আগে কখনও এমন করেননি, তা নয়। বরং মুখের ত্বকে ব্রণ হলে, তা হাতের চাপে নির্মূল করার চেষ্টা করেছেন বহু বার। ‘সফল’ও হয়েছেন। কিন্তু সপ্তাহ কয়েক আগে যখন নাকের নীচের ব্রণটি নির্মূল করলেন আলিশা মোনাকো, তখনও ভাবতে পারেননি, তার জন্য ২৪ ঘণ্টার মধ্যে হাসপাতালের ইমার্জেন্সিতে ছুটতে হবে!
একটি ভিডিয়োয় নিজের সেই ‘ভয়াবহ’ অভিজ্ঞতার কথা জানিয়েছেন আলিশা। তাঁকে সেখানে বলতে শোনা যাচ্ছে, ‘‘কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই আমার মাথা ঘুরতে শুরু করল তার সঙ্গে ধারালো পিন ফোটার মতো তীব্র যন্ত্রণা...ধীরে ধীরে মুখের ডান দিকটা ফুলতে শুরু করল। কান বন্ধ হয়ে গেল। যত সময় যাচ্ছিল, আরও ভয়াবহ অবস্থা হচ্ছিল!’’
আলিশার বয়স ৩২। তিনি আমেরিকার মিশিগানের বাসিন্দা। এক টিভি সাক্ষাৎকারে নিজের সমস্যার কথা বিশদ জানিয়েছেন আলিশা। বলেছেন, ‘‘আমার নাকের ঠিক নীচে ডান দিকে হয়েছিল ব্রণটা। গত কয়েক মাস ধরেই আমার মুখে ওই ধরনের সিস্ট থাকা ব্রণ হচ্ছিল। এটাও তেমন ছিল। ঘটনাটা যে দিন ঘটে, তার আগের দিনও ব্রণ থেকে সিস্ট বের করার চেষ্টা করেছিলাম। সফল হইনি। মনে হয়েছিল হাতের চাপে বের করার চেষ্টা করলে ব্যাপারটা ঘেঁটে ফেলতে পারি। তাই ঠিক করলাম ব্রণ ফাটানোর জন্য যে পরিশোধন করা 'পিম্পল পপার' পাওয়া যায়, তাই দিয়ে চেষ্টা করব। করলামও। সবই ঠিকঠাক চলছিল। কিন্তু ঘণ্টাখানেক পর থেকেই একটি চিনচিনে ব্যথা আমার নাকের নীচ থেকে ক্রমশ ঠোঁট, গাল, থুতনি হয়ে মাথার ডান দিক পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়তে শুরু করল। তার পরে ক্রমশ বাড়তে থাকল যন্ত্রণা!’’
তরুণী জানিয়েছেন, ৪-৫ ঘণ্টার মধ্যেই তাঁর মুখের ডান দিক অস্বাভাবিক ভাবে ফুলে যায়। তিনি বলছেন, ‘‘আমার মনে হচ্ছিল, আমি ডান কানে কিছু শুনতে পাচ্ছি না। তার পরে দেখলাম, আমি হাসতে পারছি না। এমনকি, কথা বলতে গেলেও মারাত্মক যন্ত্রণা হচ্ছে। বাধ্য হয়ে চিকিৎসকের কাছে যাই। তিনি অবিলম্বে হাসপাতালে যেতে বলেন।’’
আলিশা তাঁর চিকিৎসকের কাছেই জানতে পারেন, যে জায়গায় ওই ব্রণ হয়েছিল, সেটি মুখের ‘মারণ ত্রিকোণ’ বলে পরিচিত। যেখানে ব্রণ হলে তা খোঁটাখুঁটি করা এক রকম নিষিদ্ধই। ওই অংশে হওয়া ব্রণ থেকে সংক্রমণের ঝুঁকি সব থেকে বেশি। কারণ, ওই অংশে ত্বকের নীচে প্রচুর শিরা এবং ধমনী জাল বিস্তার করে রয়েছে। যা সরাসরি মস্তিষ্কের সঙ্গে যুক্ত। তাই এই অংশে সংক্রমণ ঘটলে তা সরাসরি মস্তিষ্কে প্রভাব ফেলতে পারে। এ থেকে মেনিনজাইটিস, সেপ্টিক ক্যাভরনাস সাইনাস থ্রম্বোসিসের মতো রোগ হতে পারে। যা থেকে অন্ধত্ব, স্ট্রোক, ফেসিয়াল প্যারালিসিস, এমনকি মৃত্যুও হতে পারে। তার উদাহরণও রয়েছে অতীতে।
আলিশা তাঁর অভিজ্ঞতার ভিডিয়োটি শেয়ার করে বলেছেন, ‘‘আমার মতো অভিজ্ঞতা যাতে আর কারও না হয়, তার জন্যই সমাজমাধ্যমে এটা জানালাম। নিজের অভিজ্ঞতা থেকে বলছি, যদি কারও মুখের ওই মারণ ত্রিকোণে এমন হয়ে থাকে, তবে দয়া করে সেই ব্রণকে নিজে থেকে ঠিক হতে দিন। কিছু করতে যাবেন না।’’