ব্যস্ত জীবনযাত্রা, খাদ্যাভ্যাসে নানা রকম অনিয়ম ও বাড়তি কাজের চাপ— শরীরে ডেকে আনে নানা রোগব্যাধি। যত বেশি প্রযুক্তিনির্ভর হয়ে পড়ছে জীবন, ততই অসুখ কামড় বসাচ্ছে শরীরে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু)-র সমীক্ষা অনুযায়ী, স্থূলত্ব, কোলেস্টেরল, থাইরয়েড সংক্রান্ত সমস্যা বাড়ছে বিশ্ব জুড়ে। আর সেই সব রোগের হাত ধরে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে হৃদ্রোগের ঝুঁকিও। রোজের রুটিনের বেশ কিছু ভুল ঠেলে দেয় হৃদ্রোগের দিকে। কিছু ভুল জেনেবুঝেই করা হয়, কিছু অভ্যাসের কুপ্রভাব অজান্তেই মারণরোগের ঝুঁকি বাড়িয়ে তোলে। তবে এ বছর যা যা অনিয়ম করেছেন, সে সব ক্ষতি পুষিয়ে দিতে পারেন আসন্ন বছরে আর একটু যত্নবান হয়ে। সকালের কোন কোন অভ্যাসে পরিবর্তন আনলে হৃদ্রোগের আশঙ্কা কমবে?
প্রাতরাশ না করা: সকালে অফিসের তাড়াহুড়োতে কিংবা দেরি করে ঘুম থেকে ওঠার কারণে অনেকেই প্রাতরাশ করেন না। এই অভ্যাস রক্তের শর্করার মাত্রা আর হরমোনের ভারসাম্যের উপর প্রভাব ফেলে, পরোক্ষ ভাবে যার প্রভাব পড়ে হার্টের উপর। দীর্ঘ ক্ষণ খালি পেটে থাকলে রক্তের শর্করার মাত্রা কমে যায়, এর পাশাপাশি স্ট্রেস হরমোনের মাত্রা বেড়ে যায়। তাই এই সব শরীরকে সচল রাখতে হৃদ্যন্ত্রকে বেশি কাজ করতে হয়। দীর্ঘ দিনের এই অভ্যাসের কারণে অস্বাস্থ্যকর খাবারের প্রতি ঝুঁকি বাড়ে, সারা দিনে বেশি খাবার খেয়ে ফেলেন কেউ কেউ। সব মিলিয়ে বেশি চাপ পড়ে হার্টের উপর। তাই সকালে প্রাতরাশ করা জরুরি।
সকালে উঠেই ফোন ঘাঁটাঘাঁটি: সকালে চোখ খুলেই বালিশের পাশে রাখা মুঠোফোনটিকে হাতে তুলে নেন? মোবাইল ডেটা অন করলেই আপনার ফোনে একে একে ঢুকতে থাকে হোয়াট্সঅ্যাপ, অফিসের মেল, সমাজমাধ্যমের নোটিফিকেশন। একটির পর একটি অ্যাপে স্ক্রল করতে থাকেন। এই অভ্যাসের কারণে মানসিক চাপ মারাত্মক ভাবে বেড়ে যায়। সমাজমাধ্যমের পাতায় ক্রমাগত আসতে থাকা ছবি, ভিডিয়ো বা ব্যক্তিগত বার্তালাপের ধারাবাহিক প্রবাহ মস্তিষ্কে চাপ সৃষ্টি করতে পারে। এর ফলে ‘স্ট্রেস হরমোন’-এর ক্ষরণ অনেক বেড়ে যাবে। শরীরের পাশাপাশি হৃদ্স্পন্দন আর রক্তচাপও বাড়ে। তাই হৃদ্রোগ ঠেকাতে হলে ঘুম থেকে উঠে তাই অন্তত ঘণ্টাখানেক ফোন ঘাঁটবেন না।
রোজের রুটিনের বেশ কিছু ভুল ঠেলে দেয় হৃদ্রোগের দিকে। ছবি: সংগৃহীত।
খালি পেটে কফিতে চুমুক দেওয়া: ঘুম থেকে উঠলে শরীরে কর্টিসল হরমোন উৎপাদনের হার বেড়ে যায়। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গিয়েছে, খালিপেটে বেশি মাত্রায় কফি খেলেই কর্টিসলের ক্ষরণ আরও বেড়ে যায়। এর ফলে মানসিক চাপ বা ‘স্ট্রেস’ আরও জাঁকিয়ে বসে। ফলে ঘুম ভাঙার সঙ্গে সঙ্গে দু’-তিন কাপ কফি খেয়ে নিলে মন ভাল হওয়ার পরিবর্তে মানসিক চাপ বেড়ে যায়। শরীরে স্বাভাবিক মাত্রায় কর্টিসলের ক্ষরণ বিপাকহার, রক্তচাপ আর রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখে। তবে অত্যধিক মাত্রায় এর ক্ষরণ হাড়ের ক্ষতি করে, উচ্চ রক্তচাপ, টাইপ ২ ডায়াবিটিস এমনকি, হৃদ্রোগের ঝুঁকিও বাড়িয়ে দেয়।
শরীরচর্চা না করা: সপ্তাহে অন্তত ৫ দিন শরীরচর্চা করতেই হবে। ভারী শরীরচর্চা না করলেও রোজ অন্তত পক্ষে আধ ঘণ্টা দ্রুত গতিতে হাঁটতে পারেন। সঙ্গে কিছু হালকা ব্যায়াম করলেও হবে। হার্টের স্বাস্থ্য ভাল রাখতে হলে শরীর সচল রাখা জরুরি।
সকালের ক্লান্তিকে অবহেলা করা: ঘুম থেকে উঠেও ক্লান্ত লাগা কিন্তু ভাল লক্ষণ নয়। সেই ক্লান্তিকে দীর্ঘ দিন অবহেলা করতে করে সারা দিনের কাজকর্ম চালিয়ে যেতে থাকলে হৃদ্যন্ত্রের উপর বাড়তি চাপ পড়ে। তাই এ রকম উপসর্গ দেখলেই চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।