অফিসের কাজ হোক কিংবা অবসরের ফাঁকে বিনোদন— মোবাইল ছাড়া এখন আর গতি নেই। দিনের বেশির ভাগ সময়টাই কেটে যায় মোবাইলের দিকে তাকিয়ে। কেবল বড়দেরই নয়, শিশুদেরও এখন পড়াশোনা চলছে অনলাইনে। তাদের ক্ষেত্রেও স্ক্রিন টাইম আগের তুলনায় অনেকটাই বেড়েছে কোভিডের পর। মোবাইল, ল্যাপটপ কিংবা ট্যাব— যে কোনও স্ক্রিনের দিকে দীর্ঘ ক্ষণ তাকিয়ে থাকার ফলে চোখের যে ক্ষতি হয়, তাকে চিকিৎসকেরা বলেন মায়োপিয়া। এই সমস্যায় যাঁরা আক্রান্ত হন, তাঁরা নির্দিষ্ট দূরত্বে থাকা সব কিছু ঝাপসা দেখেন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু)-র মতে, ২০১০ সালে মায়োপিয়ায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ছিল প্রায় ২০০ কোটি। তবে তাঁদের অনুমান ২০৩০ সালে সেই সংখ্যা ৩৩০ কোটি ছাড়িয়ে যাবে। শিশুদের মধ্যে কোন কোন কারণে এই রোগের ঝুঁকি বাড়ছে?
১) চিকিৎসকদের মতে, ২ থেকে ৫ বছরের শিশুদের অভিভাবকেরা অনেক সময় তাদের শান্ত রাখতে টিভি কিংবা মোবাইলে কার্টুন চালিয়ে দেন, তবে সে ক্ষেত্রে তাদের স্ক্রিন টাইম যেন এক ঘণ্টার বেশি না হয়ে যায়, সে দিকে নজর রাখতে হবে।
২) রাতে ঘুমোনোর এক ঘণ্টা আগে মোবাইল, টিভি কিংবা ট্যাবের দিকে না তাকানোই ভাল। স্ক্রিনের ব্লু লাইটের জন্য চোখের বারোটা বাজছে। খুব কাছ থেকে শিশুরা যেন ফোন, টিভি না দেখে সেই দিকে সতর্ক থাকতে হবে।
৩) এখন বেশির ভাগ শিশুই মাঠে গিয়ে খেলে না, সারা ক্ষণ বাড়িতেই বন্দি থাকে। তারা যেন সূর্যের আলোতে বেশ খানিক ক্ষণ কাটায়, সে দিকে লক্ষ রাখতে হবে।
৪) শিশুরা যখন পড়তে বসবে, তখন আলোর দিকেও নজর রাখতে হবে। খুব বেশি মৃদু আলোয় তারা যেন পড়াশোনা না করে, সে দিকে নজর রাখুন। ঘরের আলোর তেজ কমে গেলে সেটা বদলানোর ব্যবস্থা করুন।
৫) একটানা ২০ মিনিটের বেশি খুদেকে ফোন বা টিভি দেখতে দেওয়া যাবে না। ২০ মিনিটের পর বিরতি নেওয়া দরকার।
ঝুঁকি কমবে কী ভাবে?
মায়োপিয়ার ঝুঁকি এড়াতে নিয়ম করে শিশুদের চোখের কিছু ব্যায়াম অভ্যাস করানো যেতে পারে। শিশুরা সহজে ব্যায়াম করতে চায় না, তাই তারা যেন রোজ ব্যায়াম করে, সেই দায়িত্ব নিতে হবে অভিভাবকদের। কী কী ব্যায়াম করাবেন, রইল হদিস।
১) হাতের তালুর ব্যবহার: প্রায় ১০-১৫ মিনিট দু’হাতের তালু একটির সঙ্গে অপরটি ঘষে নিতে হবে। ঘর্ষণের ফলে হাতের তালুতে যে তাপ উৎপন্ন হবে, চোখ বন্ধ করে হাত দু’টি চোখের উপরে রাখতে হবে। চাপ দিলে হবে না। হালকা হাতে তাপ দিতে হবে চোখে। দিনে ৩-৪ বার এটি করতে হবে এই ব্যায়াম।
২) ঘন ঘন চোখের পাতা ফেলা: প্রতি ৩-৪ সেকেন্ড পর পর চোখের পাতা ফেলা, চোখের অনেক সমস্যা থেকে মুক্তি দেয়। বিশেষ করে এক দৃষ্টিতে টিভি বা মোবাইলের দিকে তাকিয়ে থাকলে মাঝেমাঝে চোখের এই ব্যায়ামটি করে নেওয়া ভাল। টানা এক মিনিট ঘন ঘন চোখের পাতা ফেলাও খুব উপকারী একটি অনুশীলন। এতে দৃষ্টিশক্তি ভাল হয়।
৩) চোখ ঘোরানোর অভ্যাস: গোল করে চোখের মণি ঘোরানোও চোখ ভাল রাখার জন্য বেশ কার্যকর একটি ব্যায়াম। ঘড়ির কাঁটার অভিমুখে এবং ঘড়ির কাঁটার বিপরীতে চার বার করে মণি ঘোরাতে হবে। তার পর চোখ বন্ধ করে রাখতে হবে দু’-তিন সেকেন্ড মতো। দিনে দু’বার করে এই ব্যায়ামটি করাতে পারেন শিশুকে। চোখের পেশি ভাল থাকবে। দৃষ্টিশক্তির ক্ষতি হবে না।