Advertisement
E-Paper

চিকিৎসকের দাবি, সোহিনীর গর্ভপাতের কারণ ‘কনসিল্‌ড অ্যাক্সিডেন্টাল হেমারেজ’! কী এই সমস্যা?

সমাজমাধ্যম প্রভাবী সোহিনী গঙ্গোপাধ্যায়ের গর্ভপাতের ঘটনায় সমাজমাধ্যমে মুখ খুললেন তাঁর চিকিৎসক শিবেন্দ্রনাথ দাস। তাঁর দাবি, অস্ত্রোপচার করতে গিয়ে তিনি দেখেন ‘কনসিল্ড অ্যাক্সিডেন্টাল হেমারেজ’-এর কারণেই সোহিনীর গর্ভপাত হয়েছে। বিষয়টি ঠিক কী? কাদের ঝুঁকি বেশি?

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক

শেষ আপডেট: ২৭ অগস্ট ২০২৫ ১৯:১৫
সোহিনী গঙ্গোপাধ্যায়।

সোহিনী গঙ্গোপাধ্যায়। ছবি: ইনস্টাগ্রাম।

সামজমাধ্যমে পরিচিত মুখ সোহিনী গঙ্গোপাধ্যায়। স্ফীতোদরে জগন্নাথদেবের ছবি আঁকিয়ে নেটদুনিয়ায় কটাক্ষের শিকার হতে হয়েছিল সোহিনীকে। সম্প্রতি সোহিনীর গর্ভপাতের ঘটনা ঘিরে সমাজমাধ্যমে চর্চা তুঙ্গে। সমাজমাধ্যমে এক মহিলা নিজেকে ‘সোহিনীর ননদ’ পরিচয় দিয়ে জানিয়েছেন, চিকিৎসকের গাফিলতির কারণে অকালে চলে যেতে হয়েছে সোহিনী ও তাঁর ভাইয়ের সন্তানকে। সেই ভিডিয়ো দেখে অনেকেই চিকিৎসককে দোষারোপ করতে শুরু করেন। শেষমেশ সমাজমাধ্যমে মুখ খুললেন সোহিনীর চিকিৎসক শিবেন্দ্রনাথ দাস। তাঁর দাবি, অস্ত্রোপচার করতে গিয়ে তিনি দেখেন ‘কনসিল্‌ড অ্যাক্সিডেন্টাল হেমারেজ’-এর কারণেই সোহিনীর গর্ভপাত হয়েছে।

চিকিৎসক শিবেন্দ্রনাথের মতে, প্রথমে সোহিনী তাঁকে জানিয়েছিলেন, তিনি ভাল আছেন এবং তাঁর গর্ভস্থ শিশুও নড়াচড়া করছে। তবে তিনিই তাঁকে বলেছিলেন পর্যবেক্ষণের জন্য হাসপাতালে ভর্তি হতে। তার পর তাঁর আরএমও এবং অভিজ্ঞ নার্সরা তিন বার পরীক্ষা করে দেখেন, ভ্রুণের কোনও হার্ট সাউন্ড পাওয়া যাচ্ছে না। চিকিৎসক নিজেও আলট্রাসাউন্ড করে ভ্রুণের কোনও হৃদ্‌স্পন্দন পাননি। বাইরে থেকেও আলট্রাসাউন্ড করানো হয়, সেখানকার রিপোর্টেও একই ফলাফল আসে। শিবেন্দ্রনাথ বলেন, ‘‘রোগীর বাড়ির লোকের বক্তব্য ছিল, আমি প্রথমেই কেন অস্ত্রোপচার করিনি। বাচ্চাটি অত্যন্ত ছোট ছিল, ওজন কম ছিল। এই অবস্থায় বললেই তো সিজার করা যায় না।’’

শেষমেশ রোগী এতটাই উত্তেজিত হয়েছিল যে শিবেন্দ্রনাথ অস্ত্রোপচার করার সিদ্ধান্ত নেন। অস্ত্রোপচারের সময় তিনি দেখেন, সোহিনীর ‘কনসিল্‌ড অ্যাক্সিডেন্টাল হেমারেজ’ হয়েছে। যার অর্থ, পেটের ভিতরে রক্তপাত। এটি সাধারণত উচ্চ রক্তচাপ যাঁদের, তাঁদেরই বেশি হয় এবং যাঁরা তুলনামূলক ভাবে বয়স্ক বা বেশি কাজকর্ম করেন, লাফালাফি করেন, তাঁদের হয়। এই সমস্ত ক্ষেত্রে মায়ের ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা অত্যন্ত বেশি থাকে বলে জানান তিনি, তাই সমস্ত ঝুঁকি নিয়েও তিনি অস্ত্রোপচার করেন মাকে বাঁচাতে সফল হন।

চিকিৎসকের এই বক্তব্যের পর অনেকের মনেই প্রশ্ন আসে, ‘কনসিল্‌ড অ্যাক্সিডেন্টাল হেমারেজ’ বিষয়টি ঠিক কী? সোহিনীর ঘটনায় কি আদৌ চিকিৎসকের গাফিলতি ছিল? স্ত্রীরোগ চিকিৎসক মল্লিনাথ মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় রক্তপাত হলে তাকে ‘অ্যান্টিপার্টাম হেমারেজ’ বলে। এটা দু’ধরনের হতে পারে— ‘রিভিল্‌ড হেমারেজ’ (এ ক্ষেত্রে শরীরের বাইরে রক্তপাত হয়) আর অন্যটি হল ‘কনসিল্‌ড হেমারেজ’ (এ ক্ষেত্রে শরীরের ভিতরে রক্তপাত হয়)। কনসিল্‌ড হেমারেজের ক্ষেত্রে প্ল্যাসেন্টা জরায়ু থেকে আলাদা হতে শুরু করে। রক্তপাত বাইরে হয় না বলে মা ও ভ্রুণের স্বাস্থ্যঝুঁকি এ ক্ষেত্রে অনেকটাই বেশি হয়। কিছু কিছু ক্ষেত্রে শরীর এই ঘটনার ইঙ্গিত দিলেও অনেক সময়ে শরীরে এমন কিছু ঘটছে, তা হবু মায়েরা বুঝতেই পারেন না। ইন্টারনাল ব্লিডিং ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ হয়ে গেলে ভ্রুণের মৃত্যুর ঝুঁকি অনেকটাই বেড়ে যায়।’’

কোন কোন উপসর্গ দেখে হবু মায়েরা সতর্ক হবেন?

১) তীব্র পেটে যন্ত্রণা

২) জরায়ু শক্ত হয়ে যাওয়া

৩) ভ্রুণের নড়াচড়া বন্ধ হয়ে যাওয়া

কখন ঝুঁকি বেশি?

১) উচ্চ রক্তচাপ থাকলে

২) প্রিঅ্যাক্লামশিয়া থাকলে

৩) হঠাৎ কোনও মানসিক আঘাত পেলে

৪) অপুষ্টিজনিত কোনও সমস্যা হলে

৫) বাইরে থেকে চোট-আঘাত পেলে

৬) বেশি বয়সে সন্তানধারণ করলে

অন্তঃসত্ত্বা মহিলারা কী ভাবে সতর্ক হবেন?

১) রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে

২) পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিতে হবে, অতিরিক্ত হাঁটাচলা বা ব্যায়াম করা যাবে না, লাফালাফি করা যাবে না

৩) ধূমপান করা যাবে না

৪) গর্ভস্থ সন্তানের নড়াচড়ার দিকে নজর দিতে হবে, নড়াচড়া কম হলেই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে

৫) অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় পেটে কোনও অস্বস্তি বা ব্যথা হলে সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে

চিকিৎসক মল্লিনাথ বলেন, অনেক সময়ই কোনও উপসর্গ ছাড়াই অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় কোনও মহিলার সঙ্গে এমনটা হতেই পারে। এতে কোনও চিকিৎসকেরই কিছু করার থাকে না। শিশুর বিকাশ কম হলে কিংবা ভ্রুণের শরীরে ব্লাড ফ্লো কম হলে তা আলট্রাসাউন্ডে ধরা পড়ে। এ ক্ষেত্রে চিকিৎসকদের বাড়তি সতর্ক থাকতে হয়।

Pregnant Care Miscarriege
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy