Advertisement
E-Paper

সাধারণ ব্রাশের বদলে ‘পাওয়ার টুথব্রাশ’ কিনেছেন, তাতে কি দাঁত বেশি পরিষ্কার হচ্ছে?

ভাবুন একবার, দাঁত মাজার ব্রাশে মাজন দিয়ে মুখে চালান করে দিলেন। তার পর সে নিজের মতো দাঁত মাজিয়ে বেরিয়ে এল। আপনাকে কিছুই করতে হল না। কেমন হবে বিষয়টা?

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ১০:৫৭
Power Toothbrush

নিয়মিত পাওয়ার টুথব্রাশ ব্যবহার করা কি ভাল? ছবি: সংগৃহীত।

আচ্ছা ধরুন, ঘুমচোখে মুখের ভিতর দাঁত মাজার ব্রাশটি দিয়ে কমোডে বসে ঝিমোচ্ছেন। আর অদৃশ্য কোনও এক শক্তি এসে প্রাত্যহিক কাজটি করিয়ে দিয়ে চলে যাচ্ছে। মানে দাঁত মাজার কথা বলা হচ্ছে আর কি! খুব বেশি জোরও খাটাতে হচ্ছে না। অথচ, মিনিটখানেকের মধ্যেই দু’পাটি দাঁত একেবারে মাজাঘষা করে সাফ হয়ে যাচ্ছে। ধরার কিছু নেই। এমন ব্রাশ ইহজগতেই আছে। ‘পাওয়ার’ বা ‘ইলেকট্রিক’ টুথব্রাশ অনলাইনে, ওষুধের দোকানে রমরমিয়ে বিকোচ্ছেও। কিন্তু অনেকেই ভাবেন বিষয়টি কী! এতে আলাদা কোনও কাজ হয় কি?

এ যেন অনেকটা ফুলঝাড়ুর ঝাঁটা থেকে ভ্যাকিউম ক্লিনারে উত্তোরণ! ঘরের যে কোণে ঝাঁটার ডগা পৌঁছোতে পারে না, সেখানে ‘নাক না গলিয়ে’ও ভ্যাকিউম ক্লিনার কিন্তু ধুলোময়লা টেনে বার করে আনে। কিন্তু দাঁত বা মুখগহ্বরের ক্ষেত্রে কি একই রকম ভাবে পাওয়ার টুথব্রাশ কাজ করতে পারে?

চিকিৎসকদের একাংশ মনে করছেন, পারে। দাঁত মাজার তো নির্দিষ্ট পদ্ধতি রয়েছে। অনেকেই তা মেনে চলেন না। দু’বেলা দাঁত মাজতে হয়, তাই মাজেন। সে দিক থেকে ব্যাটারিচালিত এই ব্রাশ নিজের মতো কাজ করতে পারে। তবে সাধারণ কর্মক্ষম মানুষের এই ধরনের ব্রাশ ব্যবহার করার প্রয়োজন নেই বলেই মনে করছেন দন্ত্যচিকিৎসক সৈকত দেব। তাঁর কথায়, “শিশুদের প্রতি দিন দাঁত মাজাতে গিয়ে অভিভাবকদের রীতিমতো যুদ্ধ করতে হয়। এমন একটি জিনিস দিয়ে খেলার ছলে যদি দাঁত মাজিয়ে নেওয়া যায়, তা হলে মন্দ হয় না। তবে যন্ত্রচালিত ব্রাশের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়া একেবারেই ঠিক নয়।” অর্থাৎ, নিজের মতো করে দাঁত মাজতে পারা এবং তাতে অভ্যস্ত থাকা জরুরি বলেই মনে করেন চিকিৎসক।

নিয়মিত চার্জ না দিলে পাওয়ার টুথব্রাশ অকেজো হয়ে যেতে পারে।

নিয়মিত চার্জ না দিলে পাওয়ার টুথব্রাশ অকেজো হয়ে যেতে পারে। ছবি: সংগৃহীত।

পাওয়ার ব্রাশ ব্যবহার করা কি তা হলে এক রকম হুজুগ?

দাঁত মাজার ব্যাটারিচালিত ব্রাশ নিয়ে এখন মাতামাতি হচ্ছে ঠিকই। তবে ইতিহাস বলছে, এ জিনিসের আবির্ভাব প্রায় ৯০ বছর আগে। দাঁত মাজতে ভাল না লাগার ব্যামো তো নতুন নয়। দিনের বেলা তবু এক রকম। কিন্তু রাতে খাওয়াদাওয়ার পর ভুঁড়িতে হাত বোলাতে বোলাতে বিছানার দিকে না গিয়ে দাঁত মাজতে যাওয়া তো আরও বিরক্তিকর। খুঁজলে এমন মানুষও পাওয়া যাবে, যাঁরা নাকি দাঁত মাজতেই ভুলে যান। তবে যাঁদের দাঁত মাজার মতো শক্তি নেই তাঁদের জন্য এই ব্রাশটি কাজের। সৈকতের কথায়, “পাওয়ার টুথব্রাশ কিন্তু পার্কিংসন্স, ডিমেনশিয়া বা অ্যালঝাইমার্সের মতো নিউরো-ডিজেনারেটিভ রোগে আক্রান্তদের জন্য ভাল। যাঁদের নিজের হাতে কাজ করার মতো ক্ষমতা নেই, বাড়ির লোকের উপরেই ভরসা করতে হয়, তাঁদের জন্য এই ব্রাশ ভাল।”

সকলেই কি পাওয়ার টুথব্রাশ দিয়ে দাঁত মাজতে পারেন?

পাওয়ার ব্রাশ যে সকলের জন্য ভাল, এমনটা কিন্তু নয়। এই ধরনের ব্রাশ ব্যবহার করে দাঁত চমকাতে গিয়ে মাড়ির ক্ষতি হতে পারে। দন্ত্যচিকিৎসক সঙ্কেত চক্রবর্তী বলেন, “কারও যদি মাড়িতে পায়োরিয়া, জিনজিভাইটিসের মতো সমস্যা থাকে, সে ক্ষেত্রে পাওয়ার টুথব্রাশ ব্যবহার করা যাবে না। কারণ, এই ধরনের ব্রাশ নির্দিষ্ট গতিতে মুখের নানা দিকে ঘোরে। দাঁতে বা মাড়িতে কোথাও ব্যথা আছে কি, না সে তো জানে না। কতটা চাপ দিতে হবে, তা বোঝার ক্ষমতাও যন্ত্রটির নেই। তা ছাড়া, দাঁতের উপর যে এনামেলের পরত থাকে, তা-ও নষ্ট হতে পারে পাওয়ার ব্রাশ ব্যবহারে।”

‘ওল ইজ় গোল্ড’ বলে একটা কথা প্রচলিত। দাঁত মাজার ব্রাশের ক্ষেত্রে এই কথাটি ততটাই প্রযোজ্য। চিকিৎসকেরা বলছেন, কোনও কাজে প্রযুক্তির সাহায্য নেওয়া ভাল। কিন্তু তার উপর পুরোপুরি নির্ভরশীল হয়ে পড়া একেবারেই কাজের কথা নয়। তা ছাড়া, পাওয়ার ব্রাশ তো নিয়ম করে চার্জ দিতে হয়। দাঁত মাজতে মাজতে হঠাৎ যদি চার্জ ফুরিয়ে যায়, তখন কি আর দাঁত না মেজে বসে থাকবেন? সেই পুরনো পন্থাতেই ফিরে আসতে হবে।

Oral Hygiene Gum Care Power Toothbrush
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy