি বাজারে আছে। ক্যালকাটা ক্লাবের সাংস্কৃতিক চেয়ারম্যান কল্লোল বসু বললেন, “সুদেষ্ণা আর সোহিনী দু’জনকেই অনেক দিন ধরে চিনি। মোহরদি (কণিকা) এবং সুচিত্রাদির গান ওঁদের গায়কিতে শুনলে ক্লাব-সদস্যরা আশা করি আনন্দ পাবেন”।

কিন্তু সুচিত্রা মিত্র আর কণিকা বন্দ্যোপাধ্যায় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্নেহ-প্রশ্রয় ধন্য এই দুই গায়িকার কথা উঠলেই ফুটে ওঠে যেন একটা সংঘাতের ছবি। সেটা কি সত্যি? কণিকার ভাই পান্নালাল মুখোপাধ্যায়ের মেজো মেয়ে ওরফে সোহিনী বললেন, “এটা যে কী বাজে গুজব। পিসিমণি আর সুচিত্রামাসির মধ্যে গলায় গলায় ভাব ছিল। এখনও মনে পড়ে বেলা এগারোটার সময় শান্তিনিকেতনের অ্যান্ড্রুজ পল্লিতে তখন নিঝুম দুপুর আর গরম। কে যেন দরজায় বেল বাজিয়ে গুরগম্ভীর কণ্ঠে ডাকলেন, ‘মো....হ.....র’। অমনি পিসিমণি বললেন, “ওই দ্যাখো সুচিত্রা এসেছে। কখন যে তার আবির্ভাব ঘটবে কেউ জানে না।” সোহিনী জানালেন তার পর দেখা হতে, হয় তুমুল আড্ডা, না হয় গলা জড়াজড়ি করে আদর, আর তা না হলে গানের বন্যা। এই ছিল সম্পর্ক।

“আসলে কিছু শ্রোতা সেলিব্রিটিদের এই মেরুকরণ করে আনন্দ পান। তাতে বোধ হয় গানের মেজাজটা বেশ জমে। সেই জন্যই মোহরমাসী আর মা-কে নিয়ে এত কথা,” বলছিলেন সুচিত্রা-ভ্রাতুষ্পুত্রী সুদেষ্ণা। বলছিলেন, কণিকা সাজতে ভালবাসতেন। আর সুচিত্রা তাঁর জন্য কিনে নিয়ে যেতেন শাড়ি, সাজের জিনিস বেঙ্গল হ্যান্ডিক্র্যাফ্টস থেকে। আর তার পর খাওয়াদাওয়া, হুল্লোড়। “মায়ের কাছে নানা সমস্যা সংক্রান্ত আলোচনা করতেন মোহরমাসি। এবং কথা বলে খুব শান্তি পেতেন। মা যেমন চিরকালই খুব সাহসী, স্পষ্টভাষী, মোহরমাসি ছিলেন কিছুটা নরম গোছের। তাই এই বন্ধুত্বের মধ্যে একটা আশ্চর্য চারিত্রিক বৈপরীত্যের বন্ধন ছিল,” বলছেন সুচিত্রা ভাইঝি সুদেষ্ণা।

আগামী কালের অনুষ্ঠানে সুচিত্রা-কণিকার ভাইঝিরা মিলে গাইবেন ‘আজি এ আনন্দ সন্ধ্যা’ গানটি। এই গানই ছিল সুচিত্রা- কণিকার যুগ্ম কণ্ঠে শেষ গান রবীন্দ্রসদনে। কালকের আসরে সোহিনী গাইবেন ‘ফুলে ফুলে’, ‘দূরে কোথায়’, ‘তুমি যেও ন’, ‘আমার সকল নিয়ে’, ‘সখী আঁধারে’র মতো গানগুলো যা কণিকাকণ্ঠে শ্রোতারা শুনে বারবার আবিষ্ট হয়েছেন। সুদেষ্ণা গাইবেন তাঁর মা বা পিসিমণির গাওয়া সেই সব গান যার মধ্যে অবশ্যই রয়েছে ‘কৃষ্ণকলি আমি তারেই বলি’।

প্রশ্ন এইখানেই যে এত দিন কোথায় ছিলেন এই ভাইঝিদ্বয়? তাঁরা কেনই বা একত্রে সামনে আসেননি?

তার কারণ সঙ্গীত ভবন থেকে পাশ করে উচ্চশিক্ষার পর সোহিনী ওরফে পলা চলে যান মুম্বইতে। সেখানে প্রদীপ সরকারের ‘পরিণীতা’ ছবির গানে কণ্ঠ দেন। বিভিন্ন বিজ্ঞাপনের জিঙ্গল গাওয়া থেকে সিনেমার প্রোডাকশন এক্সিকিউটিভ হিসেবে কাজ করা। বলিউডি গ্ল্যামার ওয়ার্ল্ডের নানা ধরনের কাজের পাশাপাশি ছিল তাঁর প্রাণের ঠাকুর রবীন্দ্রনাথের সাধনা। এ বার তিনি ফিরতে চাইছেন শিকড়ে। তাঁর বাংলা গানে। রবি ঠাকুরে। আর পিসিমণির লালমাটিতে।

অন্য দিকে সুচিত্রা-ভাইঝি সুদেষ্ণা রবিতীর্থ থেকে ষোলো বছর বয়সে পাশ করার পর গানের বহু অনুষ্ঠানে শামিল হলেও আমেরিকা চলে যান অল্প বয়সেই। সেখানে গানের স্কুলও খোলেন। ফের ফিরে এসে যোগ দেন ঋতুপর্ণ ঘোষের ছবির সহকারী নির্দেশক হিসেবে। এই মুহূর্তে তিনি ব্যস্ত বালিগঞ্জে তাঁর নিজস্ব বুটিক ও আর্ট গ্যালারি পরিচালনায়। সঙ্গে অবশ্যই আছে গান।

গত বছর সুচিত্রার জন্মদিনে সোহিনী ও সুদেষ্ণা ওই আর্ট গ্যালারিতে আয়োজিত এক স্মরণ অনুষ্ঠানে সকলের অনুরোধে একসঙ্গে গেয়েছিলেন “হৃদয়ের এ কূল ও কূল দু কূল ভেসে যায় হায় সজনী’। তাঁদের পিসিমণিরা যেমন একে অন্যের বন্ধু ছিলেন, সোহিনী ও সুদেষ্ণাও তেমনই বন্ধু। মনের কথা বলার আপনজন। সেই গানের পরই কথা চলতে থাকে ওঁদের নিয়ে যুগলবন্দি করার।

অবশেষে আগামী কাল সেই ভাইঝিদের দ্বৈত আসর। নেপথ্যে এসে দাঁড়াবেন হয়তো পিসিমণিরা।

জীবন ও মরণের সীমানা ছাড়ায়ে বন্ধু হে আমার রয়েছ দাঁড়ায়ে...

sanjukta basu
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy