ডায়াবিটিস নিয়ে যত চর্চা, ততটা সচেতনতা নেই ‘ইনসুলিন রেজ়িস্ট্যান্স’ নিয়ে। অথচ শরীরে ইনসুলিন হরমোন কাজ করা বন্ধ করে দিলে শুধু ডায়াবিটিস হয় এমনটা নয়। গুরুতর প্রভাবও পড়তে পারে শরীরে। বেড়ে যেতে পারে ওজন, ত্বকের বর্ণ কালচে হয়ে যেতে পারে, দিনভর ক্লান্তিবোধ হতে পারে, ঋতুচক্রেও সমস্যা দেখে দিতে পারে।
ডায়াবিটিসের চিকিৎসক অভিজ্ঞান মাঝি জানাচ্ছেন, ‘‘ইনসুলিন রেজ়িস্ট্যান্স বংশগত বা অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপনের কারণে হতে পারে। এ ক্ষেত্রে শরীরে ইনসুলিন হরমোন ঠিকমতো নিঃসৃত হওয়া সত্ত্বেও তা শরীরে ঠিক ভাবে কাজ করে না। অগ্ন্যাশয় থেকে তৈরি হয় ইনসুলিন, যা শর্করাজাতীয় খাবার থেকে শক্তি তৈরিতে সাহায্য করে। শরীরে যদি সেই হরমোন ঠিক ভাবে কাজ না করে, তা হলেই শুরু হয় সমস্যা।’’
আরও পড়ুন:
অনেকেরই দেখা যায়, ওজনের সঙ্গে বৃদ্ধি পাচ্ছে ক্লান্তি। আরও নানা সমস্যা। অথচ রক্তে শর্করার মাত্রা স্বাভাবিক। চিকিৎসক জানাচ্ছেন, ইনসুলিন রেজ়িস্ট্যান্স হওয়া মানেই কারও সুগার হওয়া নয়। তবে ইনসুলিন রেজ়িস্ট্যান্স ভীষণ বেড়ে গেলে রক্তে শর্করা বাড়বে।
ডায়াবিটিস সংক্রান্ত সচেতনতা বৃদ্ধির কাজ করেন চিকিৎসক রুচিতা মেহতা। তিনি সমাজমাধ্যমে জানিয়েছেন তাঁর এক রোগীর কথা। সেই ব্যক্তির ১০ বছর ধরে ইনসুলিন রেজ়িস্ট্যান্স ছিল। ডায়েট করে, শরীরচর্চা করে, ওষুধ খেয়েও তেমন লাভ হচ্ছিল না। সেই রোগীর ক্ষেত্রে তিনি তিন বিষয়ে জোর দেন।
প্রথমত, খাদ্যাভ্যাসে প্রোটিনের পরিমাণ বাড়িয়ে তিনি কম গ্লাইসমেক ইনডেক্স যুক্ত (যে খাবার খেলে রক্তে শর্করার মাত্রা দ্রুত বেড়ে যায় না) খাবার যোগ করেন। দ্বিতীয়ত তিনি স্বাস্থ্যকর ফ্যাট এবং ফাইবার জুড়ে দেন। তৃতীয়টি হল পর্যাপ্ত ঘুম এবং দুশ্চিন্তা কমানোর ব্যাপারে জোর দেন। রুচিতার দাবি, এই তিন বিষয় তাঁর রোগীকে সুস্থ করে তুলেছিল।
সত্যিই কি এমন বদল ইনসুলিন রেজ়িস্ট্যান্স কমাতে সাহায্য করে? অভিজ্ঞান বলছেন, ‘‘সঠিক খাদ্যাভ্যাস ওজন কমাতে সাহায্য করে। ইনসুলিন রেজ়িস্ট্যান্স কমাতে গেলে ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা খুবই জরুরি। তবে শুধু সঠিক খাদ্যাভ্যাসই যথেষ্ট নয়। দৈনন্দিন জীবপযাপনের বদলেই এই সমস্যার সমাধান করতে পারে।’’
দৈনন্দিন যাপনে কোন বদল দরকার?
· সকালের রোদ লাগানো, প্রকৃতির স্পর্শ খুব জরুরি।
· খোলা হাওয়ায় হাঁটাহাটি মানসিক চাপ কমাতে পারে, শরীর সুস্থ রাখে।
· প্রাণায়াম এবং শরীরচর্চা হরমানের ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে।
· পুষ্টিকর খাবার, ব্যালান্স ডায়েট শরীর সুস্থ রাখে। ওজন বশে রাখে।
· ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য নানা রকম ওষুধ বেরিয়েছে। সেগুলিও চিকিৎসকের পরামর্শে কমানো যেতে পারে।
অভিজ্ঞানের কথায়, ইনসুলিন রেজ়িস্ট্যান্স থাকলে ওজন বৃদ্ধি, ত্বকের সমস্যা, চোখের নীচে ফোলাভাব, পিসিওডি-সহ নানা লক্ষণ দেখা দিতে পারে। তবে শুধু সেগুলি কমালেই ইনসুলিন রেজ়িস্ট্যান্স ঠিক হবে, এমনটা নয়। সামগ্রিক ভাবে জীবনযাপনে বদল দরকার, চিকিৎসকের পরামর্শ এ ক্ষেত্রে জরুরি।