E-Paper

শৈল্পিক সত্তা তাঁর যাপনে

তাঁর সাজপোশাক, শিল্পসচেতনতা, জীবনবোধ জুড়ে আত্মানুসন্ধান। কলকাতা সফরে এসে নিজেকে ভালবাসার কথাই বারবার বলে গেলেন শালিনী পাসি

নবনীতা দত্ত

শেষ আপডেট: ১৭ মে ২০২৫ ০৭:৪৮

তাঁর সাজপোশাক, মেকআপ, চুলের স্টাইল অনুপ্রেরণা জোগায় আঠেরো থেকে আশিকে। আবার কখনও তিনি একেবারে সাজহীন, বল্ড লুকেও কাটিয়েছেন মাসের পর মাস। কখনও স্পটলাইটের নীচে ক্যামেরার ফোকাসে গ্ল্যামারের আলো চুঁইয়ে পড়েছে তাঁর ত্বকে, কখনও দুঃস্থ শিশুদের পাশে গিয়ে দাঁড়িয়েছেন অতিমারির পৃথিবীতে। এমনই বিতত ব্যক্তিত্ব আর্ট কালেক্টর শালিনীর পাসির। সম্প্রতি লেডিজ় স্টাডি গ্রুপের একটি অনুষ্ঠানে কলকাতায় এসেছিলেন তিনি। নিজের জীবনবোধ, ফ্যাশন সচেতনতা, শিল্পবোধ নিয়ে মন খুললেন শালিনী।

ফ্যাশনে-ভূষণে

সাজপোশাক নিয়ে বরাবরই সচেতন শালিনী। যে কোনও পোশাকের সঙ্গে ব্যাগের ব্যাপারেও খুব খুঁতখুঁতে তিনি। ‘ফ্যাবিউলাস লাইভস অব বলিউড ওয়াইভস’-এও নানা রকমের ব্যাগ ছিল তাঁর সাজসঙ্গী। তবে শালিনীর বক্তব্য, “ব্যাগ, পোশাক বা গয়না, যে কোনও ক্ষেত্রেই আমার মা, ঠাকুরমার জিনিসও আমি ব্যবহার করি। শেষ কয়েকটি অনুষ্ঠানে আমি শুধুই শাড়ি পরে যাচ্ছি। এর মধ্যে ২০-২২ বছরের পুরনো শাড়িও আছে, আমার দিদিমা, ঠাকুরমার সংগ্রহ থেকে। আসলে ফ্যাশন ভীষণ পার্সোনাল। আমি কোথায় যাচ্ছি, সেখানে যাওয়ার সময়ে আমার মন-মেজাজ কেমন রয়েছে, আমার সংগ্রহে কী আছে, মা বা ঠাকুরমার কোনও একটা পোশাক হয়তো সে দিন পরতে ইচ্ছে করল... এই সব কিছুই কিন্তু আমার সে দিনের সাজের অংশ।” তাঁর কাছে ফ্যাশন মানে পোশাকশিল্পীদের মাপ মতো সুন্দর পোশাক নির্বাচনই শুধু নয়, বরং নিজের মন-মর্জির গুরুত্ব সেখানে আগে।

রূপসচেতনতার সঙ্গে জুড়ে থাকে আত্মসচেতনতা

ছোটবেলায় শালিনীর চুল ছিল কোঁকড়া। সে সময়ে স্কুলে কারও স্ট্রেট চুল দেখলে তাঁর মনে হত, ‘কী সুন্দর!’ কিন্তু বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মনস্তত্ত্ব যত বুঝতে শিখেছেন, তত জোর দিয়েছেন ‘সেল্ফ লাভ’-এ। শালিনীর কথায়, “মানুষ সব সময়ে অন্যের সেই জিনিসটা দেখে হিংসা করে, যেটা তাঁর নেই। কিন্তু বাইরের লুক দেখে কী করব? কেউ যদি ভাল নাচে, গায়, আঁকে, আমি বরং তা দেখে হিংসা না করে সেই গুণের জন্য তাঁকে শ্রদ্ধা করি। সেটা দেখে শেখার চেষ্টা করি। গানটা, নাচটা, আঁকাটা যদি শিখতে পারি, তবেই আমি উন্নীত হব, হিংসা করে নয়।” আর পরনিন্দা-পরচর্চাতেও আগ্রহী নন শালিনী। তাঁর মতে, মানুষের অন্তরের ছবিই তাঁর চেহারায় ফুটে ওঠে। ফলে ভাল ভাবলে, তাঁর ত্বক ও চেহারাও ভাল থাকবে। আর এটা তাঁর শুধু বিশ্বাস নয়, বরং যাপনের অংশ।

কিন্তু সৌন্দর্যের জন্য অধিকাংশ মানুষই তো ঝুঁকছেন বোটক্স, লিপফিলারের দিকে। শালিনী কি কখনও এমন চিকিৎসার সাহায্য নেননি? শালিনীর পাল্টা প্রশ্ন, “কেন এই ধরনের চিকিৎসার সাহায্য নেব? একে তো এই ধরনের চিকিৎসা অটোইমিউন সিস্টেমের পক্ষে ক্ষতিকর। তা ছাড়া চেহারাটা আমি জেনেটিক্যালি পেয়েছি, আমার পারিবারিক সম্পত্তির মতো। আমার নাকটা আমার দাদুর মতো। সেটা আমি কেন পাল্টাতে চাইব? বরং সেটাই আমাকে ‘আমি’ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করে।” এখন বোটক্স বা সৌন্দর্য চিকিৎসার মাধ্যমে সকলেই প্রায় এক রকম দেখতে হয়ে গিয়েছে, যা তাঁর পছন্দ নয়। বরং তাঁর মতে, সৌন্দর্য তখনই স্বকীয় হবে, যখন নিজেকে ভালবেসে মানুষ নিজের যত্ন নিতে শিখবে। তবে বাহ্যিক শারীরিক সৌন্দর্যই তাঁর কাছে শেষ কথা নয়। শালিনী বললেন, “জীবনে অনেক কঠিন সময়ে একাধিক বার ন্যাড়া হয়েছি। ঈশ্বরের প্রতি সেটা আমার নিবেদন বলা যায়। প্রায় আট বছর সে ভাবে থেকেছি। সে সময়ে ভাল পোশাক, গয়না কিছুই পরতাম না। সেই ‘আমি’-ও তো আমারই অংশ।” তাই নিজের অন্তরাত্মার গঠন ও গড়নেই তাঁর মন।

শিল্পবোধ

সারা বিশ্বের শিল্প সংগ্রহ করতে ভালবাসেন শালিনী। ২০১৮ সালে শালিনী পাসি আর্ট ফাউন্ডেশন ও ম্যাশ ইন্ডিয়া শুরু করেন তিনি। নানা দেশের পেন্টিং ও স্কাল্পচার সংগ্রহ করার শখ রয়েছে তাঁর। নিজের শখকেই আবার বিভিন্ন সময়ে দেশের কাজে দশের সেবায় ব্যবহার করেছেন। অতিমারি আক্রান্ত পৃথিবীতে ত্রাণ তহবিল গড়ে তোলার জন্য একাধিক প্রদর্শনীর আয়োজন করেছেন শালিনী। সম্প্রতি দিল্লিতে একটি সংগ্রহশালা তৈরির কাজে ব্যস্ত তিনি। সেখানে দেশের নানা প্রান্তের শিল্পসামগ্রী রাখার ইচ্ছে আছে তাঁর।

বাংলার শিল্প সম্পর্কে কতটা আগ্রহী তিনি? শালিনী বললেন, “শান্তিনিকেতন আমার খুব প্রিয় জায়গা। নন্দলাল বসু, যামিনী রায়ের কাজ আমার খুব ভাল লাগে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, অবন ঠাকুরের কাজেরও খুব ভক্ত আমি। এর আগে আমি শান্তিনিকেতন গিয়েছি। তবে সম্প্রতি আবার যাওয়ার ইচ্ছে রয়েছে। নতুন নতুন কী কাজ হচ্ছে, দেখব, শিখব।” দেশমাতৃকার রূপ হিসেবে এখনও অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘ভারতমাতা’র ছবি কতটা প্রাসঙ্গিক, তা নিয়ে সম্প্রতি একটি পোস্টও করেছেন তিনি।

শালিনীকে কোনও গণ্ডির মধ্যে আবদ্ধ করা সম্ভব নয়। রোজই নতুন সীমা তৈরি করছেন নিজের। আসলে শিক্ষা, দীক্ষা, শিল্প-সংস্কৃতি, সাজপাঠে নিত্য আত্মানুসন্ধানই তাঁর পাথেয়।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Shalini Passi Fashion

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy