যাঁরা বাড়িতে থাকেন, তাঁদের কাজ কম থাক বা বেশি, এক জায়গায় এক ভাবে বসে থাকার সম্ভাবনা কমই থাকে। এক জন সুস্থ মানুষ ঘণ্টায় অন্তত এক বার নিজের স্থান বদলান। অফিসে, বিশেষ করে কর্পোরেট কিংবা বেসরকারি সংস্থায় যাঁরা কাজ করেন, তাঁদের ক্ষেত্রে ব্যাপারটা তেমন হয় না। দৈনিক বিপুল লক্ষ্য পূরণ এবং সময়ের মধ্যে সেই কাজ শেষ করার তাগিদে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এক জায়গায় বসে ঘাড় গুঁজে কাজ করে চলেন তাঁরা। ডেস্কে বসেই খাবার খান। অফিসে আসার জন্য দৈনন্দিন অনেক সুস্থ রুটিনেরই পরোয়া করেন না। কর্ণ রাজন নামের লন্ডন নিবাসী এক চিকিৎসক বলছেন, অফিসে যাঁরা নিয়মিত কাজ করেন, তাঁদের কিছু দৈনন্দিন অভ্যাস তাঁদের ক্রমশই ডায়াবিটিসপ্রবণ করে তুলছে।
১। দীর্ঘক্ষণ একটানা বসে থাকা
এক বিজ্ঞানী কিছু দিন আগে বলেছিলেন ‘সিটিং ইজ় দ্য নিউ স্মোকিং’। অর্থাৎ বসে থাকাই এখন ধূমপানের মতোই স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। আর তার প্রবণতাও বাড়ছে। অফিসে ডেস্কে বসে যাঁরা কাজ করেন, তাঁদের ক্ষেত্রে এই বসে থাকাটা অনেক সময়েই না চাইতেও হয়ে যায়। অনেকে ৬-৮ ঘণ্টা এক জায়গায় বসে থাকা কালীন শুধু হয়তো শৌচালয়ে যাওয়ার জন্যই ওঠেন। এই নিষ্ক্রিয়তা শরীরে ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স তৈরি করে। ফলে রক্তে গ্লুকোজ বা শর্করার মাত্রা বাড়লেও ইনসুলিন তা ভাঙার কাজ করতে পারে না। ফলে তা থেকে যে শক্তি পেশিতে সঞ্চারিত হয়, তা-ও বন্ধ থাকে। শরীরে শর্করার মাত্রা বাড়তে থাকে ক্রমশ। যা ডায়াবিটিস হওয়ার অন্যতম কারণ।
২। অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস
অফিসে কাজের চাপে পুষ্টিকর খাবারের বদলে অনেকেই প্রক্রিয়াজাত খাবার, ফাস্ট ফুড, মিষ্টি এবং অতিরিক্ত চিনি দেওয়া পানীয় বেশি খান। এতে ক্যালোরি, চিনি এবং অস্বাস্থ্যকর ফ্যাট থাকে, যা ওজন বৃদ্ধি করে এবং ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্সের ঝুঁকিও বাড়িয়ে দেয়।
৩। অপর্যাপ্ত বা অনিয়মিত ঘুম
কাজের চাপে অনেকেই ঘুমের সঙ্গে আপস করেন। কেউ ল্যাপটপ হাতে বাড়ি ফিরে রাতেও কাজ করেন। আবার কেউ সারা দিন কাজের চাপে নিজের জন্য সময় না পাওয়ায় রাতে বিছানায় যাওয়ার পরে মোবাইলে চোখ রাখেন। এতে ঘুমের ব্যাঘাত হয়। ৬-৭ ঘণ্টার ঘুমও হয় না। অপর্যাপ্ত ঘুম শরীরের হরমোনের ভারসাম্যে ব্যাঘাত ঘটায়। ইনসুলিনের কাজ করার ক্ষমতাও কমিয়ে দেয়। ফলে ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ে।
৪। প্রাতরাশ না করা
অফিসে যাওয়ার তাড়া সামলাতে গিয়ে এবং সময় বাঁচাতে অনেকেই প্রাতরাশ না করে অফিসে যান। ফলে দীর্ঘ সময় পেট খালি থাকে। এতে ইনসুলিনের কাজ ব্যাহত হতে পারে। যেহেতু ইনসুলিন রক্তে থাকা শর্করা ভেঙে শক্তিতে পরিণত করে, তাই ইনসুলিন কাজ না করলে রক্তে শর্করার মাত্রা বেড়ে যেতে পারে। যা দীর্ঘমেয়াদে ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেবে।
৫। অতিরিক্ত মানসিক চাপ
কর্মক্ষেত্রের কাজের চাপ এবং অন্যান্য চাপ থেকে মানসিক চাপও তৈরি হতে পারে। যা শরীরে কর্টিসল বা স্ট্রেস হরমোনের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। এই হরমোন রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা বৃদ্ধি করে। মিষ্টি এবং নোনতা জাতীয় খাবার বেশি খাওয়ার প্রবণতা তৈরি করে। যা ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়।