বাংলা শুধু মাতৃভাষা নয়, এটি ভাবপ্রকাশের ভাষা, সহজ, সরল শব্দে কোনও জটিল কথা বোঝানোর ভাষা। তাই প্রশ্ন যখন কুইজ প্রতিযোগিতার হয়, তখন অনেক সময়েই দেখা যায় কুইজ মাস্টার প্রশ্ন করছেন ইংরাজিতে, অথচ প্রতিযোগীরা সকলেই বাঙালি।
এই বিষয়ে লেখক দীপ সুন্দর দিন্ডা বলেছেন, “আমরা একদম প্রত্যন্ত গ্রামের ছেলে সেখান থেকে নিজেদের মতো করে আমরা একটু আধটু কুইজ বা জেনারেল নলেজের চর্চা করে থাকি, সেটা এলাকার যে কোনও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মঞ্চে বিভিন্ন সময়ে অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। এইভাবে দু’দশক এরও বেশি সময় ধরে কুইজ বা জেনারেল নলেজ নামক বিষয়টির সঙ্গে যুক্ত রয়েছি। প্রথম দিকে প্রতিযোগী হিসেবে যেতাম কাছাকাছি, তারপর যখন একটু ভাল পারফর্ম করতে লাগলাম তখন আমরা এলাকা ছাড়িয়ে একটু দূরে যেতে লাগলাম। দূরে বলতে অন্য জেলায়। তবে সেখানে গিয়ে আমাদের মতো কম পড়াশোনা জানা ছেলেমেয়েদের একটু সমস্যা হতো মানিয়ে নিতে কারণ সেখানে কুইজের প্রশ্ন হতো ইংরেজিতে। অথচ আমরা দেখতাম সেখানে সমস্ত প্রতিযোগী কিন্তু আমাদের মতই একদম বাংলা মিডিয়ামের ছাত্ররাই। আমার সবসময়ই কুইজ মাস্টার বা সংগঠনের প্রতি প্রশ্ন থাকত যে আমরা তো বাঙালি তাহলে প্রশ্নটা সবার সুবিধার্থে বাংলাতেই হোক না। কারন আমরা যতই ইংরেজি মিডিয়ামে পড়ি না কেন আমাদের মাতৃভাষা তো বাংলা, আমি কিন্তু এই প্রশ্নটা সবসময়ই রাখতাম।”
“একবার আমরা কোচবিহার গেছিলাম, এখানে আমি একই প্রশ্ন রেখেছিলাম আমরা সহজে ইংরেজিতে প্রশ্নগুলো বুঝতে পারছিলাম না তাই আশানুরূপ উত্তর দিতে পারছিলাম না। আমরা যারা বেশিরভাগ গ্রামীন এলাকায় থাকি অথচ কুইজের চর্চা করি আমরা কিন্তু বাংলাতেই প্রশ্ন তৈরি করি। তাছাড়া আমরা এমন প্রত্যন্ত এলাকায় ক্ইজ সঞ্চালনা করি যেখানে কিন্তু বাংলা হরফেই টাইপ করলে তবেই সাধারণ মানুষ বুঝতে পারবে। গত বছর আমি মেদিনীপুর টাউনে একটি সংগঠনের ডাকে গিয়েছিলাম পরিচালনা করতে। সেখানে বেশিরভাগ অভিভাবক ছাত্রছাত্রীরা সবাই কে আমি বলেছিলাম যে আমি কিন্তু বাংলাতেই সবকিছু প্রশ্ন তৈরি করে এনেছি যথারীতি তারা কিন্তু সমস্ত প্রশ্নই বুঝতে পেরেছিল এবং বেশ স্বাচ্ছন্দ বোধ করেছিল।”
তিনি আরও বলেন, “একটা জিনিস আমি যেটুকু বুঝলাম আমাদের মধ্যে কিন্তু অনেকেরই এই ধারণা রয়েছে লোক দেখানো ব্যাপারটা যে যদি না আমি ইংরেজিতে প্রশ্ন করি তাহলে আমার লেভেলটা হয়তো উঁচু দরের হবে না। এই ভ্রান্ত ধারণা থেকেই কিন্তু আমরা ইংরেজির আশ্রয় নেই। বেশ কয়েক বছর হল আমরা দক্ষিণ চব্বিশ পরগনার পাথরপ্রতিমা, কাকদ্বীপ, নামখানা, সাগরদ্বীউ-এর মতো প্রত্যন্ত এলাকায় কুইজের জন্য যাওয়া আসা করছি। সেইসব গ্রামীন এলাকায় বাংলা মাধ্যমে কিন্তু প্রশ্ন তৈরি করে তবেই ওদের আগ্রহ জন্মেছে এবং আজ কিন্তু তারা রাজ্যের কুইজের মানচিত্রে নিজেদের উপস্থিতি জানান দিচ্ছে।”
“আমরা যেসব গ্রামীন এলাকায় অনুষ্ঠান করে থাকি নিজের মতো বিষয় নিয়ে, সেখানে কিন্তু একদম সহজ সরল বাংলা ভাষায় প্রশ্ন তৈরি করতে হয়, যদি না করে নিয়ে যাই তাহলে কিন্তু কুইজের প্রতি তাদের আগ্রহই থাকবে না সেখানে ইংরেজির তো কোনও প্রশ্নই থাকছে না। কারণ এটুকু আমি মনে করি ইন্ডিয়া আর ভারতবর্ষ এক নয়। আমাদের গ্রামীণ ভারত বা গ্রামীণ বাংলার জন্য বাংলা ভাষা মাতৃদুগ্ধের সমান এবং এটাকে নিয়েই আমরা ভবিষ্যতে বেঁচে থাকতে চাই।”
পশ্চিমবঙ্গের ১৫টি জেলার ২৫০টিরও বেশি স্কুলে আনন্দবাজার ডট কম আয়োজিত ‘শব্দ-জব্দ ২০২৫’ শুরু হয়েছে। এই প্রচেষ্টায় আমাদের সহযোগিতা করছে আনন্দবাজার ডট কম আয়োজিত ‘শব্দ-জব্দ ২০২৫’-এর পার্টনাররাও। এই উদ্যোগ সফল করার পেছনে রয়েছেন একাধিক সহযোগী। ‘প্রেজ়েন্টিং পার্টনার’ ইআইআইএলএম কলকাতা। ‘পাওয়ার্ড বাই পার্টনার’ ট্রেন্ডস এবং সিস্টার নিবেদিতা ইউনিভার্সিটি। এ ছাড়াও, ‘স্ন্যাকস্ পার্টনার’ কিকু নুডুলস্, ‘ফুড পার্টনার’ মনজিনিস এবং ‘নলেজ পার্টনার’ শব্দবাজি।