দীর্ঘ দিন ধরে ডায়াবিটিস আছে যাঁদের, তাঁদের নিয়মিত রক্ত পরীক্ষার মধ্যেই থাকতে হয়। কিন্তু পারিবারিক ইতিহাস থাকলেও ডায়াবিটিস হয়নি ভেবে যাঁরা নিশ্চিন্তে রয়েছেন, চুপিসারে কখন যে ডায়াবিটিস শরীরে থাবা বসাবে তাঁদের শরীরে, তা ধরতে পারবেন না। অনেকেই ভাবেন, বার বার জল তেষ্টা পাওয়া, প্রস্রাবের বেগ আসা মানেই ডায়াবিটিস হয়েছে। সত্যিই হয়েছে কি না, তা কিছু পরীক্ষা করালেই ধরা পড়বে। আতঙ্কে না ভুগে করিয়ে নিতে হবে কিছু টেস্ট। কী কী টেস্ট করাবেন, তা বুঝতে পারেন না অনেকেই। জেনে নিন, কারা কোন টেস্টগুলি করিয়ে নেবেন।
লক্ষণ খেয়াল করতে হবে
দীর্ঘ দিন ধরে ডায়াবিটিস ধরা না পড়লে বা সঠিক চিকিৎসা না হলে কিডনি, লিভার, চোখ ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। সেই সঙ্গে অস্বাভাবিক হারে চুলও ঝরে পড়তে পারে। এ ছাড়াও শরীরে আরও বেশ কিছু লক্ষণ আছে, যেগুলি দেখলে বোঝা যায়, কেউ ডায়াবিটিসে আক্রান্ত হয়েছেন কি না। যেমন— শরীরের কোথাও কেটে গেলে বা ক্ষত হলে তা সহজে সারতে চাইবে না, প্রস্রাবের বেগে রাতে বার বার ঘুম ভাঙবে, জল বেশি না খাওয়ার পরেও যদি এই সমস্যা হয়, বুঝতে হবে ডায়াবিটিসের সমস্যা আছে। পরিশ্রম না করেও জল পিপাসা পাবে বারে বারে, গলা-মুখের ভিতর শুকিয়ে যাবে, সারা ক্ষণ খিদে পাবে, ক্লান্তি বাড়বে, ঘাড়, গলায় কালচে ছোপ পড়বে, মূত্রাশয়ে বারে বারে সংক্রমণ হতে থাকবে।
আরও পড়ুন:
কোন কোন স্বাস্থ্য পরীক্ষা করিয়ে নেবেন?
এত দিন মনে করা হত, ৪৫ বছর বয়স হয়ে গেলেই উপসর্গ থাক বা না থাক, প্রতি বছর ডায়াবিটিসের পরীক্ষা করিয়ে নেওয়া প্রয়োজন। কিন্তু এখন আর ৪০ বছর অবধি অপেক্ষা করা উচিত হবে না বলেই মনে করেন চিকিৎসকেরা। আমেরিকান ডায়াবিটিস অ্যাসোসিয়েশন বলছে, এখন ঘরে ঘরে সুগারের রোগী। খাদ্যাভ্যাস এমন যে, ছোটরাও পার পাচ্ছে না। তাই বয়স ২৫ পেরোলেই নিয়ম করে ডায়াবিটিসের পরীক্ষা করাতে হবে।
এ১সি টেস্ট
এই টেস্টকে এইচবিএ১সি পরীক্ষাও বলা হয়। রক্তের একটি পরীক্ষা যা গত ২-৩ মাসের মধ্যে রক্তে শর্করার মাত্রা কত হয়েছে, তা পরিমাপ করে। এই পরীক্ষায় ধরা পড়ে, হিমোগ্লোবিনের সঙ্গে কতটা গ্লুকোজ় জুড়েছে। এর থেকে বোঝা যাবে, রক্তে শর্করার পরিমাণ কী হারে বাড়তে পারে। প্রিডায়াবিটিস বা ডায়াবিটিসের ঝুঁকি আছে কি না, তা ধরা পড়বে এই পরীক্ষায়।
এইচবিএ১সি টেস্টের ফলাফল শতকরার হিসেবে দেওয়া হয়। স্বাভাবিক মাত্রা ৫.৭ শতাংশের কম, প্রিডায়াবেটিকদের ক্ষেত্রে ৫.৭ থেকে ৬.৪ শতাংশ, ডায়াবেটিকদের ক্ষেত্রে ৬.৫ শতাংশের বেশি।
ফাস্টিং ব্লাড সুগার টেস্ট
রাত থেকে সকাল অবধি কমপক্ষে ৮-১০ ঘণ্টা খালি পেটে থাকার পর রক্তের নমুনা নেওয়া হয়। এই পরীক্ষার মাধ্যমে বোঝা যায়, রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়ছে কি না। যদি পরিমাপ প্রতি ডেসিলিটারে ১০০ মিলিগ্রাম বা তার কম থাকে, তা হলে বুঝতে হবে স্বাভাবিক। ডায়াবিটিসের ক্ষেত্রে এই পরিমাপ প্রতি ডেসিলিটারে ১২৬ বা তার বেশি আসে, প্রিডায়াবিটিসের ক্ষেত্রে প্রতি ডেসিলিটারে পরিমাপ হবে ১০০-১২৫।
গ্লুকোজ় টলারেন্স টেস্ট
রক্তে গ্লুকোজ়ের মাত্রা কতটা বাড়ছে, তা জানতে এই পরীক্ষা করানো হয়। প্রথমে খালি পেটে রক্তের নমুনা নেওয়া হয়। এর পর গ্লুকোজ় দেওয়া মিষ্টি পানীয় পান করতে বলা হয়। এর ঠিক ঘণ্টা দুয়েক পরে আবারও রক্তের নমুনা নেওয়া হয়। ২ ঘণ্টা পর রক্তে শর্করার মাত্রা যদি ২০০ মিলিগ্রাম/ডিএল হয়, তা হলে বুঝতে হবে ডায়াবিটিস আছে।
র্যানডম ব্লাড সুগার টেস্ট
দিনের যে কোনও সময়ে রক্তে শর্করার মাত্রা পরিমাপ করা যাবে। এই পরীক্ষাটি করার জন্য উপোস করে থাকার প্রয়োজন হয় না। রক্তে শর্করার মাত্রা কত রয়ছে, তা মাপতে এই পরীক্ষা করা হয়। স্বাভাবিক পরিমাপ প্রতি ডেসিলিটারে ১৮০ মিলিগ্রামের কম, প্রিডায়াবিটিসের ক্ষেত্রে প্রতি ডেসিলিটারে ১৮০ থেকে ২০০ মিলিগ্রাম আর ডায়াবিটিসের ক্ষেত্রে প্রতি ডেসিলিটারে ২০০ মিলিগ্রামের বেশি।