E-Paper

শীতকালে জরুরি বাড়তি সতর্কতা

শীতের মরসুমে রোগবালাই লেগেই থাকে। কিছু নিয়ম মেনে চললে সুস্থ থাকা সম্ভব

ঐশী চট্টোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ১৩ ডিসেম্বর ২০২৫ ০৬:৪৯

শীতকাল মানেই বিয়েবাড়ি, বড়দিন, নতুন বছর উদ্‌যাপনের আনন্দ। তার সঙ্গে রয়েছে রোগভোগের আশঙ্কাও। বাচ্চা থেকে বয়স্ক, সকলের মধ্যে সর্দি-কাশি, শ্বাসকষ্ট, জ্বরের মতো সমস্যার প্রবণতাও শীতকালেই বাড়তে দেখা যায়। এমন অবস্থায় নিজেকে এবং প্রিয়জনদের সুস্থ রাখবেন কী ভাবে?

বাচ্চাদের খেয়াল রাখতে

শীতকালে বাচ্চাদের সর্দি-কাশি, নাক থেকে জল পড়া, জ্বর, কানে ব্যথা, মাথা ব্যথা হবেই। কখনও কখনও বুকে ব্যথা কিংবা শ্বাসকষ্টেও ভোগে ছোটরা। হাঁপানির সমস্যা থাকলে এই মরসুমে তা বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কাও থাকে। শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ দিব্যেন্দু রায়চৌধুরীর কথায়, “এই ধরনের সমস্যার জন্য দায়ী ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস, আরএসভি ভাইরাস কিংবা রাইনোভাইরাস। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই বাচ্চারা আশপাশে থাকা প্রাপ্তবয়স্কদের থেকে সংক্রমিত হয়।” এ ছাড়া ঠান্ডা পড়লে জল কম খাওয়ার জন্য পেটের রোগ কিংবা ইউটিআই-এর সমস্যাও বেড়ে যায়। এগজ়িমা বা অন্য ধরনের চর্মরোগের প্রকোপও বাড়তে পারে।

চিকিৎসকের পরামর্শ, শীত পড়ার আগেই ছোটদের ফ্লু ভ্যাকসিন নিয়ে নেওয়া জরুরি। তবে তাতে যে সব ধরনের ভাইরাস প্রতিরোধ করা যাবে, এমন নয়। যেমন রাইনোভাইরাসের কোনও নির্দিষ্ট টিকা নেই। এ ক্ষেত্রে অনেক সময়েই সর্দি সেরে যায়, কিন্তু কাশি কমতে চায় না। এ ক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়েই ওষুধ খাওয়াতে হবে। যারা হাঁপানির সমস্যায় ভুগতে থাকে, তাদের জন্য নেবুলাইজ়েশনের ব্যবস্থা রাখতে হবে। শ্বাসকষ্ট বাড়লে বাড়িতে না রেখে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যাওয়াই শ্রেয়।

সদ্যোজাতদের জন্য ডা. রায়চৌধুরীর পরামর্শ, বাচ্চার পায়ের তলা বেশি ঠান্ডা থাকলে, ঠান্ডা লাগার সম্ভাবনা বেশি। তাই সদ্যোজাতদের পায়ে মোজা ও হাতে দস্তানা পরিয়ে রাখতে হবে। বাচ্চাদের ত্বক যাতে ফেটে না যায়, তাই নিয়মিত ময়শ্চারাইজ়ার ব্যবহার করুন। ত্বক ও পেট ভাল রাখতে জরুরি পর্যাপ্ত পরিমাণে জল খাওয়াও।

প্রাপ্তবয়স্কদের ক্ষেত্রে

আবহাওয়ার পরিবর্তনের সঙ্গে যদি আমাদের শরীর মানিয়ে নিতে পারে, তা হলে ঠান্ডা লাগার হাত থেকে রেহাই পাওয়া যায়। শীতকালে সমস্যা হয় যখন দিনের এক এক সময়ে তাপমাত্রা কম-বেশি হতে থাকে। যেমন শেষরাত বা ভোরে এক রকম তাপমাত্রা, আবার দুপুরে, বিকেলে আলাদা।

শীতকালের ভোরে যেমন স্ট্রোকের সম্ভাবনা ভীষণ ভাবে বেড়ে যায়। চিকিৎসক অরুণাংশু তালুকদার জানাচ্ছেন, ভোরের দিকে অতিরিক্ত ঠান্ডা বেড়ে যাওয়ার কারণে আমাদের শরীর তার সঙ্গে অনেক সময়ে মানিয়ে নিতে পারে না। সমস্যায় পড়েন মধুমেহ, হৃদ্‌রোগ, হাইপো-থাইরয়েডে ভোগা মানুষজন। শীতে রক্তচাপ বেড়ে যায়। অনেক সময়েই চিকিৎসক ওষুধের ডোজ় বাড়ানোর পরামর্শ দেন। এই সময়ে সর্দি-কাশি, হাঁপানির সমস্যা বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কাও থাকে প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে। কাজেই সময়মতো ওষুধ খাওয়া বা ঠান্ডা যাতে না লাগে তার জন্য পর্যাপ্ত প্রস্তুতি নেওয়ার কথা বলছেন চিকিৎসকেরা। প্রয়োজনে নিয়মিত রক্তপরীক্ষা করাতে হবে।

ধুলোধোঁয়া থেকে সাবধান থাকার পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসক প্রসূনকুমার মিত্র। শীতকালে কুয়াশা বা ধুলোধোঁয়া বাড়ে, যা ফুসফুসের জন্য ক্ষতিকারক। তাঁর পরামর্শ, ভোর বা রাতের দিকে বেরোলে মাস্ক পরা আবশ্যিক। ভোরের দিকে হাঁটতে না গিয়ে সন্ধের সময়ে বেরোতে পারেন, তা হলে সমস্যা কম হতে পারে।

বয়স্কদের যত্নে

হৃদ্‌রোগ, হাঁপানি, কিডনির সমস্যা কিংবা কর্কট রোগে যাঁরা ভুগছেন এবং যাঁরা পঞ্চাশ-ষাটোর্ধ্ব, তাঁদের সকলকেই দু’টি টিকা নেওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন ডা. তালুকদার এবং ডা. মিত্র। তাঁরা জানাচ্ছেন, বয়স্করা বা যাঁদের কোমর্বিডিটি রয়েছে, তাঁদের জন্য ইনফ্লুয়েঞ্জা এবং নিউমোকক্কাল ভ্যাকসিন এই মরসুমে অত্যন্ত জরুরি। এর ফলে নিউমোনিয়া বা এই ধরনের গুরুতর রোগগুলি প্রতিরোধ করা সম্ভব।

নজর থাকুক খাদ্যাভ্যাসেও

শীতকাল মানেই বনভোজন, পার্টি, বিয়েবাড়ি। শীতকালে অতিরিক্ত তেল-মশলা-মিষ্টি জাতীয় খাবার খেয়ে পেট গরম হতে পারে। তাই পুষ্টিবিদ সুবর্ণা রায়চৌধুরীর পরামর্শ, এ সময়ে মরসুমি ফল-সবজি খাদ্যতালিকায় অবশ্যই রাখবেন। পর্যাপ্ত পরিমাণে ভিটামিন, প্রোটিন, ফ্যাট, কার্বোহাইড্রেট, ফাইবার রাখতে হবে। গাজর, পালং শাক, মেথি শাক, ফুলকপি, বাঁধাকপি, স্কোয়াশ, ব্রকোলির মতো মরসুমি সবজি আমাদের শরীরে ভিটামিন, খনিজ, ক্যালশিয়াম, ফাইবার, অ্যান্টি-অক্সিড্যান্টের মাত্রা বজায় রাখতে সাহায্য করে।

কমলালেবু, পেঁপে, আপেল, বেদানার মতো মরসুমি ফল রাখতে হবে খাদ্যতালিকায়। কমলা এবং সবুজ রঙের খাবারে বিটা-ক্যারোটিন থাকে। খাদ্যতালিকায় এগুলি রাখলে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ মেলে। এর ফলে ত্বক, চুল, চোখ যেমন ভাল থাকে, তেমনই রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতাও বাড়ে।

শীতের সময়ে জরুরি পর্যাপ্ত পরিমাণে জল খাওয়াও। সাধারণত এই সময়ে স্বাভাবিকের চেয়ে কম জল খান ছোট-বড় সকলেই। সুবর্ণার পরামর্শ, হার্বাল চা, সুপ খাওয়া যেতে পারে। তবে তা যেন জলের বিকল্প না হয়। এ ছাড়াও, ডিম, মাশরুম, আমন্ড খেলে শরীরে ভিটামিন ডি-এর মাত্রা বাড়ে। রান্নার সময়ে আদা-রসুন, গরমমশলা বাড়িয়ে তোলে মেটাবলিজ়মের মাত্রা। রোজের খাদ্যতালিকায় সিদ্ধ সবজি রাখলে রোগপ্রতিরোধের ক্ষমতাও বাড়ে।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Sickness

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy