Advertisement
০৩ মে ২০২৪
Shobdo Jobdo 2023

বিবর্তনের পথ পাড়ি দিয়ে কী ভাবে আধুনিকতার রূপ পেল ‘বাংলা ভাষা’? জানুন ইতিহাস

বাংলা ভাষা ক্রমে বহু পথ পাড়ি দিয়ে বিবর্তিত হয়ে আধুনিক ভাষার রূপ পেয়েছে। ভাষাকে সহজলভ্য করে তোলে শব্দ, বাক্যের গঠন এবং সমাজ-সংস্কৃতির রূপরেখা।

বাংলা ভাষার আদি গোষ্ঠীর নাম ‘ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষা গোষ্ঠী’ বা ‘আদি আর্য ভাষা গোষ্ঠী’

বাংলা ভাষার আদি গোষ্ঠীর নাম ‘ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষা গোষ্ঠী’ বা ‘আদি আর্য ভাষা গোষ্ঠী’

এবিপি ডিজিটাল কনটেন্ট স্টুডিয়ো
শেষ আপডেট: ০৬ জুলাই ২০২৩ ১৬:১৪
Share: Save:

আমরা প্রতিদিন আমাদের নিজ নিজ মাতৃভাষায় মনের ভাব প্রকাশ করে চলেছি, কিন্তু কখনও ভেবেছেন কী ভাবে হাজার বছর ধরে বেড়ে উঠেছে আমাদের এই প্রাণের ভাষা? বাংলা ভাষা ক্রমে বহু পথ পাড়ি দিয়ে বিবর্তিত হয়ে আধুনিক ভাষার রূপ পেয়েছে। ভাষাকে সহজলভ্য করে তোলে শব্দ, বাক্যের গঠন এবং সমাজ-সংস্কৃতির রূপরেখা। তখনকার সমাজে একমাত্র হিন্দু ব্রাহ্মণরাই সংস্কৃত ভাষায় লিখতে পারতেন। নিচু শ্রেণির জন্য এই ভাষার চর্চা প্রায় নিষিদ্ধ ছিল। বাংলা ও সংস্কৃত একই গোষ্ঠী থেকে এসেছে। বাংলা ভাষার আদি গোষ্ঠীর নাম ‘ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষা গোষ্ঠী’ বা ‘আদি আর্য ভাষা গোষ্ঠী’। এই ভাষা গোষ্ঠী থেকে উৎপত্তি হয়েছে অনেকগুলি ভাষার। বাংলা ভাষাকে নব্য ভারতীয় আর্যগোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্তও করা হয়। ভারত উপমহাদেশে আর্য ভাষার চল শুরু হয় খ্রিস্টপূর্ব ১৮০০ অব্দে আর্য জাতি আগমনের পর।

প্রচুর পরিমাণ সংস্কৃত ভাষার শব্দ যোগ হয়ে আর্য ভাষা রুপ নেয় ‘প্রাচীন ভারতীয় আর্য’ ভাষায় (খ্রিস্টপূর্ব ১৫০০ অব্দ)। আর্য জাতির পাশাপাশি সময়ের সঙ্গে ধীরে ধীরে উপমহাদেশর সাধারণ মানুষও আপন করে নেয় এই প্রাচীন ভারতীয় আর্য ভাষা। তখন আরও কিছুটা রুপান্তরিত হয়ে এ ভাষা হয়ে ওঠে ‘প্রাচীন ভারতীয় আর্য কথ্য’ ভাষায় (খ্রিস্টপূর্ব ১০০০ অব্দ) যা ‘আদিম প্রাকৃত’ নামেও পরিচিত। এর পর খ্রিস্টপূর্ব ৮০০ অব্দ হতে ৪৫০ খ্রিস্টাব্দের মধ্যবর্তী সময়ে আদিম প্রাকৃতের রুপান্তর ঘটে প্রথমে ‘প্রাচীন প্রাচ্য প্রাকৃত’ এবং পরবর্তীতে ‘গৌড়ি প্রাকৃত’ ভাষা দু’টির উৎপত্তি হয়। আর এই গৌড়ি প্রাকৃত থেকে ৪৫০ খ্রিস্টাব্দের কাছাকাছি সময়ে জন্ম হয় ‘গৌড়ি অপভ্রংশ’ ভাষার।

এই গৌড়ি অপভ্রংশ থেকেই ৯০০ খ্রিস্টাব্দের দিকে উৎপত্তি হয় ‘বাংলা’ ভাষার। শুরুর দিকে অবশ্য বাংলা ভাষা এমন ছিল না । ভাষাবিদগণের কথায় সে সময়ের বাংলা’কে বলা হয় ‘প্রাচীন বাংলা’। এরপর ১৪০০ খ্রিস্টাব্দের দিকে আসে ‘মধ্য বাংলা’ এবং ১৮০০ খ্রিস্টাব্দের দিকে সেটা রূপ নেয় ‘আধুনিক বাংলা’ ভাষায়। অর্থাৎ, যে ভাষায় আমরা এখন কথা বলি।

বিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে মানুষ আদিম কাল থেকে ভাষার ব্যবহার করে আসছে। ফলে তা কালক্রমে বিবর্তিত হয়ে বহু ভাষার রূপ লাভ করেছে। যেমন বাংলা লিপি এসেছে ব্রাহ্মী লিপি থেকে। এই কারণেই বাংলা ভাষার বয়স নির্ণয় করা বেশ কঠিন। তবে ইতিহাসবিদ ও ভাষাবিদরা বাংলা ভাষার ইতিহাসের যোগসূত্র খুঁজে পেয়েছেন। তারপর সময়ের পরিপক্কতার সঙ্গে সঙ্গে বাংলা ভাষা আজকের রূপ পেয়েছে। পরবর্তীতে ১৯৯৯ সালের ১৭ মে ইউনেস্কো আমাদের ভাষা এবং ভাষা শহীদদের সম্মানে ‘একুশে ফেব্রুয়ারি’ কে আন্তর্জাতিক মার্তৃভাষা দিবসের মর্যাদা দেয়। পুরো পৃথিবী জুড়ে প্রায় বিশ কোটির বেশি মানুষ বাংলায় কথা বলে। ভাষাভাষী লোকসংখ্যার দিক থেকে পৃথিবীর সপ্তম এবং একইসঙ্গে তিনটি দেশের রাষ্ট্রভাষা ‘বাংলা’।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE