বাঁ দিকের যকৃতে টেনিস বলের মতো আকারের টিউমার ধরা পড়েছিল টিভি তারকা দীপিকা কক্করের। বায়োপসি করে জানা যায়, নিছকই টিউমার নয়, তাতে ক্যানসার কোষের বিভাজন শুরু হয়েছে। চিকিৎসকেরা জানান, ক্যানসার দ্বিতীয় পর্যায়ে পৌঁছেছে, কাজেই অস্ত্রোপচার করে তা নির্মূল করা সম্ভব। দীপিকার স্বামী শোয়েব ইব্রাহিম বৃহস্পতিবারই জানিয়েছিলেন, একটানা ১৪ ঘণ্টা ধরে অস্ত্রোপচার হয়েছে অভিনেত্রীর। চিকিৎসকেরা বলেন, লিভারে ক্যানসার হলে তার চিকিৎসা খুবই জটিল। অস্ত্রোপচারের পরেও নানা রকম জটিলতা দেখা দিতে পারে। কী ধরনের ক্যানসার, তার ব্যাপ্তি কতটা, এই সব কিছুর উপরেই নির্ভর করবে রোগী কেমন থাকবেন বা ক্যানসার ফিরে আসার সম্ভাবনা আছে কি না।
লিভার ক্যানসার কতটা বিপজ্জনক?
লিভার শরীরের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ, কারণ সেটি বিপাকক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ করে। লিভারে ক্যানসার কোষের বৃদ্ধি শুরু হলে, তার প্রভাব গোটা শরীরেই পড়বে। বিপাকক্রিয়ার পদ্ধতিটাই ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তা ছাড়া পিত্তরসের ক্ষরণে ভারসাম্য থাকবে না। লিভার যেহেতু শরীর থেকে টক্সিন বা দূষিত পদার্থ বার করে দিতে বড় ভূমিকা নেয়, তাই সেখানে ক্যানসার হওয়া মানে শরীরে আরও বেশি মাত্রায় টক্সিন জমা হতে থাকবে। সংক্রমণ দ্রুত ছড়াতে থাকবে শরীরে।
আরও পড়ুন:
যকৃতের ক্যানসার মূলত দু’ধরনের। ক্যানসার চিকিৎসক গৌতম মুখোপাধ্যায় জানাচ্ছেন, ক্যানসার যখন সরাসরি লিভারে বাসা বাঁধে তাকে বলে ‘প্রাইমারি লিভার ক্যানসার’ বা ‘হেপাটোসেলুলার ক্যানসার’ (এইচসিসি)। যখন শরীরের অন্য কোনও অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে ক্যানসার হয়, সেখান থেকেও ক্যানসার ছড়িয়ে পড়তে পারে যকৃতেও। এ ক্ষেত্রে সেটিকে ‘সেকেন্ডারি লিভার ক্যানসার’ বা ‘মেটাস্ট্যাটিক লিভার ক্যানসার’ বলা হয়। প্রাইমারি লিভার ক্যানসার খুব একটা দেখা যায় না। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই সেকেন্ডারি লিভার ক্যানসার দেখা যায়। যেমন স্তন ক্যানসার হলে তা লিভারেও ছড়িয়ে পড়ে অনেক সময়ে। সে ক্ষেত্রে যেহেতু ক্যানসার কোষের অনেকটা ব্যাপ্তি হয়, তাই কেবল অস্ত্রোপচার করে ক্যানসার কোষ বাদ দেওয়া দেওয়া যায় না। চিকিৎসকের মতে, দীপিকা কক্করের লিভারে অস্ত্রোপচার করা গিয়েছে, কারণ তাঁর ক্যানসার প্রাইমারি ছিল বলেই মনে করা হচ্ছে। সে ক্ষেত্রে ক্যানসার কোষ খুব বেশি দূর অবধি ছড়িয়ে পড়তে পারেনি।
লিভার ক্যানসারের অস্ত্রোপচার কতটা জটিল?
প্রাইমারি ক্যানসারের ক্ষেত্রে অস্ত্রোপচার করে লিভারের যতটুকু অংশ বাদ দেওয়া হয়, ততটুকুই আবার ‘রিজেনারেট’ করে। চিকিৎসক জানাচ্ছেন, লিভার ক্যানসারের অস্ত্রোপচার খুবই জটিল ও সময়সাপেক্ষ। যদি গোড়ায় ক্যানসার ধরা পড়ে, তা হলে লিভারের খুব বেশি অংশ বাদ দেওয়ার প্রয়োজন পড়ে না। লিভারের একটি বৈশিষ্ট্য হল, তার কোষের পুনর্গঠন সম্ভব, যা শরীরের বাকি অঙ্গে হয় না। লিভারের যদি এক-তৃতীয়াংশ বাদ দেওয়া হয়, তা হলে সেটুকুরও ধীরে ধীরে পুনর্গঠন হবে। কোষের বিভাজন ও বৃদ্ধি হয়ে জায়গাটুকু ভরাট হয়ে যাবে।
তবে কোষ পুনর্গঠনের প্রক্রিয়া যত দিন ধরে চলবে, তত দিন নানা জটিলতার মধ্যে দিয়ে যেতে হতে পারে রোগীকে। যেমন, রক্ত জমাট বাঁধার লক্ষণ দেখা দিতে পারে, পিত্তরসের ক্ষরণ বেড়ে যাবে, শরীরের ভিতরে রক্তক্ষরণ হতে পারে। শরীরের ভিতরের ফ্লুইড ও ইলেকট্রোলাইটের ভারসাম্য নষ্ট হতে পারে। তাই অস্ত্রোপচারের পরে রোগীকে খুব সাবধানে থাকতে হবে। লিভার স্ক্যান মাঝেমধ্যেই করাতে হবে। পাশাপাশি, খাওয়াদাওয়া নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। ধূমপান, মদ্যপান, ভাজাভুজি খাওয়া একেবারেই চলবে না। নিয়মিত হাঁটাহাঁটি, শ্বাসপ্রশ্বাসের ব্যায়াম করতে হবে। সেই সঙ্গেই ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে।