আইভিএফ (ইন-ভিট্রো ফার্টিলাইজ়েশন)-এর মাধ্যমে সন্তান ধারণ করার এই প্রক্রিয়া এখন যতখানি জনপ্রিয়, ২০০৭-২০০৮ সালে অবশ্যই ততখানি গ্রহণযোগ্য ছিল না। স্বাভাবিক ভাবে গর্ভধারণ না করলেই কটাক্ষ, সমালোচনা, নিন্দার সম্মুখীন হতে হত। কিন্তু পরিচালক-প্রযোজক ফরাহ খান সেই সময়েই তিন সন্তানের জন্ম দিয়েছিলেন আইভিএফ-এর সাহায্যে।
ভারতের মতো জনবিস্ফোরণের দেশেও বন্ধ্যাত্বের সমস্যা বাড়ছে বহু কাল ধরে। কিন্তু মাতৃত্ব যে অনেকের কাছেই স্বপ্নসম! তাই সেই স্বপ্ন পূরণের পথে সহায়ক হয়ে উঠেছিল আইভিএফ। সে সময়ে শরীরের উপর দিয়ে কী কী অত্যাচার চলেছে, শরীর কতটা সহ্য করেছে, তা নিজের মুখেই জানালেন ফরাহ। টেনিসতারকা সানিয়া মির্জ়ার সঙ্গে কথোপকথনের সময়ে এই প্রসঙ্গটি উত্থাপিত হয়। নাম, পরিচিতি, সাফল্য— সব কিছু পাশে সরিয়ে রেখে ফরাহ এবং সানিয়া আইভিএফ নিয়ে কথা বলেন।
ইন-ভিট্রো ফার্টিলাইজ়েশন। ছবি: সংগৃহীত।
আইভিএফ-এর ফলে শরীর কতটা বদলে যায়, তা বুঝেছেন তাঁরা। আর এই যাত্রায় কোনও অনুভূতিই তুচ্ছ নয়। নারীশরীরের নীরব যুদ্ধকেই প্রকাশ্যে আনলেন তাঁরা। এই যাত্রা ফরাহের জন্য আরও যেন কষ্টকর ছিল। কারণ, তিনি একই সঙ্গে তিন সন্তানকে গর্ভে ধারণ করেছিলেন। সেই সময় শরীর যেন প্রতিটি দিন বদলে বদলে যাচ্ছিল বলে মনে হয়েছিল তাঁর।
ফরাহ জানালেন, সমস্ত উপসর্গ যেন তিন গুণ হয়ে যাচ্ছিল তখন। পেট জুড়ে লাল লাল র্যাশ ছেয়ে গিয়েছিল। দিনের অধিকাংশ সময় যেন শৌচালয়েই কাটাতে হত তাঁকে। প্রযোজকের কথায়, ‘‘এক এক বার এক একটি শিশু মূত্রাশয়ে চাপ দিচ্ছিল বলে এই সমস্যায় ভুগতে হয়েছিল।’’ পেটের আকার এতই বড় হয়ে গিয়েছিল যে তিনি শুয়ে থাকতে পারতেন না। চিত হয়ে শুয়ে পড়লে মনে হত, পেট যেন বুকের কাছে চলে এসেছে। তাই অন্তঃসত্ত্বাকালীন রিক্লাইনার চেয়ারেই বসে থাকতেন অধিকাংশ সময়ে। তা ছাড়া প্রতি দিন ইঞ্জেকশন নিতে চিকিৎসকের কাছে ছুটতে হত ফরাহকে। কখনও ঊরুতে, কখনও বা পেটে।
ফরাহের বয়স তখন ছিল ৪২ বছর। প্রথম দু’বার আইভিএফ পদ্ধতি ব্যর্থ হওয়ার পর তৃতীয় বার তিনি অন্তঃসত্ত্বা হন, তা-ও এক বারে তিনটি ভ্রূণ ধারণ করেন। গর্ভে তিনটি সন্তান থাকলে মাতৃত্বকালীন উপসর্গগুলি অনেকখানি বেড়ে যায়। বিবিধ হরমোনের ক্ষরণের মাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক বেশি হয়। ক্লান্তি, ঘন ঘন বমি পাওয়া, ফুস্কুড়ি, শরীরের নানা জায়গায় ব্যথা, ঘুমের সমস্যা, এ সব অনেক বেশি হয়। আর তাই চিকিৎসকেরা এই সময় শরীরের কোনও অস্বস্তিকেই অবহেলা না করার পরামর্শ দেন। নিয়মিত চিকিৎসকের পরামর্শ আর মানসিক সহায়তা অত্যন্ত প্রয়োজন এ সময়ে। ফরাহের অভিজ্ঞতা তাই মনে করিয়ে দেয়, মাতৃত্ব সুন্দর হলেও সেই পথে হাঁটার সময়ে শরীরকে প্রভূত যুদ্ধে শামিল হতে হয়। আর সেখানে পরিবার যদি পাশে থাকে, তা হলে সে লড়াই খানিক সহজ হয়ে ওঠে।
একাধিক ভ্রূণ ধারণ করলে কিছু বিষয়ে সতর্ক থাকা দরকার—
· বার বার খাওয়া
· অল্প করে খাওয়া
· পর্যাপ্ত পরিমাণে জল পান করা
· রিক্লাইনারের মতো চেয়ারে বসে বসে পর্যাপ্ত বিশ্রাম নেওয়া