উত্তরবঙ্গের বাংলা ভাষার শব্দভাণ্ডার তার নিজস্ব ভৌগোলিক ও সাংস্কৃতিক বৈশিষ্ট্যের কারণে খুবই সমৃদ্ধ। এই উপভাষায় প্রমিত বা দক্ষিণবঙ্গের বাংলা থেকে ভিন্ন অনেক শব্দ ব্যবহার হয়। এই শব্দগুলো সেখানকার মানুষের দৈনন্দিন জীবন, সংস্কৃতি এবং ভৌগোলিক পরিবেশের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত।
জলপাইগুড়ির বাসিন্দা এবং পেশায় বিজ্ঞান বিষয়ক শিক্ষক কৃষ্ণায়ণ দাশগুপ্ত, উত্তরবঙ্গের ভাষার কিছু বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করেছেন।
নিজস্ব শব্দাবলি ও শব্দ প্রয়োগের ধরন
উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন অঞ্চলের উপভাষায় কিছু বিশেষ শব্দ প্রচলিত আছে, যা সেখানকার দৈনন্দিন জীবন ও প্রকৃতির সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। যেমন:
- আত্মীয়তা ও সম্পর্ক: ‘বাপো’ (বাবা), ‘মাও’ (মা), ‘মেয়াভাই’ (বড়ভাই)।
- মানুষ ও সম্পর্ক: ‘ছাওয়াল/চ্যাংড়া’ (ছেলে), ‘চ্যাংড়ি/ড্যাংরী’ (মেয়ে)।
- দৈনন্দিন বস্তু: ‘ডালি’ (ঝুড়ি), ‘উশ্যাঘর’ (রান্নাঘর), ‘কদু’ (লাউ), ‘গইয়া/হব্রি’ (পেয়ারা), ‘পাইলা’ (পাতিল), ‘ছিমছাম’ (গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি), ‘দাউড়’ (কাঠের টুকরো)।
- শারীরিক অঙ্গ: ‘জিবরা’ (জিহ্বা)।
প্রতিবেশী ভাষার প্রভাব
উত্তরবঙ্গের ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে সেখানকার বাংলা ভাষার উপর প্রতিবেশী রাজ্য ও দেশের ভাষার প্রভাব স্পষ্ট।
অসমীয়া ও রাজবংশী ভাষা: এই উপভাষার একটি বড় অংশ রাজবংশী বা কামতাপুরি ভাষার দ্বারা প্রভাবিত। অনেক শব্দ ও বাক্য গঠন এই ভাষা থেকে এসেছে। যেমন, প্রমিত বাংলায় ‘আমি’ এর বদলে রাজবংশী উপভাষায় ‘মুই’ ব্যবহার হয়। ‘ঐ খানে’ এর বদলে ‘হেখানে’ বা ‘হেম্মে’ ব্যবহার করা হয়।
বিহারী ও নেপালি ভাষার প্রভাব: পার্শ্ববর্তী বিহার এবং নেপাল থেকেও কিছু শব্দ এই অঞ্চলের ভাষায় প্রবেশ করেছে। যেমন, ‘আসুখ’ (অসুখ), ‘কুন’ (কোন), ‘বুন’ (বোন) প্রভৃতি।
ধ্বনিগত পরিবর্তন
অনেক ক্ষেত্রে শব্দের উচ্চারণ বদলে গিয়ে একটি নতুন শব্দের জন্ম হয়েছে, যা উত্তরবঙ্গের ভাষার বৈশিষ্ট্য।
- ‘র’ ও ‘ড়’ এর মধ্যে বিপর্যয় দেখা যায়। যেমন: ‘বাড়ি’ হয়ে যায় ‘বারি’।
- শব্দের আদিতে শ্বাসাঘাতের কারণে ‘অ’ ধ্বনি অনেক সময় ‘আ’ রূপে উচ্চারিত হয়। যেমন: ‘অসুখ’ হয়ে যায় ‘আসুখ’, 'কথা' হয়ে যায় ‘কাথা’।
- ‘ও’ ধ্বনি কখনো কখনো ‘উ’ হয়ে যায়। যেমন: ‘কোন’ হয়ে যায় ‘কুন’, ‘বোন’ হয়ে যায় ‘বুন’।
এই শব্দভাণ্ডারগুলো কেবল ভাষা নয়, বরং উত্তরবঙ্গের মানুষের জীবনযাত্রা, সংস্কৃতি এবং তাদের ঐতিহাসিক বিবর্তনের একটি জীবন্ত প্রতিচ্ছবি। এই ভাবে উত্তরবঙ্গের বাংলা ভাষায় বহু নিজস্ব শব্দ ব্যবহৃত হয়, যা প্রমিত বাংলার থেকে ভিন্ন।
পশ্চিমবঙ্গের ১৫টি জেলার ২৫০টিরও বেশি স্কুলে আনন্দবাজার ডট কম আয়োজিত ‘শব্দ-জব্দ ২০২৫’ শুরু হয়েছে। এই প্রচেষ্টায় আমাদের সহযোগিতা করছে আনন্দবাজার ডট কম আয়োজিত ‘শব্দ-জব্দ ২০২৫’-এর পার্টনাররাও। এই উদ্যোগ সফল করার পেছনে রয়েছেন একাধিক সহযোগী। ‘প্রেজ়েন্টিং পার্টনার’ ইআইআইএলএম কলকাতা। ‘পাওয়ার্ড বাই পার্টনার’ ট্রেন্ডস এবং সিস্টার নিবেদিতা ইউনিভার্সিটি। এ ছাড়াও, ‘স্ন্যাকস্ পার্টনার’ কিকু নুডুলস্, ‘ফুড পার্টনার’ মনজিনিস এবং ‘নলেজ পার্টনার’ শব্দবাজি।