Advertisement
E-Paper

ব্রেন স্ট্রোকের শিকার অভিনেত্রী সায়ন্তনী মল্লিক, অল্পবয়সিরা কোন উপসর্গ দেখে সাবধান হবেন

৪০-এর আশপাশে বয়স, এমনকি ৩০-এর কোটায় দাঁড়িয়ে আছেন, এমন অনেকেই ব্রেন স্ট্রোকে আক্রান্ত হচ্ছেন এখন। কারও জীবনটাই শেষ হয়ে যাচ্ছে, কারও হয়তো কোনও অঙ্গ বিকল হয়ে ছিটকে যাচ্ছেন স্বাভাবিক জীবনের সড়ক থেকে। অল্পবয়সিরা কী ভাবে সতর্ক হবেন? কাদের ঝুঁকি বেশি?

আনন্দবাজার ডট কম সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ১৮:৩৮
অল্পবয়সিদের মধ্যে কেন বাড়ছে ব্রেন স্ট্রোকের ঝুঁকি?

অল্পবয়সিদের মধ্যে কেন বাড়ছে ব্রেন স্ট্রোকের ঝুঁকি? ছবি: সংগৃহীত।

বাড়িতে বসে টিভি দেখতে দেখতেই ব্রেন স্ট্রোকে আক্রান্ত হন অভিনেত্রী সায়ন্তনী মল্লিক। শরীরে কোনও রকম সমস্যা ছিল না অভিনেত্রীর। হঠাৎই অস্বস্তিবোধ শুরু হয়, তার পরেই তড়িঘড়ি হাসপাতালে ভর্তি করানো হয় অভিনেত্রীকে।

কয়েক মিনিট কথা বলতে না পারা, হাত বা পা অসাড় হয়ে যাওয়া অথবা চোখে অন্ধকার দেখার মতো ঘটনাকে চিকিৎসা বিজ্ঞানের পরিভাষায় বলে ‘ট্র্যান্সিয়েন্ট ইস্কিমিক অ্যাটাক’ বা ‘টিআইএ’। সাধারণ ভাবে একে ‘মিনি স্ট্রোক’ বলা যায়। এই সময়ে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ না নিলে কিছু দিনের মধ্যেই বড়সড় বিপদ ঘটে যাওয়া অস্বাভাবিক নয়। ৪০-এর আশপাশে বয়স, এমনকি ৩০-এর কোটায় দাঁড়িয়ে আছেন, এমন অনেকেই এই রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন এখন। কারও জীবনটাই শেষ হয়ে যাচ্ছে, কারও হয়তো কোনও অঙ্গ বিকল হয়ে ছিটকে যাচ্ছেন স্বাভাবিক জীবনের সড়ক থেকে।

স্ট্রোক বলতে আসলে বোঝায় সেরিব্রাল স্ট্রোক। মস্তিষ্কে যখন ঠিকমতো অক্সিজ়েন পৌঁছোতে পারে না, তখনই স্ট্রোক হয়। মস্তিষ্কের সেরিব্রাম অংশে রক্তক্ষরণ হলে কিংবা রক্তবাহের মধ্যে ফ্যাট জমে থাকার কারণে যদি মস্তিষ্কে ঠিকমতো অক্সিজ়েন পৌঁছোতে না পারে, তখনই স্ট্রোক হয়। সাধারণত, স্ট্রোক দু’ধরনের হয়। ইস্কিমিক আর হেমারেজিক। ইস্কিমিক স্ট্রোকে রক্ত চলাচল থেমে যায়। আর হেমারেজিক স্ট্রোকে দুর্বল রক্তনালি ছিঁড়ে গিয়ে রক্তপাত হয়।

যাঁরা উচ্চ রক্তচাপের সমস্যায় ভুগছেন, তাঁদের কিন্তু এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি। চিকিৎসক শুভম সাহা বলেন, ‘‘রক্তচাপ বেশি আছে, এমন রোগীদের কিন্তু এ বিষয়ে একটু বেশি সচেতন থাকতে হবে। দীর্ঘ দিন ধরে রক্তচাপে আক্রান্ত জেনেও চিকিৎসা না করানো, ঠিকমতো ওষুধ না খাওয়া, নিয়মিত রক্তচাপ পরীক্ষা না করানো এই সব অভ্যাস কিন্তু স্ট্রোকের ঝুঁকি কয়েক গুণ বাড়িয়ে দেয়।’’

রক্তচাপ বেড়ে যায় রোজের নানা অনিয়মে। সেই সঙ্গে বেড়ে যায় স্ট্রোকের ঝুঁকিও। কোন কোন অভ্যাস এই ঝুঁকি বাড়িয়ে দিতে পারে?

১. স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস ৮০ শতাংশ কমাতে পারে স্ট্রোকের ঝুঁকি। অতিরিক্ত লবণ, চিনি ও স্নেহপদার্থ যুক্ত খাবার বাড়ায় স্ট্রোকের আশঙ্কা। অনিয়ন্ত্রিত রক্তচাপ ও কোলেস্টেরল ডেকে আনতে পারে বড় বিপদ। এই রোগের ঝুঁকি এড়াতে ‘জাঙ্ক ফুড’, বাইরের অতিরিক্ত মশলাদার ও খুব তেল দেওয়া খাবার, প্রক্রিয়াজাত খাবার, প্যাকেটজাত খাবার খাওয়া বন্ধ করতে হবে। স্বাস্থ্যকর খাওয়াদাওয়ায় অভ্যস্ত হয়ে উঠতে হবে।

২. শরীরচর্চার অভাব ও সারা দিন শুয়ে-বসে থাকা ডেকে আনে এই রোগ। অলস জীবনযাপনে বাড়ে ওজন। এক জায়গায় দীর্ঘ ক্ষণ বসে কাজ, শরীরচর্চা না করা ওবেসিটির সমস্যার অন্যতম কারণ। ওবেসিটি থেকেই স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ে।

৩. ধূমপান ও মদ্যপানের অভ্যাসও কিন্তু স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়। তাই এই অভ্যাসে রাশ টানাটা ভীষণ জরুরি।

৪. বংশে কারও উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা থাকলে কিংবা স্ট্রোক হওয়ার ইতিহাস থাকলেও কিন্তু এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি থাকে।

যাঁরা উচ্চ রক্তচাপের সমস্যায় ভুগছেন, তাঁদের কিন্তু ব্রেন স্ট্রোকে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি।

যাঁরা উচ্চ রক্তচাপের সমস্যায় ভুগছেন, তাঁদের কিন্তু ব্রেন স্ট্রোকে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি।

চিকিৎসকের মতে, স্ট্রোকের লক্ষণ জানান দেয় আগেই। সচেতনতার অভাবে তা বুঝতে পারেন না বেশির ভাগই। কী কী সেই লক্ষণ? চিকিৎসক বলছেন, “অনেক সময় কথা বলতে বলতে আচমকা জিভ অবশ হয়ে যায়, হাত-পা ভারী হয়ে যায়। হাত তুলতে চাইলেও তোলা সম্ভব হয় না। কয়েক মিনিটের মধ্যেই আবার সব আগের মতোই স্বাভাবিক। এই সব লক্ষণ দেখে চিকিৎসকের কাছে যাওয়ার কথা মাথাতেই আসে না অনেকের। তার কয়েক মাস পরেই আচমকা বড়সড় স্ট্রোকের ধাক্কায় জীবনহানির আশঙ্কা তৈরি হয়।’’

একসময়ে বয়স্করা বেশি স্ট্রোকে আক্রান্ত হতেন। সম্প্রতি অল্পবয়সিদের মধ্যে স্ট্রোক আর কার্ডিয়াক অ্যারেস্টে আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতা বেড়েছে, এ কথা চিকিৎসকেরাও স্বীকার করছেন। কিন্তু কেন?

চিকিৎসক সুবর্ণ গোস্বামী বলেন, ‘‘ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অফ মেডিক্যাল রিসার্চের একটি সমীক্ষায় এই প্রশ্নের উত্তর মিলেছে। এবং যে তথ্য আমাদের সামনে এসেছে, তা বেশ উদ্বিগ্ন করার মতো। অল্পবয়সিদের মধ্যে স্ট্রোক আর কার্ডিয়াক অ্যারেস্টে আক্রান্ত হওয়ার পিছনে মোট তিনটি কারণ উঠে এসেছে এই সমীক্ষায়।’’

চিকিৎসক সুবর্ণ গোস্বামী যে কারণগুলির উল্লেখ করেছেন, তা হল—

১. নিয়মিত পার্টিতে গিয়ে অস্বাভাবিক হারে মদ্যপান করার প্রবণতা অর্থাৎ মদ্যপানে নিয়ন্ত্রণ না থাকা।

২. অস্বাস্থ্যকর খাওয়াদাওয়া অভ্যাস ছিল, এমন ব্যক্তির হঠাৎ জিমে গিয়ে অতিরিক্ত মাত্রায় শরীরচর্চা করা।

৩. কোভিড যাঁদের শরীরে মারাত্মক প্রভাব ফেলেছে, তাঁদের মধ্যেও স্ট্রোকের ঝুঁকি বেড়েছে।

সব মিলিয়ে স্ট্রোক থেকে বাঁচতে হলে কিন্তু জীবনযাত্রায় বদল আনতেই হবে। একটু সতর্ক হলেই কিন্তু আমরা এই রোগের ঝুঁকি অনেকটা কমিয়ে ফেলতে পারি।

রবিবার হাসপাতাল থেকে বাড়ি ফিরেছেন সায়ন্তনী। আগামী ১৫ দিন অভিনেত্রীকে বিশ্রামে থাকার পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসকেরা।

Brain Stroke stroke risks
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy