বাংলার কথ্য ভাষা কি একটিই? পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জেলার মানচিত্র পেরিয়ে যদি আপনি একটি জেলা থেকে অন্য একটি জেলায় যান, এই প্রশ্নের উত্তর স্থানীয়দের কথা শুনেই পেয়ে যাবেন।
এই প্রসঙ্গে লেখক সুরজ ভৌমিক, যিনি বর্তমানে ভূমি ও ভূমি সংস্কার এবং উদ্বাস্তু ত্রাণ ও পুনর্বাসন দপ্তরে ভূমি রাজস্ব আধিকারিক হিসেবে কর্মরত, তিনি বলেছেন, “আমি কোন ভাষাবিদ নই, ছাপোষা চাকুরে মাত্র। বদলির চাকরির সুবাদে পশ্চিমবঙ্গের নানা জেলায় কাজ করার সুযোগ হয়েছে, আর সেই সূত্রেই রাজ্যের কথ্য ভাষার বৈচিত্র্য চোখে পড়েছে বা বলা ভালো কানে লেগেছে। উত্তর দিনাজপুরের ইসলামপুরে বাংলা ভাষায় উর্দুর প্রভাব প্রবল। লাগোয়া কিষানগঞ্জ জেলার সুরজাপুরি ভাষার মিশেলও স্পষ্ট। মালদা ও মুর্শিদাবাদে নবাবি আমলের রেশ রেখে যাওয়া উর্দু শব্দের ব্যবহার বেশ স্বাভাবিক মনে হয়। দুই দিনাজপুর ও উত্তর মালদায় বরেন্দ্রী ও রাজবংশী উপভাষা বহাল। সেখানকার মানুষজন ছেলেকে ‘ছাওয়াল’, ‘ছৈল’ কিংবা ‘ব্যাডা’ বলে ডাকেন। এইসব উচ্চারণে আজও টের পাওয়া যায় ওপার বাংলায় ফেলে আসা শিকড়ের টান।”
তিনি আরও বলেন, “সাম্প্রতিক বদলিতে গড়বেতায় এসে প্রথম শুনলাম মেদিনীপুরী বাংলার স্নিগ্ধ সুর যেখানে ‘ষ’ ও ‘শ’ ধ্বনি বদলে যায় ইংরেজি S-এ আর ‘না’-বাচক অব্যয় হয় ‘নি’, যেমন ‘করবো নি’, ‘যাবো নি’। এই অভিজ্ঞতাগুলিই বুঝিয়ে দেয়, বাংলা ভাষা এক সরল রেখা নয়-এ এক বহুমুখী, বহুরৈখিক স্রোত। তবে খোদ কলকাতা শহরে আজ এক আশ্চর্য ভাষার আমদানী হয়েছে। হিন্দী ও ইংরেজির মিশেলে শহর রাজধানীর ভাষা আজ বাংরেজি, হিংলিশ কিংবা হিংলা। এ এক আশ্চর্য বৈপরীত্য, একদিকে এই ভাষার জন্য আমাদের পূর্বজ রক্ত ঝরিয়েছে আর বর্তমানে আমরা ভাষাটিকে ঢাকি-শুদ্ধ বিসর্জন দিতে উদ্যত। বেঁচে থাকুক বাংলা ভাষা, শুধু ভয় হয় যে কালের আগ্রাসনে সুকুমার রায়ের হাঁসজারু না হয়ে যায়।”
পশ্চিমবঙ্গের ১৫টি জেলার ২৫০টিরও বেশি স্কুলে আনন্দবাজার ডট কম আয়োজিত ‘শব্দ-জব্দ ২০২৫’ শুরু হয়েছে। এই প্রচেষ্টায় আমাদের সহযোগিতা করছে আনন্দবাজার ডট কম আয়োজিত ‘শব্দ-জব্দ ২০২৫’-এর পার্টনাররাও। এই উদ্যোগ সফল করার পেছনে রয়েছেন একাধিক সহযোগী। ‘প্রেজ়েন্টিং পার্টনার’ ইআইআইএলএম কলকাতা। ‘পাওয়ার্ড বাই পার্টনার’ ট্রেন্ডস এবং সিস্টার নিবেদিতা ইউনিভার্সিটি। এ ছাড়াও, ‘স্ন্যাকস্ পার্টনার’ কিকু নুডুলস্, ‘ফুড পার্টনার’ মনজিনিস এবং ‘নলেজ পার্টনার’ শব্দবাজি।