মাস কয়েক আগেও লাফিয়ে-ঝাঁপিয়ে শরীরচর্চা করেছেন। ঝরঝরে চেহারার ফিটনেসের কেরামতি দেখাতে কখনও পাড়ি দিয়েছেন কঠিন পাহাড়ি পথে, কখনওবা দুর্গম গিরিখাতে। সেই মানুষটিকে এখন নতুন করে হাঁটতে শিখতে হচ্ছে! আর তার কারণ একটি এঁটুলি পোকা।
ক্যালিফোর্নিয়ার ফিটনেস প্রশিক্ষক এবং সমাজমাধ্যম প্রভাবী মারিয়া প্যালেন গত ফেব্রুয়ারি মাস থেকে ধীরে ধীরে তাঁর হাঁটার ক্ষমতা হারাতে শুরু করেন। যদিও নিজের অসুস্থতার কথা প্রথম অনুরাগীদের জানান সেপ্টেম্বরে। তখনও তিনি শয্যাশায়ী। সমাজমাধ্যমে মারিয়া লেখেন, ‘‘জিমে যাওয়া তো দূর, গত কয়েক মাস ধরে এক পা হাঁটতেও পারছি না। প্রথম দিকে মাটিতে পা ফেলার সঙ্গে সঙ্গেই গোটা শরীরে যন্ত্রণা হচ্ছিল। মার্চ মাস থেকে বিছানা থেকেও উঠতে পারছি না। আর এখন সেপ্টেম্বর। এখনও পরিস্থিতিতে উন্নতি হয়নি। নড়াচড়া করতে তো পারছিই না উল্টে ৯ কেজি ওজন কমে গিয়েছে আমার! মনে হচ্ছে, আমার শরীর যেন আমাকে ছেড়ে চলে গিয়েছে।’’
দুর্গম পাহাড় চষে বেড়ানো মারিয়াকে নতুন করে হাঁটতে শিখতে হচ্ছে।
মারিয়ার ওই অসুস্থতাকে প্রথম দিকে অটোইমিউন ডিজ়িজ় বলে ভেবেছিলেন চিকিৎসকেরা। কিন্তু দীর্ঘ চিকিৎসার পরে ছ’মাসেও পরিস্থিতির উন্নতি না হওয়ায় তাঁরা নতুন করে বিষয়টি খতিয়ে দেখেন। পরীক্ষা করে দেখা যায়, ব্যাবেসিয়োসিস নামে এক বিরল অসুখে ভুগছেন মারিয়া। যে রোগের কারণ এক ধরনের পরজীবী, যা শরীর ঢোকে এঁটুলি পোকার কামড় থেকে।
এঁটুলি পোকা কামড়ালে কী হতে পারে?
মারিয়া জানিয়েছেন, এঁটুলি পোকার কামড়ে যে পরজীবী শরীরে প্রবেশ করে, তা প্রথমেই আক্রমণ করে লোহিত রক্তকণিকাগুলিকে। আক্রমণ করে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকেও। শরীরকে ভয়ানক ভাবে দুর্বল করে দেয়। যার ফলে নির্জীব হয়ে পড়ে সমস্ত পেশি। মারিয়া বলেছেন, ‘‘বিছানা থেকে ওঠার ক্ষমতা তো চলে গিয়েছিলই। একটা সময়ের পরে হাতে ফোনও ধরতে পারছিলাম না।’’
একদা জিমে দিনের অধিকাংশ সময় কাটানো মারিয়া এখন হুইলচেয়ারবন্দি।
এটি কী ভাবে শরীরের ক্ষতি করে?
ওই পরজীবী থেকে হওয়া রোগে মারিয়ার মেরুদণ্ডের ক্ষতি করেছিল। যদিও তা অনেক পরে ধরা পড়ে। ফেব্রুয়ারিতে অসুস্থ হয়ে পড়ে মারিয়াকে অ্যান্টিবায়োটিক এবং অন্য স্নায়ুর ওষুধ দিয়ে চিকিৎসা করা হচ্ছিল। কিন্তু হঠাৎই গত অক্টোবরে মারিয়ার শারীরিক অবস্থার অবনতি হয় এতটাই যে, তাঁকে বাড়ি থেকে হাসপাতালে ভর্তি করাতে হয়। পরে নিজের অভিজ্ঞতার কথা জানিয়ে মারিয়া বলেছেন, ‘‘অক্টোবরে যখন আমাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়, তখন কোমর থেকে পা পর্যন্ত শরীর পুরোটাই পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়ে গিয়েছিল। মেডিক্যাল পরীক্ষায় দেখা যায়, আমার ‘স্পাইনাল ফ্লুইড’ (অর্থাৎ মেরুদণ্ডে থাকা যে তরল পদার্থ বেরিয়ে গেলে শরীর পঙ্গু হয়ে যায়)-এ শ্বেত রক্তকণিকার মাত্রা অত্যন্ত বেশি। যার ফলে ওই রোগের সংক্রমণে আমার মেরুদণ্ড প্রায় অকেজো হয়ে গিয়েছে।’’
সেরে ওঠার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা জারি রেখেছেন মারিয়া। আশা ছাড়তে তিনি নারাজ।
এখন কেমন আছেন মারিয়া?
ডিসেম্বরে তাঁর শরীরে কিছু উন্নতি চোখে পড়ে। তার পরে ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে উঠতে শুরু করেন তিনি। বিছানা থেকে হুইলচেয়ারের পর্ব পেরিয়ে আপাতত ধীরে ধীরে হাঁটতেও শিখছেন তিনি। মারিয়া জানিয়েছেন, ‘‘আগের মতো লম্ফঝম্প করতে হয়তো পারছি না। কিন্তু আমি আশাও ছাড়ছি না। আপাতত আমার লক্ষ্য একটাই, কোন ওরকম সাহায্য ছাড়া ভাল ভাবে হাঁটতে পারা। তার জন্য লড়ে যাচ্ছি আমি।