কিডনির অসুখ হয়ে উঠতে পারে নিঃশব্দ ঘাতক। কারণ, কিডনির সমস্যা বুঝে উঠতেই দেরি হয়ে যায় অনেক সময়ে। চিকিৎসকেরা বলেন, কিডনি অনেক সময় যথেষ্ট ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পরে লক্ষণগুলি স্পষ্ট হয়। অথচ সময়ে চিকিৎসা হলে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে কিডনির অসুখের নিরাময় সম্ভব। সেই কারণে, গুরুত্বপূর্ণ এই প্রত্যঙ্গ নিয়ে হেলাফেলা করা ঠিক নয়। সামান্যতম উপসর্গেও সতর্কতা প্রয়োজন।
ঠিক যেমন ব্যথা। পেটে, পিঠে ব্যথা হয় নানা কারণে। কখনও গ্যাস-অম্বলে, কখনও আবার শোয়া-বসার ভঙ্গিমার দোষে। কিন্তু কোনটি সাধারণ ব্যথা আর কোনটি কিডনির অসুখের ইঙ্গিতবাহী, তা বুঝতে না পারলেই বিপদ। এ ক্ষেত্রে শুধু ব্যথা কমানো যথেষ্ট নয়, বরং প্রয়োজন দ্রুত চিকিৎসার।
পুণের ইউরোলজিস্ট ক্ষিতিজ় রঘুবংশী এক সাক্ষাৎকারে সতর্ক করেছেন, অনেক সময় কোমরের নীচের অংশে বা পিঠের দিকে ব্যথা লোকেরা পেশির টান, পেশির ব্যথা বলে ভুল করে ফেলেন। অনেক সময় এটাই কিন্তু কিডনির অসুখের প্রাথমিক লক্ষণ হতে পারে।
কী ভাবে বুঝবেন, কোন ব্যথা কিডনি থেকে হচ্ছে?
ব্যাথার স্থান: ব্যাথা কোথায় হচ্ছে, সেই স্থানটি গুরুত্বপূর্ণ। হাড়ের দুর্বলতা, বসার ভঙ্গির বলে কোমরে ব্যথা হলেও সেটি হবে শিরদাঁড়ার মাঝের অংশে কোমরের একেবারে নীচের দিকে। ব্যথা নিতম্ব থেকে ঊরুতে ছড়িয়ে পড়তে পারে।
কিডনির অসুখে ব্যথা ঠিক পিঠের তলদেশে সব সময় হয় না। বরং ব্যথা হয় পাঁজর যেখানে শেষ হচ্ছে, তার নীচে। শিরদাঁড়া সংলগ্ন অংশ নয়, ব্যথা হয় কোমরের দিকে। কখনও কখনও ব্যথা তলপেটের দিকেও হয়। কোমর থেকে তলপেটের মাঝের অংশ বা তলপেটেও ব্যথা হতে পারে।
ব্যথার ধরন: মাংশপেশিতে টান ধরলে বা বসার ভঙ্গিমায় ভুল হওয়ার ফলে ব্যথা হলে আরাম করে বসলে সেটি কমে যাবে। তা ছাড়া, বিশ্রাম নিলে কষ্টও কমবে।
কিডনির ব্যথা শুরু হলে যে ভাবেই শোয়া-বসা হোক না কেন, কোনও ভঙ্গিতেই আরাম মিলবে না। শুয়ে থাকলেও এই ব্যথা কমবে না। ওষুধ প্রয়োগে সাময়িক আরাম মিলতে পারে।
ব্যথার তীব্রতা: সাধারণ ব্যথায় মাংসপেশিতে ব্যথা হতে পারে। জোরে চাপ দিলে ব্যথা লাগবে। মাংসপেশি প্রসারিত হলেও যন্ত্রণা হবে। কিন্তু কিডনির অসুখে এমনটা হয় না। যে জায়গায় যন্ত্রণা হচ্ছে, সেখানে চাপ দিলে আলাদা কোনও ব্যথার অনুভূতি হয় না।
চিকিৎসক সতর্ক করছেন, ব্যথার সঙ্গে কোমরের নীচে দিকে ফোলা ভাব, প্রস্রাবের সময় জ্বালা, যন্ত্রণা, প্রস্রাবের রং বদলে যাওয়া— কিডনির অসুখের ইঙ্গিতবাহী। তীব্র ব্যথা কিডনিতে পাথর হওয়ার লক্ষণ হতে পারে। ব্যথা কিছু ক্ষণ পরে না কমলে দ্রুত চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে।