বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়াশোনা শেষ করেননি ঠিকমতো। কিন্তু মগজাস্ত্র তুখোড় ছিল। মুঠোয় বন্দি ছোট্ট একটা যন্ত্রে লক্ষ-কোটির হিসেব কষে দেখিয়েছিলেন। মারা গেলেন ‘ইলেকট্রনিক ক্যালকুলেটর’-এর আবিষ্কর্তা জেরি মেরিম্যান। বয়স হয়েছিল ৮৬। হৃদ্যন্ত্র ও কিডনির সমস্যা নিয়ে ডিসেম্বর থেকে ডালাসের হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন তিনি।
জেরি অবশ্য একা নন। মার্কিন তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থা ‘টেক্সাস ইন্সস্টিটিউট’-এ কাজ করার সময়ে তিন জনে মিলে তৈরি করেছিলেন হিসেবি যন্ত্রটিকে। সেই দলের নেতৃত্বে ছিলেন জ্যাক কিলবি। পরে এই জ্যাক কিলবি-ই ইনটিগ্রেটেড সার্কিট তৈরি করেন, যা কম্পিউটার আবিষ্কারের পথ প্রশস্ত করে। নোবেল সম্মান পেয়েছিলেন কিলবি।
জেরির প্রাক্তন সহকর্মী ও বন্ধু ভার্নন পোর্টের বলেন, ‘‘গবেষণাসূত্রে বহু বিজ্ঞানী, অধ্যাপক, নোবেল পুরস্কারজয়ীর সংস্পর্শে এসেছি। জেরি মেরিম্যান আমার দেখা অন্যতম প্রতিভাবান। একটা যুগ বলা যায়। স্মৃতিশক্তি অসাধারণ ছিল। যে কোনও বিষয়ের যা কিছু জটিল তত্ত্ব, সূত্র মাথায় থেকে যেত ওঁর।’’ আর এক সহকর্মী এড মিলিস বলেন, ‘‘তিন দিনে সার্কিটের নক্শা তৈরি করেছিল জেরি। ও যদি এখানে থাকত, তা হলে ঠিক রসিকতা করে বলত, ‘রাতগুলো ভুলো না’।’’
২০১৩ একটি সাক্ষাৎকারে জেরি বলেছিলেন, ‘‘১৯৬৫ সালের শেষ ভাগ। আমার বস জ্যাক কিলবির মাথায় আসে, ক্যালকুলেটর বানাবেন। ওঁর অফিসে কয়েক জনকে ডেকে পাঠালেন। বললেন, আমরা একটা হিসেব-নিকেশের যন্ত্র বানাব। খুব ভাল হয়, জিনিসটা যদি আমার হাতের বইটার মতো ছোট্ট হয়।’’ জেরি যোগ দেন, ‘‘আমি এত বোকা, ভেবেছিলাম ক্যালকুলেটর বানাচ্ছি। বুঝিনি বৈদ্যুতিন যন্ত্র তৈরির ক্ষেত্রে বিপ্লব ঘটতে চলেছে।’’
১৯৩২ সালের ১৭ জুন সেন্ট্রাল টেক্সাসের হার্নে জন্ম জেরি মেরিম্যানের। ১১ বছর বয়সেই রেডিয়ো সারানোর কাজে হাত পাকান। জেরির স্ত্রী ফিলিস বলেন, ‘‘সেন্ট জমিয়ে দুপুর আর সন্ধের শো-তে সিনেমা দেখতে যেত। আর পুলিশ খুঁজে-খুঁজে হল থেকে বার করত। কী না, তাঁদের রেডিয়ো সারাতে হবে।’’ টেক্সাস এ অ্যান্ড এম ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হয়েছিলেন জেরি। কিন্তু পড়াশোনা শেষ করেননি। যদিও পরে ইউনিভার্সিটির ওশেনোগ্রাফি এবং মিটিয়রোলজি বিভাগে কাজ করেন। পরবর্তী কালে সামুদ্রিক হারিকেনে হাওয়ার গতিবেগ পরিমাপ সংক্রান্ত গবেষণাও করেন।
জেরির বন্ধুদের কথায়, ‘‘উনি সারাক্ষণ কিছু না কিছু তৈরির কথা ভেবে যেতেন।’’ নিজের পিয়নোর টিউনিং ফর্ক তৈরি করেছিলেন নিজেই। বলেছিলেন, ‘‘এ আর
এমন কী, একটু ধাতব টুকরো।’’ স্মৃতি ঘেঁটে জেরির বন্ধু গেনেল লকহার্ট জানালেন, তাঁর বাড়িতে একটা টেলিস্কোপ ছিল। তাতে একটা মোটর লাগানো ছিল। ওই মোটরের সাহায্যে টেলিস্কোপটি সারা রাত নির্দিষ্ট কোনও গ্রহকে তাক করে রাখত। কিন্তু এত গবেষণা, এত সাফল্যের পরেও খুব নম্র ছিলেন জেরি। স্ত্রী ফিলিসের কথায়, ‘‘বিখ্যাত হওয়ার কোনও ইচ্ছাই ছিল না ওঁর। বন্ধুরা ভাল হয়েছে বললেই খুশি!’’