বয়স ৩৮ বছর। ফরিদাবাদের একটি বেসরকারি স্কুলের শিক্ষক দিব্যাংশু গোয়েলগত কয়েক মাস ধরে কিছু সমস্যায় ভুগছিলেন। বোর্ডে লিখতে গেলে হাত কাঁপত তাঁর, এলেমেলো হয়ে যেত হাতের লেখা। পড়ানোর সময়ে জড়িয়ে আসত কথা। অত্যধিক মানসিক চাপ, ঘণ্টার পর পর ঘণ্টা বসে খাতা দেখার কারণে এমন সব সমস্যা হচ্ছে বলে ভেবেছিলেন। কিন্তু পরে সমস্যা উত্তরোত্তর বাড়তে থাকায় চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন তিনি। পরীক্ষা করে চিকিৎসক দেখেন, মানসিক চাপ নয়, আবার হার্টের কোনও সমস্যাও নয়। শিক্ষক আক্রান্ত হয়েছেন স্নায়ুর জটিল রোগ পারকিনসন্সে।
পারকিনসন্সকে বয়সজনিত রোগ বলেই মনে করা হত এক সময়ে। অথবা ব্রেন স্ট্রোকের রোগীদের এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি থাকত। কিন্তু কোনও অসুখবিসুখ নেই, পরিবারে স্নায়ুর রোগের ইতিহাসও নেই, এমন একজনের পারকিনসন্স ধরা পড়ায় রীতিমতো হতচকিত চিকিৎসকেরা। দিব্যাংশুকে ভর্তি করানো হয়েছে ফরিদাবাদের অমৃতা হাসপাতালে। সেখানে নিউরোলজি বিভাগের প্রধান চিকিৎসক সঞ্জয় পাণ্ডে জানিয়েছেন, চল্লিশের কোঠায় সাধারণত এই রোগ হয় না। তাই দিব্যাংশুর ঘটনায় উদ্বেগের যথেষ্ট কারণ আছে। অনুমান করা হচ্ছে, শরীরের ভিতরে জিনগত কোনও বদলের কারণেই এই রোগ হয়েছে শিক্ষকের। তাঁর হাঁটাচলা করতে সমস্যা হচ্ছে, হাত কাঁপা শুরু হয়েছে, কথাবার্তাও জড়িয়ে যাচ্ছে মাঝেমধ্যেই।
আরও পড়ুন:
পারকিনসন্স কেন হয়, তার সঠিক কারণ অজানা। যদিও চিকিৎসকেরা দাবি করেন, উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা যদি মাত্রা ছাড়িয়ে যায়, তা হলে তা মস্তিষ্কের স্নায়ুকোষগুলির উপর প্রভাব পড়তে শুরু করে। এক সময়ে মস্তিষ্কের সঙ্কেত পাঠানোর ক্ষমতা নষ্ট হয়ে যেতে বসে। ধীরে ধীরে পার্কিনসন্সের মতো রোগ জাঁকিয়ে বসে। মস্তিষ্কের ‘সাবস্ট্যান্সিয়া নাইগ্রা’ নামক অংশ থেকে ডোপামিন নামে এক ধরনের রাসায়নিক উপাদান নিঃসৃত হয়ে ভাবনাচিন্তাকে নিয়ন্ত্রণ করে। মন ভাল থাকার পিছনেও এর ভূমিকা আছে। মস্তিষ্কের এই অংশ অকেজো হয়ে গেলে, ডোপামিন নিঃসরণ কমে যায়। তখনই পার্কিনসন্সের সূচনা হয়। তবে এই রোগের নেপথ্যে জিনগত কারণও রয়েছে। কমবয়সিদের মধ্যে পারকিনসন্সের লক্ষণ দেখে বিষয়টি নিয়ে ভাবনাচিন্তা করছেন গবেষকেরা।
কমবয়সিদের মধ্যেও কি বাড়ছে পারকিনসন্স?
দেশের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ হেল্থ থেকে প্রকাশিত গবেষণাপত্রে বলা হয়েছে, দেশে ৫০ বছরের নীচে অন্তত ৬৭৪ জনকে খুঁজে পাওয়া গিয়েছে, যাঁদের পারকিনসন্স রোগ হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে। তাঁদের শরীরে এমন কিছু জিন পাওয়া গিয়েছে, যা পারকিনসন্সের জন্য দায়ী হতে পারে। গবেষকেরা জানিয়েছেন, ‘পারকিন’ নামক জিনের রাসায়নিক বদল (মিউটেশন) হলে পারকিনসন্স হতে দেখা যায়। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে পারকিন জিনের পাশাপাশি ‘এসএনসিএ’ জিনে বদল হলেও রোগটি হওয়ার ঝুঁকি থাকে। এমনকি কয়েক জনের ক্ষেত্রে দেখা গিয়েছে, আরও একটি জিন ‘বিএসএস’-এ রাসায়নিক বদল ঘটলেও পারকিনসন্সের ঝুঁকি অনেকটাই বেড়ে যায়।
গবেষকদের অনুমান, এই বিশেষ জিনগুলিতে বদল হলে কমবয়সে পারকিনসন্সের মতো স্নায়বিক ব্যাধি হওয়ার আশঙ্কা থাকে। বিশেষ করে, ৩০ বছর থেকে ৪০ বছর বয়সিদেরও রোগটি হতে পারে। সময়মতো চিকিৎসা শুরু করা গেলে, এই অসুখকে নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব বলেও মত চিকিৎসকদের। পার্কিনসন্সের পুরোপুরি নিরাময় সম্ভব কি না, তা নিয়ে এখনও গবেষণা চলছে। তবে ওষুধ, মস্তিষ্কে অস্ত্রোপচারের পাশাপাশি, স্পিচ থেরাপি, ফিজ়িয়োথেরাপি করে সমস্যাগুলি নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব।