ছোট ছোট বিষয় ভুলে যাওয়া থেকে শুরু হয়। ধীরে ধীরে কাছের মানুষজনকেও ভুলতে শুরু করেন রোগীরা। এক সময়ে নিয়ে নিজের নাম, পরিচয় ও ঠিকানাটুকুও স্মৃতি থেকে মুছে যায়। অ্যালঝাইমার্স এমনই এক দুরারোগ্য ব্যধি। এই অসুখ সারানোর মতো কোনও চিকিৎসাপদ্ধতি এখনও সে ভাবে আসেনি। শুধু রোগ নিয়ন্ত্রণে রাখার নানা পদ্ধতি নিয়েই গবেষণা চলছে বিশ্ব জুড়ে। এর মধ্যেই নতুন তথ্য হাতে এসেছে গবেষকদের। দাবি করা হয়েছে, মস্তিষ্কের প্রদাহ এবং তা থেকে অ্যালঝাইমার্সের মতো স্মৃতিনাশক রোগের কারণ হতে পারে ভাইরাস। এমন কিছু ভাইরাসঘটিত অসুখ রয়েছে, যা পরবর্তী সময়ে গিয়ে অ্যালঝাইমার্সের মতো রোগকে নিমন্ত্রণ করে আনতে পারে।
হার্ভার্ড হেল্থ, অক্সফোর্ড অ্যাকাডেমিক, ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ হেল্থ-সহ একাধিক ইউনিভার্সিটি ও গবেষণা সংস্থা দাবি করেছে, অ্যালঝাইমার্সের সঙ্গে ভাইরাসের যোগসূত্র রয়েছে। ‘নেচার’ জার্নালে এই বিষয়ে গবেষণাপত্রও প্রকাশিত হয়েছে। গবেষকেরা জানাচ্ছেন, ঘন ঘন নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হলে বা মেনিনজাইটিসের মতো রোগ বিপজ্জনক পর্যায়ে গেলে, পরবর্তীতে জটিল স্নায়বিক রোগের ঝুঁকি বাড়ে। অ্যালঝাইমার্স রোগের অন্যতম প্রধান কারণ হল মস্তিষ্কে অ্যামাইলয়েড বিটা ও টাও প্রোটিনের জমাট বেঁধে যাওয়া। এটি ঘটলে মস্তিষ্কে ভিতর মারাত্মক প্রদাহ তৈরি হয়, যা মস্তিষ্কের সুস্থ কোষগুলির ক্ষতি করতে থাকে। স্মৃতির কুঠুরিতেও তার প্রভাব পড়ে। ফলে স্মৃতিনাশ হতে থাকে, আচার-আচরণ, স্বভাব-বৈশিষ্ট্যেও বদল আসতে থাকে।
আরও পড়ুন:
মেনিনজাইটিস রোগে মস্তিষ্কে সংক্রমণ ঘটে, একে মেনিনগো এনসেফালাইটিস-ও বলে। নেইসেরিয়া মেনিনজিডিটিস নামক ব্যাক্টেরিয়া ও হার্পিস সিমপ্লেক্স ভাইরাস এর জন্য অনেকটাই দায়ী। মেনিনজাইটিস রোগের প্রাথমিক লক্ষণ সাধারণ ঠান্ডা লাগা এবং ফ্লু-এর মতো। এর পরেই খুব বেশি জ্বর বা কাঁপুনি, খিঁচুনি, হাত-পা ঠান্ডা হয়ে যাওয়া, পেশিতে অসহ্য যন্ত্রণা শুরু হয় রোগীর। গবেষকেরা জানিয়েছেন, সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে প্রতি ৪০০ জন মেনিনজাইটিস রোগীর অন্তত ২৫-৩০ জনই পরবর্তী সময়ে অ্যালঝাইমার্সের মতো রোগে আক্রান্ত হয়েছেন।
ভেরিসেলা জ়স্টার ভাইরাসের যোগও রয়েছে স্নায়বিক রোগের সঙ্গে। বিভিন্ন দেশের লক্ষাধিক বায়োব্যাঙ্কের তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা গিয়েছে, যে ভাইরাস চিকেন পক্স ও হার্পিসের জন্য দায়ী, তা মস্তিষ্কে প্রদাহের কারণ হয়ে উঠতে পারে। আর এই প্রদাহ দীর্ঘ মেয়াদে চলতে থাকে। একই ভাবে হার্পিস পরিবারের সাইটোমেগালোভাইরাসের সঙ্গেও অ্যালঝাইমার্সের যোগসূত্র খুঁজে পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা। ভাইরাস ঘটিত অসুখ যে কেবল শরীরকে দুর্বল করে তা-ই নয়, মস্তিষ্ক ও স্নায়ুর রোগেরও কারণ হয়ে উঠতে পারে। এই গবেষণা সফল হলে আগামী দিনে অ্যালঝাইমার্সের মতো রোগকে প্রতিরোধ করার উপায় খুঁজে পাওয়া যেতে পারে বলেই আশা গবেষকদের।