শরীরের নানা প্রত্যঙ্গের নানা কাজ। তবে তার মধ্যে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ প্রত্যঙ্গটি অবশ্যই লিভার। লিভার ভাল না থাকলে শুধু যে হজমের গোলমাল হয় বা মুখে ব্রণ হতে পারে তা-ই নয়, প্রত্যঙ্গটির কোনও ক্ষতি হলে তার প্রভাব পড়ে সমগ্র শরীরে। এমনকী লিভার কাজ করা বন্ধ করলে প্রাণহানিও হয়।
আরও পড়ুন:
এত গুরুত্বপূর্ণ প্রত্যঙ্গটি নিয়ে হেলাফেলা করছেন কি? চিকিৎসকেরা উদ্বিগ্ন ফ্যাটি লিভার নিয়ে। শুধু যে মদ্যপানে লিভার ক্ষতিগ্রস্ত হয় এমন নয়, অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস, অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপনের প্রভাবেও লিভারের ক্ষতি হয়। আর এই ব্যাপারে সামান্য গা-ছাড়া ভাবও বিপদ ডেকে আনতে পারে।
লিভার কিসে ভাল থাকে, আর কী ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তা নিয়ে নানা জনের নানা প্রশ্ন। এই ব্যাপারেই সমাজমাধ্যমে উত্তর দিলেন এমসের এক সময়ের চিকিৎসক সৌরভ শেট্টি। পেটের রোগের এই চিকিৎসক এখন আমেরিকানিবাসী। তবে সমাজমাধ্যমে সুস্থ থাকার কৌশল আর ভাল-খারাপ খাদ্যাভ্যাস নিয়ে মাঝেমধ্যেই সাধারণ মানুষকে সচেতন করেন তিনি। সৌরভ বলছেন, কোন খাবার লিভারের জন্য ক্ষতিকর, কোনটি ভাল আর কোনটি ভীষণ ভাল।
ফলের রস/ ফল/ বিট
সামগ্রিক ভাবে দেখলে কোনওটিই কিন্তু ক্ষতিকর নয়। তবে চিকিৎসক সাবধান করছেন ফলের রস নিয়ে। তাঁর পর্যবেক্ষণে ফলের রস স্বাস্থ্যকর নয়, বিশেষত বাজারচলতি ফলের রস। কারণ এতে কৃত্রিম স্বাদ-গন্ধ এমনকী চিনির ব্যবহারও হয়। তবে চিকিৎসক বলছেন ফল লিভারের জন্য ভাল। ফলে রয়েছে ফাইবার, ভিটামিন, খনিজ, অ্যান্টি-অক্সিড্যান্ট। বিশেষত অ্যান্টি-অক্সিড্যান্ট প্রদাহ, অক্সিডেটিভ স্ট্রেস কমিয়ে লিভার ভাল রাখে।
ভাজা/ওট্স/অলিভ অয়েল
ভাজাভুজি লিভারের জন্য ক্ষতিকর বলছেন চিকিৎসক। কারণ ভাজা খাবারে সাইটোটক্সিক এবং জেনোটক্সিক তৈরি হয় যা লিভারের জন্য একেবারেই ভাল নয়।
অন্য দিকে, ওট্সে রয়েছে বিটা-গ্লুকোন ফাইবার যা লিভারের প্রদাহ কমাতে, ফ্যাট গলাতে এমনকী বিপাক প্রক্রিয়া সঠিক রাখতে সাহায্য করে।একই সঙ্গে তিনি জোর দিচ্ছেন এক্সট্রা ভার্জিন অলিভ অয়েল ব্যবহারে। এতে রয়েছে মনোস্যাচুরেটেড ফ্যাট এবং ফেনোলিক যৌগ, যা লিভারের প্রদাহ কমাতে, ফ্যাট গলাতে সহায়ক।
চিনিযুক্ত পানীয়/ রাঙাআলু/ বেরি
চিনি দেওয়া শরবত, কার্বনযুক্ত পানীয় যা সচরাচর সকলেই পছন্দ করেন, সিরাপ মেশানো মকটেল— এগুলি একেবারেই লিভারের জন্য ভাল নয় বলছেন চিকিৎসক। কারণ এগুলি ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স বাড়িয়ে দেয়, ফলে ইনসুলির হরমোন ঠিক ভাবে কাজ করতে পারে না। রক্তে আচমকা শর্করার মাত্রা বৃদ্ধি পেলে হরমোনের ভারসাম্যেও প্রভাব পড়ে।
বদলে তিনি খেতে বলছেন দুই জিনিস রাঙাআলু এবং বিভিন্ন বেরি জাতীয় ফল। স্ট্রবেরি, গুজ়বেরি বা আমলকি, ব্লুবেরি। রাঙাআলুতে মেলে অ্যান্থোসায়ানিন যা লিভারের সুরক্ষাবর্ম হিসাবে কাজ করে। রাঙাআলু লিভারের জন্য ভাল হলে, চিকিৎসক বেশি ভাল-র তালিকায় রাখছেন ফল। স্ট্রবেরি, ব্লুবেরির মতো ফলে প্রচুর ভিটামিন, খনিজ এবং অ্যান্টি-অক্সিড্যান্ট পাওয়া যায়। অ্যান্টি-অক্সিড্যান্ট লিভার ভাল রাখার অন্যতম উপাদান।
এ ছাড়াও প্রক্রিয়াজাত খাবার, রকমারি এনার্জি ড্রিঙ্ক বর্জন করতে পরামর্শ দিচ্ছেন তিনি। কারণ এগুলি লিভারের ভীষণ ক্ষতি করে। বদলে তালিকায় রাখা যায় ফ্যাটযুক্ত মাছ, বিন, কালো কফির মতো পানীয়।নির্দিষ্ট মাত্রায় কফি খেলে তা লিভারের পক্ষে ভাল হয়।