মহিলাদের ক্ষেত্রে ৪০ বছর বয়স কেবল একটা সংখ্যা নয়। চল্লিশ একটা চৌকাঠ। যে চৌকাঠে পা রাখার অর্থ এর পরে তাঁদের জীবন এবং নিজের ব্যপারে আরও বেশি সতর্ক হতে হবে। চিকিৎসা বিজ্ঞান বলছে, ওই বয়সের পরে মহিলাদের শরীরে হরমোনজনিত কিছু স্বাভাবিক বদল ঘটতে শুরু করে। যার প্রভাব পড়ে পেশিতে। প্রভাব পড়ে বিপাকের হারেও। ফলে এই সময় খাওয়াদাওয়া নিয়ন্ত্রণ, পেশির স্বাস্থ্য ভাল রাখার জন্য শরীরচর্চা না করলে পেশির ক্ষয় হতে পারে। শরীরে জমতে পারে বাড়তি মেদ। নানা ধরনের অসুস্থতার শুরুও হতে পারে সেখান থেকেই।
বলিউডের তারকাদের ফিটনেস প্রশিক্ষক নম্রতা পুরোহিত বলছেন, ‘‘চল্লিশের চৌকাঠে পা দিয়েও সুস্থ থাকার জন্য দরকার নিজের প্রতি কিছু বাড়তি যত্ন। যার মধ্যে অন্যতম হল শরীরচর্চা। কারণ, এই বয়সে পেশিই ঈশ্বর।’’ নম্রতা জানাচ্ছেন, যে সমস্ত মহিলার বয়স ৪০ পেরিয়েছে, তাঁরা দিনে অন্তত ২০টি মিনিট সময় বার করে আর কিছু না হোক রোজ ৫টি ব্যায়াম করলেই শরীরে ইতিবাচক পরিবর্তন লক্ষ করবেন।
১. স্কোয়াট
পা, নিতম্ব এবং কোমরের পেশি শক্তিশালী করে এই ব্যায়াম। হাঁটাচলার সুবিধা এবং শরীরের ভারসাম্য বজায় রাখার জন্য স্কোয়াট অত্যন্ত কার্যকরী। নিয়মিত স্কোয়াট করতে পারলে তা হাড়ের ঘনত্ব বৃদ্ধি করতেও সাহায্য করে।
কী ভাবে করবেন: পা দু'টি কাঁধ বরাবর দূরত্বে রেখে সোজা হয়ে দাঁড়ান। এর পর ধীরে ধীরে নিতম্ব পেছনের দিকে ঠেলে নামান, চেয়ারে বসার মতো করে। বুক সোজা রাখুন এবং খেয়াল রাখুন, যেন হাঁটু পায়ের আঙুল অতিক্রম না করে। গোড়ালিতে ভর দিয়ে আবার উঠে দাঁড়ান।
২. পুশ-আপ বা ওয়াল পুশ-আপ
শরীরের উপরিভাগের পেশি, যেমন বুক, কাঁধ, বাহুর পেশি বিশেষ করে ট্রাইসেপস এবং পোট, কোমর এবং তার নীচের অংশের পেশি শক্তিশালী করার জন্য উপকারী। দৈনন্দিন জীবনে যে কোনও জিনিস তোলা বা ঠেলার জন্য এই সমস্ত পেশির শক্তি দরকার।
কী ভাবে করবেন: মেঝেতে উপুড় এবং টানটান হয়ে শুয়ে পড়ুন। হাত দু’টিকে বুকের পাশে মেঝের উপর রাখুন। এ বার হাতের ভরে শরীরকে সম্পূর্ণ উপরে তুলুন এবং নামিয়ে মেঝের সঙ্গে সমান্তরাল অবস্থায় নিয়ে আসুন। বুক মাটিতে ঠেকবে না। তবে পায়ের আঙুল মেঝেতে ঠেকে থাকবে। যদি মেঝেতে পুশ-আপ কঠিন মনে হয়, তা হলে দেয়ালের বিপরীতে দাঁড়িয়ে হাতে ভর দিয়ে করুন। হাত কাঁধ বরাবর দূরত্বে রাখুন এবং শরীর সোজা রেখে ধীরে ধীরে দেয়ালের দিকে ঝুঁকুন, তার পর আবার সোজা হয়ে আসুন।
৩. ডাম্বেল গ্লুট ব্রিজ বা গ্লুট ব্রিজ
এটি নিতম্ব কোমর এবং পেটের পেশিগুলিকে শক্তিশালী করে, যা পিঠের নিচের অংশের ব্যথা কমানো এবং সঠিক শারীরিক ভঙ্গি বজায় রাখার জন্য অত্যন্ত জরুরি।
কী ভাবে করবেন: মেঝেতে শুয়ে হাঁটু ভাঁজ করুন এবং পা মেঝেতে রাখুন। যদি ডাম্বেল ব্যবহার করতে চান, তবে তা কোমরের উপর রাখুন। গোড়ালিতে ভর দিয়ে কোমর উপরে তুলুন, নিতম্বের পেশিগুলিকে শক্ত করুন। এর পর ধীরে ধীরে নিচে নামুন।
৪. ডাম্বেল লাঞ্জেস বা লাঞ্জেস
স্কোয়াটের মতোই এটি পা এবং নিতম্বকে শক্তিশালী করে। বিশেষ করে, শরীরের ভারসাম্য এবং বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের পেশির মধ্যে সমন্বয় বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। বয়স হলে অনেক সময়েই দেখা যায়, খুব সামান্য কারণে পড়ে যাওয়ার প্রবণতা বাড়ে। ভারসাম্য এবং পেশি সমন্বয় বজায় থাকলে সেই ঝুঁকি কমবে।
কী ভাবে করবেন: সোজা হয়ে দাঁড়ান। এক পা সামনে নিন এবং কোমর নীচে নামান, যত ক্ষণ না দুই হাঁটু ৯০-ডিগ্রি কোণে বাঁকে। পিছনের হাঁটু মেঝে স্পর্শ করবে না। সামনের গোড়ালিতে ভর দিয়ে আবার উঠে দাঁড়ান এবং পা পরিবর্তন করুন।
৫. প্ল্যাঙ্ক
এটি পেটের এবং পিঠের কোর পেশিগুলিকে অত্যন্ত শক্তিশালী করে। শক্তিশালী কোর পেশি শরীরের স্থিতিশীলতা এবং অঙ্গভঙ্গি ভাল রাখতে সাহায্য করে।
কী ভাবে করবেন: উপুড় হয়ে শুয়ে কনুই এবং পায়ের আঙ্গুলের উপর শরীরের ভার দিন। শরীর মাথা থেকে গোড়ালি পর্যন্ত একটি সরলরেখায় রাখুন। কোমর ঝুলে যেতে দেবেন না। যত ক্ষণ সম্ভব এই অবস্থান ধরে রাখুন।