নিউ ইয়র্কে এখন চকোলেট, ভ্যানিলা কিংবা বাটারস্কচ নয়, বরং স্তন্যদুগ্ধ স্বাদের আইসক্রিমের চাহিদা তুঙ্গে। শুনতে অবাক লাগলেও, আমেরিকার একটি জনপ্রিয় শিশুপণ্যের সংস্থা ‘ফ্রিডা’ বাজারে নিয়ে এসেছে অভিনব স্বাদের এই আইসক্রিম। যদিও আসল স্তন্যদুগ্ধের তৈরি খাবার বিক্রি করার অনুমোদন আমেরিকায় খাদ্য নিয়ন্ত্রক সংস্থা দেয় না। তা হলে কী ভাবে রমরমিয়ে বিক্রি হচ্ছে এই আইসক্রিম?
সংস্থাটির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে এই আইসক্রিম তৈরিতে আসল স্তন্যদুগ্ধ ব্যবহার করা হয় না। আইসক্রিমটির অন্যতম উপকরণ হল কোলোস্ট্রাম। এই সাপ্লিমেন্টটি স্তন্যদুগ্ধে পাওয়া যায়। এই আইসক্রিমটির স্বাদ হালকা নোনতা, হালকা মিষ্টি। মায়ের দুধের মতো স্বাদ নকল করেই এই আইসক্রিম তৈরি করা হয়েছে বলে দাবি করেছে ‘ফ্রিডা’। সংস্থার তরফ থেকে জানানো হয়েছে, স্তন্যদুগ্ধ কমবেশি অনেকেই খেয়েছেন ছেলেবেলায়, তবে তার স্বাদ কেমন তা মনে থাকার কথা নয়। গ্রাহকদের মধ্যে এই নতুন স্বাদের আইসক্রিম যে উৎসাহ তৈরি করবে, সেই বিষয়ে তারা আশাবাদী।
ঠিক কী দিয়ে তৈরি করা হচ্ছে আইসক্রিমটি?
স্তন্যদুগ্ধে থাকা শরীরের রোগ প্রতিরোধশক্তি বৃদ্ধিকারী উপকরণ কোলোস্ট্রাম এই আইসক্রিমটির অন্যতম মূল উপকরণ। এ ছাড়া এতে দুধ, হেভি ক্রিম, ডিমের কুসুম, মিল্ক পাউডার, মধু, ফলের রস আর চিনিও রয়েছে। এই আইসক্রিমটির রঙ হালকা হলুদ, প্রসবের ঠিক পর পর স্তন্যদুগ্ধের রঙখানি ঠিক যেমনটা হয়। এই আইসক্রিমটির দাম ১২.৯৯ ডলার। ১০ অগস্ট আইসক্রিমটি বাজারে এলেও, ইতিমধ্যেই এর জনপ্রিয়তা আকাশছোঁয়া। বড়রা মাতৃদুগ্ধের স্বাদ চেখে দেখতে ভিড় করছেন ব্রুকলিনে ‘অডফেলোজ়’ আইসক্রিমের দোকানের সামনে। অনলাইনে ‘ফ্রিডা’র ওয়েবসাইটেও এই আইসক্রিম পাওয়া যাচ্ছে।
কোলোস্ট্রাম কেন এত উপকারী?
মায়ের দুধ সদ্যোজাতের প্রথম ভ্যাকসিন। বিশেষ করে শিশু ভূমিষ্ঠ হবার কিছু ক্ষণের মধ্যেই মায়ের যে হালকা হলদেটে দুধ নিঃসৃত হয় তার নাম কোলোস্ট্রাম। এতে আছে নানা ধরনের অ্যান্টিবডি, যা সদ্যোজাতের রোগপ্রতিরোধ ব্যবস্থার ভিত মজবুত করতে সাহায্য করে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু)-র মতে, জন্মের এক ঘণ্টার মধ্যেই শিশুকে স্তন্যপান করালে ভবিষ্যতে নানা অসুখ-বিসুখকে দূরে রাখার পাশাপাশি বুদ্ধির বিকাশ হয় দ্রুত।
কোলোস্ট্রামে এক বিশেষ ধরনের প্রোটিন সাইটোকাইন থাকে যথেষ্ট পরিমাণে। শরীরের প্রতিটি কোষের গঠনে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা নেয় এই সাইটোকাইন। একই সঙ্গে ভাইরাসের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে, পেন রিলিভিং অর্থাৎ ব্যথা কমাতে এবং টিউমার তৈরিতে বাধা দেয় সাইটোকাইন।
· কোলোস্ট্রামে লাইসোজাইম নামে এক বিশেষ অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল এনজ়াইম থাকে। এটি ব্যাক্টেরিয়ার সংক্রমণ প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে।
· মায়ের প্রথম দুধে আছে ল্যাক্টো অ্যালবুমিন, যা মস্তিষ্কের সেরোটোনিন নামে নিউরোট্র্যান্সমিটারের কার্যকারিতা বাড়িয়ে দিয়ে বুদ্ধির বিকাশ ও মন ভাল রাখতে সাহায্য করে। গবেষণায় প্রমাণিত যে, ল্যাক্টো অ্যালবুমিনের টিউমার রোধক ও ক্যানসার রোধক ক্ষমতা আছে।
· প্রোটিন রিচ পলিপেপটাইড বা পিআরপিএস সমৃদ্ধ কোলোস্ট্রাম নিয়ে গবেষণা করে বিজ্ঞানীরা নিশ্চিত হয়েছেন যে ই-কোলাই, রোটা ভাইরাস, সিগেলার মত মারাত্মক সংক্রমণের হাত থেকে এটি আজীবন সুরক্ষা দিতে পারে। এগুলি ছাড়াও কোলোস্ট্রামে আছে গ্লাইকোপ্রোটিন, ইমিউনোগ্লোবিউলিন, ল্যাক্টোফেরিন-সহ অজস্র উপাদান। যা একজন মানবশিশুর সুস্থ শরীর ও মন গড়ে তুলতে উল্লেখযোগ্য ভুমিকা নেয়। তাকে দিতে পারে সুস্থ নীরোগ দীর্ঘ জীবন।